প্রমিত বাংলা বানানরীতি, প্রশ্ন অপরিমিত : প্রয়োজন, দায়, না বাতুলতা?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২২/০৬/২০১০ - ৮:২২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

‘বাংলা একাডেমী’ প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা বানানরীতি সম্বন্ধে না জেনেই তা উড়িয়ে দেবার একটা প্রবল প্রবণতা রয়েছে আমাদের মধ্যে। বাংলা ভাষায় একটা প্রমিত বানানরীতি যে প্রায় দাঁড়িয়ে গেছে তা মেনে নিতেও আমাদের ভীষণ আপত্তি। একটা ভাষা যদি তার সব ব্যবহারকারীর জন্য হয় তো তার বানানের ক্ষেত্রে একটা মানরীতিই সব থেকে নিরাপদ যা সকলের জন্য সহজবোধ্য। প্রমিত বানানরীতি অনুসরণ না করার অন্ধ প্রতিজ্ঞা ও গোয়ার্তুমি বাংলাকে একটা জগাখিচুড়ি ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ছেড়েছে। ভাষার ক্ষেত্রে হয়তো রীতি তৈরিই হয় ভাঙার জন্য, তাতে হয়তো রীতিরই লাভ, কারণ সে রীতির গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু তা যাচাই হয়ে যায় এতে। কিন্তু তা যদি হয় বিচার-বিবেচনাহীন, অগ্রহণযোগ্য রীতির রক্ষাকবচ, তাহলে বাংলা ভাষার মানদণ্ড কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভেবে দেখবার বিষয়।

প্রথমেই বলে নিই অতিরিক্ত বানান-চিন্তাকে যাঁরা শুচিবায়ুগ্রস্ততা বলে পাশ কাটিয়ে যেতে চান আমি তাঁদের দলে নই। মানসম্পন্ন লেখাও ভুল/অপ্রমিত বানানের কোপে পড়ে পাঠযোগ্যতা হারিয়ে ফেলতে পারে—এই আমার বিশ্বাস। হ্যাঁ, ভুল বানান থাকবে, তবে তা বড়জোর ডায়েরির পাতায় বা বাজারের ফর্দতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। সাইনবোর্ড-ফেস্টুন-বিজ্ঞাপন কি গণমাধ্যম বা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে ভুল বানানের দৌরাত্ম কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।

যাঁরা ব্লগে লেখালেখি করছেন, তাঁরা কতখানি সচেতন বানানের বিষয়ে? আমি শব্দপ্রেমী, বানান ভুল আমাকে পীড়িত করে। হয়তো আমার মতো অনেক পাঠকই বিরক্ত হন। তবে ভুল তো ভুলই, আমার আপত্তি ইচ্ছাকৃত ভুল বা অপ্রমিত বানানে।

অনেকেই প্রমিত বানানরীতিকে বাড়তি দায় বলে মনে করতে পারেন। যেখানে বাংলায় শুদ্ধ বানানে লেখাই কষ্টকর, সেখানে প্রমিত বানানরীতি চাপিয়ে দেওয়াটা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। তা ছাড়া প্রমিত বানানরীতি ভাষাকে গণ্ডিবদ্ধ করে ফেলবে বলেও অনেকের আশঙ্কা থাকতে পারে। এ আশঙ্কা কতটা যৌক্তিক আর কতটা অজ্ঞতা/উন্নাসিকতার পরিচয় তা নির্ণয় করার জন্যই এই আপাত বেহুদা লেখাটি পোস্টাতে হলো।

বাংলা ভাষায় পণ্ডিতের সংখ্যা বেশি, তাই সবাই নিজস্ব বানানরীতি রচনা করেন, আর বাংলা ভাষার/বানানের কর্ণধার কর্তৃক প্রণীত প্রমিত বানানরীতিকে থোরাই কেয়ার করেন। যদিও প্রমিতকরণের জন্য যে পর্ষদ গঠন করা হয়েছিল, সেই পর্ষদও কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। তেমনি জাতীয় শিক্ষাবোর্ডের বানানরীতিও অনেক ক্ষেত্রে প্রমিত বানানরীতির অনুরূপ নয়। পাশাপাশি পত্রিকাগুলোর যথেচ্ছাচার তো আছেই। এমন অবস্থায় বাংলা ভাষা ব্যবহারকারীরা তো দিশেহারা হবেনই।

তবে আশার কথা হলো, যথেচ্ছাচার সত্ত্বেও ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি মাসে ‘বাংলা একাডেমী’ বানান বিষয়ে যে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করে তা পরবর্তীকালে পত্র-পত্রিকাগুলোকে অনুসরণ করতে দেখা যায়, যদিও পুরোপুরি নয় [২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত 'বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে'র (পরিমার্জিত সংস্করণ) ‘পরিশিষ্ট’ হিসেবে মুদ্রণের পূর্বে ওই বছরেরই নভেম্বর মাসে ‘প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম’ পুনরায় সংশোধন করা হয়। এখন প্রমিত বানানরীতির এই রূপটিই চালু আছে]। যতটুকু ব্যত্যয় চোখে পড়ে তা হতে পারে অজ্ঞাতসারে, অথবা 'নিজস্ব স্টাইল’-এর কারণে। প্রমিত বানানরীতি গ্রহণ ও ‘কোনো অসঙ্গতি থেকে থাকলে’ তা সংশোধনের জন্য একটা ঐকমত্য প্রয়োজন। সবাই প্রমিত বানানরীতিকে গ্রহণ করলে আপনা-আপনিই তা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে ও চর্চিত হবে।

নিচে প্রশ্নোত্তর-আকারে 'বাংলা একাডেমী' প্রণীত প্রমিত বানানরীতি অনুসরণের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হলো। ভবিষ্যতে প্রমিত বানানের নিয়মসমূহ ও সেগুলো মেনে চলায় আমাদের কী লাভ হবে তা নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা রইল। দু-একটি নিয়মে আমার নিজেরও আপত্তি আছে, সেগুলোও আলোচনায় উঠে আসবে। এ ছাড়া সবার সম্মিলিত যুক্তিতর্কের মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকেই কিছু-না-কিছু অজানা বিষয় জানতে পারব ও নিজেদের কোনো ভুল থেকে থাকলে তা সংশোধন করতে পারব বলে আশা করছি। যাঁরা কোনো-না-কোনোভাবে লেখালেখির সাথে যুক্ত তাঁদের সবাইকে মতামত জানাতে আহ্বান জানিয়ে রাখছি এই সুযোগে।

প্রশ্ন : ১. প্রমিত বাংলা বানানরীতি প্রণয়নের আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল কি?

