মিথ ২ : হেলেন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২৯/০৬/২০১০ - ৫:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto
হেলেন অব ট্রয় । পুরাণের নারী যার জন্য যুদ্ধ করতে সমুদ্রে জাহাজ ভাসিয়েছিল গ্রীকরা । সেই নারী যার জন্য ট্রয় ধ্বংশস্তুপে পরিণত হয় ট্রয় । প‌্যারিসের প্রেমে ঘর ছাড়ে সে । তার স্বজাতি গ্রীকরা তা সহজে মেনে নিতে পারেনি । প্রতিশোধের নেশায় সমুদ্রে জাহাজ ভাসায় তারা ।

হেলেন হচ্ছে জিউসের কন্যা । মিথের বর্ণনামতে তার মাতার নাম লেডা । কোন কোন বর্ণনায় তার মাতার নাম প্রতিশোধের দেবী নেমেসিস । বিয়ের সময় তার পাণিপ্রার্থীরা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে হেলেন যার গলায় মালা দেন না কেন, বিপদের সময় তার স্বামীকে সবাই সাহায্য করবেন । হেলেনকে প‌্যারিস ভাগিয়ে নিয়ে গেলে, তার স্বামী ট্রোজানদের বিরূদ্ধে যুদ্ধে সাহায্য চাইলনে সব পানিপ্রার্থী রাজাদের তাদের প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে । তাই, সকল রাজার তরীতে করে যুদ্ধযাত্রা ।

যারা ট্রয় সিনেমা দেখেছেন তারা হেলেনের যে রূপ দেখেছেন, কবির বর্ণনায় হেলেন তার চেয়ে অনেক বেশী আবেদনময়ী । তবে, প‌্যারিস যেভাবে হেলেনকে ভাগিয়ে নিয়ে এসেছে তা সিনেমায় বেশ সুন্দরভাবে এসেছে । ছবিতে গ্রীক বীর এচিলিসের ভূমিকায় অভিনয় করেন দুনিয়ার সবচেয়ে আবেদনময় পৃরুষখ্যাত ব্র্যাড পিট ।

ইংরেজ কবি এবং নাট্যকার ক্রিস্টোফার মার্লো তার ডক্টর ফস্টাস নাটকে হেলেনকে নিয়ে এসেছে অন্যরূপে । তার কাব্যশক্তির চমকপ্রদ প্রকাশ পেয়েছে হেলেনের রূপের বর্ণনায় । শয়তানের কাছে আত্মবিক্রির পরিণতিস্বরূপ মৃত্যুকে আলিঙ্গনের পূবৃমুহুর্তে ফস্টাস হেলেনকে দেখতে চায় । যথারীতি, ডেভিলরা হাজির করে হেলেনকে ।

হেলেনকে দেখে ফস্টাস মুগ্ধ । তার চেহারা দেখে বিমুগ্ধ ফস্টাসের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে:
Was this the face that launch'd a thousand ships
And burnt the topless towers of Ilium?

তার এই মুগ্ধতা যেন কাটতেই চায়না। হেলেনকে চুমো দিয়ে ফস্টাস অমরত্বের স্বাদ পেতে চায়। হেলেনের রূপে মুগ্ধ হয়ে সে এই নারীর জন্য ট্রয় নগরী ধ্বংশ হওয়াকেও সমর্থন করে । এজন্য দরকার হলে নিজের শহর জার্মানি উইটেনবার্গকে ও হেলেনের জন্য ধ্বংশস্তুপে পরিণত করতে আপত্তি নেই তার ।

হেলেনে প্রেমে প‌্যারিস হতে চায় ডক্টর ফস্টাস । হেলেনের দূর্বল স্বামী মিনিলাসের সাথে দ্বৈরথের জন্য প্রস্তুত আছে সে । প্রস্তুত এচিলিসের ভঙ্গুর জায়গায় আঘাত হানতে ! এচিলিসের দূর্বলতম জায়গায় আঘাত করে আরো একটি চুমোর জন্য হেলেন কাছে ফিরে আসবে ফস্টাস । মূল চাওয়া একটাই তার, হেলেন পেরামোর হবে তার:
More lovely than the monarch of the sky
In wanton Arethusa's azured arms;
And known but thou shalt be my paramour!

তবে, ভয়ঙ্কর সুন্দর থেকে সাবধান থাকতে চান কেউ কেউ । নারীর জন্য শহর ধ্বংশের বিপদ সম্পর্কে সাবধানীরা অবগত । কবি ইয়েটস সেই দলেরই একজন । যাকে তিন ভালবাসেন, সেই নারীর টানটান সৌন্দর্য নিয়ে কবি গভীরভাবে চিন্তিত । দ্বিতীয় ট্রয়ের কথা চিন্তা করে কবি উংকন্ঠিত ।

মড গোন (Maud Gonne ) হচ্ছেন কবি ইয়েটসের বিপ্রবী প্রেমিকা । কবি যদিও তার প্রেমিকার প্রেমে অন্ধ, মড গোন তাকে বিপ্রবের এক সহযোদ্ধা থেকে বেশী কিছু ভাবতে নারাজ । সুন্দরী মড গোন বিপ্লবের জন্য সর্বস্ব বাজি ধরেছে । প্রেমিকার প্রতিবিপ্লবী কর্মকাণ্ডে ভীত কবির জিজ্ঞাসা :
With beauty like a tightened bow, a kind
That is not natural in an age like this,
Being high and solitary and most stern?

