একদা এক সন্ধ্যায়

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৯/০৪/২০১০ - ১:০২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কোন এক সন্ধ্যাবেলা বেদনাহত প্রাণে
বসে বসে ভাবছিলাম একা নদীকিনারে। নাহ্
তাকে ঠিক ঠিক সন্ধ্যা বলা যাবে না তবে
বিকেলও ছিলো না; আর সত্যি কথা যদি বলতে হয়
ওগুলোকে কোনভাবেই ভাবনা বলা যায় না।
বরং ক্রমাগত ভাবনার ভারে আমি ছিলাম ক্লান্ত, ভীষণ ক্লান্ত,
বস্ত্তত আমি আর ভাবতেই চাইছিলাম না।
বহুদিন আগের কথা- দু’একটা ভুলতো হতেই পারে
আর কথা পুরোনো হলে ঠিকমত কে কবে রেখেছে মনে ।
যাক গে সে সব। মোটকথা সেদিন নদীতীরে বসেছিলাম
একটি বিশেষ কারণে--

এক অর্বাচীন কিশোরীর হৃদয়রেখা ধরে
হাঁটতে গিয়ে বুঝলাম মোটেই তা সরলরেখা নয়
বেমাক্কা হোঁচটে ভীষণভাবে আহত হয়েছিলাম
শুশ্রূষার প্রয়োজন ছিলো তাই নদীকিনারে বসে
মচকানো মনের গায়ে ডলছিলাম
নানাবিধ দার্শনিক আরকের সাথে
অতিঘণীভূত আদর্শিক পালিশের যথাযথ মিশ্রণ
সৌভাগ্য সে মলম আমাকে নিরাশ করেনি
এদিকে পরিচর্যাও হচ্ছিল বেশ ভালো -

ঠান্ডা বাতাসের ছোঁয়া, শান্ত নদী আমাকে দিচ্ছিল
প্রশান্ত আমেজ, সতেজ অনুভূতি
সবকিছু সামলে উঠছিলাম দ্রুত
নতুন শেখা সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে
হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছিল বাকী যা কিছু
দীনতার মেঘ।
নির্জন নদীতীরে বসে বিশিষ্ট বোধের আলোয়
ক্রমশ ফিরে পাচ্ছিলাম আপন অধিকার
ঠিক সন্ধ্যা-তারাটির মতো : উজ্জ্বল, নি:সঙ্গ, মহৎ!
না, ঠিক নি:সঙ্গ না,
তখনই খেয়ালে এল যে
আশেপাশে মানুষ আছে এবং তারা
সঞ্চরণশীল. . . .
তাদের বিড়ির গন্ধ, খোশগল্প, মাথাঘষা কিংবা
ডুবদেবার মৃদু শব্দ আমার কাছে এতক্ষণ
নি:স্তব্ধতার অংশ বলেই মনে হচ্ছিল।
ও হ্যাঁ, ততক্ষণে সন্ধ্যা আরও ঘণীভূত হয়েছে
তবু রক্তিম আভার শেষ ভগ্নাংশে
তাদের চকচকে নাকের ডগা তখনো
ঘোষণা করছিল যে তারা মোটেই সিল্যুয়েট নয়
কয়েকজনা ক্লান্ত মজুর মাত্র;
দিনশেষে এখানে বসে, কিছু খুচরো
গল্পগুজবের মাঝে দু’একটা বিড়ি টেনে
স্নান সেরে
নিজের ঘরে ফিরে যাবে: নিজের ঘরে?
হয়তো নিজের না
তবু ঘর তো, ঘরে মানুষকে ফিরতেই হয়।
যেখানে অপেক্ষা করছে তার বধু, সন্তান
অথবা তেমন কেউ নেই তার
শুধুই বৃদ্ধা মাতা কিংবা এও হতে পারে
সে ঘর শুধুই অন্ধকার, সে গেলেই কেবল জ্বলবে বাতি

