আমার স্মৃতিকাতরতা

পাগল মন এর ছবি
লিখেছেন পাগল মন [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ০৬/০৪/২০১০ - ৭:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ একটা বই পড়লাম, হুমায়ুন আহমেদের-“নীল মানুষ”, সেখানে ফরহাদ সাহেব ঝুম বৃষ্টিতে ভিজেন। পড়ে দেশে থাকতে বৃষ্টিতে ভেজার কথা মনে পড়ে গেল, সেই সাথে আরো কত স্মৃতি।।

মনে পড়ে, প্রতি বছর কিভাবে কিভাবে যেন বছরের প্রথম বৃষ্টিতে ভেজাই হত। কিভাবে সেটা হত সেটা ভাবতে আশ্চর্যই লাগে এখন। আর এখন বৃষ্টিতে ভেজার আগে চিন্তা করতে হয় ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। শেষ কবে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজেছি সেটা ভুলেই গেছি।হায়রে সময়!!! কিন্তু যখন চিন্তা করি, কেন এমন হয় তখন নিজেকে প্রবোধ দেই এই বলে যে এখানে বৃষ্টির পানি বেশি ঠান্ডা…

ক্লাস নাইন/টেনে(সঠিক ক্লাসটা মনে নাই মন খারাপ ) থাকতে একবার ইংরেজী প্রাইভেট পড়ে সব বন্ধুরা যখন স্কুলে যাচ্ছিলাম, তখন নামলো প্রচন্ড বৃষ্টি, এক্কেবার কুত্তাবিলাই বৃষ্টি যাকে বলে। তো আমাদের কারো সাথেই ছাতা ছিল না, থাকলেও হয়তো সেটা ব্যবহৃত হতো বলে মনে হয় না। আমরা স্কুলে গেলাম একবারে কাক ভেজা হয়ে।।সেরকম ভেজা কি আর কখনো হবে??? মনে হয় না…

গত ডিসেম্বরে আমার স্ত্রী ওর শহর হতে আমার এখানে বেড়াতে আসে। দেশ থেকে আসার পর থেকে সমুদ্র দেখা হয় নাই। ওর ওখানে সমুদ্র কেন, একটা বড় নদী পর্যন্ত নেই। তো যাবো সমুদ্র দেখতে কিন্তু আমার শহরের কাছের সমুদ্র দেখে মনে হল এর চেয়ে পদ্মা পাঁড়ে গেলেও মনে হয় আরো বেশী দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি দেখা যেত। এখানে দুইপাশেই পাঁড় দেখা যায়, আর একে ওরা বলে সমুদ্র (এটা আসলে ইনলেট)। কেউ একজন বলেছিল যে ভিক্টোরিয়াতে খোলা সমুদ্র দেখা যায়, কারণ সেটা একটা দ্বীপ। গেলাম সেখানে কিন্তু কিসের কি।। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছিল। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে যে, দুই-তিনবার এইসব বড় নদীর মত সমুদ্রের কাছাকাছি গিয়েও পানিতে নামাতো দূরের থাক, পা-ও ভিজাইনি। অথচ যেবার কক্সবাজার গেলাম, টানা কয়েক ঘন্টা শুধু পানিতেই দাপাদাপি করেছিলাম। প্রতেকবার সী-বীচে গেলেই মনে হয় আমরা কত ভাগ্যবান যে আমাদের এরকম উত্তাল, জীবন্ত একটা সমুদ্রতীর আছে; যেখানে চাইলেই দেশের মানুষ কত সহজে যেতে পারে। অবশ্য যখন পত্রিকায় দেখি যে আমরা আমাদের সেই সমুদ্রসৈকতকে কি অবলীলায়ই না নষ্ট করছি, তখন ভবিষ্যত প্রজম্মের জন্য মনটা খারাপ হয়ে যায়। এই দূরদেশে থেকে আজ আমার সেই সমুদ্রটাকে খুব বেশি মনে পড়ছে।। কবে যে দেশে যাবো…

