সুশাসন, এনজিও এবং সরকার

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১০/০৮/২০১০ - ৮:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সুশাসন, এনজিও এবং সরকার

ওলি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ চৌধুরী

এনজিওদের সাথে জঙ্গি কানেকশনের কথা এই সরকারের মন্ত্রিরা অনেকদিন থেকেই বলে আসছেন। এই এনজিওরা কারা? সরকার কি তাদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে? নিদেনপক্ষে কি তাদের চিহ্নিত করেছে?
অভিয়োগকারীদের তালিকায় গত পরশু যোগ হয়েছেন কৃষিমন্ত্রি মতিয়া চৌধুরী। মানুষের জন্য ফাউণ্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত এক সভায় তিনি বলেছেন, "এটি আজ অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে দেশের অনেক এনজিওতেই এখন জঙ্গি অর্থায়ন হচ্ছে"। সরকার কি এটা বন্ধ করতে পারছেনা? তাহলে সরকার করছে কি?
স্বভাবত:ই প্রশ্ন উঠবে সরকারের সামর্থ্য নিয়ে। সুশাসনের অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে সরকারের সামর্থ্য (State Capability)। অন্য দুটি হচ্ছে জনগণের ডাকে সাড়া প্রদানের সক্ষমতা (Responsiveness) এবং জবাবদিহিতা (Accountability)। এনজিওতে এখন্ও জঙ্গি অর্থায়ন হলে বুঝতে হবে সরকার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারছে না ।
উক্ত সভায় মতিয়া আরো চমকপ্রদ মন্তব্য করেছেন যা প্রথম আলোতে (৯ আগস্ট) প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেছেন আর্থিক অনিয়ম হলে বা প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে না করে চলে যাওয়া সংশ্লিষ্ট এনজিওর কর্মকর্তাদের ধরাও যায় না। কেন ধরা যায় না? দেশে কি আইন-কানুন নেই?
এনজিও বু্র‍ো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ। যেকোন এনজিওকে বিদেশী অনুদান নিতে হলে বুরোর অনুমতি নিতে হয়।বুরো এনজিওদের কিসের ভিত্তিতে এবং কিভাবে অনুমতি দেয়?
বুরোর কাছ থেকে অনুমতি পেতে হলে একটি ফর্ম (FD-6) পুরণ করে জমা দিতে হয়। প্রকল্পের বিস্তারিত এই ফর্মে লেখা থাকে। বুরো যদি কোনো বিষয়ে আরো তথ্য জানতে চায়, তবে এনজিওর কাছে আরো বিস্তারিত তথ্য চাইতে পারে। সমস্ত বিষয় পর্যলোচনা করে বৃরো সন্তুষ্ট হলে তবেই মেলে বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণের অনুমোদন।
তবে, এখানেই শেষ নেয়। বৈদেশিক সাহায্য আসে কিস্তিতে। এনজিও বিষয়ক বু্রোর কাছে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়ে তবেই টাকার কিস্তি হাতে পায় এনজিওরা। আর্থিক অনিয়ম হলে বা প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে না করার পর যদি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের অধীনস্থ বৃরো ব্যবস্থা না নেয় তবে তার দায়-দায়িত্ব কার? আবশ্যই সরকারের।
এখানেই শেষ নয়। ডিসি এবং টিএনও অফিসে মাসিক সমন্বয় সভায় এনজিওরা নিয়মিত কাজের প্রতিবেদন জমা দেয়। বছর শেষে ডিসি/টিএনও থেকে প্রত্যায়নপত্র নিয়ে এনজিও বুরোতে জমা দিতে হয়। প্রত্যায়নপত্র না দিলে এনজিও বুরো টাকা ছাড় দেয় না। মন্ত্রীর দাবিমতে অনেক এনজিওতে এখনও জঙ্গি অর্থায়ন হলে তাদেরকে কে প্রত্যায়নপত্র দিয়েছিল? এনজিও বুরো থেকেই কিভাবে তাদের অর্থ ছাড় হচ্ছে?
অগ্নিকন্যা মতিয়া জবাব দেবেন কি?
ওলি


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

একজন কোরাণীগোছের এনজিওকর্মী হিসেবে আমি ওলি ভাইয়ের অতিপ্রাসঙ্গিক লেখার সাথে কিছু মন্তব্য যোগ করতে চাই-

অতিথি লেখক লিখেছেন:
এনজিওদের সাথে জঙ্গি কানেকশনের কথা এই সরকারের মন্ত্রিরা অনেকদিন থেকেই বলে আসছেন। এই এনজিওরা কারা? সরকার কি তাদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে? নিদেনপক্ষে কি তাদের চিহ্নিত করেছে?

