ইউনিট নাম্বার ২১২৬ (পর্ব ১)

পাগল মন এর ছবি
লিখেছেন পাগল মন [অতিথি] (তারিখ: সোম, ১২/০৪/২০১০ - ৪:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পাগল মন

বুয়েট থেকে পাশ করার পরে আবারো কখনো ইউনিভার্সিটি হলে থাকতে হবে ভাবিনি। কিন্তু ভাগ্যের কি ফের, আবার সেই হললাইফ। মন খারাপ তবে এটাকে বুয়েটের স্বর্ণালী দিনের সাথে তুলনা না করাই শ্রেয়।
আমি এখন যেখানে পড়ি, সেখানে আসার আগে থেকে শুনেছি যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে থাকার হার কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বাধিক। কারণ হিসেবে অনেক কিছুই হয়তো আছে কিন্তু প্রধান কারণ হচ্ছে মোটামুটি সস্তা(!)।
শিরোণাম দেখেই আপনারা হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পারছেন… হ্যা, এটাই আমার ইউনিট নাম্বার… কি, কিছুটা বেখাপ্পা ঠেকলো? ইউনিট বলছি কেননা, এটা আসলে চার বেডরুমের একটা অ্যাপার্টমেন্ট, এখানে সবাই এটাকে কোয়াড বলে। চারজন ছাত্র থাকতে পারে, তাদেরকে বাথরুম, কিচেন আর ড্রয়িং রুম শেয়ার করতে হয়। রেগে টং
রুম পাওয়ার পরে যেদিন প্রথম দেখতে আসি (রুমে উঠার দিন), আমি তো রুম দেখে বিশাল অবাক হয়েছিলাম। এর আগে আমি এক বড় ভাইয়ের ইউনিটে গিয়েছি, কিন্তু সেটা ছিল দোতলায় বেডরুম, বাথরুম আর নিচতলায় রান্নাঘর আর ড্রয়িংরুম। আর আমারটাতে সবই একতলার মধ্যে, কোন দ্বিতীয় তলা বলে কিছু নেই। আর কি বিশাল ড্রয়িংরুম, ফুটবল মাঠের মত, কিচেনটাও বড়, আবার কাপড় ধোয়ার মেশিনও ইউনিটের ভিতরে। একেই বলে, একের ভিতরে সব (পরে জেনেছি এটা আসলে ডিজেবলদের কোয়াড অ্যাঁ, এজন্যই একতলা আর এত বড়)
অনেক আজাইরা প্যাচাল পেরে ফেললাম। আমার আজকের লেখা আমার ইউনিটের রূপ-গুনের বর্ণনা না, আমার ইউনিটমেটদের নিয়ে।

রুম নাম্বার ২১২৬ বি

এই রুমের বাসিন্দা কনফ্যুসিয়াসের দেশের লোক। সদ্য স্নাতক ডিগ্রী শেষ করে এখন বেকার বসে আছে। কোয়াডে উঠার আগে আমার চৈনিক দেশীয় লোকদের প্রতি একটা ভীতি কাজ করতো। আমি শুনেছিলাম, ওরা খুব নোংরা, ওদের খাবারের গন্ধে ১০০ হাতের মধ্যে থাকাই দুস্কর, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এই ছেলেটা আমার সেই ভয় কিছুটা হলেও দূর করেছে। ওর ইংলিশ নাম হচ্ছে জেমস, চীনে নাম জানি না (প্রায় সব চৈনিকদেরই দুইটা নাম থাকে বলে শুনেছি অ্যাঁ)

জেমস খুবই ভদ্র একটা ছেলে। চোখ টিপি কোন রান্নাবান্না করে না, রেডিমেড খাবার কিনে এনে গরম করে খায় (যেটা আমার জন্য খুবই ভালো হয়েছে, রান্নার গন্ধ সহ্য করতে হয়না দেঁতো হাসি)। ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাত্র আন্ডারগ্রাজুয়েট শেষ করলো। ওর ইচ্ছা ছিল, এই টার্মেও কিছু কোর্স নিবে তাহলে আরো কিছুদিন ছাত্র থাকা যাবে। কিন্তু বাপে মনে হয় বলছে, পয়সা দিবো না, খাইট্টা খা… এজন্য তার মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়নি। সে অবশ্য এখনো বাপের মাথায় কাঠাল ভেঁঙ্গেই খাচ্ছে, কারণ এখনো বেকার এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে তার এই বেকারত্ব ঘুচানোর তেমন কোন চেষ্টা বা ইচ্ছা আছে বলে আমার মনে হয় না। দেঁতো হাসি
ওর কাছ থেকে আমি চায়না সম্বন্ধে অনেক জ্ঞান লাভ করেছি চোখ টিপি যেমন কোন এলাকার মানুষ কথা কিভাবে বলে (কথার মাঝে বিরতি দেয় কি, দেয় না?), কালচার, খাবারের ধরণ ইত্যাদি অনেক ব্যাপার। ওরও আমাদের দেশ সম্পর্কে অনেক আগ্রহ, আমাদের প্রায়ই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। চাল্লু ও আমাকে বলেছে যে, কিভাবে কাঠি দিয়ে খেতে হয় সেটা শিখাবে, কিন্তু সময়ের অভাবে শেখা হচ্ছে না। প্রায়ই আমি দুপুর বেলা দেখি জেমস ঢুলুঢুলু চোঁখে বাথরুমের দিকে যাচ্ছে, জিজ্ঞাসা করলে বলে মাত্র উঠলাম। তখন ওকে আমার হিংসেই হয়, কতই না মজায় আছে??!!