উত্তর : অনেক চলমান ও বর্ধিষ্ণু ভাষাতেই দীর্ঘকাল জুড়ে ধীরে ধীরে বানানের কিছু কিছু পরিবর্তন হতে দেখা যায়। তখন একসময়ে বানানের নিয়ম নতুন করে বেঁধে দেওয়ার বা সূত্রবদ্ধ করার প্রয়োজন হয়। এ-যাবৎ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-নির্দেশিত নিয়ম আমরা অনুসরণ করে চলেছি। কিন্তু আধুনিক কালের দাবি অনুযায়ী, নানা বানানের যেসব বিশৃঙখলা ও বিভ্রান্তি আমরা দেখছি সেই পরিপ্রেক্ষিতে বানানের নিয়মগুলিকে আর একবার সূত্রবদ্ধ করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বিশেষত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-নির্দেশিত নিয়মে বিকল্প ছিল বেশি। বিকল্প হয়তো পরিহার করা যাবে না, কিন্তু যথাসাধ্য তা কমিয়ে আনা দরকার। এইসব কারণে ‘বাংলা একাডেমী’ বাংলা বানানের বর্তমান নিয়ম নির্ধারণ করছে।

প্রশ্ন : ২. একই শব্দ একাধিক বানানরীতিতে লিখতে অসুবিধা কোথায়? মানুষের ভাষায় বৈচিত্র্য/ফ্লেক্সিব্লিটি থাকা প্রয়োজন, ওতে ভাষার প্রাণ বাড়ে।

উত্তর : প্রতি ভাষারই একটা স্ট্যান্ডার্ড বানানরীতি থাকে- খুব সহজ উদাহরণ হলো ইংরেজি; হয় ইউএস অথবা ব্রিটিশ রীতি, এর বাইরে আরেকটা রীতি তারা অনুসরণ করে কি না তা আমার জানা নেই। তাই বলে সে ভাষায় বৈচিত্র্য/ফ্লেক্সিব্লিটি-র কিছুমাত্র ঘাটতি আছে কি?

বাংলা ভাষায় হয়তো শব্দভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ নয়। তবে বানানরীতিতে ভিন্নতা আনাটা কিছুতেই এ সমস্যার সমাধান হতে পারে না। তাতে বিভ্রান্তি বাড়বে বৈ কমবে না।

আমি মনে করি বানানের বিষয়টা একান্তই ভাষাতত্ত্ববিদের কাজ, তবে তারা কিন্তু কিছুতেই ভাষার গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করেন না, সে এক্তিয়ারও তাদের নেই। ভাষা পরিবর্তিত হয় গণ-মানুষের হাতে, লেখক-কবিরা তাতে আরও বেশি প্রাণ সঞ্চার করেন মাত্র। প্রমিত বানানরীতি লেখকের পায়ে বেড়ি পড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়নি, এটা করা হয়েছে ভাষার শুদ্ধতা রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা ভেবেই।

ভাষাটা বিভিন্ন ব্যক্তির প্রকাশভঙ্গির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হতে পারে এবং এটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু মৌলিক বানানের ক্ষেত্রটা তো অভিন্ন করা যায়। এ নিয়মটা সবাই অনুসরণ করলে হয়তো পাঠক বিভ্রান্তিতে পড়বেন না এবং ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটা সমতা বজায় থাকবে।

প্রশ্ন : ৩. ভাষার ক্ষেত্রে কিছু জিনিসকে ‘প্রমিত’ ঘোষণার একটা বড় সমস্যা হচ্ছে একই সঙ্গে অনেক কিছুকে ‘অপ্রমিত’ ঘোষণা করার ভার।

উত্তর : কিছু জিনিসকে ‘প্রমিত’ ঘোষণায় কোনো সমস্যা দেখছি না। হ্যাঁ, এর জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন হবে এ কথা সত্য। কিন্তু এটা তো চলমান প্রক্রিয়া, তাই না? এ পর্যন্ত যেসব বানান প্রমিত হিসেবে মোটামুটি প্রণিধানযোগ্য হয়েছে সেগুলোকে তো আমরা মেনে নিতে পারি এবং অনুসরণ করতে পারি। আর যেসব বানানকে শুদ্ধ/গ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রমাণ করা যাচ্ছে না সেগুলো সবাই বর্জন করলে আপনা-আপনিই কালপরিক্রমায় হারিয়ে যাবে, আলাদা করে ‘অপ্রমিত’ ঘোষণার কোনো প্রয়োজন দেখছি না।

প্রশ্ন : ৪. প্রমিত বানানের আগে রচিত হাজার হাজার বইয়ের কী হবে?

উত্তর : ভাষা একটি চলমান বিষয়। তা না-হলে ৫০ বছর আগের ভাষা আর বর্তমান ভাষা একই রকম হতো। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। পুরোনো সেসব বইয়ের বানান সংস্কারের কথা কেউই বলছেন না, বরং সেই অমূল্য সাহিত্যভাণ্ডার যেমন আছে তেমন থাকাটাই সবার কাম্য। সেই এত দিন ধরে বাংলা বানান যে ক্রমাগত রূপ পরিবর্তন করে চলেছে তা বাংলা ভাষার জীবনীশক্তি এবং প্রবহমানতারই বহিঃপ্রকাশ। তাহলে এ-প্রজন্ম ঠিক কোন বানানরীতিটি অনুসরণ করবে তা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চয়ই কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। ঠিক এখানেই প্রমিত বানানরীতি মেনে নেওয়ার প্রশ্নটি আসছে।

প্রশ্ন : ৫. রীতি যে সবাইকে মানতেই হবে এমন নয়। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রীতির অনেকগুলো বানান মানতেন না।

উত্তর : প্রমিত বানানরীতির কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়মের বিপক্ষে আপনার যদি কোনো যু্ক্তিগ্রাহ্য মতামত থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। নতুবা কেন মেনে নেবেন না? আপনার এ ধরনের ভূমিকায় আপনার প্রিয় মাতৃভাষাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আশা করি শুধুমাত্র ‘রীতি ভাঙার জন্য রীতি অমান্য’ করার কাজটি করবেন না। রীতি যদি ভাঙতেই হয়, তাহলে তথাকথিত যেসব শুদ্ধ (কিন্তু অপ্রমাণিত ও কম গ্রহণযোগ্য) রীতি এখনও আমাদের শৃঙ্খলিত করে রেখেছে সেগুলি ভাঙুন।

প্রশ্ন : ৬. ভাষা ব্যবহারকারীদের অন্তত অর্ধেক নিজের সারা শিক্ষাজীবন এই প্রমিত বানানরীতি ছাড়াই পার করে আসেননি? হঠাৎ কোনো প্রতিষ্ঠান বা চার-পাঁচজন মানুষ লাখ লাখ লোকের ২০ বছরের শিক্ষাকে ভুল বলবার ধৃষ্টতা দেখাতে পারে না।