পিটাতে পিটাতে ঢোলের চামড়া লুজ হয়ে গেছে আর পাবলিক যা বোঝার তা বুঝে নিয়েছে। এই মছলা আজকাল আর খায় না যতোই সরকার এনজিওগুলোর জঙ্গি কানেকশনের কথা বলুক। কথা হচ্ছে সরকার নিশ্চিত না হয়ে তো আর এসব বলেন না। তাহলে ওদের ধরেন না কেনো। এখানে নিশ্চই কোনও স্বার্থ জড়িত আছে।

অতিথি লেখক লিখেছেন:
উক্ত সভায় মতিয়া আরো চমকপ্রদ মন্তব্য করেছেন যা প্রথম আলোতে (৯ আগস্ট) প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেছেন আর্থিক অনিয়ম হলে বা প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে না করে চলে যাওয়া সংশ্লিষ্ট এনজিওর কর্মকর্তাদের ধরাও যায় না। কেন ধরা যায় না? দেশে কি আইন-কানুন নেই?

বাংলাদেশে সম্প্রতি 'গ্লোবাল ফান্ড' নাম দিয়ে একটা ব্যবসা শুরু হয়েছে যে ব্যবসার সিইও হচ্ছেন শেখ সেলিম সাহেব। বৈশ্বিক এইচআইভি প্রতিরোধ কর্মসূচীর আওতায় বাংলাদেশ সরকার যে অনুদান পেয়েছে তা নিয়ে বিশাল বানিজ্য চলছে। নাম কা ওয়াস্তে একটা এনজিও থাকলে এই ফান্ড পাওয়া যাবে তবে ফান্ডের ৫০% কিক-ব্যাক করতে হবে যিনি 'বন্দোবস্থ' করে দেবেন। আমার ছোটভাইয়ের এক উকিল বন্ধুর কাছে তার এক পরিচিত লোক ডোনার নিয়ে এসেছিলো। ওই ডোনার তাকে ২৫ লাখ টাকা দেবে তবে ১৩ লাখ তাকে চেক নেওয়ার সময় ক্যাশ দিয়ে দিতে হবে। উকিল আমার পরামর্শ চাচ্ছিলো। আমি শুধু বলেছিলাম যে ওই ডোনারের কাছে তার ব্যাংক ষ্টেটমেন্ট চাও যাতে দেখা যাবে তার এ্যাকাউন্টে ২৫ লাখ আছে। তারপর থেকে ডোনার উধাও। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে এই ফান্ডের কাজে নাকি এক্সটার্নাল মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন হবে না।

অতিথি লেখক লিখেছেন:
এনজিও বু্র‍ো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ। যেকোন এনজিওকে বিদেশী অনুদান নিতে হলে বুরোর অনুমতি নিতে হয়।বুরো এনজিওদের কিসের ভিত্তিতে এবং কিভাবে অনুমতি দেয়?

এনজিও ব্যুরো হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম দূর্নীতিপরায়ন এবং হয়রানিকারী একটা দপ্তর। এখানে কোনও প্রগ্রেস রিপোর্ট এ্যাকসেপট করাতে হলে পয়সা দিতে হয়। যতো ভালো কাজই সংস্থা করুক না কেনো, মাল ছাড়া কোনও গান নেই। আর এখানকার কর্তারা ফিল্ডে গেলে তো বড় মাছ, হাড়ি ভরা দই, কলার কাঁদি, বাসের/ষ্টিমারের টিকেট, আরও কতো কি। এরাই এতটাই দাপটসম্পন্ন যে যদি ফিল্ডে গিয়ে বলে 'মাল' খাবে, তা'ও দিতে হবে এনজিওকে।

