ছবির দেখা মেয়ে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২২/০৬/২০১০ - ৮:৩১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তার সাথে আমার পরিচয়টা হঠাৎ করেই হয়েছিল। আমার কলেজের এক বন্ধু ফরহাদ, ফরহাদের সাথে মেয়েটির পূর্ব পরিচয় ছিল। সে সূত্রে আমার বন্ধু তার সাথে ফোনেও কথা বলা শুরু করেছিল। এমনিভাবে কয়েকদিন কেটে যায়। একদিন আমাকে সে ঘটনাটি জানালে আমিও তাকে কথা চালিয়ে যেতে বলি কেননা, এ জামানায় ভাল বন্ধুর অভাব চোখে পড়ার মত, আর তা যদি হয় কোনো মেয়ে বন্ধু, তাহলে ভেবে কাজ কী; কথা চালিয়ে যাও দেখে-শুনে ও বুঝে, একটু সাবধানে। আমার কথা মতে মেয়েটির সাথে ফরহাদ কথা বলা চালিয়ে যেতে থাকে, কিন্তু কোন এক কারণে তা আর খুব একটা দূর গড়ায় না। গল্পের নায়ক-নায়িকার মাঝে হঠাৎ করেই যেন আমার আগমন ঘটে।

আমার সাথে তার প্রথম পরিচয় এক কমিউনিটি সাইট-এর কল্যাণে। একদিন ফরহাদ বললো সে নাকি মেয়েটির সাথে যতটুকু পরিচিত হয়েছে তাতে করে তার মনে হয়েছে মেয়েটি অত্যন্ত ভাল মনের একজন বন্ধু। আমাকেও সে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় ‘ফেসবুক’-এর মাধ্যমে, অনেকটা জোরপূর্বক-ই। পাঠক হয়তো ধরেই নিচ্ছেন আবারও সেই একই শহুরে প্রেমের গল্প বুঝি শুরু হবে। কিন্তু ঘটনাটা ঠিক এরকম না। গল্পটি প্রেমের হলেও কোথায় যেন একটু ভিন্নতা রয়েছে। সেই ভিন্নতার সন্ধানে মূল গল্প তবে শুরু করা যাক-

আমার সেই বন্ধু আর আমি একটা পাবলিক ভার্সিটিতে ভর্তির সুযোগ পাই। আমরা সেখানে ভর্তির সিদ্ধান্তও নেই। কিন্তু আমার সেই বন্ধুর অন্য একটি ভার্সিটির পরীক্ষা তখনও বাকী থাকায় সে অনেকটা ফরম কেনার টাকা উঁসুল করতেই সেখানে পরীক্ষা দিতে যায়। তার পাশের সীটে বসে খুব সুন্দরী এক মেয়ে (ফরহাদের স্বীকারোক্তি)! আমি তখনও তাকে দেখি নি, কাজেই ফরহাদের কথা অনুযায়ী তাকে ‘সুন্দরী’ বলে অভিহিত করলাম। ফরহাদ পরীক্ষাকালীন বা এর পরের কোন এক সময়ে মেয়েটির সাথে টুকটাক কথা বলে। তার মতে, তার হয়তো সেদিন ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল কেননা, পরীক্ষা শেষে অনেকটা পথ দূরে সেই মেয়ের সাথে তার আবারও দেখা হয়ে যায়। দেখা হবার পর তার কিছুটা দ্বিধা কাজ করে। মূলত, পূর্বে মেয়েদের সাথে তার খুব একটা কথা বলার অভ্যাস ছিল না, তাছাড়া মেয়েটির হাতের লেখা ছিল অপূর্ব তাই হয়তো পরীক্ষাকালীন সময়ে প্রায়ই সে তার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিল, এমনকি দু’জনের কয়েকবার চোখাচোখিও হয়, এ ব্যাপারটা মেয়েটি খেয়াল করে। তাই এক ধরণের দ্বিধা বা লজ্জাবোধ থাকার কারণে সে ভেবে পাচ্ছিলো না যে কী বলে কথা শুরু করবে? অতঃপর যখন কিছুটা সাহস নিয়ে, জড়তা কাটিয়ে সে মেয়েটির কাছে যায়, তার কাছে ব্যাপারটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। কিছু কথোপকথন শেষে সে জানতে পারে মেয়েটি তার অভিভাবকের জন্য অপেক্ষা করছে। এভাবে সেদিন ফরহাদের সাথে মেয়েটির অনেকটা সময় কথা হয় এবং কথার এক পর্যায়ে সে মুখ ফস্কেই হয়তো মেয়েটির কাছে মোবাইল নম্বর চায়। মেয়েটি হয়তো কিছুক্ষণ ভেবেছিল কিংবা হয়তো ভাবে নাই; সে তার নম্বর দিয়ে সে বেলা বিদায় নেয়।