উত্তর : ‘বাংলা একাডেমী’ কোনো ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান নয়, আমাদের জাতীয় পর্যায়ের সেরা মননশীল ব্যক্তিরা প্রমিত বানানরীতি প্রণয়নের সাথে জড়িত। মানা না-মানার দায়িত্ব আপনার। যিনি না-মানেন তিনি বুঝেই না-মানেন, আর যিনি না-বুঝে না-মানেন, তিনি নিঃসন্দেহে ভুলবশত না-মানেন। ‘বাংলা একাডেমী’র প্রমিত বানানরীতির বাইরের বানানকে যে-কেউ ভুল বানান বলে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন সহজেই, অন্তত আমি তা-ই মনে করি।

প্রশ্ন : ৭. ‘বাংলা একাডমী’ যে বিভ্রান্ত তার প্রমাণ তার নামের ‘একাডেমী’ বানানটিই।

উত্তর : কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নামের ক্ষেত্রে প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রযোজ্য নয়। কাজেই ‘বাংলা একাডেমী’ তার নাম পরিবর্তন করতে বাধ্য নয়। হঠাৎ করে এত পুরোনো একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নাম পরিবর্তন করা সম্ভব কি না তাও ভেবে দেখবার বিষয়। তবে বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য আমি ‘বাংলা একাডেমী’র নাম পরিবর্তনের পক্ষে। এবং অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আমরা তা-ই দেখতে পাব।

***
বাংলা ভাষার মতো এতগুলো ভিন্ন ভিন্ন বানানরীতি বিশ্বের আর কোনো ভাষায় আছে কি? আরও পরিতাপের বিষয় এই ভিন্ন ভিন্ন বানানকে শুদ্ধ বানানের ট্যাগ পরিয়ে রাখা হয়েছে আজ অব্দি। সত্যিকার অর্থে এতে কি বাংলা ভাষার কোনো লাভ হয়েছে পাঠকদের বিভ্রান্ত করা ছাড়া? বাংলাদেশের ভাষাতত্ত্ববিদ ও অভিধানবিশারদেরা কেউ কি শুনছেন আমাদের কথা? আমাদের সাধারণ পাঠকদের এই আর্তনাদ কি পৌঁছাচ্ছে আপনাদের কানে? আমরা প্রমিত বানানরীতি মেনে চলতে চাই, প্লিজ হেল্প করুন আমাদেরকে।

(চলবে...)

*তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা : এই লেখাটির বেশ কিছু লাইন বিভিন্ন বাংলা ব্লগ সাইটের নাম না-জানা ব্লগারদের কথোপকথন ও ‘বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক অভিধান’ থেকে সরাসরি কোট করা হয়েছে।

---------------------------------------------------
কুটুমবাড়ি


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

জানা সোর্সগুলো থেকে কতটুকু কোট করেছেন সেগুলো উল্লেখ করবেন প্লীজ?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

''বাংলা ভাষায় পণ্ডিতের সংখ্যা বেশি, তাই সবাই নিজস্ব বানানরীতি রচনা করেন.........সবাই প্রমিত বানানরীতিকে গ্রহণ করলে আপনা-আপনিই তা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে ও চর্চিত হবে।''- এ প্যারা দুটির বেশির-ভাগ অংশ কোনো একটি ব্লগের লেখা থেকে কোট করা, নাম মনে করতে না পারায় সোর্স উল্লেখ করতে পারিনি। আর প্রথম প্রশ্নের উত্তরটি 'বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান'-এর মুখবন্ধ থেকে কোট করেছি। এ ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে আরও কয়েকটি লাইন বিভিন্ন সময়ে আমার সাথে অন্য ব্লগারদের কথোকপকথন থেকে নেওয়া।

----------------------------------------
কুটুমবাড়ি

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

খাইসে! মেটা্ব্লগিং হৈলো না তো???
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

অতিথি লেখক এর ছবি

মারসে! এইটা কী কৈলেন!!! বানানরীতি নিয়া তো আরও পোস্ট দিমু ভাবতেসি, তাইলে সেগুলারে কী কৈবেন??? শিরোনামও ঠিক কইরা রাখসি-
বানান নিয়া যথেচ্ছাচার, ভাষার উপর বলাৎকার চোখ টিপি

আমার এই পোস্টের বিষয়বস্তু কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলকে আঘাত করার জন্য নয়। একান্তই পাঠক হিসেবে এবং বাংলা ভাষাপ্রেমী হিসেবে সচল/হাচল/অতিথিদের প্রতি একটি সুনির্দিষ্ট মেসেজ পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি মাত্র। প্রমিত বানানরীতির ব্যাপারে সচলায়তন পরিবারের কোনো অ্যালার্জি আছে কি না তা জানাই আমার উদ্দেশ্য ছিল। সবার সাড়া পেলে এই রীতির ব্যবহারিক প্রয়োগ ও তার উপকারিতা নিয়ে একটি সিরিজ চালু করার ইচ্ছে আছে। মন খারাপ

-----------------------------------------------
কুটুমবাড়ি

কৌস্তুভ এর ছবি

আলোচনাটির জন্য আপনার যে প্রচেষ্টা তাকে সাধুবাদ। কিন্তু লেখাটা তেমন দৃঢ় হয়ে উঠল না মনে হচ্ছে। একটা উদাহরণ দিই।

প্রতি ভাষারই একটা স্ট্যান্ডার্ড বানানরীতি থাকে- খুব সহজ উদাহরণ হলো ইংরেজি; হয় ইউএস অথবা ব্রিটিশ রীতি, এর বাইরে আরেকটা রীতি তারা অনুসরণ করে কি না তা আমার জানা নেই।

'আমার জানা নেই' এইধরনের বাক্য তো যুক্তি হতে পারে না। একটু নেট-ঘাঁটাঘাঁটি করে নিতে পারতেন এ বিষয়েও। আর তাছাড়া 'ব্রিটিশ রীতি' বলছেন যাকে, তার সংজ্ঞাই বা কতটা সুনির্দিষ্ট, মানে ওয়েল-ডিফাইনড?

চলুক আপনার লেখালিখি।

অতিথি লেখক এর ছবি

উদ্ধৃতি

কিন্তু লেখাটা তেমন দৃঢ় হয়ে উঠল না মনে হচ্ছে।

বাংলা একাডেমী তো প্রমিত বানানরীতি বানিয়েই খালাস! আর সরকারও এ ব্যাপারে নির্বিকার। যাদের দৃঢ় ভূমিকা এ রীতি বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত তারাই যখন উচ্চকিত নয়, তখন আমি কীভাবে দৃঢ়তার পরিচয় দিব বলেন? এত হালকা চালে ও নরম সুরে লেখার পরেও তো মহা আতঙ্কে আছি সম্ভাব্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে। ইয়ে, মানে...

