একা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৪/০৬/২০১০ - ৯:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জহিরুল ইসলাম নাদিম

গ্রামের নামটি রাজাখালী। ভারি ছোট্ট সেই গ্রাম। কিন্তু দৈর্ঘ্যে সে যতটা ছোট প্রস্থে কিন্তু ততটা নয়। সেই গ্রামটিকে দুভাগ করে দিয়ে তার সিঁথী হয়ে বয়ে গিয়েছিল এক নদী। কোনো কালে সে ভরা ছিল—এখন মরা। তো তার একপাড়ে জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়েছিল দুটো আদ্যিকালের তালগাছ। অনেক দিন ওরা ওভাবে দাঁড়িয়েছিল। কত দিন? তা কিন্তু বলা যাবে না। গাঁয়ের লোকেরা শুধু ওদুটোকে দাঁড়িয়ে থাকতেই দেখেছে- জন্মাতে দেখেনি। সময়ের নানা প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে এসে ওরা ওখানে দাঁড়িয়েছিল দিব্যি। গভীর রাতে যখন কেউ জেগে থাকতো না আর জ্যোৎস্নার মিষ্টি আলোয় পৃথিবী হয়ে উঠতো স্বপ্নপুরী তখন ওরা হয়তো কথা বলতো। পরষ্পরের পাতা ছুঁয়ে হৃদয়ের কথাগুলো হয়তো ব্যাপিত হয়ে যেত অন্যজনের হৃদয়ে। ভাগ করে নিত একে অপরের দুঃখ আর আনন্দকে। কখনো সখনো সামান্য বাতাস বইলে ওরা হাত ধরাধরি করে নেচে উঠতো। সেই ছন্দময়তা দেখে লোকের মন জুড়োতো!

এভাবেই সময় বেশ কাটছিল। সুখ তো কারো কপালে চির দিন সয় না। ওদেরও সইলো না। শোনা গেল ওদের একটিকে কেটে ফেলা হবে! একদিন একজনের তন্দ্রামত এসেছিল। হঠাৎ সেই ভাবটা খট খট শব্দে লাপাত্তা হলো। ভীষণ রকম চমকে উঠে সঙ্গীকে ডাকল ও। কোনো সাড়া নেই। আরেকটু জোরে ডাকল এবার। তারপর আরো জোরে। আরো। কিন্তু নাহ্ কোনো সাড়াই নেই বন্ধুর। থাকবে কী করে? ওর সঙ্গীতো তখন হিংস্র মানুষের নিষ্ঠুর কুঠারাঘাতে জর্জরিত, ছিন্নভিন্ন, মৃত!

এরপর থেকে সেই একাকী দাঁড়িয়ে থাকা গাছটির সময় আর কাটতে চাইতো না। যাদের ছায়া দিতে প্রখর সূর্যকে মাথায় তুলে নিত, যাদের খাওয়াতে নিজের ফল দিতে কোনোদিন কার্পণ্য করেনি সেই মানুষের এহেন আচরণে সে বাকরহিত হয়ে গেছিল। এরপর বসন্ত এসেও ওকে আর মাতাতে পারেনি। পাখা দুলিয়ে ওকে নাচতেও দেখেনি কেউ। কখনো প্রবল বাতাসে গাছটি যদি নড়েও উঠত তাতে কোনো ছন্দ ফুটত না –প্রতিবাদের ভঙ্গি থাকতো হয়তো।

একদিন গাঁয়ের লোকরা দেখল সেই একাকী গাছটি শুকিয়ে যাচ্ছে-প্রাণশক্তি ফুরিয়ে আসছে তার। আসলে সে ইচ্ছে করেই ওমন শুকিয়ে যাচ্ছিল। প্রতিমুহূর্তে কমিয়ে আনছিল তার প্রাণশক্তি। যেন মরণই ছিল তার প্রতিবাদের মূর্ততা। কেননা একা ছিল সে। একদম একা।


মন্তব্য

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

কারন একা ছিলো সে । একদম একা -

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো কি লাগলো প্রখর-রোদ্দুর?!

তুহিন এর ছবি

এ পৃথিবীতে যে একা নয় সে অসম্ভব ভাগ্যবান।

অতিথি লেখক এর ছবি

সত্যি তাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

কে একা নয়? সবাই একা। একা এসেছি একা যেতে হবে।
গোছানো লেখা। ধারণা ভালো লেগেছে। নিয়মিত লিখলে আপনার কাছ থেকে আরো ভালো কিছু পাওয়া যাবে।

পলাশ রঞ্জন সান্যাল

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ পলাশ। চেষ্টা করব নিয়মিত লিখতে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।