আবার হয়তো দেখা গেল
এসবের কিছুই না: সে আদৌ ঘরে ফিরে যাবে না
বস্ত্ততঃ তার কোন ঘরই নেই
সে কোথাও ফিরে যায় না, কেবল ঘুরতে থাকে; অবশ্য
এটাকে ঠিক ঘোরাও বলা যায় না, বরং বলা যায়-
সে কেবল উড়তে থাকে, ছেঁড়া ঠোঙ্গার মতো
যতক্ষণ না কুড়িয়ে নেয় কোন কাগজ কুড়ানী
আবার কাগজ কুড়ানীর কথা এসে গেল, ধুর্
খালি কথার পিঠে কথা আসে, আসল কথায় আসি
যা বলছিলাম- লোকটির হয়তো ঘর নেই
কিন্তু এমন ভাবতে মন সায় দেয় না
ঘর থাকবে না এটা হয় নাকি?

তবে এমনও হতে পারে
সে সরাসরি ঘরে ফিরবে না
হয়তো কোন রকে বসে তাস পিটোবে
টিনের মগে আনা চা খেয়ে বিড়ি টানতে টানতে
খিস্তি করবে; অবশ্য শুঁড়ীখানায় ঢোকার স্বাধীনতাও তার রয়েছে
ভাগ্য ভাল থাকলে সেখানে সে খুঁজে পেতে
পারে জন্মের কৈফিয়ত এবং এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে সে
উপভোগ করতে পারে কোন পথনারী’র সঙ্গ
ট্যাঁকের জোর একটু বেশি হলে
ছাদের তলায়ও সেটা হতে পারে।

এসব শেষ হলেই কেবল বাড়ি ফেরার প্রশ্ন আসে
তখন সেখানে কে তার জন্য অপেক্ষা করছে
সে কথা এখানে অবান্তর; সে কোথায় ফিরে যাবে না যাবে
সে আলোচনা এখানে একেবারেই অথর্হীন।

আর মানুষের এতো বেশি ব্যক্তিগত বিষয়ে
হাত দেওয়া একদমই উচিত না
সবচেয়ে বড় কথা মূল ঘটনার সাথে এসব
আলোচনার কোনই সম্পর্ক নেই; এটা জানা কথা
সব ক্ষেত্রেই পরিমিতিবোধ প্রয়োজন
যতটুকু না বললে না ততটুকুই বলা উচিত
তাই তার ঘরের দরজায় ঠিক কি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল
সেটা জানার চেয়ে জরুরী হচ্ছে-

তখন স্পষ্টতই আমরা স্থান কালের ঐক্যে
বিরাজ করছিলাম, এ নিয়ে কোন সন্দেহই ছিল না
অবাক কান্ড!
সেখানেই সমস্যা হল-

হঠাৎ করেই কেন যেন মনে হতে লাগল
কোথায় একটা কিন্তু রয়েছে
কিংবা তার চেয়েও বেশি কিছু
কেন মনে হচ্ছিল জানি না, অথচ কিছু একটা মনে হচ্ছিল
তাতে কোন সন্দেহ নেই।

যদিও আমার উপস্থিতিকে তারা গ্রাহ্য বা অগ্রাহ্য
কোনটাই করেনি
অবশ্য তাতে কিছু প্রমাণ হয় না
কিন্তু সমস্যা ছিলো অন্য যায়গায়
মনে হচ্ছিল ওরা আমাকে দেখেইনি
এমনকি আমার এমনও সন্দেহ হচ্ছিল ওরা
আদৌ আছে কি না!