উদ্ধৃতি

'আমার জানা নেই' এইধরনের বাক্য তো যুক্তি হতে পারে না।

'আমার জানা নেই'- কথাটি যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করিনি, করেছি শ্লেষাত্মক বাক্য হিসেবে। কারণ ইংরেজিতে যে মাত্র দুটিই স্ট্যান্ডার্ড বানানরীতি আছে তা কমবেশি সবাই জানেন বলে আমার ধারণা ছিল। আর একান্তই এটা জানার জন্য নেট-ঘাঁটাঘাঁটির কি সত্যিই প্রয়োজন আছে? [তবু গুগল সার্চ দিয়ে দেখলাম, রেজাল্ট সেই একই] তার চেয়ে আপনি ওয়ার্ড ফাইল খুলে দেখুন ইংরেজি স্পেল-চেকার কী বলছে? মাত্র দুটিই অপশন পাবেন- একটি অ্যামেরিকান রীতি, আরেকটি ব্রিটিশ রীতি। হ্যাঁ, ইংরেজি বানানের জগাখিচুড়ি রীতিও পাবেন হয়তো, তবে তা এই দুই দেশের বাইরের লেখকদের লেখায়। চিন্তিত

বাংলা স্পেল-চেকার নির্মাণে দেরি হওয়ার কি এটাও একটি কারণ নয় যে আমরা একটি স্ট্যান্ডার্ড বানানরীতির ব্যাপারে একমত হতে পারিনি, এই ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়ার এতগুলো বছর পরেও?

আমি এখনও পাঠক। তবে লেখালেখির জন্য আপনি উৎসাহ দিলেন বলে খুশি খুশি লাগছে। দেঁতো হাসি

-------------------------------------
কুটুমবাড়ি

কৌস্তুভ এর ছবি

ও, আপনার ওই লাইনটির অর্থ ঠিক বুঝিনি তাহলে। আর আমার বক্তব্যটাও ঠিক বোঝাতে পারিনি।
দৃঢ় হয়ে উঠল না বলতে আমি নরম সুরে লেখার কথা বলিনি। আমার মনে হয়েছিল আপনার যুক্তিগুলো ঠিক জমাটি হয়ে উঠল না। তার উদাহরণ হিসাবেই ওই বাক্যটি উদ্ধৃত করেছিলাম।

আপনি ওই বাক্যটিকে শ্লেষাত্মক হিসাবে ব্যবহার করেছেন সেটা বুঝতে পারিনি, কারণ "ইংরেজিতে যে মাত্র দুটিই স্ট্যান্ডার্ড বানানরীতি আছে তা কমবেশি সবাই জানেন" এই গোত্রের মধ্যে আমি পড়ি না, দুর্ভাগ্যবশত। আপনার কথা শুনে এমএসওয়ার্ড-এ গিয়ে স্পেলচেকারে 'ডিকশনারী ল্যাঙ্গুয়েজ'-এ দেখলাম ১৭টি অপশন আছে, যার মধ্যে আমেরিকান আর ব্রিটিশ রীতি ছাড়াও আছে 'ইংলিশ (ইন্ডিয়া)', 'ইংলিশ (সাউথ আফ্রিকা)' ইত্যাদি।

বাংলা স্পেল-চেকার নির্মাণে দেরি হবার কারণ নিয়ে কোনো মন্তব্য করার মত জ্ঞান আমার নেই, তাই আপনার প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ-না কিছু বলতে পারছি না। তবে আমার মনে হয় এখানেই পড়েছিলাম, এমন কিছু স্পেলচেকার ছোট মাপের হলেও আছে, এবং আরো কিছুর কাজ চলছে।

এই স্বাস্থ্যকর বিতর্ক উত্থাপনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

সত্যিই তাই! দুঃখিত, আমি একটি ওয়ার্ড ফাইলে ব্রিটিশ এবং অ্যামেরিকান রীতির দুটি অপশনই দেখেছিলাম। এখন তো আমার ওয়ার্ড ফাইলেও দেখছি ১৮টা দেশের অপশন আছে। তবে লক্ষ করুন, একই দেশে দুটি আলাদা রীতি নেই কিন্তু। যা আমাদের দেশে আছে। তাও একাধিক নয়, বলতে পারেন অসংখ্য! তা ছাড়া নেট ঘাঁটাঘাঁটি করেও ইংরেজি ভাষার স্ট্যান্ডার্ড বানানরীতি দুটিই দেখতে পাচ্ছি, সম্ভবত অন্যান্য দেশে স্থানীয় ভাষার সাথে মিথস্ক্রিয়ায় কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে মাত্র। তবুও ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন। এবং এ ব্যাপারে আপনার কাছে আরও তথ্য থাকলে জানাবেন আশা করি।

আমাকে বাংলা বানান নিয়ে কাজ করতে হয় বলে একটি ভালো স্পেল চেকারের অভাব বোধ করি তীব্রভাবে। আমার জানামতে এখন পর্যন্ত যে কটি বাংলা স্পেল চেকার আছে সেগুলো তেমন কাজের নয়। ওর চেয়ে আমার নিজের দৃষ্টিশক্তি অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য আমার কাছে! আশ্চর্য শোনাবে। তবু বলি, অনেক বেশি নির্ভুলও। আপনার সন্ধানে ভালো কোনো স্পেল চেকারের খোঁজ থাকলে জানাবেন আশা করি।

মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

----------------------------------------------
কুটুমবাড়ি

স্পর্শ এর ছবি

ভালো লিখেছেন। প্রমিত বানান রীতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আসলে কারোই কোনো দ্বিমত থাকার কথা না। আমারও নেই। তবে 'আইন কানুনের' ব্যাপারে আমি খুবই স্কেপটিক।

আর আপনার লেখাটাই দেখুন। একই সঙ্গে আপনি বলছেন 'সুনির্ধারিত ভাষারীতির' কথা। আবার বলছেন 'ভাষার বিবর্তন চলমান প্রক্রিয়া'। সুনির্ধারিত হয়ে গেলে বিবর্তন কেমনে হবে?

দেখেন আমি লিখছি 'কেমনে' যেটা আমরা উচ্চারণ করি অনেক সময় 'ক্যামনে'। এখন এই 'কেমনে' শব্দটা আপনি বলতে পারেন যে 'প্রমিত করা হলো'। এর পর? নতুন নতুন ব্যবহার আসতেই থাকবে। শব্দও আসতেই থাকবে। সেগুলোর জন্য দরজা খোলা রাখছেন তো?

৩ নং প্রশ্ন/পয়েণ্টটা আমার তোলা। এবং আপনার দেওয়া উত্তর আম্বিগুয়াস।

আপনার যদি উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা থেকে থাকে তাহলে এই চমৎকার ভিডিওটা দেখতে পারেন।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

@ স্পর্শদা, শুভেচ্ছা। মন্তব্য এবং ভিডিওর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার লেখা আমি মুগ্ধ হয়ে পড়ি। আচ্ছা, আপনি এত সুন্দর করে কীভাবে লিখেন?

