আজকে বাং আজকে বাং

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি
লিখেছেন ত্রিমাত্রিক কবি (তারিখ: সোম, ২৮/০৬/২০১০ - ৮:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সকালে ঘুম থেকে উঠলাম বরাবরের মতই মায়ের ডাকাডাকিতে। বয়সটা নিতান্তই কম হল না, ইউনিভার্সিটির গণ্ডি পেরিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করছেই তাও প্রায় একবছর হয়ে গেল, কিন্তু সকালে নিজে নিজে উঠতে না পারার অভ্যাসটা এখনও গেলোনা। দু-তিনটা মোবাইল এ অ্যালার্ম বা গোটা চারেক অ্যালার্ম ক্লকও আমার স্বভাব বদলাতে পারেনি, শেষ পর্যন্ত মা-ই ভরসা আমার সকালে ওঠার মিশনে। এই সকালের ঘুমটার প্রতি আমার বাড়াবাড়ি রকমের ভালবাসাটা, আমার নামের সাথে অলস নামটা জুড়ে দিয়েছে। এই ঘুমটা ছাড়া আদতে আমি খুব একটা অলস কিন্তু নই, রাত তিনটা-চারটা তো আমার কাছে নস্যি, তো এজন্য সকালের ক্লাসগুলা বরাবর মিস করেছি বা গেলেও ক্লাসের ব্যাকবেঞ্চে সকালের বাকি ঘুমটা পুরণ করার অভ্যাসটা আমার একটা বাজে ইমেজ দাড়া করিয়ে দিল। ক্লাসের বন্ধুরা কেউ নাম দিল 'বার্ড ফ্লু' কেউ বা 'স্লিপিং বিউটি'। যদিও নামকরণের যৌক্তিকতা নিয়ে আমার সবসময়ই একটা সন্দেহ ছিল, বার্ড ফ্লু রোগে আক্রান্ত মুরগী আসলেই ঝিমায় কিনা এটা নিয়ে আমার ব্যাপক সন্দেহটা এখনো দুর হয়নি। যাই হোক, স্বভাব তো আর হুট করে বদলায় না, আর কখনই বদলায় না যদি বদলানোর ইচ্ছাই না থাকে। তাই পাস করে কর্মজীবনে প্রবেশও আমার ফ্লূ থেকে নিস্তার দেয় নি।

আগে তো ইচ্ছামত ক্লাস না করার সুযোগটা ছিল, আর ক্লাসে না গেলেও সমস্যা ছিল না, কারণ কে না আসলে কে প্রক্সি দিবে ব্যাপারগুলা মোটামুটি ধরাবাধা ছিল, আর শেষ দুই বছর স্যাররাও মনে হয় আর এসব নিয়ে মাথা ঘামাতেন না, আমাদেরও দেখা যেত ক্লাস এ থাকলেও অ্যাটেন্ডেন্স শিটে একজনই সাইন করত। আর বুয়েট ছাত্রমানেই আমরা জানতাম, শেষ পর্যন্ত নিজেদেরই পড়তে হবে, তাই ক্লাস করার ওই দিকের তাগিদটাও ছিল না। কিন্তু অবস্থা রাতারাতি পাল্টে গেল পাশ করার পর। দুমাসের ক্ষুদ্র বেকার জীবনের যন্ত্রনা কাটানোর পর, কর্মজীবনের মহাযন্ত্রনায় প্রবেশ করলাম। তবে আমি যে বিপদটায় পড়লাম সেটা হল, সকালে ওঠার বিপদ, আগে আমার ক্লাসে আমি দেরি করে গেলেও কারও কিছু বলার ছিল না, আমার ক্লাস আমি করলেই কি আর না করলেই কি। কিন্তু এখন যে আমারই ক্লাস নিতে হয়, আমার দেরি হলে ৩০-৪০ জন ছাত্র ছাত্রী এসে বসে থাকবে, তার চেয়েও বড় কথা, যেখানে চাকরি করি সেখানে কথায় কথায় বেতন কাটে। কালকে রাত্রে রাগিব ভাই এর গুগল নিয়ে লেখাগুলা পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম কাজের পরিবেশ বোধহয় একেই বলে। গুগল এ কাজ করলে খাওয়ার লোভেই মনে হয় বাং মারার চিন্তা মাথায় আসত না, আর এখন আমার প্রতিদিন সকালে বের হওয়ার আগে দশবার ভাবি আজকে কি বাদ দেয়া যায় না? কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাং মারার ইচ্ছাগুলা আর খুব একটা পাত্তা দিতে পারি না, বোধহয় ব্যাপারটার সাথে অর্থনৈতিক বিষয়টা জড়িয়ে গেছে বলে। এখানে বলে রাখা দরকার আমি যেখানে কাজ করি সেখানকার ইনকাম এর একটা বড় অংশ আসে আমাদের কাটা বেতন থেকে। যখন দেখা যায় কোন কারণে হয়ত বেতন কাটতে পারছে না বা সেরকম সুযোগ পাচ্ছে না, তখন দেখা যায় তারা নতুন পলিসির প্যাচ বের করে ফেলছে। দেখাগেল কেউ হয়ত ক্লাস মিস করছে না, বা সবাই ঠিকমত ছাত্র-ছাত্রীদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে, তখন দেখা গেল হয়ত জুতা পড়ে ক্লাস এ না আসার জন্যে বেতন কেটে নিল। তো এরকম পলিসির প্যাচ এ পড়ে কত সকাল যে মাটি হয়েছে সে হিসাব করতে গেলে গণকযন্ত্র লাগবে।