বাংলাদেশের স্থানীয় এনজিওগুলোতে সুশাসনের ভিষণ অভাব। ফান্ড মারতে মারতে এরা তলায় ঠেকিয়ে দেয়। আমি কোনও ন্যাশনাল বা লোকাল এনজিওতে কখনও চাকরি করিনি তবে তাদের সাথে পার্টনারশিপে অনেকদিন কাটিয়েছি, সব কাহিনী আমার জানা আছে। তবে তাদের যে পরিমান ঘুষ বা অন্যান্য ফালতু খরচ করতে হয় সে টাকা দেবে কে? ডিসি অফিসের চাঁদা, ইউএনও সাহেবের বাসার এসি, ইত্যাদি? তাই ফান্ড না মেরে যখন কোনও উপায় নেই তখন ভালো করেই মারি, এই দর্শনে উপনিত হয় তারা শেষ পর্যন্ত।

রাতঃস্মরণীয়

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অট: ওলি আপনার ফেইসবুক প্রোফাইল কি এটা?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

জ্বী, যোগ করে ফেলুন; মোর্শেদ ভাই।
ওলি

চিনি গো চিনি তোমারে এর ছবি

ওলি ভাই তো লনডনে থাকে, দেশে থাকতে ওনি শিবিরের বিরাট নেতা ছিলো। ওনাদের গুরু মোজাহিদ যখন সমাজকল্লান মন্ত্রি ছিলো তখন তো অনেক এনজিও ইসলামি বেংকের মাধ্যমে জংগিদের টাকা দিতো। ওলি ভাই কি ঐসব কথা জানে না?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

তাই নাকি!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ভাই ওলি, 'এই এনজিওরা কারা?' এই বিষয়েও আমাদের একটু আলোকিত করুন না। আপনার অনেক জানপেহচান আছে বলে মনে হচ্ছে।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অতিথি লেখক এর ছবি

কয়েক সপ্তাহ আগে দি ডেইলী স্টারে'র ফোরামে শাহানা সিদ্দিকীর একটি লেখা বেশ তথ্যবহুল। শাহানা তার "Confessions of a Development Practitioner" এ বিভিন্ন এজেন্সিতে কাজের সুত্রে এই সেক্টরের Governance বিষয়ে আলোকপাত করেছেন:
http://www.thedailystar.net/forum/2010/july/confession.htm
তবে, ক্ষমতাসীনদের সাথে যাদের সম্পর্ক, সেই সব এনজিওদের কাজ অন্য ধরণের। আমি যেসব আন্তজাতিক/ জাতীয় সংষ্থায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, তারা সাধারণত ফাণ্ডের জন্য Criterion ঠিক করে দেয়। হঠা করে গজিয়ে উঠারা বড় বাইলেটারেল (for example, USAID.DFID, CIDA and JICA) বা মাল্টিলেটারেল (for example, UNDP, WHO and UNFP) ফাণ্ডিং সাধারণত পায়না।
কিছু এনজিওরা অবশ্য নেতাদের পকেটে বেড়ে উঠে যাদের কথা প্রথম মন্তব্যকারী লেখেছেন যে তারা গ্লোবাল ফাণ্ডের বারোটা বাজাচ্ছে।
ওলি