যা হোক, আপনি বলেছেন-

একই সঙ্গে আপনি বলছেন 'সুনির্ধারিত ভাষারীতির' কথা। আবার বলছেন 'ভাষার বিবর্তন চলমান প্রক্রিয়া'। সুনির্ধারিত হয়ে গেলে বিবর্তন কেমনে হবে?

আমি 'সুনির্ধারিত ভাষারীতি'র কথা বলেছি নাকি? সে স্পর্ধা কি আমার আছে? 'ভাষারীতি' যে নির্ধারণ করা যায় না তা কি আমি জানি না? আমি এই পোস্টের কোথাও ভাষারীতির কথা বলেছি এমনটি চোখে পড়ছে না। আমি তো আগাগোড়া বানানরীতির কথাই বলেছি।

আর সুনির্ধারিত করার পরেও কিন্তু বিবর্তন আসতে পারে। 'সুনির্ধারিত' করা থাকলে কি পরিমার্জনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে? ধরুন, আজ হয়তো যৌতুক নেওয়ার জন্য কোনো একটি শাস্তি 'নির্ধারিত' করা আছে। তাই বলে ভবিষ্যতে সেই আইন কি পরিবর্তন করা যাবে না? ভবিষ্যতে এই আইন পরিবর্তন হতেও পারে বলে কি বর্তমানে আইনটি প্রযোজ্য নয়?

ভিডিওটা দেখলাম। ভালো লাগল।

উদ্ধৃতি

৩ নং প্রশ্ন/পয়েণ্টটা আমার তোলা। এবং আপনার দেওয়া উত্তর আম্বিগুয়াস।

একটি ভাষায় কতগুলো ভুল/অপ্রমিত বানান আছে তা নির্ধারণ করতে হবে কেন? তাই আপনার এই মন্তব্যটি আমার কাছেও 'আম্বিগুয়াস'ই মনে হলো। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

-------------------------------------------
কুটুমবাড়ি

স্পর্শ এর ছবি

প্রশ্ন : ৩. ভাষার ক্ষেত্রে কিছু জিনিসকে ‘প্রমিত’ ঘোষণার একটা বড় সমস্যা হচ্ছে একই সঙ্গে অনেক কিছুকে ‘অপ্রমিত’ ঘোষণা করার ভার।

শোনেন,
আমরা এই যে এখানে যে মোটামুটি 'প্রমিত' ভাষায় লেখালিখি-আলোচনা করছি। আপনার কী মনে হয়? এই ভাষা আসলো কোথায় থেকে? বাংলাদেশের কত পার্সেন্ট মানুষ এই ভাষায় কথা বলে? শুরুতে যখন এই ভাষাকে স্টান্ডার্ড সেট করা হয়েছে তখন কোন মানুষের ভাষাকে 'প্রমিত' ধরা হয়েছে? যাদের ভাষাকে 'প্রমিত' ধরা হলো তারা কেন স্পেশাল?

এসব নিয়ে একটু পড়াশুনা করেন। এগুলো যাস্ট 'গ্রামাটিক্যাল' প্রবলেম বা 'গ্রামাটিক্যাল ইস্যু' না। একই সঙ্গে আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক ইস্যুও। ধরেন, বাংলা একাডেমি আমাকে আর আপনাকে প্রমিত করণ কমিটিতে নিয়োগ দিলো আর অমনি কবছর খেটে খুটে আমি আর আপনি মিলে কিছু জিনিশ প্রমিত করে ফেললাম। ব্যাপারটা এত সোজা নয়। তাই 'প্রমিত স্টান্ডার্ড' নেই বলেই কথায় কথায় লজ্জায় মাথা কাটা যাওয়া খুবই দৃষ্টি কটু। 'প্রমিত করণ' একটা ম্যামথ টাস্ক। এবং যে ভাষার জন্য সেটা করা হচ্ছে তার বৈচিত্র বা সমৃদ্ধি যত বেশি হয় সেটার জন্য কাজটা এক্সপোনেনশিয়ালি ততটাই কঠিন হয়ে পড়ে। তার উপর আপনি 'প্রমিত' একটা লিস্টি পেলেই লোকজনের উপর হামলে পড়বেন 'ঐ বেটা তুই অপ্রিমিত' এরকম করাটাও প্রমিত করণের উদ্দেশ্য নয়।

আর শুধু একটা অভিধান এর মুখবন্ধ-পরিশিষ্ঠ এবং কিছু ব্লগের বিচ্ছিন্ন মন্তব্য পাঠ এ ধরণের একটা আলোচনায় জড়ানোর জন্য যথেষ্ট প্রিপারেশন না।

একটি ভাষায় কতগুলো ভুল/অপ্রমিত বানান আছে তা নির্ধারণ করতে হবে কেন?

আমি সরাসরি ভুলের লিস্টি করার কথা বলিনি। পাচটা প্রচলিত জিনিশের মধ্যে হঠাত ১ টাকে প্রমিত ঘোষণা করলে এমনিতেই বাকি ৪ টা অপ্রমিত হয়ে পড়ে। আর তার পরেও এই বাকি চারটার লিস্টি থাকাও খুবই দরকার। কেন এগুলো নির্ধারণ করতে হবে সে কারণ আপনি হয়তো আপননি ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর 'বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান' এর মুখবন্ধে বা পরিশিষ্ঠে পেয়ে যাবেন।

আপনি বলেছেন,

বাংলা ভাষায় হয়তো শব্দভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ নয়।

আপনার কোনো ধারণাই নেই বাংলা ভাষার শব্দভান্ডার কতটা সমৃদ্ধ। বাংলা পৃথিবীর অন্যতম একটা সমৃদ্ধ ভাষা। এবং সে উদার চিত্তে বাইরে থেকে গ্রহনও করেছে প্রচুর। এখনো করছে।

আর আপনি যদি আমার আগের মন্তব্যে দেওয়া ভিডিওটা দেখে থাকেন। তাহলে হয়তো কিছুটা বুঝবেন যে গাদা-গাদা আইন-কানুন-নিয়ম-নীতি সেট করাটা কখনোই সমাধান না। ভাষা একটা ফ্লোটিং জিনিশ। তার তারল্যকে আইনি কাঠিন্য দিলে তার সেই ফ্লো থাকে না।

সব শেষে একটা অনুরোধই করব। 'বাংলা ভাষা' নিয়েই নাহয় একটূ পড়াশুনা করুন। এটার বৈচিত্র নিয়ে পন্ডিতরা 'গর্বিত নাকি লজ্জিত' সেটার খোঁজ নিন। তারপর কথায় কথায় 'লজ্জা' প্রকাশ করবেন। এবং এর পরে সুন্দর করে পরের পর্ব লিখুন। এ ধরণের লেখায় একটা সঠিক যথাযথ প্রস্তুতি খুবই প্রয়োজন।

