সব পাই যদি তবু নিরবধি‏

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৯/১০/২০১০ - ১২:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ল্যান্ড ফোনের রিং বেশ চমকে দিলো । এই নাম্বার টা কারো জানা নেই, কেবল বিশেষ কারো জন্যেই নেয়া হয়েছিলো । তার কোন দিন ফোন আসেনি আর কোন দিন আসবে না এই বিশ্বাস টা দৃড় হয়ে দিন যত যাচ্ছে সামনের দিকে বেশ টালমাটাল আর বেশামাল দিকেই যাচ্ছে আবরার এর । মাঝে মাঝে টুক টাক রং নাম্বার বেজেছে, আজও তাই । কিন্তু এই সকালে রং নাম্বার এর যন্ত্রনা টাও বেশ ভারী লাগছে । দোষ অন্য কারো নয় আবরার নিজেই বুঝে ইদানিং তার সব কিছুতেই বিরক্ত লাগে । বিরক্ত লাগা টিকেও আরো চরম বিরক্তির সাথে উপলব্ধি করতে করতে গিয়ে ফোন ধরতেই হলো ।

- হ্যালো ।
- হুম ওয়েলকাম মেসেজ টাতো খুব অন্যরকম । খুউব ভালো ।
- মানে ?
- মানে আবার কি? আমি কি ইংলিশ বলেছি যে মানে বলবো ? আমি বলেছি বাংলা, আপনি না বুঝে থাকলে বলবেন ট্রান্সলেট করে দিতে । আর তারো আগে বলে রাখি আমি ট্রান্সলেট করতে পারবো না । ঐ কাজ ছোট বেলা থেকেই আমার তেতো লাগে । কোন এক কারনে আমার ক্লাস টিচার আমাকে ট্রান্সলেশান জিজ্ঞেস করতে খুব পছন্দ করতেন আর আমাদের ক্লাসরুম ছিলো পাহাড়ের উপরে । আমি জানালার বাইরে প্রকৃতির মাঝে যখন তন্ময় হতাম বেরসিক স্যার তখনই গোঁফ ফুলিয়ে ট্রান্সলেশন জিজ্ঞেস করতেন । বলুন তেতো লাগবে কি না ?
- আদ্রিতা ...
- সে যাই হোক, ওয়েলকাম মেসেজটা যে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে রেকর্ড করেছেন তার জন্য আপনার উপর খুশি হয়েছি । কাজেই আপনাকে ক্ষমা করে দিলাম ।
- ক্ষমা ?
- হুমম... আড়াই বার ডায়াল করার পরিশ্রম করালেন, শাস্তি ঠিক করেছিলাম ফোন তুললেই হ্যালো বলে ফোন রেখে দিবো । ক্ষমা পেলেন বলে ইতো কথা বলছি ।
- আড়াইবার ডায়াল ...
- আচ্ছা আপনি যে হাকলা সেটা জানাতে মনে হয়ে ভুলে গেছেন।
- হাকলা মানে কি ?
- যার কথা বলতে মুখে আটকে যায়, খেই হারিয়ে ফেলে ।
- ওটাকে তো তোতলা বলে ।
- জ্বি না, যার মুখে শব্দ স্পষ্ট উচ্চারিত হয়না তাকে তোতলা বলে আর যে কথা বলতে গেলে আটকে যায় বাক্য সম্পূর্ন করতে পারে না, আরেক জনের কথার লেজে লেজ লাগিয়ে কোন মতে কাজ সারে তাকে হাকলা বলে ।
- ওহ !হুমম ..
- আপনি ফেইল করেছেন এবং আপনার স্কোর হয়েছে আপনি খুব বোরিং ।
- আমি কি পরীক্ষা দিচ্ছিলাম ?
- অবশ্যই দিচ্ছিলেন আমি আর আপনি কথার পিঠে কথা চালানোর খেলা খেলছিলাম । আপনি তোতলা আর হাকলার ব্যাখ্যা শুনে হুম, হাম করে খেলায় হার মেনেছেন । কিন্তু আপনার বলা উচিত ছিল আমি যদি হাকলা হই তবে আপনি যে হাকলা আর তোতলাদের ডাক্তার তাও আমার জানা ছিলো না ।
- এভাবে ক্লাস নিলে শিখে যাবো, আর ফেইল করবো না ।
- আরে বাহ ! বেশ দুই পেটালেন তো ....... সে যাই হোক এবার বলুন অফিস যেতে দেরি করছেন কেন ?
- আজ অফিস যাবো না ।
- যাবেন না মানে ? যত দূর জানি ঘরে তো বৌ নেই যে ইলিশ ভেজে খিচুড়ি রান্না করে আল্লাদ করবে । অফিস না গিয়ে ভোতা মুখ হুতোম পেঁচার সাইজে আনার গাধা বুদ্ধি কি করে উদয় হলো ?
- অফিস যাবো না কারণ ইচ্ছে করছে না । খুব ফর্মাল একটা বেহুদা মিটিং আছে । একে বৃষ্টি তার উপরে আবার ফর্মালিটি ... এ কারণে ঠিক করেছি যাবোই না ।
