মুহূর্তের গল্পঃ উহুঁ, গল্প না, অনুভূতির খসড়া

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০৫/১১/২০১০ - ৯:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সন্ধ্যেবেলা রিকশায় করে বাসায় ফিরছিলাম। খিলগাঁও রেলগেট থেকে বাসাবো। নর্ম্যালী এই দূরত্বটুকু পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিই। কী মনে করে আজ রিকশায় উঠে বসলাম। রিকশায় উঠলেই কী যে হয়, মামারা আমাকে আপন মনে করে তাদের লাইফের সুখ-দুঃখের গল্প জুড়ে দেন। একদিন এক মামা আমাকে তার রিকশা চুরি যাওয়ার কাহিনী শুনিয়েছিলেন। বলা বাহুল্য, রিকশা মালিক ঐ মামাকে এরপর জামাই আদর করেননি। এইসব ঘটনা শুনলে মনটা কেমন হয়ে যায়। ভালো লাগে না। হয়তো দোষ সব ওই রিকশাওয়ালার। সে কেন তার রিকশা দেখে রাখবে না? কিন্তু এসব ঘটনা শুনলে আর ডিজিটাল লজিক খাটাতে ইচ্ছা করে না। রিকশাওয়ালা মামার কষ্টটাই তখন বড় হয়ে ওঠে। আরেকবার আরেক মামা আমার সাথে আর্জেন্টিনার গল্প জুড়ে দিয়েছিলেন। আমি ভাই ব্রাজিলপোকা মানুষ। আমার কী এইসব আর্জেন্টিনা বন্দনা শুনতে ভালো লাগে, বলেন? যাই হোক, মামার সাথে আমিও হুঁ হাঁ করে যাচ্ছি। ভাগ্যিস, মামারা লা লীগা আর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ দেখেন না। দেখালে রিকশায় উঠলেই কোন এক মামা'র "দেখসেন, আর্জেন্টিনার পেলেয়ারগুলা তো দুনিয়া কোপায়ে চলেছে" এই জাতীয় মন্তব্য শুনতে শুনতে বাসায় ফিরতে হত।

আজকের মামার কাহিনীটা অবশ্য ট্রাজিক। মামা টিএসসি থেকে এক কাপলকে নিয়ে খিলগাঁও আসছিলেন। পথে ওই কাপল ফল কেনার নাম করে রিকশা থেকে নেমে পড়ে। কিছুক্ষণ পর মামা বুঝতে পারেন, ঐ কাপল ভাড়া না দিয়েই পল্টি দিয়েছে। মামা আর কী করবেন? উনি তো আর ক্ষমতাধর র‌্যাব পুলিশ না যে ঐ কাপলকে যেভাবে হোক খুঁজে বের করে একটা আচ্ছামত শিক্ষা দেবেন। এক হতভাগা তাই আরেক হতভাগার কাছে দুঃখের কাহিনী বলে বুকটা হালকা করতে চায় আর মাঝে মাঝে দু'হাত তুলে আল্লাহর কাছে বিচার চায়। আচ্ছা, কিছু কিছু মানুষ এতো খারাপ হয় কীভাবে? আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। এইখানে নিজের একটা অপরাধ স্বীকার করি। কলেজে যখন পড়তাম, তখন মাঝে মাঝেই মাই লাইনের পাঁচ টাকার টিকেট কিনে দশ টাকার পথ ঘুরে আসতাম। যে টিকেটে আমার গুলিস্তান পর্যন্ত যাওয়ার কথা, সে টিকেটে আমি মজাসে সাইন্স ল্যাব পর্যন্ত চলে যেতাম। পরে সেই টাকা জমিয়ে সপ্প্তাহে একটা করে ডিভিডি কিনতাম। কলেজে থাকতেই আমার যে ডিভিডি'র একটা ভাল কালেকশন গড়ে উঠেছিলো, তার পেছনে এই দুর্নীতিক্‌ত অর্থের একটা ভাল ভূমিকা আছে। সেই সময়ের কথা ভাবলে এখন নিজেরই লজ্জা লাগে। কীভাবে পারতাম তখন হেসেখেলে দিনের পর দিন এমন একটা অন্যায় করতে? যাই হোক, ভার্সিটিতে ঢোকার পর অবোধের কিছুটা বোধ-বুদ্ধি হয়েছে। অবোধ এখন আর যেখানে সেখানে ডাস্ট ফেলে না, ফুট ওভারব্রীজে করে রাস্তা পার হয় (এর পেছনে অবশ্য আমার বন্ধুদের (নামোল্লেখ করছি না) অবদান স্বীকার করতে হবে) এবং ১০ টাকার রাস্তা ১০টি টাকা দিয়েই ভ্রমণ করে (বস, এটার পেছনে কারও অবদান নেই কিন্তু)। আমি শুধু নিজের অপরাধটুকু স্বীকার করলাম, যা কিনা আগে কখনো করা হয় নি। দেশের কিংবা দেশের মানুষের যা ক্ষতি করার, এককালে অনেক করেছি। এইজন্য এখন অনুশোচনা হয়। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের কি কখনোই অনুশোচনা হয় না? যে কাপল মামার টাকাটা মেরে দিল, আমার খুব জানতে ইচ্ছা হয়, তাদের আজকের রাতের ঘুমটা কেমন হবে? তাদের কি ভুলেও কখনো ঐ রিকশাওয়ালার কথাটি মনে পড়বে না? মামা তো ভার্সিটি এলাকাতেই রিকশা চালান। যদি কোনদিন তাদের আবার মোলাকাত হয়, কেমন হবে সেই মোলাকাত?

---আশফাক আহমেদ


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ইশশ!!! সবাই যদি আপনার মতো হত কি সুন্দর একটা দেশই না পেতাম আমরা....তবু নিরাশ হই না একদিন আমার দেশ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ হবেই হবে.....শহীদররা তো আর এমনি এমনি রক্ত দেই নি এই দেশের জন্য....

tofayel71@gmail.com

অতিথি লেখক এর ছবি

শিরোনামটা অদ্ভূত সুন্দর।

সাত্যকি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।