এই ঘটনার পর যেদিন ফরহাদের সাথে আমার দেখা হয়, সে অনর্গল মেয়েটিকে নিয়ে কথা বলে যাচ্ছিল। ধানমন্ডি লেক-এ হাঁটতে হাঁটতে আমাদের মাঝে কথাগুলো হচ্ছিল। আমাকে ফরহাদ বলে মেয়েটি তার ফেসবুক ফ্রেন্ড, আমিও যেন তাকে আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই। আমি তখন হ্যাঁ বললেও পরে কথাটা প্রায় ভুলেই বসেছিলাম। ফরহাদের সাথে সন্ধ্যায় নেট-এ কথা হচ্ছিল। সে আমাকে দ্বিতীয়বার মনে করিয়ে দিলে আমি তাই করি, মেয়েটিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই। সে আমাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। আমরা হয়ে যাই একে অপরের বন্ধু।

মেয়েটির নাম ছবি। দেখতে ছবির মতই সুন্দর। সবসময় যেন কি একটা বিষয় নিয়ে ভাবছে। তার কিছু ছবি দেখে আমার কাছে সেরকম-ই মনে হল। কলেজ জীবনের তোলা কিছু ছবিও দেখলাম সেখানে। সব মিলিয়ে সে দেখতে সুন্দর এবং বন্ধুসুলভ। তার চেহারায় রয়েছে অসম্ভব মায়া যা হয়তো অনেকের মাঝেই অপ্রতুল। তার সাথে আমার একটা ব্যাপার মিলে যায়, আর তা হচ্ছে আমরা দু’জনই তুলা রাশির জাতক। তুলা রাশির জাতকরা নাকি একে অপরের খুব ভাল বন্ধু হতে পারে বই-পত্রে পড়েছিলাম, কিন্তু বাস্তবে তার প্রমান পেয়েছি ছবির সাথে পরিচয়ের পর থেকে। আমি সচরাচর রাত করে ঘুমাই, তা সত্ত্বেও সকালে নেট-এ বসা আমার অনেকদিনের অভ্যাস। ছবিরও হয়তো আমার মতই কোন কারণ ছিল। সে প্রায় প্রতিদিন সকালেই অনলাইন-এ আসতো। আমিও একটা সময় বলা যায়, অনেকটা তার অপেক্ষাতেই বসে থাকতাম। ব্যাপারটা যদিও বন্ধুত্ব পর্যন্তই গড়ায় নি, তা সত্ত্বেও ছবির প্রতি আমার এক অন্যরকম ভাল লাগা কাজ করতে শুরু করে। আমরা অনেক্ষণ কথা চালিয়ে যেতাম। মাঝে মাঝে আমার কিছু কথায় সে এক ধরণের সুখ লাভ করতো এবং বাস্তবে কারও কথা মুগ্ধ হয়ে শুনলে যেমনটা দেখায়, আমার কাছে মনে হত ব্যাপারটা অনেকটাই ওই রকম-ই। আমি অনর্গল কথা বলে যেতাম আর ছবি হ্যাঁ-নাহ্-আচ্ছা এই তিন কথাতেই বেশিরভাগ কথার উত্তর দিত। তবুও যেন এই তিন কথার মাঝেই আমি অনেক বেশি কিছু খুঁজে নিয়েছিলাম। তার প্রতি এই ভাল লাগা যদিও প্রেম না, কিন্তু একদম বন্ধুত্বও ঠিক না। তবে এই ভাল লাগা বা অন্যরকম অনুভূতিকে কি বলা যায়? তা আমি ঠিক জানি না।