প্রেয়সী মড গোন যদিও তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে বারেবারে, তবু্ও কট্রর স্কটিশ জাতীয়তাবাদি মড গোন জুড়ে আছে কবির চিন্তায় এবং কবিতায় । "The Second Coming" কবিতায় কবি'র ইর্ষা, ভালোবাসা, ক্ষমা, উৎকণ্ঠা, বিরাগের কেন্দ্রে রয়েছেন মড গোন । অতিবিপ্লবী কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ সম্ভাব্য ধ্বংশের আশংকায় কবি শংকিত । তার আশংকা কাব্যে ঝরে পড়েছে কবিতার শেষ দু'টি চরণে:
Why, what could she have done, being what she is?
Was there another Troy for her to burn?

ওলি
oli


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এচিলিসের

একিলিস?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

ইংরেজরা একিলিস 'ই বলে।
লেখাটা কি রকম লাগলো ?
ওলি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

একটু কি এলোমেলো হয়ে গেলো?
মিথ আর মিথভাঙা গল্প বোধহয় একসাথে বলতে গিয়ে একটু ঝামেলা হয়ে গেছে

০২

হেলেনের জন্ম আর বৃত্তাকার নিয়তি (মেনেলাউস-পারিজ-মেনেলাউস) আসেনি বোধহয়

আসেনি সংসার থেকে প্রেমকে আলাদা করার গ্রিক মিথের বৈশিষ্ট্য

০৩

গ্রিক বীরের নাম যতবার শুনেছি একিলিস। এচিলিস শুননি কখনও। একটু দেখেন

অতিথি লেখক এর ছবি

লীলেন ভাই
আপনার মত বড় কবি যে আমার লেখা পড়ে মন্তব্য করেছেন তাতে আমি অত্যন্ত প্রীত।
ঠিকই ধরেছেন । আমার লেখাটা একটু এলোমেলোই বৈকি । নতুন লেখক, অল্প পড়াশোনা । বৃঝতেই পারছেন।
হেলেনকে ঘিরে যে মীথ তা সবার জানা । আমি অন্য দুই লেখকের ট্রিটমেন্ট নিয়ে আমার মতো করে খানিকটা আলোচনা করলাম । পাঠকরা যদি তাতে সামান্য আনন্দ পান, তাত্ই আমার সার্থকতা।
হেলেনের জন্ম নিয়ে পৃথক আরেকটা পোস্ট দেওয়ার আশা রাখি।
ওলি

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো।

ধন্যবাদ।

কামরুজ্জামান স্বাধীন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ ।
ওলি

নীল রোদ্দুর এর ছবি

বিখ্যাত মিথ দেখলে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আর তুলনামূলক অবিখ্যাত মিথ দেখলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে কেবল মিথপ্রেমীরা। সেইরকম কিছু নিয়ে আসেন আমাদের জন্য। হয়ত দেখা যাবে, আপনি সেই তুলনামূলক অবিখ্যাতগুলোকেই বিখ্যাত করে দিয়েছেন।

পড়ালেখা একটু বাড়িয়ে দিলেই হবে। আরেকটু যত্ন নিয়ে সাজালে আরো ভালো লাগবে। অপেক্ষায় রইলাম তেমন কিছুর। হাসি .
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

অতিথি লেখক এর ছবি

মিথ তো মিথই । বিখ্যাত মিথের ও অনেক অনাবিষ্কৃত দিক আছে । ভাল লেখকেরা পরিচিত মিথকে ই নতুন মাত্রা দিতে পারেন যেমন দিয়েছেন ক্রিস্টোফার মার্লো এবং উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস ।
তিথনাস কে নিয়ে লেখা আমার মিথ ১ কি পড়েছেন ?
মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
ওলি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- গ্রীকদের কপাল ভালো আমি ঐ সময়ে জন্মাই নাই। নাইলে ওদের বাংলাদেশ আক্রমন করতে হতো। আর বাংলাদেশ আক্রমন করলেই মজাটা বুঝাইতাম শালাদের। কিন্তু কথা সেইটা না। কথা হইলো, আমি ক্যান হেলেনরে 'দিলওয়ালে দুলহানিয়া ভাগাকার লে জায়েঙ্গে' করতে পারলাম না! মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক এর ছবি

'দিলওয়ালে দুলহানিয়া ভাগাকার লে জায়েঙ্গে' করতে ধুসর খান নাম ধারণ করতে হবে ।
ওলি

সাবিহ ওমর এর ছবি

ট্রয় সিনেমায় ব্র্যাড পিটের পশ্চাৎদেশ দেখতে দেখপ্তে একিলিসের উপরই বিরক্তি ধরে যাচ্ছিল আরকি...

হেলেন, পেনিলোপ, সীতা, দ্রৌপদী, কাউরেই সুবিধার লাগে নাই। এর চেয়ে অভিমন্যুর বউ উত্তরাকে বেশি ভাল লাগসিল। আবার ক্ল্যাশ অফ দ্য টাইটান্সের এন্ড্রোমিডাকে সেরম লাগসে চোখ টিপি কিন্তু ডিরেক্টর ব্যাটার সঙ্গে নিশ্চয়ই কোন ঝামেলা ছিল, নাহলে এরকম একটা নায়িকাকে সাইড ক্যারেক্টার বানায় দিবে কেনু কেনু কেনু? মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ এই লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ...

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ ।
অতিথি; আপনার নামটা কি জানতে পারি ?
ওলি

অতিথি লেখক এর ছবি

হেলেন... হেলেন...

অতিথি লেখক এর ছবি

Sweet Helen, make me immortal with a kiss:
Her lips sucks forth my soul, see where it flies!
Come Helen, come, give me my soul again.
Here will I dwell, for heaven be in these lips,
And all is dross that is not Helena!

ধন্যবাদান্তে,
ওলি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।