এনায়েৎ ইউ এস ইসলাম এর ছবি

মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে ইদানিং এনজিও কর্মীরা প্রায়ই একটি সমস্যার মুখোমুখি হন। সেটি হচ্ছে এনজিওদের জঙ্গি কানেকশন বিষয়ক বিভ্রান্তি। কারণ সরকারের মন্ত্রীদের মুখ থেকেই এরকম অভিযোগ উঠে আসছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এজাতীয় বক্তব্য প্রদান অনেকটা ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েঁছে। মন্ত্রীরা যখন বলছেন নিশ্চয়ই তাঁরা নিশ্চিৎ হয়েই বলছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নিশ্চিৎ হওয়ার পরও তাঁরা এসকল এনজিওদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন। এভাবে ঢালাও বক্তব্য দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন কেন। এতে এনজিওদের কাজকর্ম বাঁধাগ্রস্থ হওয়া ছাড়াও বিভিন্ন ফায়দা লুন্ঠনকারী গোষ্ঠিও এসকল বিভ্রান্তির সুযোগ গ্রহণ করতে পিছ পা হয় না। সরকারের এতোগুলো স্ক্রিনিং সিষ্টেম, মনিটরিং সিস্টেম অতিক্রম করে এনজিওরা কীভাবে এধরনের কাজ করতে পারে। সমস্যাটা আসলে কোথায়। আর এনজিও বলতেইবা আসলে কাদেরকে বুঝানো হচ্ছে, এটাও পরিস্কার হওয়া দরকার।
অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবিষয়টি তুলে ধরার জন্য ওলিকে ধন্যবাদ।

enayet@fivdb.net

অতিথি লেখক এর ছবি

কয়েক সপ্তাহ আগে দি ডেইলী স্টারে'র ফোরামে শাহানা সিদ্দিকীর একটি লেখা বেশ তথ্যবহুল।

আমি লেখাটা গভীর মনোযোগ সহকারে পড়লাম কিন্তু কোনও তথ্য খুঁজে পেলাম না। যা পেলাম, তা হচ্ছে মিজ শাহানা কিছু মন্তব্য করেছেন এবং মন্তব্যগুলো মানে হলো এসেছে তার ব্যাক্তিগত হতাশা থেকে। তিনি এনজিও সেক্টরের ব্যবহৃত প্রতিশব্দগুলো নিয়ে বিদ্রুপ করলেন কিন্তু তিনি নিজে ভালো করেই জানেন যে এই প্রতিশব্দগুলো ছাড়া উন্নয়ণ কর্মসূচী এবং এনজিও সেক্টর চালানো যায়না। সেক্টরটাকে এতো নেতিবাচকভাবে দেখার সাথে আমি একমত না। গভর্ণেন্স নিয়ে কথা বললে আমি বলবো গভর্ণেন্স আছে টা কোথায়? এইধরণের লেখা লিখতে হলে সুনির্দিষ্ট প্রমান দিয়ে লিখতে হয়। বাংলাদেশে রাইটস আর গর্ভর্নেন্সের এতো দূর্গতি দেখেই তো মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ফান্ডের অভাব হয়না আর শাহীন আনাম ন্যাশনাল হয়েও এক্সপ্যাট থেকেও বেশি সুযোগ সুবিধায় চাকরি করেন। ডোনাররা কেনো আমাদেরকে বিদেশী প্রজেক্ট হেড বা বিদেশী কনসালট্যান্ট নিয়ে কাজ করতে বলে তার উত্তর ওলি ভাই বা মিজ শাহানার জানা থাকার কথা। বাংলাদেশী কর্মীদের যোগ্যতা যথেষ্ঠপরিমান আছে এবং তারাও বিদেশে এই সেক্টরে ভালোই করে-ধরে খায়। যাইহোক যা সামনে পাই তার সবই পড়ার চেষ্ট করি এবং তা থেকে কিছু জ্ঞ্যান আহরণের চেষ্টা করি। কিন্তু মিজ শাহানার কনফেশন থেকে জানার মতো কিছুই পেলাম না। মনে হলো তিনি একটা হুল্লোড় তুলতে চেয়েছেন এই লেখার মাধ্যমে।

আমি যেসব আন্তজাতিক/ জাতীয় সংষ্থায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, তারা সাধারণত ফাণ্ডের জন্য Criterion ঠিক করে দেয়। হঠা করে গজিয়ে উঠারা বড় বাইলেটারেল (for example, USAID.DFID, CIDA and JICA) বা মাল্টিলেটারেল (for example, UNDP, WHO and UNFP) ফাণ্ডিং সাধারণত পায়না।

হঠাৎ করে গজিয়ে উঠারা ..................... পায়না, এটুকু বুঝলাম। কিন্তু ওলি ভাই, আপনি যেমন বললেন "আমি যেসব ..................... ঠিক করে দেয়" এই কথাটুকু বুঝলাম না।

রাতঃস্মরণীয়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।