ছবির সাথে যেদিন আমার প্রথম কথা(চ্যাটিং) হয় আমি অনেকটা সাবলীলভাবেই তার সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। আমার অধিকাংশ কথা, প্রশ্ন বা প্রশংসার উদ্দেশ্যই ছিল মেয়েটিকে যাচাই করা, তার সম্পর্কে জানা। বন্ধু ফরহাদ আমাকে এক গুরু দায়িত্ব দিয়েছিল, যার বাস্তবায়ন করার পেছনেই তার সাথে মূলত আমার পরিচিত হওয়ার কারণ জড়িত। ফরহাদ কেন জানি না, আমাকে তার ব্যাপারে সব কথা জানাতো। কখন সেই মেয়ে কোন মেসেজ করেছে, কি তার উত্তর হবে, এর পর কি বললে মেয়েটির কাছে সে অন্যভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারবে ইত্যাদি। আমি প্রথমাবস্থায় তাকে সেভাবেই নির্দেশ বা পরামর্শ দেই এবং আমার কথা মত অনেকটা কাজ হয়; যাকে ঠিক কাকতালীয় বলা চলে না। তখন এক পর্যায়ে বিষয়টা আমার কাছে মর্যাদা হারায়। আমি আগের মত বন্ধুর পরামর্শদাতা হিসেবে বহাল থাকি না। কিন্তু কিছুদিন যেতেই জানতে পারি মেয়েটি নাকি মাত্র সপ্তাহখানে পর নেট আর ব্যবহার করবে না। এদিকে ফরহাদেরও ইদানিং প্রেমের জন্য যুদ্ধে যাবার বয়স। তাই সব ভেবে বন্ধুর উপকারের জন্য নিজেকে নিবেদন করি। হয়তো ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল তাই পরদিন সকালে ছবিকে নেট-এ পেয়ে যাই, অনেকক্ষণ কথা হয়। সময় যে কখন চলে গিয়েছে আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। আমরা যখন একে-অপরকে বিদায় জানাই তখন প্রায় দুপুর ২টা ৩০ মিনিট অর্থাৎ প্রায় আড়াই ঘন্টা ছবির সাথে আমার প্রথমদিনের আলাপচারিতা চলে। আমি অনেকভাবেই তার কাছে বন্ধু ফরহাদকে উপস্থাপন করি, তার কলেজ জীবনের ঘটনা বর্ণনা করি, মেয়েটিও এক মনে সব শুনে যায়। আমি ঠিক যেন তার অনুভূতিটুকু আঁচ করতে পারি না। সেদিন বিকেল বেলা বন্ধু ফরহাদের সাথে দেখা হলে আমি ব্যাপারটা তাকে জানাই। সুদীর্ঘ সময় কথোপকথন হয়েছে শুনে প্রথমে সে কিছুটা ব্যথিত হলেও পরে আমাকে বলে আমি যেন কথোপকথন এর লিখাগুলো তাকে ই-মেইল করে পাঠাই। আমিও বন্ধু চাইতে পারে ভেবে সব কথা সংরক্ষণ করে রাখি, যা পরবর্তীতে তাকে মেইল করে পাঠাই।

এভাবে প্রায় সাত দিন কেটে যায়। আমি আগে থেকেই জানতাম সে বাসায় নেট লাইন আর ব্যবহার করবে না এবং সাত দিন চলে যাবার পর ছবিও একদিন আমাকে বিষয়টা জানায়। আমি মনে মনে কষ্ট পেলেও তার কাছে তা কখনো প্রকাশ করতে চাই নি, কেননা তার সাথে আমার ফোনে কথা বলা ধরনের বন্ধুত্বের কোন ইচ্ছা ছিল না। আমার এমন সিদ্ধান্তের কারণ ছিল আমার সহপাঠী ফরহাদ। সে আমাকে প্রথম থেকেই পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত করেছিল এই ভেবে যে, হয়তো আমি তাকে এ যাত্রায় প্রেমের দেখা পাওয়াতে পারবো, কেননা আগেই বলেছি, “তার তখন প্রেমের জন্য যুদ্ধে যাবার বয়স”। কিন্তু যখন এই আমিই বন্ধু ফরহাদকে আমার আর ছবির কথোপকথন মেইল করে পাঠাতাম আমার সেই বন্ধু রসিকতা করেই হোক কিংবা বাস্তবকিক অর্থেই হোক, আমাকে একদিন বলে, “দোস্ত, প্রেমটা তুই কর, আমি ঠিক মেয়েটাকে কনভেন্স করতে পারছি না।” আমি জানতাম ফরহাদ সেদিন না হোক তার কিছুদিন পর হলেও আমাকে একথা বলতো। তার কথার উত্তর আমি অনেকটা হেসেই উড়িয়ে দেই। আমাকে এক কথায় জোর করেই সেদিন ফরহাদ মেয়েটির ফোন নম্বর দিয়ে দিতে চায় কিন্তু আমি কিছুতেই তা নিতে রাজি হই না।

