কল্পনীড়

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২৩/০২/২০১১ - ১০:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঘড়িতে ঘণ্টার কাঁটা প্রায় নয়টা ছুঁই ছুঁই। বাস আসতেও দেরী করছে। অফিসে ঢুকেই বসের গোমড়া মুখ দেখার সম্ভাবনা রশ্মিকে বিন্দুমাত্র ভাবালো না। বাসে করে আসা যাওয়ার এই সময়টুকু তার সবচেয়ে প্রিয়। সারাদিনের মধ্যে শুধু এতটুকু সময়ই তার একান্ত আপন। এই সময় তাকে নিয়ে বাবা-মার হা পিত্যেশ শুনতে হয়না, বসের থেকে কাজের তাড়া খেতে হয়না, বাজার করা, রান্না করা, কোন কিছু নিয়েই মাথা ঘামায় না রশ্মি। প্রতিদিনের ব্যস্ততা, দুশ্চিন্তাকে ফাঁকি দিয়ে নিজের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর জন্য এই মুহুর্তটাকে সবকিছুর থেকে আলাদা করে তুলে রেখেছে সে। রশ্মির নিজের একটা কুটির আছে। কোন এক পাহাড়ের চূড়ায়। কাঠের তৈরি ছোট্ট একটা নীড়। বারান্দায় বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করে দেওয়া যায়। বিস্তীর্ণ আকাশ, সবুজে ঘেরা পাহাড়, চারদিকে নীরবতা, শুধু পাখির কিচির মিচির শব্দ।

বাস আসলো আরও পাঁচ মিনিট পর। ধাক্কাধাক্কি করে উঠে ভাগ্য জোরে একটা সীটও পেয়ে গেল। পেতো না, আরেকটা ছেলে বসতে যাচ্ছিল, রশ্মিকে দেখে ছেড়ে দিল। ছেলেটা দুইটা সীট সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। বাস ছাড়তে দেরী করলো না। প্রথমে ভালো ধারণা হলেও এখন ছেলেটাকে বেশ বেহায়া মনে হচ্ছে। সে বলতে গেলে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বিপরীত দিকে বসা একটা মেয়ের দিকে। ছেলেটা কি বিবাহিত? না মনে হয়। সামান্য একটু মোটার দিকে, গায়ের রঙ বেশ চাপা, খুব সাধারণ বাঙ্গালি চেহারা। আচ্ছা, রশ্মির দিকে কি কেউ এভাবে তাকিয়ে থাকে? এই ছেলেটাই কি কখনও তাকিয়ে থাকতো? রশ্মি কি সেই অযাচিত মনোযোগটা উপভোগ করতো? মনে হয় করতো। সেই উপভোগ করাটা হয়ত তার চেহারায় ফুটেও উঠতো। ছেলেটা নাম জিজ্ঞেস করে বসলে কী করতো কে জানে! নিজের নামটা নিশ্চয়ই বলত রশ্মি। ভদ্রতা দেখিয়ে ছেলেটার নামও জানতে চাইত। লম্বা একটা সময় ধরে একই বাসে যাবে, শুধু নাম জানবে আর কিছু না? তা তো হয় না। কার গন্তব্য কোথায় সেই প্রশ্ন উঠত। গন্তব্যস্থল জানা মানে কে কী করে সেটাই পরিষ্কার হয়ে গেল। পরে কখনও রশ্মির অফিসে যদি ছেলেটা হাজির হয় তখন ব্যাপারটা কেমন হবে? এসে কী বলবে, এইদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম? বোকার মতো শোনায় কথাটা, কিন্তু এর বাইরে বলার কীই বা আছে! রশ্মির কলিগদের মধ্যে মৃদু হাসাহাসি, খোঁচাখুঁচি শুরু হয়ে যেত তাতে সন্দেহ নাই। প্রশ্রয় পেলে তো আরও কয়েকবার ছেলেটা দেখা করতে চাইবে, সেটাই স্বাভাবিক। আচ্ছা, কে আগে প্রেমে পরতো, রশ্মি না ছেলেটা? মনে হয় রশ্মি, কিন্তু মরে গেলেও সেটা জানতে দেওয়া চলবে না। রীতিমত মান সম্মানের ব্যাপার! বাবা মা ছেলেটার কথা জানতে পারলে বিয়ের জন্য চাপাচাপি শুরু করবে। ওরা নিজেরাও মনে হয় দেরী করতে চাইত না। খামাখা ঝুলায় রাখার কোন মানে হয় না। ওদের নতুন সংসারে বেশি ফার্নিচার রাখবে না ঠিক করেছে রশ্মি। ঘরে ঢুকে যেন শান্তি শান্তি একটা ভাব আসে সেদিকে খেয়াল রাখবে। কয়েকটা গাছ লাগাবে, একটা মরিচ গাছ, বেলী আর দোলনচাঁপা। গাঁদা শুধু শীতকালের জন্য। ডালিয়া লাগাবে না, যত্ন নিতে বেশি কষ্ট। ছুটির দিনে কি বাইরে যাবে? নাহ, বাসায় বসে আরাম করা ভাল, সারা সপ্তাহ যে দৌড়াদৌড়ি যায়! ছুটির দিনে রশ্মি একটা শাড়ি পড়েছে। সাদা জমিনে হাল্কা সবুজ পাড়, কপালে ছোট টিপ। কিন্তু ও গেল কোথায়? শোবার ঘরে নেই, বসার ঘরেও নেই। রশ্মি কান পাতলো, বারান্দা থেকে ভেসে আসছে, "... ... দিন রজনী। আমার মন মানেনা ... ..."। ও গাইছে। রাস্তার ওপাশের কৃষ্ণচূড়া গাছটা ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। রক্তবর্ণ পাপড়িগুলো ওদের বারান্দায় এসে লুটোপুটি খায়। "সে সুধা বচন, সে সুখ পরশও অঙ্গে ... ..."। রশ্মির বারান্দায় যেয়ে বসতে ইচ্ছা করছে, ওর পাশে বসবে, বাতাসে ভেসে আসা কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি নিয়ে খেলা করবে। কিন্তু কেমন যেন লজ্জা লাগছে! উপলক্ষ তৈরি করতে রশ্মি চট করে চায়ের পানি চড়িয়ে দিল। কাসুন্দি, চানাচুর দিয়ে মুড়ি মাখাতে মাখাতে চায়ের পানি হয়ে এলো প্রায় ... প্যাএএএএএএএএএ। বাসের বিকট ভেঁপুতে সংবিৎ ফিরে পেল রশ্মি। অপ্রস্তুতভাবে আশপাশটা একটু দেখে নিলো। ছেলেটাকে দেখা গেল না, কখন চলে গেছে রশ্মি টের পায়নি। ঘড়িটা দেখল আবার, কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবে।