আর ভাষা কেতাবি হয়ে পড়লে কী হয় তার উদাহরণ আপনি নিজেই সৃষ্টি করেছেন কদিন আগেই।
তাই এই আপনিই যখন 'প্রমিতকরণ' এর মত একটা অতিব গুরুত্বপূর্ণ এবং সূক্ষ বিষয়ের আন্দোলনের ঝাণ্ডা তোলেন। তখন আমি বিচলিত বোধ করতে শুরু করি।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনি বলেছেন,
উদ্ধৃতি

বাংলা ভাষায় হয়তো শব্দভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ নয়।

এই লাইনটা আগে চোখে পড়েনি লেখাটায়। পড়ে খুব দুঃখ পেলাম কুটুমবাড়ি ভাই (মনে হচ্ছে না এটাও আপনি শ্লেষাত্মক ভাবে লিখেছেন) - এরকম একটা সিরিয়াস বিষয়ের উপর লিখতে গিয়ে আপনি এরকম একটা ভুল অনুমান নিয়ে শুরু করে থাকলে।

অতিথি লেখক এর ছবি

@ কৌস্তুভ ভাই,

উদ্ধৃতি

বাংলা ভাষায় হয়তো শব্দভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ নয়।

আমি 'হয়তো' শব্দটি কেন ব্যবহার করলাম একটু ভেবে দেখুন।

খেয়াল করে দেখুন এই পোস্টটিতে ১৩১৬টি শব্দ আছে। তার মধ্যে সবগুলোই বাংলা শব্দ। এবং আরও আশ্চর্যের কথা- প্রমিত শব্দ! যে হাতে-গোনা দু-একটি ইংরেজি শব্দ আছে তার বিকল্প প্রতিশব্দ বাংলা ভাষাতেই আছে। তবুও এই ইংরেজি শব্দগুলো যথেষ্ট প্রচলিত হওয়ায় আমি ব্যবহার করেছি। তাহলে বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ না-হলে এটা কীভাবে সম্ভব হলো। আমার মনের ভাব প্রকাশ করতে যে ভাষার শব্দ যথেষ্ট হলো সে ভাষায় অন্তত শব্দভাণ্ডারে খামতি নেই বলেই আমি বিশ্বাস করি।

আসলে যাঁদের দু লাইন বাংলা বলতে পাঁচটা ইংরেজি শব্দ হাতড়াতে হয় তাঁদেরকেই জিজ্ঞেস করুন না এ ব্যাপারে। আমি শুধু তর্কের খাতিরে তাদের দেওয়া এই অজুহাত মেনে নিয়ে বলেছি যে-

বাংলা ভাষায় হয়তো শব্দভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ নয়।

তার মানে এই নয় যে আমি সত্যিই তাই মনে করি।

----------------------------------------------
কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

স্পষ্টতই ব্যক্তি আক্রমণ।

উদ্ধৃতি

আর ভাষা কেতাবি হয়ে পড়লে কী হয় তার উদাহরণ আপনি নিজেই সৃষ্টি করেছেন কদিন আগেই।
তাই এই আপনিই যখন 'প্রমিতকরণ' এর মত একটা অতিব গুরুত্বপূর্ণ এবং সূক্ষ বিষয়ের আন্দোলনের ঝাণ্ডা তোলেন। তখন আমি বিচলিত বোধ করতে শুরু করি।

সম্প্রতি আমার অনুবাদ করা 'দ্য পিকচার অব ডোরিয়ান গ্রে'-র ৩টি পর্ব সচলায়তনের নীড়পাতায় প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ সচলায়তনের দৃষ্টিতে সেগুলো যথেষ্টই মানসম্মত ছিল। পাঠক প্রতিক্রিয়াও খারাপ ছিল না। তবুও আপনার এবং সুরঞ্জনা হকের মন্তব্য পেয়ে আমি বাকি পর্বগুলোর কাজ স্থগিত রেখেছি। না হয় এতে প্রমাণিত হলো যে আমি অনুবাদে দুর্বল। আমার এই দুর্বলতার সাথে বানানরীতি নিয়ে লেখার কী সম্পর্ক বুঝিয়ে বলবেন কি?

উদ্ধৃতি

আর শুধু একটা অভিধান এর মুখবন্ধ-পরিশিষ্ঠ এবং কিছু ব্লগের বিচ্ছিন্ন মন্তব্য পাঠ এ ধরণের একটা আলোচনায় জড়ানোর জন্য যথেষ্ট প্রিপারেশন না।

আপনি আমার প্রিপারেশন সম্বন্ধে কীভাবে জানলেন? আপনি ঝরঝরে গদ্য লেখেন, ভাষা বিষয়ে পণ্ডিত- সব ঠিক আছে। কিন্তু বানান নিয়ে আলোচনায় জড়ানোর মতো যোগ্যতা কি আপনার আছে? প্লিজ, ব্যাখ্যা করুন।

উদ্ধৃতি

তার উপর আপনি 'প্রমিত' একটা লিস্টি পেলেই লোকজনের উপর হামলে পড়বেন 'ঐ বেটা তুই অপ্রিমিত' এরকম করাটাও প্রমিত করণের উদ্দেশ্য নয়।

পোস্টের বিষয়বস্তু ধরতে না পেরে আপনিই তো হামলে পড়েছেন এই লেখকের ওপর। আপনার মন্তব্যের ঘরে অপ্রমিত বানানের ছড়াছড়ি, আর অসংখ্য ভুল বানান তো রয়েছেই। আমি কি একবারও সে কথা বলেছি?

বানানরীতি নিয়ে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী তো এই আমিই। আপনাদের মতো লেখকদের মুঢ়তার কারণে বাংলা বানানের আজ এই দশা। গত বছর দুয়েক ধরে আমি বই সম্পাদনা এবং বানান সংশোধনের সাথে জড়িত। এ পর্যন্ত শতাধিক বইয়ের কাজ আমি এক হাতে করেছি। আপনাদের ভুলের খেসারত দিচ্ছে প্রকাশনাগুলো। ভুল বানান সংশোধন করতে করতে বইয়ের পেছনে বাজেট বেড়ে যায়। যার একটা বড় ভূমিকা থাকে বইয়ের দাম বাড়ার পেছনে। পাঠকের বিভ্রান্তির কথা না হয় না-ই বললাম।

আচ্ছা, অতিথি লেখকদের ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ কি সচলায়তনের দৃষ্টিতে বৈধ? এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

-------------------------------------
কুটুমবাড়ি

স্পর্শ এর ছবি

আর এ বিষয়ে আলোচনা যখন শুরুই হলো তখন 'প্রমিতকরণ' বা 'প্রমিতরীতি' বা 'প্রমিত' ধারণাটার ব্যাপারেই কিছু কথা বলি। বেশ কদিন থেকেই অনেকের মধ্যেই এ বিষয়ে একটা মৌলিক ভ্রান্তি লক্ষ্য করছি আমি।

প্রমিত মানে কিন্তু একটা 'আইনি বাইবেল' না যে একবার সেই কিতাব আপনার হাতে এসে গেলেই আপনি জনে জনে গিয়ে 'অপ্রমিত'দের উপর খড়গহস্ত হবেন। কোনো কিছু 'প্রমিত' করা হয় একটা 'গ্লোবাল কন্সিস্টেন্সি' আনার জন্য। এখন কোনো ব্যক্তি যদি চায় যে সে এই প্রমিত আইন মেনে চলবে কারণ আর সবাই এই রুলগুলোর সাথে পরিচিত। সে সেটা করতেই পারে। কাজটা প্রসংশনীয় নিঃসন্দেহে। ঠিক যেমন চাইনিজদের একটা স্টান্ডার্ড ‘মান্ডারিন’ আছে। কিন্তু,...

