তারছেড়া স্বপ্নগুলো

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০৭/১১/২০১০ - ১:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার ঘুমের মাঝে স্বপ্ন টপ্ন কমই আসে। তাও, হয়তো স্বাভাবিকতা রক্ষা করতেই কিছু কিছু স্বপ্ন দেখা হয়ে যায়। এর মাঝে আবার একটা কমন স্বপ্নও আছে, যেটা আমি একাধিকবার দেখেছি !!! একটা বিশাল গোলকধাঁধার মতো জায়গায় আমি আটকে গেছি, সারি সারি সেলফ্‌ সাজানো। সেলফ্‌ থেকে সেলফে ঘুরে বেড়াচ্ছি, কিন্তু বের হবার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিনা ... স্বপ্নের শেষদিকে এসে আবিষ্কার করি ওটা একটা লাইব্রেরী (প্রতিবারই কেন শেষে এসে বুঝতে পারি??!) একসময় আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, কেন আমি এখান থেকে বের হতে চাচ্ছি......?! ব্যস, ঘুমের মাঝে স্বপ্নটা আর এগোয়না কখনও। কিন্তু জেগে জেগে স্বপ্ন দেখারও একটা ভয়ানক বদঅভ্যেস আমার আছে। আমি প্রায়ই জেগে জেগে সেই স্বপ্নটাকে ডেকে আনি। একটা বিশাল গোলোকধাধাঁর মতো লাইব্রেরী, থরে থরে বই সাজানো, দর্শন, সাহিত্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান কি নেই সেখানে? বিশ্বসাহিত্যের সব অমর সৃষ্টি চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে, নতুন বইয়ের গন্ধ আমার ইন্দ্রীয়গুলোকে ধরাশায়ী করে ফেলছে... হ্যাঁ, এটা হয়তো আমার পালাবার জায়গা... যেকোনো সংকীর্ণতা থেকে, ক্লান্তি থেকে, বিষণ্ণতা থেকে অথবা স্রেফ পরীক্ষার টেনশন থেকে।
শ্বেতপাথরের তৈরি বিল্ডীংটার ভেতরে একটা রাজকীয় ভাব। সেলফ্‌গুলো সব ঝকঝক তকতক করছে। বইগুলো সব রঙ্গীন মলাটে বাঁধাই করা।তাকে তাকে বিষয় অনুযায়ী সাজানো। সহজ থেকে কঠিন। দেশী লেখক থেকে বিদেশী লেখক। আবার সেগুলোর সমালোচনাগুলোও আছে। একপাশে শিশুসাহিত্যের কর্ণার। সেখানে বইগুলোতো বটেই, সেলফ্‌গুলোও রঙ্গীণ। হালকা একটা শিশুতোষ মিউজিক বেজে চলছে সেখানে। আর ইতিহাস কর্ণারটা
যেন বিশাল এক আর্কাইভ। ছবিসহ সব বই, অনেক পুরোনো পত্রিকা, দেশী বিদেশী ম্যাগাজিন। ওহ্‌, একটা দারুন অডিও লাইব্রেরী আছেতো এর ভেতরেই। পৃথিবীর আনাচে কানাচে বিভিন্ন জাতিগোষ্টির মন বিষণ্ণ করা সুর থেকে শুরু করে লিজেন্ডারী সিঙ্গারদের গাওয়া বিখ্যাত সব কালজয়ী গান। রবীন্দ্র, নজরুল থেকে শুরু করে কিংবদন্তীতুল্য আরও অনেক অনেক কবি সাহিত্যিকের নিজ কন্ঠে গাওয়া রেকর্ড, কবিতার অডিও ক্লিপ, দেশে দেশে বিপ্লবী নেতাদের ভাষণ। আরও আছে, সেই আদ্যিকালের গ্রামোফোন থেকে শুরু করে হাল আমলের এপ্‌ল আইপডের স্যাম্পল। কলের গান থেকে শুরু করে একবিংশ শতাব্দির হেভী মেটাল ...