তাদের একজন ঠিক আমার পাশ দিয়ে
হেঁটে গেল- একটু হলেই আমার গায়ে
লাগতো- কিন্তু লাগেনি- হয়তো
লেগেছিল আমি বুঝতে পারিনি।

আর একজন আমার সামনেই গামছা ঝাড়ছিল
তখন ঠান্ডা জলের ঝাপটা লাগে আমার মুখে
না! কথাটা ঠিক হল না, মুখে লাগেনি বরং বলা যায়
জলকণা আমার ভিতর দিয়ে
বেরিয়ে গেল- আর সেটাই হয়েছিল মনে হয়
কারণ- আমি নিশ্চিত বলতে পারি আমার
মুখে কোন জল লাগেনি-
আমি খেয়াল করেছিলাম আমার মুখ
শুকনোই আছে- অথচ আমি পেলাম
একটা শীতল অথবা সিরসিরে অনুভূতি অথবা
এমনও হতে পারে সে অনুভূতি আমি
ঠিক শনাক্ত করতে পারিনি-

কিন্তু পরে ভেবে দেখেছি মোটেও আশ্চর্য নয়
আসলে জলকণা খুব মিহি ছিল, এতটা মিহি যে
শরীরে লাগে না- ভেদ করে চলে যায়- তাই এখন
আর আশ্চর্য হই না- বহুদিন আগের ঘটনা
তখন আমার বয়স ছিল আঠার এখন . . .!
হাসি পায়- তখন কত সহজে আশ্চর্য হতাম!

তারপর বয়স বাড়ছিল দ্রুত, সেই সাথে
জ্ঞান- আর এটাতো সবাই জানে, জ্ঞান
সবই ব্যাখ্যা করতে পারে-
এই আপাত আশ্চর্য ঘটনাগুলো খুবই সাধারণ
খুব সহজে তা বোঝা যায়, শুধু সময়ের ব্যাপার-
তবু মাঝে মাঝে খটকা লাগে

হঠাৎ হঠাৎ মনে হয়-এত মিহি জল, ওরা পেল কোথায়!
আসলে খুব অপরিপক্ক ছিলাম-
সঠিকভাবে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে পারিনি-
সেই কতকাল আগের কথা!

--আরিফ বুলবুল,


মন্তব্য

সাফি এর ছবি

কবিতা যদি ছোট হয়ে, তাহলে মনে হয় হুট করে শেষ হয়ে গেল, আবার যদি আকারে এমন বড় হয়, তাহলে মনে হয় ওরে বাবা এত বড়! কি মুশকিলে পড়া গেল, বলেনতো! আমি কবিতা তেমন বুঝিনা, তাই মন্তব্য করা সমীচিন হবেনা, শুধু সচলে স্বাগতম জানিয়ে গেলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

সাফি,
এইযুগে কবিতার পাঠক কম।(কথাটা নজরুল ভাই আমাকে গতকালও বলেছেন) যদিও কথাটা বিশ্বাস করতে চাই না বা বিশ্বাস করি না কিস্তু শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করতে বাধ্য হই। অসংখ্য প্রমাণ বারবার ধাক্কা দিয়ে বুঝিয়ে দেয় কবিতার পাঠক কম। আমি মনে করি কবিরা যদি সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকতে চায় তবে তাদের অবহেলা সহ্য করার চর্চা করা উচিত। অবহেলা আমার অভ্যাস আছে।. . . . . . তবুও আমার মতো এক অখ্যাত কবির দীর্ঘ কবিতা আপনি পড়েছেন এবং স্বাগত জানিয়েছেন; বিষয়টা আমার কাছে অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক। যদিও মন্তব্য করলে আরও খুশি হতাম কিন্তু যেটুকু পেলাম তাই আমার জন্যে অনেক। আপনাকে ধন্যবাদ!
--আরিফ বুলবুল,