এই কিছুক্ষণই অনেক সময়। রশ্মি এক কাপ চা হাতে তার ছোট্ট কুটিরের নির্জন বারান্দায় চেয়ার টেনে বসলো।

-রু


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। -রু

অপছন্দনীয় এর ছবি

ভালো লাগলো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। -রু

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগল

-অতীত

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। -রু

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

মিষ্টি পারিজাত!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব সুন্দর একটা মন্তব্য করেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ। -রু

অতিথি লেখক এর ছবি

অদ্ভুত কতো কিছুইতো খেলে যায় মানুষের মনে মুহূর্তের আলোড়নে।
রশ্মি'র তাৎক্ষনিক চিন্তা ভাবনার আক্ষরিক উপস্থাপনের ধরনটা সত্যিই ভালোলাগলো।
চলুক

--- নুশান

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগলো। -রু

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

মন... হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। -রু

বইখাতা এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। -রু

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

রশ্মিকে ভালো লেগে গেল।
বাসের আরেকটা প্লট মাথায় ছিল, লিখছিলাম, কিন্তু এখন দেবো কিনা ভাবছি... চিন্তিত
গুছিয়ে লিখুন, আরও ভালো লাগবে। নতুন লেখার প্রত্যাশায় রইলাম...।

_________________________________________
মেঘদুত

অতিথি লেখক এর ছবি

দিয়ে দিন। এখানে বাসটাতো আসল না, রশ্মির একদিক থেকে আরেকদিকে ছুটে বেড়ানো মনটাই মুখ্য। আমিও আপনার থেকে নতুন লেখার অপেক্ষায় রইলাম। -রু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভালো লাগলো

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। খুব সম্ভবত আমার কোনো লেখায় এটাই আপনার প্রথম মন্তব্য। -রু

তিথীডোর এর ছবি

হাসি
লেখা চলুক। চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। -রু

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

ছোট্ট আয়োজনে স্বপ্নের মহাবিশ্ব। সুন্দর।

অতিথি লেখক এর ছবি

সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। -রু

valo achiপাঠক এর ছবি

অনেক মেয়েই আছে রশ্নির মত আসলে.........।আমিও .........।
ইয়ে, মানে...

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। -রু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।