- সারাদিন কি করার প্ল্যান তাহলে শুনি ? কিছুক্ষন বোর হওয়া আর বোর হতে হতে খিটখিটে হয়ে যাওয়া অথবা এই বন্ধু ঐ বন্ধুকে ফোন দিয়ে কোণ বিবাহিত বন্ধুর আল্লাদি বৌ রাজী হলে তার বাড়ীতে নিদেন একটা হাহা হিহি আড্ডা ?
- উহু, কোনটাই না । ঠিক করেছি নদীর মাঝখানে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবো ।
- এসব কেন করেন বলুন তো ? বয়সে তো আর বাচ্চা ছেলে কিংবা টিন এজার বলারও যো নেই । অনেক আগেই সেই সব পাট চুকিয়ে এসেছেন । কবি কিংবা সাহিত্যিকের ভাবালু জীবন কিংবা এমনো তো কেউ নেই যে সাথে থাকবে কিংবা এসব কোরো না বলে বাড়তি কেয়ার দেখাবে, নাকি আছে ?
- আমার ইচ্ছেটা কি খুব অবাস্তব ইচ্ছে ? কেউ আছে কি নেই তা বোধ করি জানেন । বাড়তি কেয়ার তো দূরের কথা কোন কেয়ার দেওয়ার যে কেউ নেই তাও বলে দিতে হবে না ।
- গাল ফুলে গেলে আপনাকে কেমন লাগে ভাবতে ইচ্ছে করছে না । কারন টানটান চোকানো চোয়াল ভালো লাগে , ফোলা গালের ডেপো লোক , ছিঃ । যাই হোক ইচ্ছেটা অবাস্তব নয় কিন্তু শরীর মনে হয়না এই মুহুর্তে নেয়ার মতো অবস্থায় আছে । মাত্র দুই দিন হলো জ্বর সেরে এলেন তাই বলেছি ।
- ভাবনার জন্য ধন্যবাদ ।
- তাহলে চকলেট রং এর শার্ট পরে যাওয়া হবে আজ অফিসে ।
- এসব কেন করছেন ?
- ইচ্ছে করছে তাই করছি ।
- এতো দিন কোন খোজ নেন নাই পর্যন্ত ।
- তাতে কি এখন নেয়া মানা ? এতো দিন ইচ্ছে করেনি নেইনি । আজ ইচ্ছে করছে, ভালো লাগছে তাই নিচ্ছি ।
- আবার কাল যখন ইচ্ছে করবে না তখন.....
- তখন নেই .... আজ আছে আজকের টা তাই বলে মিথ্যে না ।
- এতোটাই দায়বদ্ধতা হীন সম্পর্ক হতে পারে ?
- সম্পর্কের মাঝে দায়টাই কি সম্পর্ককে খুব বেশি নিয়ম মাফিক করে ফেলে না ? তাছাড়া সম্পর্কই বা খুঁজতে হবে কেন ?
- দায় নিয়ম মাফিক করে অস্বীকার করবো না কিন্তু যারা জানে দায়ভার আর দায় দুটোকে আলাদা করতে তাদের জন্য এই প্রশ্ন অবান্তর । সম্পর্ক খুঁজতে হয় না, সম্পর্ক আমাদের অনুভুতির মতই তবে তা দ্বীপাক্ষিক হলে গ্রহন যোগ্যতা পায় । আর এক পক্ষের হলে তা কষ্টকর এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিব্রতকর ও বটে ।
- তাহলে ধরে নিন আমি জানি না দায় এবং দায়ভার কে আলাদা করতে । আমার সব দায়ভার লাগে । সম্পর্কের যে অনুভুতি আপনার জন্য তা আমার হয় না বলেই এর কোন দুই পক্ষের স্বীকৃতি নেই তাতে কি হলো ? আমার প্রতি আপনার দায় কমে গেলো ? আপনার অনুভুতি কাজ করছে না আমার জন্য ? তাহলে যা প্রমান করতে চাইলেন তা কতটুকু সত্যি নিজেই বিচার করুন ।
- আপনি যুক্তি দিচ্ছেন । সম্পর্ক যুক্তির থেকে অনেক আলাদা । যুক্তিতে যেমন প্রমান হলেও কিছু না নাহলেও না ।
- ঠিক এই কথাটি বলতে চাইছি আমিও । যা অনুভবের তা হবেই আর যা হবে তা জোর করে যেমন আটকানো যায় না তেমনি জোর করে তৈরীও করা যায় না । আর আজ আছে কাল থাকবে না কারণ গতকাল ছিলো না এ জাতীয় ছেলে মানুষী হিসেব করছেন ? যা গতকাল ছিলো না তা আজ তৈরী হয়েছে আর যা আজ তৈরী হয়েছে তা আগামীকাল এগুবে পরশু আরো বেশি, একে বলে সম্পর্ক - যা জীবনের মতো , নদী কিংবা সময় কিংবা প্রকৃতির মতো চির বহমান । যার নিজের উপরে বিশ্বাস থাকে সে জানে আজ যা আছে কাল তা বাড়বে আর যার নেই সে ভাবে আজ যা আছে কাল যদি হারায় । যার নিজের উপর বিশ্বাস নেই সে আর যাই হোক সম্পর্ক কাকে বএ জানে না কারন সম্পর্ক মানেই বিশ্বাস আর নিজের উপরে বিশ্বাস যার নেই তার অন্যকে বিশ্বাস করা কি করে সম্ভব ? রাখলাম ।

