তৈল মর্দন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ৩১/১০/২০১০ - ১১:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তৈল মর্দন
মোঃ সহিদুর রহমান সুমন
পিএস টু ডিজি, বিআরডিবি

বারোটা বাজে কর্তা মশায় দপ্তরেতে আসেন,
দপ্তরী দেয় চেয়ার টেনে আয়েশ করে বসেন।
চায়ের সাথে নাস্তা আসে আসেন চাটুকার,
এতটা পথ আসতে কষ্ট হয়েছে যে কর্তার।
পত্রিকাতে দৃষ্টি রেখে কর্তা জানতে চান,
কেমন চলছে কাজ কর্ম কেমন সেবার মান?
চাটুকার কয় অতি উত্তম, অতি সুন্দর সেবা,
আপনি ছাড়া এমন চালনা আর করেছে কে বা?
জানতে চাইল কর্তা মশায় জরুরী কিছু আছে?
সকাল হতে ঢের হয়েছে বাকীটা হবে পাছে।
সময় কতটা হয়েছে গত কাজ হয়েছে কত?
হাজিরা খাতায় সই করেছেন না করলেও হতো।
ডাকের নথি হাতে কর্তা চমকে উঠে কয়,
আজকে জবাব না দিলে যাবে চাকরীটা নিশ্চয়।
চাটুকার কয় চাকরী কি আর ছেলের হাতের মোয়া,
কথায় কথায় ভয় দেখাবে গেল বুঝি সেটা খোয়া।
প্রতিবেদনের কথা যদি কন সবই তৈরী আছে,
কারো কি আর গোঁজামিল খুঁজে দেখার সময় আছে?
নথীর পাহাড় বেশ জমেছে কাজ করা দরকার,
জমবে যত বাড়বে তত সুনাম আপনার।
নিন্দুকেরা নইলে পাছে বলবে ফাঁকিবাজ,
ফাঁকা দপ্তরে শুধু বসে থাকে হাতে নেই কোন কাজ।
মাঠের কাজ তদারকী করা জরুরী দরকার,
ভ্রমন ধার্য কোথায় করব সিলেট না কক্সবাজার?
সাগরের হাওয়া উপকারী দাওয়া কক্সবাজারই থাক,
মহোদয় শুধু তারিখ বলেন বাকি সব ঠিকঠাক।
তৈল মর্দন করাই যখন কর্ম সব সময়,
হুজুরের মতে অমত কি আর কখনো কারো হয়।
বিমানে জলে সড়ক পথে কোনটা মর্জি হয়?
তিনটি পথই অতি উত্তম একটা হলেই হয়।
কর্তা বলেন বড়ই ক্লান্ত আপনি এখন আসুন,
মহোদয়কে একা রেখে কি করে যাই বলুন?
এমন সময় বার্তা আসে গিন্নী বেজায় বেজার,
ওই তরফের স্বজন বাড়ীতে করতে হবে বাজার।
আরো জোড়ালো দাবী যেন একটা গাড়ী পাই,
এটা ওটা কেনা কাটা আরো টাকা চাই।

চাটুকার বলে অযথা চিন্তা করবেন না যেন,
আমরা থাকতে আপনার এত কষ্ট হবে কেন?
ঠান্ডা হাওয়ার একটা গাড়ী এখনই পাঠিয়ে দিই,
বাজার কিকি করতে হবে তাও জেনে নিই।
শুধু আমার লক্ষ টাকার বকেয়া বিলটা দিন,
বাকীটা সব দেখব আমরা আপনি বিশ্রাম নিন।
এমন সময় বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত,
খবর আসে সভা করতে মন্ত্রী সম্মত।
অভ্যন্তরে সভা করা জরুরী প্রয়োজন,
সকল কর্মকর্তা নিয়ে করুন আয়োজন।
আলোচ্য বিষয় পরে ঠিক হবে, মেনুটা ঠিক করুন,
হালকা কিছু ঠিক হবে না চাইনিজ দিতে বলুন।
সভায় বসে মন্ত্রীর ভয়ে কর্তার ঘাম ঝড়ে,
উদর পূর্তি করে সবাই একে একে কেটে পড়ে।
সবার আগে পালায় চাটুকার জরুরী কাজের ছলে,
কর্তা ভাবে চাকুরী বুঝি গেলই এবার চলে।
বড় আশা ছিল পদ বাড়বে বাড়বে সম্মান,
আম ছালা বুঝি দুটোই যাবে, যাবে সাধের প্রান।
শীতাতপ ঘরে কর্তার গায়ে শিহরণ বয়ে গেল,
এমনি ভাবনা ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যে হয়ে এলো।
টেলিফোনে নারী হুঙ্কার শুনে সম্বিত পেল ফিরে,
বাজার ছাড়া আজকে তোমায় ঢুকতে দেবনা ঘরে।
দপ্তরী কয় রাত হয়েছে যাবেন না আজ বাড়ী,
পাল্টা গর্জে কর্তা বলেন বাড়ীর নিকুচি করি।
পদব্রজে কর্তা চলেন হাজার চিন্তা মনে,
ভালো যত কিছু শেষ করেছে চাটুকার রূপ ঘুনে।


মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

কবিতা ভালই লাগল। কয়েকটা লাইন বেশ মজার। ছন্দে মনে হল একটু ভুলটুল থাকতে পারে, আমি অবশ্য ওসব ভালো বুঝিনা।

পিএস টু ডিজি লিখেছেন কেন মশাই, এইটা বুঝি আপনার ডিজি সাহেবেরই গল্প? দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

বাহ, বেশ মজাদার!
রোমেল চৌধুরী

অমিত আহমেদ এর ছবি

মজা লাগলো। নিয়মিত ছড়া দিন সচলে।
বেশ ক'জায়গায় ছন্দ কেটে গেছে বলে মনে হয়েছে - এ বিষয়ে সচল ছড়াকাররা ভালো বলতে পারবেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।