আমাদের বিজয় দিবস

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৬/০২/২০১১ - ৯:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কে যেন জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। চিনি কি তাকে ? নাতো। বিজয়ের আনন্দ কি আপন পর ভেদাভেদ ভুলিয়ে দেয় ? আলিঙ্গন যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হতেই ভুভুজেলার আওয়াজে কান ঝালাপালা। আর ঢাকের শব্দে উন্মাতাল জনসমুদ্র। "আমরা জিতে গেছি ভাই।" কান ফাটিয়ে চিল্লায় পাশের জন। জানি তো। এতক্ষনতো পাশে বসেই খেলা দেখলাম। মানুষকি পাগল হয়ে গেছে? এরাই কি সেই জনতা যারা পুরা দলকে একসাথে গালাগালি করেছে বিপর্যস্ত হতাশায়? পাশের জন তার প্ল্যাকার্ড ছুড়ে ফেলে বলেছিলো কিচ্ছু বদলায়নি। কিচ্ছু হবে না এদেশের। তবে সে কেন আমাকে এমন জড়িয়ে ধরলো। যেন আমি তার ভাই। এমনিতেই বাংলাদেশ ভেঙ্গে পড়লো, সবাই হতাশার কাদুঁনি গাচ্ছিলো, আমারো কান্না পাচ্ছিলো খুব। আর এক পুলিশ এসে ঝামেলা শুরু করলো, এটা না ওটা। মেজাজ খারাপ জনতা ধরে দিছিলো একটু হইলেই। সেই পুলিশ যে খেলা দেখেনি একটুও, সারাটা দিন উল্টা ঘুরে তাকিয়েছিলো আমাদের দিকে, তাকেও দেখলাম থেকে থেকে নাঁচছে। খুব ইচ্ছা করছিলো তাকে জড়িয়ে ধরে চিত্কার করে বলি "আমরা জিতে গেছি ভাই"। আহা, কি গৌরব আমরা জিতে গেছি, নারী পুরুষ একাকার মিছিলে। যে মেয়েটি তার ঢলঢল লাবণ্য সাথে করে এসেছিলো মাঠে, স্বভাব দোষে খুব উত্কণ্ঠিত ছিলাম, এই মশলা সামনে রেখে কতটা মনোষোগী হওয়া যাবে মাঠে, মানুষের গৌরব
মিছিলে সে মেয়েটি কেমন করে শুধু আমার বোন হয়ে যায় , শুধু আমার দেশের মানুষ হয়ে যায়, বড় বেশি স্বপক্ষ হয়ে যায়। ফ্লাড লাইটের আলোয় কত মায়াময় ঐ মাঠ। কী আবেগ , তা কেবল যারা গ্যালারিতে ছিলো তারা জানে। ঐ এগারোজন আমার ভাই , ওরা জিতছে, ওদের সব ভুল মাফ হয়ে যায়। অথচ সকালে তো জিততেই গেছিলাম। তবু কেন এত আনন্দ? এদেশের প্রাণের গভীরে এত আবেগ, এত উন্মাদনা, এত ভালবাসা, এদের আটকায়া রাখবে কে? যারা ঐ ম্যাচ সরাসরি দেখেছে তারা সাক্ষী হয়ে থাকলো, দর্শকরাও কখনো কখনো ম্যাচ জেতাতে পারে....

যখন ফিরে আসছি, মিরপুর তখন জনোচ্ছাসে ভাসছে, মানুষ বড় বড় পতাকা নিয়ে এসেছে, শিশু পুত্রকে কাঁধে নিয়ে এসেছে, লুঙ্গি আর খালি গায়ে আধপাগলের মত এসেছে , স্থুলস্বাস্থের মাঝবয়সী দম্পতিরা চোখে শিশুর বিশ্ময়
নিয়ে এসেছে, থালা বাসন ঢাক ঢোল নিয়ে নাচতে নাচতে এসেছে। আমাদের গায়ে জাতীয় দলের পোশাক, হাতে লাল সবুজ পতাকা। লোকজন এসে জড়িয়ে ধরছে আমাদের, হ্যান্ডশ্যাক করছে, আমাদের দেখামাত্র উল্লাসে জয়ধ্বনি দিচ্ছে। যেন আমরাই মাত্র ম্যাচ জিতে ফিরেছি-

বাসায় আসার আগমুহুর্ত পর্যন্তও যেখানেই মানুষের জটলা সেখানেই আমাদের জন্য উচ্ছাস ছিলো। কেবল বিজয়ের সাক্ষী হওয়ার কারনে আজ এই বীরের বেশে ফেরা। তাই ফিরতে ফিরতে একটাই চাপা কষ্ট ছিল বুকে। সাকিবরাতো সত্যিই পেরেছে, পুরা জাতিকে উত্সবে মাতার সুযোগ করে দিয়েছে। একদিন যদি আমিও পারতাম, সত্যিকার বিজয়ীর বেশে ফিরতে, দেশের জন্য গৌরব বয়ে নিয়ে আসতে। নিজের কাজটাই যদি ঠিকঠাক করে যেতাম....