আবরার ভাই কই ছিলেন আপনি ? দেরি দেখে স্যার ভাবলেন আপনি আজ আর আসবে না । শার্ট টা কিনতে গিয়ে দেরি হয়ে গেলো । শার্ট কিনেছেন মানে ? আপনার শার্ট নেই একটাও, যে আজই কিনতে হবে ? আছে , কিন্তু চকলেট কালার টা ছিলো না । আজ চকলেট কালারটাই কেন পড়তে হবে ? আজ কি বিশ্ব শিশুখাদ্য দিবস ?

রিসেপশনিস্ট মেয়েটা খুব ফিচেল ধরনের । এর সাথে প্রয়োজনের বাইরে কোন দিন কথা বলা হয় না । আর এই দুই একটা কথা বলতে ভালোই লাগলো । এমন কি "আদ্রিতা বলেছে কাজেই চকলেট কালারটাই পড়তে হবে" এটাও মুখে চলে এসেছিলো প্রায় , কোন মতে মুখ চাপা দিয়ে চলে আসতে হলো । আজ সব ভালো লাগছে । আজ সব কিছুই অন্যরকম করে যেন ভালো লাগা জাগিয়ে যাচ্ছে ....


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ইমরান

বাহ, মিস্টি একটা গল্প...

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

গল্পের পাতায় আসার জন্য কৃতজ্ঞতা ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ -

_______প্রখর

কনফিউজ এর ছবি

ভালো লাগলো ।

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

ধন্যবাদ ।

তিথীডোর এর ছবি

শিরোনাম ভাল্লেগেছে! হাসি
লেখালেখি চলুক..

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

আপনাকে মন্তব্যের পাতায় পেয়ে বেশ ভালো লাগছে ।

ধন্যবাদ ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।