সীমানার বাইরে...(২য় পর্ব)

নীলকান্ত এর ছবি
লিখেছেন নীলকান্ত (তারিখ: বুধ, ১৯/০৫/২০১০ - ২:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পলাশ রঞ্জন সান্যাল

গত ১৪।০৫।২০১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছি উপন্যাস "সীমানার বাইরে"। ব্লগে লেখা আমার প্রথম উপন্যাস। আজ সচলে দিলাম এর দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্ব পরার জন্য ক্লিক করুন

ডেলটোনা। ছিমছাম গোছানো এক শহর।
মামার বাসাটাও খুব সুন্দর। একদম ছবিতে যেমন দেখা যায়।
মামী অঙ্কিতাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলেন।
-যাক, অবশেষে এলি ।
অঙ্কিতা ক্লান্ত ভাবে মাথা নাড়ায়। এত লম্বা ভ্রমণ সে আগে কখনও করেনি। টানা ১৬ ঘন্টা প্লেনে।
মামীও বোঝেন। আর কথা না বাড়িয়ে অঙ্কিতাকে ওর ঘর দেখিয়ে দেন।
আজ থেকে মামা-মামীর সাথেই থাকবে অঙ্কিতা। যতদিন হোস্টেলের কোন ব্যবস্থা না হয়।
রুমের দরজা বন্ধ করেই সোজা বিছানায় গিয়ে পড়ে অঙ্কিতা। সারা শরীরের এক অদ্ভূত অসাড়তা।

কতক্ষণ এভাবে ছিল বলতে পারবে না। মামীর ডাকে চোখ খুললো সে।
মামী দরজা ধাকাচ্ছেন।
-অঙ্কিতা, খাবার টেবিলে। খেয়ে নে।
অঙ্কিতা উঠে বসে। দুহাত দিয়ে চোখ দুটো সামান্য ডলে চোখ দেয় ঘড়ির দিকে।
ঘরের ঘড়িটা ঠিক দরজার ওপরে।
প্রথম নজরে ঘরটা ছোট মনে হলেও ঘরটা যথেষ্ট বড়। অন্তত অঙ্কিতার জন্য।
অঙ্কিতা জানে এটা আগে দিদির ঘর ছিল।
ফ্রেস হয়ে নিচে গেল অঙ্কিতা। ডাইনিং এ মামা-মামী বসে কফি খাচ্ছিলেন।
-একচোট ঘুম দিয়ে ফেলেছিস মনে হয়।
-হ্যা, একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আরকি।
মামা কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বলেন
-তো বাকীদিন কি করবি?ঘুমাবি না তোর মামীর সাথে একটু বেড়িয়ে আসবি? আমাকে আবার এখনি বের হতে হবে।
অঙ্কিতা ভাবে। দেড়দিন হয়ে গেল রাজীবের সাথে কথা হয় না।
রাজীব এতক্ষণে টেনশনে অস্থির হয়ে যাবার কথা। ও এমনিতেই খুব ভীতু।
প্রথম যখন শোনে, অঙ্কিতাকে কোন মতেই যেতে দিবে না রাজীব।
-এসব কি? তুমি চলে গেলে আমার কি হবে?
- কিসব বাচ্চাদের মত কথা বলছো!!! যা হবার তাই হবে। পড়ালেখা শেষ করে চাকরিতে ঢুকে পড়বা। আমি কয়েক বছর পর এসে তোমাকে নিয়ে যাব, না হয় এখানেই থেকে যাব। তুমি যা বলবে তাই করবো। কিন্তু এখন আমাকে যেতেই হবে। মা-বাবা কেউ চায় না আমি এখানে থাকি।
-তারা তো অনেককিছুই চায় আবার অনেককিছুই চায় না। সেসব মানতে গেলে তো আমাকেও ছেড়ে দিতে হয় নাকি?
অঙ্কিতা বুঝতে পারে রাজীব রেগে যাচ্ছে। অঙ্কিতা বোঝাবার চেষ্টা করে।
-আমি আর কি করতে পারি বল? আমি এখনও ছোট। আর তোমার গ্রাজুয়েশন এখনও হয়নি। তোমার গ্রাজুয়েশন শেষ হতে যে কয়দিন লাগবে ততদিনে ওখানে আমার অর্ধেক পড়ালেখা শেষ হয়ে যাবে। আর বাকী অর্ধেক সময় তুমি কিছু একটা করে এক জায়গায় দাঁড়ালে। তাতে আমার পরিবারও কিছু বলতে পারবে না, আর কোন সমস্যাও হবে না।
রাজীব চুপ করে যায়।
অঙ্কিতা চলে যাবার আগের রাতে রাজীব খুব কেঁদেছিল। অঙ্কিতাকে অসংখ্যবার প্রমিস করিয়েছে, তাকে যেন সে আজীবন ভালবাসে, কোনদিন ছেড়ে না দেয়।
কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে এসব কথা ভাবে অঙ্কিতা।
-তোর মা ফোন করেছিল। কল ব্যাক করতে বলেছে। খেয়ে উঠে কল করিস।
অঙ্কিতা মনে মনে ভাবে, এই সু্যোগে রাজীবকে একটা ফোন দেওয়া যাবে।