-রাখাল বালক


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

'বিজয় দিবস' শব্দ বন্ধটি এক্ষেত্রে ব্যবহার ভালো লাগলো না।

সানি এর ছবি

ভাই, লেখার আবেগটা দেখেন। বিশ্বকাপে ২০১১-র প্রথম বিজয়, তাই বিজয় দিবস। কি অর্থে শব্দ ব্যবহার করছে, কেন করছে, এত ভাবার কি আছে!!!!

মর্ম এর ছবি

এত কম কথায় এত ভাল ভাবে অনুভূতি প্রকাশ করতে পারাটা বিরাট ব্যাপার।
লেখা ভাল লাগল। পরের লেখার অপেক্ষায় রইলাম।

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাঠক এর ছবি

এত্ত বিশাল আনন্দের অনুভূতিও নষ্ট হয়ে যায়, যখন উল্লাসের নামে সুযোগসন্ধানীরা নারী দর্শকদের অন্যায়ভাবে জড়িয়ে ধরতে (পড়ুন physical assault) করে। তখন মনে হয় আমরা কাদুঁনে গ্যাস আর লাঠির বাড়িরই যোগ্য।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

যে মেয়েটি তার ঢলঢল লাবণ্য সাথে করে এসেছিলো মাঠে, স্বভাব দোষে খুব উত্কণ্ঠিত ছিলাম, এই মশলা সামনে রেখে কতটা মনোষোগী হওয়া যাবে মাঠে, মানুষের গৌরব মিছিলে সে মেয়েটি কেমন করে শুধু আমার বোন হয়ে যায় , শুধু আমার দেশের মানুষ হয়ে যায়, বড় বেশি স্বপক্ষ হয়ে যায়।

ভাষার এমন ব্যবহার কি কাম্য? পুরুষ মানেই কি এমন হতে হবে?

দু:খিত, আপনার আনন্দ-প্রকাশের অনুভূতির এই লেখায় উপরের লাইনগুলি আমার কাছে বিরক্তিকর লাগলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার কাছে খুব আপত্তিকর লাগছে না। তবু খুব জোরালো আপত্তি থাকলে শিরোনাম পরিবর্তন করে দেব।

-রাখাল বালক

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

যে মেয়েটি তার ঢলঢল লাবণ্য সাথে করে এসেছিলো মাঠে, স্বভাব দোষে খুব উত্কণ্ঠিত ছিলাম, এই মশলা সামনে রেখে কতটা মনোষোগী হওয়া যাবে মাঠে

বিজয় মাত্রই আনন্দের কিন্তু তার সুস্থ বহি:প্রকাশই কাম্য।
ঢলঢল,মশলা জাতীয় শব্দগুলো না ব্যবহার করলেই ভালো হত। নারী মাত্রই ভোগের বস্তু; এটা সুস্থ চিন্তা থেকে আশা করা যায় না।

অতিথি লেখক এর ছবি

এইটা একজন স্বভাবভ্রষ্ট পুরুষের (বা আমার নিজের) স্বগতোক্তি মাত্র। এটা কি সত্যভাষণ হতে পারে না? বিজয়ের আনন্দে সত্য চাপা পড়ে যাবে কেন?

যদি দৃষ্টিভঙ্গি ভুল হয় সেটা পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গি অক্ষুন্ন রেখে শালীনতা রক্ষার খাতিরে লেখার সময় তা বাদ দেয়া কেন?
কোন বিশেষ নারীকে লক্ষকরে এইসব স্বগতোক্তিতো আমি নিজের কানে শুনেছি, কিংবা আমি নিজেও করেছি।এমনকি মেয়েদেরও করতে শুনেছি। এখন যদি বলেন এইসব ব্যাতিক্রম তবে বুঝে নেবো আমাদের জেনারেশন গ্যাপ বিস্তর।

কিন্তু জিতে যাবার পর সকলের অনুভূতি অন্যরকম ছিলো। আমি সেটাই বুঝাতে চেয়েছিলাম। অর্জন অনেক সামাজিক অবক্ষয়কে কমিয়ে দিতে পারে। একই সময়ে দুইটা ভিন্নঘটনার প্রেক্ষিতে মনোভাবের পরিবর্তনটা খুব চোখে লেগেছিলো। মনে হয়েছিলো আমাদের বখাটেপনাগুলোর মূল কারন আমাদের ফ্রাসট্রেশন, লক্ষহীনতা। আমরা সবাই আসলে ভাল কিছুই করতে চাই। খুব আফসোস হচ্ছিল সামনে আমাদের সমবয়সী কাউকে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে দেখে। শুধু আমার না আরো অনেকের হয়েছিল. . .

কী বুঝাতে পারলাম ইশ্বরই জানেন। তবু যারা আছেন ঋষির পুত্র, যারা কোন শোঅফ (বাংলা করলে অনেক অশালীন শোনায়) করা মেয়েকে দেখে কখনোই মশলা বা সমগোত্রীয় কোন শব্দই ভাবেননি তাদের কাছে আন্তরিক ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি যা দেখি যেভাবে ভাবি লেখায় সেই ভাবেই কাঁচা তুলে আনতে চেষ্টা করি। মহত্‍ প্রাণেরা আশা করি ক্ষমা করে দিয়েছেন।

-রাখাল বালক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।