হ্যা। কিন্তু, কেউ যদি যে কোনো কারণে মনে করে যে তার ‘ভাব প্রকাশের জন্য’ বা ‘নিজস্ব আসথেটিক কারণে’ সে কোনো একটা কিছু লিখতে চায় যেটা ‘স্টান্ডার্ড’ বা ‘প্রমিত’ নয়। সে সেটা লিখতেই পারে। অপ্রমিত হওয়ার কারণে ‘একই ভাষাভাষী সবাই’ যে সেটা বুঝবে না, বা অনেকে ‘অস্পষ্ট’ বোধ করবে- সেই রিস্ক লেখকের নিজের। পাঠক যদি মনে করে দুয়েকটা জিনিশ সে বুঝছে না, ওদিকে লেখকের লেখা খুবই ইন্টারেস্টিং। তখন সে ঐ লেখকের ভাষারীতি শিখে নেবে। একজন পাঠক চাইলেই অপ্রমিত একটা লেখাকে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলতে পারে। যে কোনো লেখাকেই পারে। কিন্তু কোনো ক্রমেই কোনো লেখকের উপর কিছু ‘চাপিয়ে দিতে’ পারে না।

‘প্রমিত’ অর্থ লেখকের কাছে একটা ‘আবেদন’ যে “তুমরা এইটে মেনে চললি আমাদের সবারই সুবিধে হয়”। সে আবেদন কেউ ‘না মঞ্জুর’ করলে করতেই পারে। পাঠক হারানোর দায় তার নিজের। এতে যখন ভাষা গেল গেল রব ওঠে তখন আমার সেই ‘নারীর পোষাক’ বিতর্কের কথা মনে পড়ে যায়।

যেমন কেউ মিনি স্কার্ট পড়ে ফার্ম গেটে হাটতেই পারে। এটা তার ব্যাপার। আমার ভালো না লাগলে আমি তার দিকে তাকাবো না। তাই বলে তাকে বুরখা চাপাতে যাওয়ার কেউ আমি না।

তাহলে কি সব কিছু ‘মগের মুল্লুক’ হয়ে যাবে? না। কারণ কেউ যদি খেয়াল করে যে তার এই ‘ব্যতিক্রম’ তেমন কেউ গ্রহনই করছে না। তখন সে এমনিতেই সরে আসবে। আর সরে না এসে ‘চালিয়ে গেলেও’ তার ঐ ব্যতিক্রমের ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর এমনিতেই শূন্যাঙ্কের দিকে ধাবিত হবে। আর সবাই গ্রহন করলে তো ভালই। ‘বিবর্তন’ একধাপ এগোলো।

প্রসঙ্গত বলে রাখি। আমাদের সরোয়ার ফারুকি এক বিশেষ ধরণের ভাষারীতিতে নাটক বানান। এটা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত অস্বস্তি থাকলেও আপত্তি নেই। সে যদি এই ভাষাতেই কোনো ‘পথের পাঁচালী’র মত গ্রান্ড মাস্টারপিস বানিয়ে ফেলে। তাকে মাথায় তুলে নাচই শুরু করে দিব হয়তো! কিন্তু রীতিভাঙার আর্টটা সবাই রপ্ত করে উঠতে পারে না। না পারলেও তার গলা চাপার আমি কেউ না।

আর ইংরেজীর বৈচিত্র সম্পর্কে জানতে হলে জেমস জয়েসের ‘ইউলিসিস’ বা হারমান মেলভিলের ‘মবি ডিক’টা নেড়ে-চেড়ে দেখতে পারেন।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

রণদীপম বসু এর ছবি

ষ্পর্স, বিষয়টাকে আমরা যদি বানানের প্রমিতকরণের দিকে নির্দিষ্ট করে নেই তাহলে আরেকটু নিবিড় আলোচনা পেতে পারি আমরা। ভাষার প্রমিতকরণ বলতে কিছু নেই। ভাষা প্রতিটা কলমে হয়তো ভিন্নতা থাকবে, এটাই ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্য। কিন্তু বানানটাকে আমরা মনে হয় আরেকটু গুরুত্ব দিতে পারি।
হ্যাঁ, আপনার প্রদত্ত উদাহরণে 'কেমন' আর 'ক্যামন' বিষয়টা যৌক্তিক। এখানেও আমরা একটা বিষয় হয়তো খেয়াল করি যে, স্বাভাবিকভাবে বানানটি কেমন-ই হবে। এটাই প্রমিত রূপ। তবে যখন কেমন শব্দটির উচ্চারণ বিচ্যুতি কেউ প্রকাশ করতে চাইবেন, হয়তো কোনো সংলাপ, সেক্ষেত্রে এটা একটা স্পেশাল-কেস হতে পারে।
এ ব্যাপারে অবশ্যই আপনার আরেকটা মন্তব্য-আলোচনা আসার কথা। এবং বাংলা বানান নিয়ে আমাদের আলোচনা বেশি বেশিই হওয়া উচিত।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

স্পর্শ এর ছবি

ধরেন হুমায়ুন আহমেদ কে একবার জিজ্ঞেস করা হলো আপনি কেন 'শাদা' (রঙ) কে তালব্য-শ দিয়ে লিখেন। তিনি বলেছিলেন তালব্য-শ দিয়ে লিখলে তার কাছে বেশি শাদা মনে হয়। দন্ত-স দিলে মনের মধ্যে কেমন যেন কম সাদা ভাব হয়! আরো অনেকেই 'শাদা' লেখেন।

আমি আসলে বলতে চেয়েছি প্রমিত করণ এর প্রতি আমাদের আপ্রোচ নিয়ে। সেখানে আমার পয়েন্টটা হচ্ছে। 'সাদা' কে যদি প্রমিত করা হয়। খুব ভালো। তাই বলে যে বেচারা 'শাদা' লিখলো। তাকে গিয়ে 'আপনার ব্যবহার অপ্রমিত'। বলতেও পারি। কিন্তু 'অপ্রমিত' মানেই যে 'মহাপাপ' বা 'অশুদ্ধ'। এমন একটা ধারণা পোষণ করা উচিৎ নয়। বা প্রমিত না থাকা 'লজ্জায় মাথা কাটা যাওয়ার মত' ঘটনা নয়।