মানুষের ভাল লাগাটা সম্পূর্ণই তার মনের ব্যাপার। এ জন্য অনেকে ভালবাসাকে 'মন দেয়া-নেয়া' বলে থাকে। কাকে ভাল লাগবে, কাকে লাগবে না এ ধরণের সাড়া আসে মূলত মন থেকে। ছবির ব্যাপারে কিন্তু আমার ভেতর সে ধরণের সাড়া আমি তখনও পাই নি। কেন জানি না তার প্রতি আমার ভাল লাগার দৃষ্টি কখনও প্রেমিকা পর্যায়ে ছিল না। আমি যখন তার সাথে কথা (চ্যাটিং; আমি তার সাথে ফোনে কোনদিন কথা বলি নি) বলতাম, সবকিছু কেমন যেন অভিনয়ের মত মনে হত। মেয়েটির প্রতি ফরহাদের যে ধরণের আগ্রহ ছিল আমার সেরকম কিছু ছিল না, আর থাকবেই বা কেন? আমি তখন পর্যন্ত মেয়েটিকে বন্ধুর হবু-প্রেমিকা ছাড়া আর কিছুই মনে করতাম না। আর যেহেতু ফরহাদের সাথে তার নিয়মিত ফোনে কথা হত, তাই তাকে বন্ধুর প্রেমিকা ভাবলে খুব একটা ক্ষতি ছিল না। এভাবে প্রায় প্রতিদিন সকালেই আমাদের দু'জনের নেট-এ কথা হয় আর আমি সেই কথোপকথন ফরহাদকে ই-মেইল করে পাঠিয়ে দেই। এভাবে অল্প কয়দিন যেতেই ফরহাদ বলে যে, ছবির সাথে ইদানিং তার খুব একটা কথা হয় না। মেয়েটি নাকি তাকে অনেকটা এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে, ফোন রিসিভ করে না ইত্যাদি। ফরহাদ কেন জানি না আমাকে একটা কথা বলে যে, "তুই মেয়েটার সাথে প্রেম কর, মেয়েটা অনেক ভাল রে!"।

প্রেম স্বর্গীয়। কিন্তু এমন প্রেম করার তো কোন মানে হয় না। আমার সেই বন্ধু আমাকে পরে আরও কয়েকবার স্মরণ করে দেওয়া প্রসঙ্গে বলেছিল, “প্রেমটা তুই-ই কর”। কিন্তু আমি নিয়মের বাইরে যেতে চাই কি কখনও। যুক্তিহীন কোন কথার উত্তর যুক্তি দিয়ে দেয়ার মধ্যে কোন পারদর্শীতার নমুনা তো দেখি না; আমি অন্তত তাই মনে করি। তাই তখন ‘প্রেমটা কেন আমি করছি না’ বন্ধুর এরূপ প্রশ্নের কারণ ব্যাখ্যায় আমি যাই নি। কেনই বা আমার বন্ধু সেদিন আমাকে বলেছিল তার নতুন প্রেমের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এবং সে আমার সাহায্য চায়, আবার সে কোন ভাবনায় আমাকে বলে ‘প্রেমটা তুই কর’ আমি ঠিক মিলাতে পারি না। প্রেম সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না একথা ঠিক। তা স্বত্তেও যতটুকু বুঝি তা আজকালের ছেলেপুলেদের থেকে কিছু বেশি হলেও কম নয়। ফেসবুকের দেয়ালে ‘ইন এ রিলেশনসিপ’ লিখে দিলেই যে প্রেমিক মজনু হওয়া যায় না, এ উপলব্ধি আমার মাঝে আছে। তবে এর পরেও আমি বিবেচক, কোন আক্কেলে সাত দিনের পরিচিত এক মেয়ের জন্য মন খারাপ করে বসে আছি এর উত্তর আমার ঠিক জানা নেই।

