আমার জন্মদিন আর একটি রাজনৈতিক সঙ্ঘর্ষ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১৫/১০/২০১০ - ৯:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিয়ালয়ের অমুসলিম ছাত্রদের জন্য আলাদা হলের ব্যবস্থা আছেঃ জগন্নাথ হল।এই হলে কয়েকটি ভবন আছেঃ উত্ত্র বাড়ি,দক্ষিণ বাড়ি ইত্যাদি।তবে একটি দুর্ঘটনার স্মৃতি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে নতুন ভবনঃ অক্টোবর ভবন।

১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর রাতে জগন্নাথ হলের অডিটোরিয়ামে প্রায় ৪০০ ছাত্র সমবেত হয়েছিল একটি নাটক দেখবার জন্য।তখনকার অতি জনপ্রিয় সাপ্তাহিক নাটক 'শুকতারা'।পুরোনো আর জীর্ণ অডিটোরিয়ামটি একসাথে এত ছাত্রকে সইতে পারেনি।নাটকের প্রথম অংশ হতে না হতেই ভবনটির ছাঁদ ধ্বসে যায়।৩৯ জন ছাত্র মারা যায় আর গুরুতর আহত হয় শতাধিক।

এই পুরোনো হলটিকে ১৯৪৭ সালে সর্বশেষ মেড়ামত করা হয়।ছাত্রদের অনেকদিনের দাবির মুখে মেড়ামতের দরপত্র আহ্ববান করা হলেও লালফিতার দৌরাত্বে তা আর হয়ে উঠে নি।

বর্তমানে এই শোকের সাক্ষীরূপে দাঁড়িয়ে আছে অক্টোবর ভবন।২০০৮ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শোক দিবস 'জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডি' পালন করে থাকে।

আমার জন্ম অবশ্য সামান্য সময়ের ব্যবধানে আগেরদিন হয়েছে।তবে ছোট বেলায় আমার বোনেরা আমাকে এটা নিয়ে ক্ষেপাতো।তারা বলতো যে আমি নাকি কুফা।অবশ্য মজা করতেই বলা।তবে আমার শিক্ষক বাবা আমাকে বলেন যে সব কিছুরই একটা ভালো দিক থাকে।আর এই দুর্ঘটনার ভালোদিক ছিলো সরকার তিনদিনের জন্য সরকারি ছুটি এবং জাতীয় শোক ঘোষণা করায় অপ্রত্যাশিত ভাবেই একটা পিতৃত্বকালীন ছুটি পেয়ে আজিমপুরের মাতৃসদন হাসপাতালে সময়টা বেশি দিতে পেরেছিলেন।হতে পারে পুত্রসন্তান প্রত্যাশী পিতা দুই কন্যার পর ছেলে পেয়ে এত খুশী ছিলেন যে চারদিকের শোকের মাতম দেখতেই পাননি।

তখন থেকেই এর একটা প্রভাব মনের ভেতর থেকেই গেছে।আর তাই প্রতি বছর ১৪ অক্টোবর আসলেই মনের ভেতর একটা অস্থিরতা কাজ করে।থাকে ১৫ শেষ না হওয়া পর্যন্ত।শঙ্কা কাজ করে এই বুঝি কোন ঝামেলা হল।এবং আমার ২৫ বছরের জীবনে এমন কিছু ঘটেছেও।দুয়েকটা শোনাই।

একবার আমার জন্মদিন পড়লো শারদীয় দুর্গা পূজার মহা দশমীর দিন।আমরা সবাই দাদুবাড়িতে।সেখানে প্রতি বছর পূজা হয়।মহাদশমীর দিন আস-পাশের সকল মণ্ডবের প্রতিমা নৌকায় করে এক ঘাটে নিয়ে মেলা বসে।নির্ধারণ করা হয় কোন বাড়ির প্রতিমা বেশি সুন্দর হয়েছে।স্রেফ মজা আর কি!প্রদর্শণ শেষে গভীর রাতে নিজ বাড়ির ঘাটে ফিরিয়ে এনে জমকপূর্ণতায় আর চোখের জলে মায়ের মূর্তি বিসর্জণ দেওয়া হয়।অপেক্ষা থাকে আগামী পূজার।

আমি সাঁতার না জানাতে মা আমাকে ঐ নৌকায় করে মেলাতে যেতে দিতেন না।সেইবার অনেকরাতে প্রদর্শণী আর মেলা শেষ করে নৌকা মায়ের মূর্তি নিয়ে বাড়ির ঘাটে ফেরত আসছে।নৌকায় ভীড়ের মাঝেই আরতী-নৃত্য হচ্ছিল।দশমীর দিন আবার ঢাকের ছন্দ আলাদা।ছন্দটা বেশি আলোড়িত করে।এতসব কিছুর ঝাঁকুনি,ভার আর ভীড়ে নৌকা একদিকে কাৎ হয়ে ডুবতে বসল।মায়ের প্রতিমা যেন মায়ের ইচ্ছেমতই বিসর্জণ হয়ে গেল।নদীটা খুব একটা চওড়া না হলেও ভর বর্ষার শেষে স্রোত অনেক থাকে।মায়ের অশেষ কৃপা কিংবা বাঁচার অদম্য ইচ্ছেয় সবাই জীবন নিয়ে তীরে পৌঁছুতে পেরেছিলো।তবে মায়ের কথা না শুনে আমি গেলে হয়তো এই লেখাটা আজ আর লেখা হত না।