আর হ্যাঁ, ভিডিও লাইব্রেরীও আছে। সেই উনিশ শতকের প্রথম চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে সেলুলয়েডের ফিতেয় বন্দী সবগুলো কালজয়ী চলচ্চিত্র ক্যাটাগরী অনু্যায়ী ভাগ করা। পৃথিবীর সব আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনাবলির ভিডিও ক্লিপ। বিভিন্ন জাতির আচার-অনুষ্ঠানের প্রামাণ্যচিত্র-কি নেই? আমি বসেছিলাম একটা সায়েন্সফিকশন বই নিয়ে (ছেলেবেলার অভ্যাস) ওটা পড়তে পড়তে দুপুর গড়িয়ে গেল এখন ভাবছি একটা দুর্দান্ত রোম্যান্টিক উপন্যাস নিয়ে অডিও লাইব্রেরী তে গিয়ে বসবো, একটা হাল্কা মিউজিক ছেড়ে দিয়ে (স্বপ্নের একটা সুবিধা আছে, খিদাও লাগেনা, খেতেও হয়নাঃ))আহ্‌... এই ভীষণ লাইব্রেরীটা আমার এটা ভাবতে ভাবতে যখন আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কাছাকাছি চলে যাচ্ছি, তখনই কোত্থেকে যেন একদঙ্গল ছেলে মেয়ে এসে জুটলো! তর তর করে ঢুকে পরলো আর যার যার মতো বিভিন্ন কর্ণারে ছড়িয়ে পরলো। আশ্চর্য্য!! আমার দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই করলোনা( নাকি ওরাও ঠিক এই স্বপ্নটাই দেখছে ) মনে মনে যখন রেগে উঠব ভাবছি, তখন ভাবলাম এসে যখন পরেছিস, পড়া শুরু করে দে দেখি ... আরে অন্তত এটা সেটা ঘেটে কার কি ভাল লাগছে সেটা তো বুঝে নে। মানে হলো নিজের আগ্রহের জায়গাটা খুঁজে নেয়া আরকি। আরে পোলাপানের দল, এক্ষুণি হয়তো ভ্রু কুঁচকে বলে বসবে, ভাল তো লাগে অনেক কিছুই কিন্তু সেসব টেক্সট্‌ বুকে চলে আসলেই তো মাথায় বাড়ি ... তা যাকগে, কম্পিউটার গেম খেলতে খেলতে চোখে সমস্যা দেখা দেয়ার চাইতে বই পড়তে পড়তেই না হয় চোখে চশমা উঠুক। নীল ছবি দেখতে দেখতে যে ছেলের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়, প্রেমিকার খোপায় তারার ফুল দেয়ার রোম্যান্টিসিজ্‌ম নিয়ে সে যদি এই লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে যায়, তাই বা কম কি?
আচ্ছা, এরকম একটা করে লাইব্রেরী, যদি প্রতিটা শহরে থাকতো। আর গ্রামগুলোতেও, অন্তত কয়েকটা গ্রামের মধ্যে একটাতে। আর, বড়
শহরগুলোতে দুটো থেকে তিনটে করে হলে ভালো হয়। আর ...... আআর???!!! কোন চ্যানেলে যেন খবর শুরু হয়েছে- মঙ্গাপিড়ীত অঞ্চল থেকে
সিনিয়র রিপোর্টার উদ্বিগ্ন কন্ঠে কি যেন বলছে... আমাকেও কে যেন চেঁচিয়ে ডাকছে। ভালই হলো, স্বপ্নটা আর কত ডালপালা ছড়াতো কে জানে?!
এহ্‌, আবদুল্লাহ্‌ আবু সাঈদ হওয়ার শখ হয়েছে নাকি? অর্বাচীন বৎস্য, স্বপ্ন নিয়ে নাড়াচাড়া করার এই অহেতুক বদঅভ্যেসটা এবার বাদ দাও দেখি...
সচল পাঠকরাও হয়তো এতক্ষণে মনে মনে তাই ভাবছেন...

- শংখ


মন্তব্য

মুজিব মেহদী এর ছবি

এরকম স্বপ্ন বেশি বেশি দেখুক মানুষ। লাইব্রেরির স্বপ্ন দেখলে তাঁকে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদই হতে হবে তা তো নয়!

..................................................................................
তোমার কাছে পৌঁছার একটাই পথ থাকা মানে হলো তোমারও বিকল্প আছে এই ধরাধামে

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

অতিথি লেখক এর ছবি

সেই...আসলে স্বপ্ন সত্যি করার অনির্বাণ ইচ্ছেটা কজনই বা ধরে রাখতে পারে...!
তাও আশা করতে দোষ নেই...এরকম স্বপ্ন বেশি বশি দেখুক মানুষ ... সমৃদ্ধ জাতি হয়ে ওটার পথে প্রাথমিক ধাপটা না হয় এখান থেকেই শুরু হোক...
- শংখ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।