ব্যবহার অপ্রমিত হলে হয়তো সবাই বুঝবে না। বিচ্ছিন্ন ক্ষেত্রে হয়তো অ্যাম্বিগুইটি তৈরি হবে। সে রিস্ক লেখকের। প্রমিত স্টান্ডার্ড থাকলে সবাই মিলে সেটা মেনে চলতে পারে। ওটা একটা আত্মসচেতনতার ব্যাপার। তাতে সবাই এক পথে থাকা হয়। তার মানে প্রমিত মানে একটা রাস্তা একে দেওয়া। যে এই পথে হাটলে সবার ভালো। তাই বলে গলি ঘুপচিতে ডি-ট্যুর দেওয়ার ববস্থা বন্ধ করা নয়। কোন গলিতে কী রত্ন লুকিয়ে আছে কে জানে? রত্নের খোঁজে রাস্তা থেকে চাইলেই কেউ নামতে পারে। পথ হারানোর রিস্ক তার নিজের।

কিন্তু আমরা 'প্রমিত' জিনিশটাকে রাস্তা নয় বরং একটা পরিখা ভাবতে শুরু করেছি। একটা নালা বা খাল ভাবতে শুরু করেছি। যেখান দিয়ে সুনির্ধারিত পথে সব বয়ে যাবে। ওঠার, নামার, পাশ দিয়ে ঘুরে যাওয়ার, উপায় নেই। এটাই আশঙ্কার।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

রণদীপম বসু এর ছবি

স্পর্শ, প্রথমে দুঃখ প্রকাশ করছি যে স্বেচ্ছায় আপনার নামটাকে আগের মন্তব্যে অশুদ্ধ করে লিখলাম, অথচ আপনি এর প্রতিবাদ করলেন না! আপনি কি শব্দ-বৈরাগ্যে ভুগছেন ? তা হবার কথা নয়।

আসলে আমি এটা করেছিলাম এজন্যেই যে, নিজের নামের বানানের ভুল দেখে যেমন সবারই মনের মধ্যে খচ্ করে বিঁধে, এই উপলব্ধিটা যেন আমাদের বাংলার সব বানানের বিচ্যুতির ক্ষেত্রেই ঘটে। তাতে করে এটা কেন হলো, স্বেচ্ছায় না অনিচ্ছাকৃত, পরীক্ষামূলক নাকি স্বেচ্ছাচারিতা, এই প্রশ্নগুলো যাতে আমাদের মাথায় আসে। আর তখনই আমরা লেখক উদ্দেশ্যটা বুঝতে পারবো। তাতে করে যেমন লেখক-স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে না, তেমনি প্রমিত বানানও আহত হবে না।
এখন শিশুর মুখের বুলি বুঝাতে যদি বলি- তোমাত তাতে আমাল আলি, এতে নিশ্চয়ই প্রমিতিকরণে কোন সমস্যা হয় না।

যেহেতু এই প্রমিতকরণ নির্ধারণের জন্য একটা প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন করছে, তা আপাত মেনে নিতে আমাদের বিপত্তি থাকার কথা নয়। আর নিরীক্ষা সে তো ভিন্ন জিনিস। তা করতে হলেও প্রমিত রূপটাকে মাথায় রেখেই করতে হয়। এজন্যই বানানের প্রমিত রূপ থাকা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করি।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

স্পর্শের মন্তব্যের সাথে একমত হতে পারলাম না। একটা পুরনো লেখা ছিলো, শক্তির অভাবে আপাতত সেটাই দিয়ে যাই, যদিও শেষ করা হয় নি ওটা।

হয়তো কিছু চিন্তার খোরাক পেলেও পাওয়া যেতে পারে ওখানে।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

স্পর্শ এর ছবি

আপনার পোস্টটা সুলিখিত।

আমি শুধু বলতে চেয়েছি 'অপ্রমিত' আর 'অশুদ্ধ' এক বিষয় নয়। এবং যে কোনো ধরণের 'প্রমিতকরণ' নিয়ে আমার যে জেনারেল আপ্রোচ, সেটাও বলতে চেয়েছি।

আর ওই যে ই-কার এবং ঈ-কার। একবার একাডেমি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেই এখন আপনি ইংরেজীর প্রতিবর্ণীকরণে বলতে পারছেন যে ঈ 'ভুল'। কারণ 'কে বা কাহারা' এটা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। কিন্তু কেন 'সে বা তাহারা' সেটা বেছে নিলো? এসব ভাবারও দরকার আছে। রবীন্দ্রনাথ 'আমি মানলাম' সার্টিফিকেট না দিলে কী মুশকিলটাই না হতে পারতো! এ যুগে সেই সার্টিফিকেট কে দেবে? এখনতো কোনো রবীন্দ্রনাথ নেই। এ সবই একই সঙ্গে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক সমস্যা। তাই খুব সুচিন্তিত প্রমিতকরণ চাই। শুধু ঝাঁকে ঝাঁকে নিয়ম নয়। সেই নিয়মে কেন আমার সুবিধা? 'কেন অন্যটা ভুল/অপ্রমিত'? কোনটা 'ভুল' আর কোনটা 'অপ্রমিত'। এবং এই আইন কতটা ফ্লেক্সিবিলিটি দিচ্ছে আমাকে। সেসবই জানা প্রয়োজন।

আমার মতে, non-standard এবং wrong জিনিশ দুইটা আলাদা। স্টান্ডার্ড মেনে চলা বা না চলা এক ধরনের ডিসিশন। আর ভুল করা বা না করা আরেক ধরনের।

একারণেই খড়গহস্ত হওয়া নিয়ে আমার দ্বিধা।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

ভিডিও ডা বালাই নাগছে।বালা রেজুলুশন আছে, সব দেখছি। এডা বিরাট টিফি আছে ঐ ছারের, মুনো হয় মেলা দাম; চশমাডা পুরান। কিন্তু উনি যে কী কইল, বুজি নাই। খেক খেক.....

শাফি।

[আমার পোস্টটা মূলতঃ সামগ্রিক আলোচনাকে তরলি কারণে দেয়া। আলোচনা-সমালোচনা ভালই লাগছিল, বিতর্ক আমার প্রিয়। কিন্তু সময় মত রণদীপম বসু মন্তব্য না করলে তর্কা-তর্কি হতে পারত যেটা কারও কাম্য নয়। মূল পোস্ট প্রসঙ্গতঃ, কুটুম বাড়ি যা বলতে চেয়েছেন সেটা সমর্থন যোগ্য। স্পর্শ যা আসলে বলতে চেয়েছেন সেটি এলেবেলে না, ধারাল যুক্তি ব্যক্তি আক্রমনে কিছুটা ভোঁতা হলেও নষ্ট হয়নি। ভাষার স্ট্যনডাডাইজেশান বিতর্কিত ব্যাপার, বানান সে হিসেবে অতটা নয়। আরও যৌক্তিক বিতর্ক চাই।]

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।