স্মৃতিগুলো বড্ড বেয়াড়া। একটা মনে পড়লে সাথে আরো কয়েকটাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসে। ইউনিভার্সিটিতে প্রথম টার্মের মাঝামাঝি রোজা পড়লো। তখন নতুন নতুন কলব্রীজ খেলা শিখেছি। প্রতিদিন সকাল ১১টার দিকে এক বন্ধুর বাসায় যেতাম কার্ড খেলতে। সারাদিন খেলে শুধু ইফতারীর সময় বাসায় আসতাম ইফতারী করতে। এরপর তারাবীহর নামাজের কথা বলে আবার গিয়ে মোনাজাতে বসে যেতাম, চলতো সেটা দশটা-সাড়ে দশটা পর্যন্ত। বাসায় বলতাম যে নামায শেষে একটু আড্ডা দিছি।। কি মজাই না ছিল দিনগুলা।। আর কি আসবে সেই দিন??? মনে হয় না…

দেশ থেকে চলে আসার পরে প্রথম দিকে তেমন কিছু মনে হতো না, মাঝেমাঝে খারাপ লাগতো মা-বাবা-ভাইয়ের জন্য। কিন্ত এখন আর খারাপ লাগাটা শুধু ফ্যামিলির জন্য সীমাবদ্ধ নাই। এখন দেশের একটা খারাপ খবর পড়লেও খারাপ লাগে। এখন ফেলে আসা বন্ধুদের জন্য খারাপ লাগে, খারাপ লাগে ইউনিভার্সিটির জীবনটা শেষ হয়ে গেছে বলে। এমনকি মাঝে মাঝে স্যারদের ও মিস করি, মিস করি তাদের ক্লাসকেও।। জীবন বড়ই বিচিত্র...


মন্তব্য

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

শেষ কবে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজেছি তা মনে নাই।
প্রথম কলব্রিজ খেলা শিখে আমারো এমন হয়েছিল। পড়া ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে সারাক্ষণ খেলতাম। আহ্, কি শান্তির ছিল সেইসব দিন।

স্যার আপনার নামটা যেনো কী?

..................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

নিবিড় এর ছবি
সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

হুম
জীবন যতোই সামনের দিকে এগুতে থাকে, মিসিং এর পরিমাণ শুধু বাড়তেই থাকে।

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি আবার স্যার হলাম কবে?? অ্যাঁ

পাগল মন

অতিথি লেখক এর ছবি

জীবন্ত সমুদ্র, ঝুম বৃষ্টি, শব্দ গুলো খুব ভাল লাগলো।আপনার লেখাটা খুব ভাল হয়েছে।

মিতু রিফাত মিতু

নাশতারান এর ছবি

সচলে স্বাগতম।

লেখা ভালো হয়েছে। বিশেষ করে এই লাইনটা খুব মনে ধরলোঃ "স্মৃতিগুলো বড্ড বেয়াড়া। একটা মনে পড়লে সাথে আরো কয়েকটাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসে।"

ছোটখাটো কিছু ভুল আছে। সম্ভবত বেখেয়ালবশত। যেমনঃ
পড়ে দেশে থাকতে > পরে দেশে থাকতে, কিভাবে > কীভাবে, ভেজাই হত > ভেজা হতোই, পাঁড়ে > পারে।
লেখার পর প্রিভিউ দেখে নিলে ছোটখাটো ভুলগুলো চোখে পড়বে।
বানান নিয়ে সন্দেহ থাকলে অভিধান দেখে নিন।

হাত-মন-চোখ সব খুলে লিখতে থাকুন। হাসি

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ সবাইকে...
পরের বারে চেষ্টা করবো ভুলগুলো না করার... অভিধানটার জন্য অনেক ধন্যবাদ...অনেক দিন থেকে খুঁজছিলাম...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনার পর পর দুটো লেখা পড়লাম!
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ...

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।