শুন্যতা.........

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০১/০৭/২০১০ - ১:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শুনেছিলাম ইউ এস ভিসা পাবার পর নাকি একটা যুদ্ধ জয়ের আনন্দ পাওয়া যায়। কিন্তু বাচ্চা বাচ্চা ভিসা অফিসারটা যখন বলল " I have confirmed your visa. Please collect your passport on the 5th of July." তখন হঠাৎ করে মাথার ভেতরটা কেমন যেন ফাকা লাগতে লাগল। এতদিনের প্রতীক্ষা, কিছুদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের কেমন একটা নিরানন্দ পরিনতি বলে মনে হচ্ছিল এটাকে। কেন এমন মনে হচ্ছিল আমার জানা নেই। হয়তোবা মাথার ভেতর হাজারটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল বলে নয়ত দেশটাকে ছেড়ে যেতে হবে এই নির্মম সত্যটাকে উপলব্ধি করতে পেরে। কারন যেটাই হোক না কেন বুঝতে পারছিলাম ভেতরে কোন উচ্ছ্বাস নেই, কোন উত্তেজনা নেই। আমেরিকান এম্ব্যাসির কয়েক মন ওজনের দরজা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে এসে মনের ভুলে রাস্তা ধরে হাটা শুরু করলাম। পেছন থেকে সিকিউরিটির ডাক শুনতে পেলাম "ফুটপাথ দিয়ে যান"। ঘুরে দাঁড়িয়ে "সরি" বলে ফুটপাথ ধরে বেরিয়ে আসলাম রাস্তায়। পেছনে ফিরে তাকালাম একবার। এর আগেরবার যখন আমেরিকান এম্ব্যাসির সামনে দিয়ে গিয়েছিলাম সেদিনের কথা মনে পড়ল। এম্ব্যাসির সামনে যারা সিকিউরিটি চেকিং এর জন্য দাঁড়িয়ে ছিল তাদের দেখে মনে মনে বলেছিলাম " দেখিস একদিন আমিও"। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল সেইদিনটা কত নিরস ভাবে পার হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা দিয়ে আস্তে আস্তে সামনের দিকে হাটতে হাটতে মনে পড়ল অফিসে যাবার কথা। কিন্তু মোবাইল, ল্যাপ্টপ সবকিছু বন্ধুর বাসায় রেখে এসেছি (হল ভ্যাকান্ট হবার পর থেকে বন্ধুর বাসাতেই আছি)। বন্ধুর বাসায় ফিরে মোবাইল টা অন করতেই কলিগ এর ম্যাসেজ পেলাম- " farook vai wants to see you." উল্লেক্ষ্য ফারুক ভাই আমার ফার্ম এর রিজিওনাল ডিরেক্টর। মাথায় একটু চিন্তা নিয়ে অফিসে গেলাম। গিয়ে দেখলাম ডিরেক্টর আমার জন্যে কাজের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। ফাকা মাথা নিয়ে কাজে বসে গেলাম। কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম কেন আজ আমি অনুভুতিহীন। দেশ ছেড়ে যাবার প্রস্তুতি আমাকে বিবশ করে দিয়েছে। ভীষন মনে পড়ছে আজ পুরনো কথাগুলো। শৈশব থেকে শুরু করে ভার্সিটি জীবনের শেষ অমূল্য দিনটা পর্যন্ত। সবচাইতে বেশি মনে পড়ছে মায়ের মায়াভরা মুখটা। এখনো টিকেট কনফার্ম করা হয় নি। যেখানে যাব সেই এয়ারপোর্ট এর কোন টিকেট পাই নি। অন্য এয়ারপোর্ট থেকে নিজের শহরে কিভাবে যাবো জানি না,মাথা গোঁজার ঠাই টা এখন জোগাড় হয় নি। কিন্তু কোন কিছুতেই আমার কিছুই যাচ্ছে আসছে না এই মুহূর্তে। আমি হাটছি অফিস এর উলটো দিকের রাস্তা ধরে। গন্তব্য জানা নেই। ভীষন মায়ের কোলে মাথা রেখে কাঁদতে ইচ্ছে করছে.........।

দীপেশ


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মন খারাপ করবেন না।
আজকের এই বিচ্ছিন্নতা আগামীর আনন্দের জন্যই।
আর, ক'দিন পরে দেখবেন - সময় অনেক দ্রুত চলে যায়...

আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।

নোবেল এর ছবি

মন খারাপ করিস না বিপ্রেশ । এর জন্য তো আর কম পরিশ্রম,সাধনা করতে হয় নি !ভাল কিছুর প্রত্যাশায়---(এনিওয়ে, বিপ্রেশ বলতেই কেন জানি ভাল লাগে,মাইন্ড খাইস না, আবার ! )

অতিথি লেখক এর ছবি

দোস্ত, আয় গলা ধইরা কান্দি। লেখা ভালো হইছে। আর দুঃখ পাইসনা, ঐখানে আমি আছিনা চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

দোস্ত, আয় গলা ধইরা কান্দি। লেখা ভালো হইছে। আর দুঃখ পাইসনা, ঐখানে আমি আছিনা চোখ টিপি

সজল

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ সাদাত লেখাটি পড়া এবং মন্তব্য করার জন্য। সময় আসলেই অনেক দ্রুত চলে যায়। পড়ে থাকে শুধুই স্মৃতি। এটা সচল এ আমার প্রথম লেখা। আর আপনি আমার লেখায় প্রথম মন্তব্য করলেন। হাসি

দীপেশ।

অতিথি লেখক এর ছবি

হাহা...নোবেলদা, আমি ডোন্ট মাইন্ড ফ্যামিলির ছেলে। মাইন্ড খাই না। আর আসল বিপ্রেশদা রে কি চিনেন? উনি নামের কপিরাইট এর মামলা করলে কিন্তু আমি কিছু জানি না...... দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

সজল দোস্ত আম্রিকা গিয়া আবার গলা ধরাধরির কথা কইস না...... লোকজন অন্য কিছু ভাইবা বসবে......... চোখ টিপি

flora এর ছবি

dipesh tui northy dacotai na????choila asho vai...beshi dur e na tumi amar....niagara falls er ai par ar oi par...niagaraararat amar basha theke 1 hr....

ফয়সাল এর ছবি

সজল দোস্ত আম্রিকা গিয়া আবার গলা ধরাধরির কথা কইস না...... লোকজন অন্য কিছু ভাইবা বসবে......... চোখ টিপি
হাহা মজাইলাম

রিজভী [অতিথি] এর ছবি

একইভাবে বনানী-বারিধারার রাস্তায় রাস্তায় হাঁটছিলাম আমি আর রাফি...ভিসা পাওয়ার পর...কেমন একটা ক্লান্তি চলে আসে...

-------------------------------------
কেউ যাহা জানে নাই- কোনো এক বাণী-
আমি বহে আনি;

প্রদীপ্ত এর ছবি

মনের কথা...USA গিয়ে আরও মনে পরবে।কবে যে তোদের সাথে দেখা হবে কে জানে।তবে দেখা নিশ্চই হবে।যাত্রা শুভ হোক...।

তিথীডোর এর ছবি

শব্দটা শূন্য, শূন্যতা। ওঁয়া ওঁয়া

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।