তো যাই হোক, মার ডাকাডাকিতে ঘুমটা ভাংতেই প্রতিদিনের মতই আগে মোবাইলে সময়টা দেখে নিলাম, সাড়ে সাতটা। মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল, কারণ একটু আয়েশ করার সুযোগ নেই আর এখন, আটটায় ড্রাইভার আসতে বলা আছে, বের না হতে পারলে আবার বেতন কাটার খাড়া। উঠে পড়লাম, বাইরে দেখি প্রচণ্ড বৃষ্টি। আমি মানুষটা খুব একটা কাব্যিক নই, বৃষ্টি দেখলে এক্কেবারে নষ্টালজিক হয়ে লজিক টজিক নষ্ট করে ফেলি না , অতি উতসাহে ভিজতে বেরও হই না, দু-একটা কবিতার লাইনও সচরাচর মাথায় আসে না, আমার মাথায় সবসময়ই যেটা আসে সেটা হল, আজকে বাং মেরে সকালটা ঘুমিয়ে কাটানো যায় নাকি, বা বাসায় আজকে মা-বোনদের বলে ভাল কিছু রান্না বান্নার ব্যাবস্থা করা যায় কিনা, বা বাং মারাটা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে, কতজন ছাত্রছাত্রী আজ ক্লাস এ আসতে পারে। তো নিয়মতান্ত্রিক আমি আজকেও নিয়মের ব্যতিক্রম না করে অপশান গুলা একটু নাড়াচাড়া করছিলাম। এমন সময় ফোন, ড্রাইভার, ভাইয়া বৃষ্টি তো অনেক, কিভাবে আসব? আমি মনে ভাবছি কি বলব, সহজেই বলে দেয়া যায় একটা রিক্সা নিয়ে চলে আসতে, আমি নাহয় ভাড়া দিয়ে দিলাম। কিন্তু মাথার কথা কি সবসময় মুখে আসে? মনের কথাও মাঝে মাঝে চলে আসে। আমি বললাম, আচ্ছা আপনি বৃষ্টি কমলে আসেন। বললাম তো বললাম, কিন্তু মাথায় বনবন করে ঘুরতে থাকল, আজকে বাং আজকে বাং। তারপর ভাবলাম, সামান্য একটা ডিসিশান নিতে এত সময় লাগালে কি জীবনে বড় কিছু করা যায়! হিসাব করে দেখলাম মাসের ২৮ তারিখ, এ মাসের বেতন হয়ত রেডি হয়ে গেছে, আর না হলে না হোক, আজকে বাং আজকে বাং।
____________________
ত্রিমাত্রিক কবি
E-mail:


মন্তব্য

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

বাং বাং বাং হাসি

ভালো থাকুন ।

মর্ম এর ছবি

বাং মারায় অনেক আনন্দ...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

হাসিব জামান এর ছবি
সবজান্তা এর ছবি

কিন্তু স্যার আপনি কি কানাডা যেয়েও বাং মারবেন ? চোখ টিপি


অলমিতি বিস্তারেণ

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

মজা লাগসে। হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতিথি লেখক এর ছবি

'সবজান্তা' তুমি কে? এখানেও ছাত্র-ছাত্রী পেয়ে যাব ভাবিনি!
আর বাং মারার অভ্যাসটা কানাডা কেন কোথাও গেলেই বাদ দিতে পারব না হয়ত
আর @হাসিব ভাইঃ শিক্ষক হইলেও নিজের গা থেকে আমি এখনো ছাত্রের গন্ধটাই পাই, তাই বাং চলবে দেঁতো হাসি
___________
ত্রিমাত্রিক কবি
E-mail:

সবজান্তা এর ছবি

জ্বি স্যার, আমি আপনার ক্লাসের সেই সুন্দরী ছাত্রী, যার দিকে আপনি হা করে সারা ক্লাস তাকিয়ে থাকেন।

স্যার শুনলাম আপনি বলে বুয়েটেও এই কাজ করতেন মানে 'হা' করে মেয়েদের দিকে তাকায়া থাকতেন ?