এবারও দুর্গাপূজার মাঝেই আমার জন্মদিন।আমার চমকহীন জীবনের রজত জয়ন্তী।তবে এবার মহাসপ্তমীর দিন।নানা ক্যাঁচাল মিটিয়ে দুপুর বেলায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া দেখতে বসলাম।আজ জিতে গেলেই প্রথমবারের মত টাইগারেরা কোন পূর্ণশক্তির টেস্ট জাতিকে সিরিজে হারাবে।ঘণ্টা অন্তর লোডশেডিং এ শান্তিমত দেখতে পারছিলাম না।স্নায়ুর সকল ধকলশেষে বাংলাদেশ জিতেই গেল।মনে হচ্ছিল আমার জন্মদিন মোটেও কুফা না।

কুফা না ভাবতেই দেয়াল-ঘড়ির ঠিক ০৫.০৫ এ বিদ্যুতস্রোতে বিচ্ছেদ ঘটল।খুবই স্বাভাবিক।কিন্তু স্বাভাবিক আর থাকলো কোথায়?ঘণ্টার পর ঘণ্টা যায় তবু বিদ্যুতের আর দেখা মেলে না।বাইরে এসে দেখলাম কলোনী বাদে বাইরের সবজায়গাতেই আছে।ব্যাপার কী!চট-জলদি বিদ্যুৎ অফিসে খোঁজে গেলাম।এই সরকারের অসাম্প্রদায়িকতার নামে বিশেষ হিন্দু-প্রীতির গল্প জানা গেল কর্মচারীর কাছেঃ কাছেরই এক পূজা-মণ্ডবে উৎসবের জন্য নাকি এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন।অবাক হলাম।তাদের আর ঠিক করার তাগিদ নাই।আওয়ামী-সরকারের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করা চলছে।

লোকজনের আনাগোনা বেড়ে বেড়ে যাওয়ায় একসময় পিডিবির প্রকৌশলী হাজির হলেন।সব দেখেশুনে বললেন কিছু যন্ত্রপাতি উধাও।ঘটনা যে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের তা বুঝতে পেরে বাসায় চলে আসলাম।রাত বাড়ার সাথে সাথে চিৎকার-চেচামেচি কানে আসতে লাগলো।গিয়ে জানাগেল লীগসমর্থক লোকজন এসে কর্মচারীদের ঠিক করতে বললেও তারা তা করতে অপারগ বলে গো ধরে অসে রইলো।লীগদের গালি দিয়ে বললো কাল সকালের আগে তাদের পক্ষে এইকাজে হাত দেওয়াই সম্ভব না।আগের হতাশার সাথে নতুন কিছু যোগ কর এবাসায় চলে আসলাম।

বারোটার আসে পাশে দেখলাম প্রভাবশালী যুবকেরা হাতে লাঠি নিয়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ পরেই লীগকে গালাগালের বদলে বিএনপিকে দেওয়া গালাগাল শুনতে পেলাম।একসময় বুঝতে পারলাম যে সর্বাধিক কার্যকর ঔষধ প্রহার কার্য শুরু হয়ে গেছে।একসময় বাসার আইপিএস এর আধান ঘাটতিতে বাসা অন্ধকার হয়ে আসলো।জোড় করে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম এপাশ-ওপাশ।একটার কিছুটা পরেই সব-বাতি জ্বলে উঠলো।বুঝলাম যে প্রহার নামক ঔষধ সত্যিই কার্যকর।

দেবাশিস মুখার্জি


মন্তব্য

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

এই সরকারের অসাম্প্রদায়িকতার নামে বিশেষ হিন্দু-প্রীতির গল্প জানা গেল কর্মচারীর কাছেঃ কাছেরই এক পূজা-মণ্ডবে উৎসবের জন্য নাকি এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন।অবাক হলাম।

আমিও অবাক হলাম এই বাক্যটা পড়ে !!!

===============================================
ভাষা হোক উন্মুক্ত

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

দেবাশিস মুখার্জি [অতিথি] এর ছবি

আসলে ঐ লোকগুলো আওয়ামী লীগের নামে বিশেষ হিন্দু প্রীতির নামে অপপ্রচার চালাচ্ছিলো।যেমনটা ভোটের আগের রাতে চালায়ঃ নৌকায় ভোট দিলে ভারত দেশ নিয়ে যাবে।

নামতো জানি না এর ছবি

মনে হয় উত্তর বাড়ি হবে।আর আজকের খবরে দেখালো মৃতের সংখ্যাটা ৪০।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।