অতিথি লেখক এর ছবি

কবিতায় পরিমিতি বোধ থাকাটা একদম জরুরী। কবিতার শরীর থেকে বাড়তি মেদ ছেঁটে ফেলাটাও ভালো কবিতার বৈশিষ্ট। কবিতার পাঠক অনেক বেশী বুদ্ধিমান। সময় নিয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে, প্রতিটি দাঁড়ি কমা পর্যন্ত। শুরুটা বেশ ভালো লেগেছিল, কিন্তু কিছু দূর গিয়ে মনে হয়েছে, গদ্য কবিতার যে একটা ছন্দ থাকে , যা কবিতার প্রাণ, তা অনুপস্থিত। এটা কি আপনার শুরুর দিকে লেখা কবিতা। তবে চালিয়ে যান । এক সময় এমনিতেই শিখে যাবেন কোথায় থামতে হবে আর কোথায় মেদ ঝরাতে হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ! কী নামে ডাকবো আপনাকে? কোন নামইতো দেন নাই! তবে নামে কী আসে যায়। জ্ঞানটাই আসল। সে জ্ঞানের স্বাক্ষর আপনি রেখেছেন। কবিতায় পরিমিতি বোধ থাকাটা একদম জরুরী। এই কথাটার সাথে আমি ভীষণভাবে একমত। গদ্য কবিতার যে ছন্দ থাকে তার নাম কী আপনার কাছ থেকে জানতে চাই। জানতে চাই সেই ছন্দের রূপ এবং রূপায়ন সম্পর্কে। আশা করি আমাকে নিরাশ করবেন না। আর কবিতায় পরিমিতিবোধ বলতে আপনি কী বোঝাতে চেয়েছেন সেটা জানাও জরুরী। কবিতার মেদের কারণ কী? এই কবিতায় কোথায় মেদ জমেছে জানতে পারলে মেদ ঝরাতে সুবিধা হবে। দরকার পড়লে আমি আমার কবিতাকে ব্যায়াম করাবো। হতে পারে সেটা ফ্রি হ্যান্ড একসারসাইজ অথবা উইথ ইনস্ট্রুমেন্ট। যোগব্যায়ামও করানো যেতে পারে। আমার শরীর মেদহীন এবং আমি সেরকমই থাকতে পছন্দ করি। আমার কবিতাকেও মেদহীন রাখতে পছন্দকরবো এটাই স্বাভাবিক। আপনার সাহায্য কামনা করছি। আশাকরি নিজের নাম ঠিকানাসহ লিখবেন। আপনার বিশ্লেষণের অপেক্ষায় থাকলাম। আপনার গুণমুগ্ধ
--আরিফ বুলবুল,

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি বেশ উপভোগ করছিলাম কিন্তু "হঠাৎ করেই কেন যেন মনে হতে লাগল" এই লাইনের পরের অংশটুকু অতিরিক্ত বড় মনে হল আমার কাছেও। ওভারঅল আপনার স্টাইলটা ভাল লাগছে আমার কাছে।

-অন্ধকারের পথিক

অতিথি লেখক এর ছবি

অন্ধকারের পথিক,
আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার ভালোলাগার জন্য। আপনাকে ধন্যবাদ আপনার সহজ মন্তব্যের জন্যে। আপনি বলেছেন অমুক জায়গার পর থেকে আপনার কাছে বড় মনে হয়েছে। নিশ্চয়ই বড় মনে হয়েছে বলেই বলেছেন। আপনার এই সহজ করে বলাটাকে আমি অভিনন্দন জানাই। আরও কিছু কথা বলার ছিল কিন্তু কথাগুলো না গুছিয়ে বলা ঠিক হবে না। ব্লগে যেহেতু আছেন বলা হবে একদিন। তবে একটা কথা জেনে রাখবেন আমি পাঠকের মন্তব্যকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেই। অনেকে বলেন এটা তোমার ভুল অনেকে বলেন ঠিক। ভুল নাকি ঠিক জানি না তবে পাঠককে এবং তার সমালোচনাকে গুরুত্ব না দিলে কবিতা লেখাই আমার কাছে অর্থহীন। তাই আমি মনে করি কবি হিসেব কবির যেমন দায়িত্ব আছে পাঠক-সমালোচক হিসেবে পাঠকেরও তেমন দায়িত্ব আছে। শুভেচ্ছা রইলো।
--আরিফ বুলবুল,bulbulj29@gmail.com

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।