অলমিতি বিস্তারেণ

অতিথি লেখক এর ছবি

সবজান্তা, তুমি শুনছিলাম গবেষণা খাতে নিজের মেধা, অর্থ আর শ্রম ব্যায় করার সিদ্ধান্ত নিয়াছিলে। তোমার মাথা হঠাত বিগরাইল কেন? বেশী রূপের দেমাক করিলে কিন্তু গবেষণা মাঠে মারা খাইবে।

তোমাকে ভালই চিনিতে পারিয়াছি, প্রথমে একটু কনফিউসড হয়ে গেছিলাম। তুমি তো তোমার রূপ দিয়ে আমাকে কখনই কাবু করিতে পারো নাই। আর ক্লাসের এরকম ((মডারেটেড)) মধ্যে পড়ে।
___________
ত্রিমাত্রিক কবি
E-mail:

অতিথি লেখক এর ছবি

বাং বাং বাং...................

আমিও অনেকদিন পর বাং মারলাম..............

বেশ মজায় আছি................ আরও মানুষ বাং মারছে দেখে মনে বড় সাহস পাইলাম......... দেঁতো হাসি

নবীন পাঠক

shahriarsajib@gmail.com

অতিথি লেখক এর ছবি

বাং বাং! লেখার চেয়ে কমেন্টসে ভাল মজা পাইছি। ;-]
-- শফকত মোর্শেদ

-------------------------------------------------------------------------
সহজ কথা যায় না বলা সহজে

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখার চেয়ে কমেন্ট মজা, কমেন্টের চেয়ে বাং মজা
______________
ত্রিমাত্রিক কবি
E-mail:

অতিথি লেখক এর ছবি

হে হে হে।
সেই যে ১-১ এ শুরু হইছে এখনো থামাতে পারতাছি। আগে তো ইউনিতেই যাইতাম না, ইদানীং গিয়েও ক্লাস করি না। ছাত্রজীবন ইহাকেই বলে, বাং বাং এণ্ড বাং।

পলাশ রঞ্জন সান্যাল

অতিথি লেখক এর ছবি

একবার টার্মের শেষ সপ্তাহে মনে হইল, একটা কোর্সের ম্যাডামের সাথে মাত্র দুইদিন দেখা হইছে, যাই আজকে উনার ক্লাস করে আসি। গিয়ে দেখি, উনি শেষদিক বলে আর আসবেন না, তা উনার সাথে আর দেখা হলনা। আমার তো ক্লাশ করতেই ভালো লাগত, তাই বাং মারতে মারতে টায়ার্ড হয়ে কয়েকটা ক্লাস করে ফেলতাম দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

একবার টার্মের শেষ সপ্তাহে মনে হইল, একটা কোর্সের ম্যাডামের সাথে মাত্র দুইদিন দেখা হইছে, যাই আজকে উনার ক্লাস করে আসি। গিয়ে দেখি, উনি শেষদিক বলে আর আসবেন না, তা উনার সাথে আর দেখা হলনা। আমার তো ক্লাশ করতেই ভালো লাগত, তাই বাং মারতে মারতে টায়ার্ড হয়ে কয়েকটা ক্লাস করে ফেলতাম দেঁতো হাসি

সজল

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আহ পছন্দ হইল
অন্তত একজন মানুষ বাং মারতে পারলো এই বর্ষায়

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বাংটা কোথায় মারা হলো সেটা বুঝতে পারছিনা। বাংলাদেশে না বিদেশে? বাংলাদেশে বাং মারার জন্য টাকা কাটে এরকম অদ্ভুত জায়গা আছে তা জানা ছিলনা। আর বিদেশে বাং মারলে তো চাকরী নট হয়ে যাওয়ার কথা।

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা.. মজা পালাম রে

_____________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ

অতিথি লেখক এর ছবি

@প্রকৃতিপ্রেমিকঃ ভাই বাংলাদেশ এ এরকম অনেক শংকর প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে ঘন্টা মিনিটের হিসাবে বেতন কাটে, আরও অনেক পলিসি আছে তাদের বেতন কাটার। যাই হোক স্পেসিফাই করে তাদের ছোট করতে চাচ্ছি না।
______________
ত্রিমাত্রিক কবি
E-mail:

তারানা_শব্দ এর ছবি

এই না হলে স্যার!!!!!
আমাদের কেন এমন স্যার ক্লাস নেয় না ? বাং তো আমার ও রোজ মারতে ইচ্ছে করে!!! মন খারাপ

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

অতিথি লেখক এর ছবি

বাং মারতে চাইলে স্যার ট্যার কি কোন ব্যাপার?
____________
ত্রিমাত্রিক কবি

নোবেল [অতিথি] এর ছবি

মজা পেলাম। এনিওয়ে, আমি এখনও বাং মারি---ইউনির অভ্যাসটা ছাড়তে পারিনি !! দেঁতো হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।