মাকে ফোন দেওয়ার আগে রাজীবকে ফোন দেয়।
-হ্যালো।
-হ্যালো, রাজীব। অঙ্কিতা বলছি।
-কোথায় তুমি এখন?মামার বাসায়? আমি তো চিন্তায় অস্থির। তোমার না ইন্ডিয়া থেকে ফোন করার কথা ছিল?
-আমি মামার বাসায়। ঘন্টাখানেক আগে পৌঁছেছি।। ইন্ডিয়া থেকে ফোন দিতে পারিনি কারণ সবসময় কেউ না কেউ সাথে ছিল। তুমি কি রাস্তায়? আশেপাশে এত শব্দ কিসের?
-হ্যাঁ, রাস্তায়। বাসায় যাচ্ছি।
-তুমি কেমন আছো?
রাজীব দীর্ঘশ্বাস ফেলে। গত দুরাত সে ঘুমাতে পারেনি।
-ভালই।
রাজীবের গলা শুনে অঙ্কিতার চোখ ভিজে আসে। ভালোবাসা হবার পর কখনও এতদূরে থাকেনি ওরা দু’জন।
অঙ্কিতা নিজেকে সংযত করে।
-রাজীব, আমাকে রাখতে হবে। মাকে কল করবো। তুমি অনিয়ম কোরো না। আবার কবে কথা হয় জানি না। জখনই সুযোগ পাবো কল দিব।
-আচ্ছা, তুমি ভালো থেকো।
-------------------------------------------------------------------------------------------

১৮ই জুন,২০০৬। রবিবার।
আর এক সকাল। আর এক যুদ্ধ। নিজের সাথে নিজের।
রুদ্র উঠে নাস্তা করে। মুখ হাত ধোঁয়ার বালাই নেই।
সকালের প্রথম ক্লাসটা মিস যাবে। গেলেও কি?থোড়াই কেয়ার করে।
ঘরে এসে মানিব্যাগ দেখে। দশটাকা আছে। এই দিয়ে ফার্মগেট গিয়ে আবার আসা হবে না। তারপরও কিছু বলে না। চুপচাপ বের হয়ে আসে বাসা থেকে।
হেঁটেই যাবে সে। কষ্ট হোক। প্রথম প্রথম খারাপ লাগতো, এখনই ভালই লাগে। অন্তত একজন তো তার সাথেই আছে।

সেদিনই...
এখানে আসার পর সবকিছু কেমন যেন ওলটপালট। সারা সকাল চোখ ভরা ঘুম, আর রাতের বেলা এক ফোঁটা ঘুম আসে না।
সকালের দিকে যা একটু ঘুম হয় অঙ্কিতার। নতুন জায়গা, মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই।
গত কদিনে বুঝে গেছে এখানকার মানুষ কি পরিমাণ ব্যস্ত থাকে।
মামা-মামী দুজনেই মহা ব্যস্ত। সকাল আর রাত ছাড়া দেখা পাওয়া ভার।
গত কদিন অঙ্কিতা নিজে নিজেই ডেলটোনা ঘুরে বেড়িয়েছে।
ভোরের আলো ফুটে উঠতেই বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে অঙ্কিতা।
আজ রাতে একটুও ঘুম হয়নি তার। সারাক্ষণ রাজীবের কথা মনে পড়েছে।
সেই যে একবার কথা হয়েছে এখানে আসার পর আর যোগাযোগ হয়নি।
গতক’দিন অসংখ্যবার ফোন করেছে সে রাজীবকে। কিন্তু রাজীব ধরেনি।
বিছানা থেকে নেমে ড্রইং রুমে যায় সে। রাজীবকে আবার ফোনে চেষ্টা করে। রিং হচ্ছে।
কেউ ধরে না। অঙ্কিতা ভেবে বের করতে পারে না কেন রাজীব ফোন ধরছে না।
অঙ্কিতার খুব চিন্তা হতে থাকে। এমন তো কখনও হয় না। কি করবে ভাবতে থাকে অঙ্কিতা।
কোন কূল কিনারা পায় না।

(চলবে...)


মন্তব্য

কমলা-মডু এর ছবি

সঙ্গের বিশাল আকারের ছবিটি মুছে দেয়া হল। শুধু মাত্র লেখার শিরোনামযুক্ত ছবিটি ঠিক কী প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়েছিল তা বোধগম্য নয়। অনুগ্রহ করে ছবি প্রকাশের সময় মাঝারী আকারের জেপিজি ফরমেটের ছবি ব্যবহার করবেন।

পলাশ রঞ্জন সান্যাল [অতিথি] এর ছবি

কমলা মডু ভাইঃ আমি ছবিটা আপলোড করার পর মুছতে চেয়েছিলাম। কিভাবে করবো বুঝতে পারিনি। যদি একটু বলতেন কিভাবে আপলোড করার পর ছবিটা মুছে ফেলা যায়।
পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলাম কেমন লাগে।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

চলুক

_________________________________________

সেরিওজা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।