সার্কাস

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৯/১২/২০১০ - ১২:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় ছোট্ট চড়ুই পাখির, ভীষণ শোরগোল ভেসে আসছে খুব কাছ থেকে। নারীকন্ঠের চিৎকার, পুরুষ কন্ঠের প্রচন্ড গমগম শব্দ আরেকটু খানি কান্না মেশানো শোরগোল।

চাপা কান্নার শব্দ। খুব পরিচিত।

সেবার যখন একদল ছোট্ট মানুষ এর গুলতাই থেকে একটা গুলি এসে তার বুকে লেগেছিল, পড়ে গিয়েছিল সে ঝোপের মধ্যে। ছেলেগুলো বুঝে যাবে কোথায় পড়েছে তাই সে কাদতে পারেনি চিৎকার করে, বের করে দিতে পারেনি বুকের মধ্যে হওয়া তীব্র যন্ত্রণাকে। সেদিন যে অস্ফুট গোঙ্গানির শব্দ সে মুখ দিয়ে আটকে রাখতে পারেনি অনেকটা সেই রকম শব্দ আবার ভেসে আসছে কানে। শব্দটা কানে আসতেই কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো বুকটা, মনে হয় আগের দিনের সেই ব্যথাটা নাড়া দিয়ে উঠলো। কিন্তু ব্যথা তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।

ভ্যান্টিলেটার এর ফাক দিয়ে আলো ভেসে আসছে। এতো রাতে আলো জ্বেলে রেখেছে! নিশ্চই আজ আবার সার্কাস হবে। মাঝে মধ্যেই হয়। গা-সওয়া গেছে চড়ুই-এর। ভ্যান্টিলেটার এর আরো কাছে সরে এলো। ঘুম ঘুম চোখে সরাসরি আলো পড়ছে এখন। রীতিমতো অসুবিধা হচ্ছে চোখ খুলে রাখতে, শুধু বন্ধ হয়ে আসতে চায়। তবুও কিসের টানে যেনো চোখ এর নিয়ন্ত্রন নিতে মনটা যুদ্ধ শুরু করে দিলো।

আলো সয়ে আসতেই দেখলো যা ভেবেছে তাই। আজ আবার সার্কাস হচ্ছে। খাটো মোটা করে মরদ লোকটা আর তার চেয়ে এক-দুই ইঞ্ছি লম্বা মাদী লোকটা একসাথে চিৎকার করছে। এক আরেক জনের উদ্দেশ্যে বলছে কিন্তু কেও কারোটা শুনছে বলে মনে হয় না। খেতে বসেছে তিন জন। অন্যটা ছোট্ট একটা ছেলে। যে ছেলে গুলো ওকে গুলি মেরেছিলো তাদের মতো বয়স হবে। কিন্তু ওদের চেয়ে অনেক ভালো। ঘরের বাইরে যায় না খুব একটা। গুলতাইও মারে না চড়ুইদের দেখে। ভ্যান্টিলেটার ফাক দিয়ে মাঝে মধ্যেই কিছু দিয়ে যায় খেতে।

গমগম শব্দ আর চিৎকার বেড়েই যাচ্ছে ক্রমশ। এরপর গমগমে পুরুষলোকটা মেয়েলোকটাকে কিছু একটা বলবে যা শুনেই মেয়েলোকটা সামনের ভাতের পাত্রটা ছুড়ে ফেলে দেবে অথবা পানি ঢেলে দেবে। ভাতগুলো ছড়িয়ে পড়বে মাটিতে। ঝনঝন শব্দ হবে প্লেট ভাঙ্গার। চড়ুই আগে থেকেই বলতে পারে এগুলো। মুখস্থ হয়ে গেছে তার। প্রতিবার একই রকম হয়।

হলোও তাই।

বাচ্চা ছেলেটা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ে যাওয়ার আগেই মুছে নিচ্ছে। অস্ফুট শব্দটা আটকানোর চেষ্টা করছে। চড়ুই জানে কেন এতো ভয়। গতবারো দেখেছে। তার আগের বারো। এখন-ই উঠে এরা দুইজনে হাত পা ছুড়ে সার্কাসে লেগে যাবে। এটার-ই ভয় ছেলেটার। একজনের আরেকজনের গায়ে হাত দিতে গেলেই ছেলেটা মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। চিৎকার করে উঠছে। তা শুনে গালে একটা থাপ্পোড় পড়লো। নরম গদিটার উপড় রীতিমতো ছুড়ে ফেলে দিলো। কাঠে মাথা ঠুকে গেলো। আবার ছেলে টা দৌড়ে চলে এলো মাঝখানে। পুরুষলোকটা ছেলেটার উপড় দিয়েই মেয়েলোকটার গলায় হাত চেপে বসিয়ে দিলো। আরো জোরে চিৎকার করে ওঠে ছেলেটা। শুনে গলা থেকে হাত সরিয়ে ফেলে লোকটা। ছাড়া পেয়েই মেয়েলোকটা দৌড়ে কোথাও চলে যায়। ফিরে আসে হাতে লম্বা মতো কিছু একটা নিয়ে। ঝিলিক দিয়ে ওঠে আলোতে। দেখে পুরুষ লোকটা আর সামনে আগায় না। এবার মেয়েলোকটা চোখে প্রতিহিংসা নিয়ে আগায়। মাঝে ছেলেটা আবার বাধা হয়ে দাঁড়ায়। চোখে রাজ্যের ভয় আর ছলছল পানি।

হঠাৎ পাশের ঘর থেকে আরেক পুরুষলোক আর মেয়েলোক দৌড়ে আসে। চড়ুই বোঝে সার্কাস শেষ হয়ে যাবে এখন। দেখেছে আগেও।

চড়ুই এর বিরক্ত লাগে। এরকম সার্কাসের মানে বোঝে না সে। কি হয় এটা করে?

ছেলেটা জানালার কাছে এসে দাঁড়ায়। গ্রিল ধরে শক্ত করে। যেন ভেঙ্গে ফেলতে চায়। মুখে কোন অভিব্যক্তি নেই। শুধু টলটল করে পানি ঝরছে। মোছার চেষ্টাও করছে না আর। সে দিকে খেয়াল নেই। চেয়ে আছে খোলা রাতে আকাশের দিকে।

আর চেয়ে থাকতে পারে না চড়ুই। বুকের ভেতর মোচড় টা বেশি-ই অনুভুত হয়। দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। খোলা বাতাস দরকার নইলে চলবে না। কে যেন চেপে ধরে রেখেছে বুকটা।

ওই পাশে ফুটা দিয়ে মুক্ত আকাশে উড়াল দেয় পাখিটা।

খেয়াল করে না ছেলেটা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। হাত গুলো আরও শক্ত হয়ে বসেছে জানালার গ্রিলে।

উদ্ভট রাকিব
ডিসেম্বর ১৮, ২০১০
-------------------------------------------------------------------------------

সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে উদ্ভ্রান্ত হলেম...


মন্তব্য

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

রাকিব ভাই,
বেশ ভালো লেগেছে আপনার গল্প বলার ভঙ্গীটি!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধনেপাতা রোমেল ভাই

--------------------------------------------------------
উদ্ভট রাকিব

সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে উদ্ভ্রান্ত হলেম...

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো হইছে

উদ্ভট রাকিব [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই

---------------------------------------------------------------------------
সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে উদ্ভ্রান্ত হলেম.........

উদ্ভট রাকিব [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই

---------------------------------------------------------------------------
সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে উদ্ভ্রান্ত হলেম.........

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বার্ডস আই ভিউ হাসি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

উদ্ভট রাকিব [অতিথি] এর ছবি

হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।