ছবির সাথে যেদিন আমার শেষ কথা হয়, আমি ওর মাঝে কেমন জানি এক ধরণের প্রাণহীন ছবির ছায়া দেখতে পেয়েছিলাম। আমার এক প্রশ্নের উত্তরে সে আমাকে বলেছিল যে, আমার নাকি তার প্রতি তেমন কোন আগ্রহ নেই, এটা সে বুঝতে পারে। মেয়েটি ঠিক বিদায় বেলায় আমার যে মুখোশহীন প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছিল, তার জন্য আমি ঠিক প্রস্তুত ছিলাম না। আমিও হঠাৎ করেই যেন নিজেকে চিনতে পারি। আমার কাছে মনে হয়েছে ছবির সাথে আমার পরিচয়-বন্ধুতা-কথাবলা এই সবকিছুতেই আমার দুই ধরণের চরিত্র খেলা করেছে। কেননা প্রথম দিনের সেই আমি যদি শেষ দিনের সেই আমি হই তবে মেয়েটির ব্যাপারে আমার কোন ভাবোদয় হবার কথা ছিল না। কিন্তু তার অন্যথা হয়। আমি নিজের মাঝে শূন্যতা অনুভব করি। হতে পারে তা প্রিয় বন্ধুকে হারানোর শূন্যতা, হতে পারে এ শূন্যতা প্রিয় চেহারা চোখের রেখায় না দেখতে পাবার শূন্যতা। মাঝে মাঝে মনে হয় এ শূন্যতা যেন কোন প্রাণহীন প্রাণীর অতলে হারিয়ে যাবার পূর্বে বিকর্ষ নয়নের দৃষ্টি, বুক ফাঁটা কান্নার আওয়াজ কিংবা থমকে থাকা কিছু সময় অথবা পরাজিত কোনো সৈনিকের বিমর্ষ মুখচ্ছবি, নাকি অন্যরকম এক দুঃস্বপ্নের হাতছানি? আমি ঠিক যেন মিল পাই না।

মানুষের কিছু কিছু অপূর্ণতা তাকে নতুন প্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখায়। আমার মাঝে যে স্বত্তা আমাকে প্রতিনিয়ত মেয়েটির ব্যাপারে উদাসীন করে তুলেছিল, সেই স্বত্তাই যখন নিজের দুই ভিন্ন রূপ দেখায় তখন মনের ভেতর এক ধরণের অপরাধবোধ কাজ করে, নিজেকে অপরাধী মনে হয়। মনে হয়, মেয়েটির সাথে পরিচয়-বন্ধুতা সবকিছু কেন স্বপ্নের সীমারেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নি? বাস্তবে যাকে আমি ভালই বাসলাম না তার জন্য কেন আজ মন কাঁদে? তবে কি বিদায় বেলায় নিজের দুই রূপ আমাকে প্রভাবিত করেছে? সব সবকিছুর উত্তর আমার অজানা। আমি শুধু জানি পলাতাক হৃদয়ও মাঝে মাঝে প্রেম খুঁজে। আমিও খুঁজেছিলাম, আমার মাঝেও শূন্যতা অনুভবের একখানি হৃদয় আছে, যার কারণেই হয়তো মেয়েটির কথা মনে হলে, তার শূন্যতা আমি অনুভব করি আজও।

২০.০৪.২০০৮ ইং
* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *
অভূতপূর্ব


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

খুব বেশী বর্ণনামূলক। গল্পের মাঝে গল্পটা খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। তবু আপনার লেখার হাত বেশ ভালই মনে হয়েছে। আরো লেখা চাই।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

____________________
অভূতপূর্ব

সাফি এর ছবি

জুত পেলামনা ভাই। পরের লেখার অপেক্ষায় রইলাম

অতিথি লেখক এর ছবি

দুঃখ পাইলাম!
ইনশাল্লাহ পরের লেখা আরও ভাল হবে।

কেন যেন অতিথি লেখকদের কমেন্ট করে না কেউ, এইটাই কি নিয়ম?
ভাল হোক-মন্দ হোক, আরও কিছু মন্তব্য পেলে উল্লাসিত হতে পারতাম, কিন্তু এখন তা পারছি না।

ধন্যবাদ সাফি ভাই।
আবার দেখা হবে

____________________
অভূতপূর্ব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।