আজ এ পর্যন্তই কাফি। পরের পর্বে আমার বাকি দুইজন ইউনিটমেটদের নিয়ে লিখবো আশা করি।
নিচের ছবিগুলো আমার রুম আর বাসার বাইরে থেকে তোলা...
আমার বাসা

আমার ঘরের জানালা থেকে তোলা ছবি

বাসার লাগোয়া ফুলগাছ


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

এটুকু লিখেই হাঁপিয়ে উঠলে চলবে? চিন্তিত
জমিয়ে লিখুন, ছবিও যদি থাকে তবে তো পাঠকের পোয়াবারো!

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

কাকুল কায়েশ এর ছবি

এটুকু লিখেই হাঁপিয়ে উঠলে চলবে?

এই মন্তব্যে উত্তম জাঝা!

লেখককে বলছি, লেখা ভাল হচ্ছে, কিন্তু অনেক ছোট হয়ে গেছে! এই পর্বেই আপনার বাকী দুই কিচেনমেটের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।

যাই হোক, এটা আপনার প্রথম লেখা মনে হয়! স্বাগতম!
পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি!
==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

অতিথি লেখক এর ছবি

কায়েশ ভাই না, এটা প্রথম লেখা না...(অবশ্য এখানে সামান্য প্যাঁচ আছে)

পাগল মন

কাকুল কায়েশ এর ছবি

অবশ্য এখানে সামান্য প্যাঁচ আছে

প্যাঁচের রহস্যটা কি? চিন্তিত

অফটপিকঃ আপনাকে কি চিনি? বা আপনি কি আমাকে চেনেন?

========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

অতিথি লেখক এর ছবি

প্যাঁচ হচ্ছে, প্রথমবার অন্য নামে(মামুন) লিখেছি আর দ্বিতীয়বার নামই লিখিনি।
আমি আপনাকে চিনি (আপনি আমাদের নটরডেমে বায়োলজি প্রাক্টিকালে "ব্রাদার" ছিলেন, তাছাড়া বুয়েটেও আপনাকে দেখেছি, যদিও কথা হয়নি) কিন্তু আপনি আমাকে চিনেন বলে মনে হয় না... আমি পানিসম্পদে ছিলাম (০২ ব্যাচ) বুয়েটে...

পাগল মন

কাকুল কায়েশ এর ছবি

আপনি আমাদের নটরডেমে বায়োলজি প্রাক্টিকালে "ব্রাদার" ছিলেন

এ কী সাংঘাতিক অবস্থা, পাগল মন! আমার তো হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যাচ্ছে রে ভাই! গড়াগড়ি দিয়া হাসি পাশ করার পর গত চৌদ্দ বছরে আমি মাত্র দুবার গিয়েছি নটরডেমে!!

সেদিন বার্সিলোনা-আর্সেনাল ম্যাচে এক বন্ধু নাকি আমাকে টিভিতে দেখসে - আমি বগলে মেয়ে নিয়ে নাকি স্টেডিয়ামে খেলে দেখতেসি! চোখ টিপি আর আজকে তুমি বলছ আমাকে 'ব্রাদার' হিসেবে দেখসো নটরডেমে! আজিব কান্ড!!

আমার চেহারা 'ক্যাশ' করে আর কতজন কত দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে কে জানে? চিন্তিত

========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

অতিথি লেখক এর ছবি

না, চলবে না...পরের বার চেষ্টা করব...
ধন্যবাদ আপু...

পাগল মন

তিথীডোর এর ছবি

দু- একটা জায়গায়:
চৈনিক দেশীয়> চীন দেশীয়
হ্যা> হ্যাঁ
ভাঁঙ্গা> ভাঙ্গা
চোঁখে> চোখে
শিরোণাম>শিরোনাম

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

আর কোনো পর্ব আছে নাকি? বাকি রুমমেটগুলারে বাদ দিলেন ক্যান?
চিনা মানুষের ব্যাপারে আমার মনে হয়েছে ওরা অনেক সরলভাবে চিন্তা করে - জটিলতা এড়িয়ে চলে হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি অবশ্য খুব বেশি চীনেদের সাথে মিশিনি... তবে খারাপ না...

পাগল মন

নিবিড় এর ছবি
মর্ম এর ছবি

লিখে ফেলুন পরের পর্ব, দেরী করে লাভ আছে কোন? হাসি
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

অনুপম এর ছবি

আপনাকে কেন ডিজেবলদের কোয়াড পাঠানো হল জানতে ইচ্ছা করছে । চালিয়ে যান।

অতিথি লেখক এর ছবি

সেটা আমার কাছেও একটা রহস্য চিন্তিত
তবে এটা আমার পরিচিত আরো একজনের ক্ষেত্রেও হইছে... চোখ টিপি

পাগল মন

অতিথি লেখক এর ছবি

পাগল মন,

শুরুটা বেশ ভালো লাগলো, সাথে ছবিগুলো-ও হাসি

চালিয়ে যান; ২য় পর্বের অপেক্ষায় হাসি

মুক্ত বিহঙ্গ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।