একটি আত্মহত্যা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ০১/০৬/২০১১ - ৭:৫৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এমন জিনিস দেখব জীবনেও ভাবিনি।

মরবি মর, তাই বলে এমন ভাবে! এটাকে মরা বলে?পৃথিবীতে বেঁচে থাকার মতো জিনিষের কি এতই অভাব পড়েছে যে এভাবে মরতে হবে!

মানুষের কৌতুহল আসলেই বেদনাদায়ক, মৃত্যু দেখার জন্য হাজারো জনের জটলা।

“একটা মেয়ে এইভাবে প্রকাশ্যে রাস্তার পাশে গাছে ঝুলে মারা যাবে, মানুষ দেখবে না? “ চায়ের কাপ হাতে আরেকজনের অভিব্যাক্তি।
ও, তাইতো, এত দূর থেকে ভাল করে দেখা না গেলেও বোঝা যাচ্ছে জটলার ভিরে প্রায় হারিয়ে যাওয়া ঝুলন্ত লাশটির মাথায় লম্বা চুল।
ভাবতে থাকি তাহলে কি আমারও যেয়ে দেখা উচিত ব্যাপারটা?
না, কেন জানি ইচ্ছে করছে না।

“হয়তো বাবার বকুনি খেয়ে অভিমান করে মেয়েটি এভাবে অকালে চলে গেল।“
বাপের সাথে অভিমান করে মরলে এখানে এসে গলায় দড়ি দিবে কেন? বাসাতেইতো মরতে পারতো,কেউ একজন বয়স্ক লোকটির কথায় প্রতিবাদ করে উঠল,
“হয়তো স্বামীর হাতে মার খেয়ে এইভাবে মরেছে।“
না, আমার তা মনে হয় না, বরং এমন হতে পারে বদমাস জামাইটা বউকে মেরে তারপর রাতের আঁধারে গাছে ঝুলিয়ে দিয়ে গেছে।
না, লোকটার কথায় যুক্তি আছে, স্বীকার না করলে পারলাম না।
তবে আমার মন বলছে অন্য কথা, হইতো অভিমানী মেয়েটা তার প্রেমিকের সাথে ভুল বুঝাবুঝি করে গলায় দড়ি দিয়েছে, আর মরার আগে লিখে গিয়েছে-“ আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়”।
কয়েক বছর আগে আমাদের পাশের বাড়ির চটপটে একটা মেয়ে হটাত করে নিরুদ্দেশ, লোকাল থানার ওসির মেয়ে যদি এইভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়, তাহলে অন্যদের যতটুকু চিন্তিত হওয়ার কথা, আমরাও ততটুকুই হয়ে ছিলাম, তবে হাল্কা পাতলা এটাও অনুমান করেছিলাম হয়তো প্রেমিকের হাত ধরে কোথাও পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন পর দেখা গেল বাড়ীর সামনের ছোট আম গাছটাতে মেয়ের ঝুলন্ত লাশ আর হাতে ছোট চিরকুট, ”আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়”
পরে শুনেছি, প্রেমিকপ্রবর কয়েকদিনের প্রমোদ ভ্রমণের পর কৌশলে মেয়েটাকে কারো কাছে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল।

বুঝলেন ভাইজান, এতবছর ধরে এইখানে চা বিক্রি করি, কখনো এমন কাহিনী দেখিও নাই, শুনিও নাই, একটা মেয়ে এইভাবে রাস্তায় মরে পড়ে থাকবে, আর আমরা শুধুই দেখব?
কি করবই বলেন, কি করারই আছে?
নিশ্চই কোন হারামজাদা রেইপ করে তারপর মেয়েটাকে এইভাবে ঝুলিয়ে রেখেছে।এদের পিঠের চামরা তুলে ফেলা উচিত।

কথাটা শুনে নিজের অজান্তেই চমকে উঠলাম, হা তাও হতে পারে, আমাদের মাঝে পশুদেরতো আর অভাব নেই।

যত সময় যাচ্ছে, ভীর বেড়েই চলেছে।

এইভাবে মানুষ মরে?
অথবা,
এইভাবে একজন আরেকজনকে মারতে পারে?
আমি উত্তর খুঁজতে থাকি।

আনমনে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে জটলার একেবারে কাছেই চলে এসেছি, টের পাইনি একদম!!!!

“কাট, নাইস শট, শুটিং আজকের জন্য প্যাক আপ”,
হঠাত কে জানি জটলার ভেতর থেকে হ্যান্ডমাইকে বলে উঠলো।

Kankan
01-04-2011


মন্তব্য

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

হুম....

রু (অতিথি)  এর ছবি

পড়ার সময় বিভিন্ন চিন্তা, অনুভূতি কাজ করছিল। একটা ভালো লেখা পড়লে যেরকম হওয়ার কথা আর কি। শেষে এসে একটু খটকা লাগলো। যেই চিন্তা বা কথোপকথন দেখানো হয়েছে সেটা, আমার মতে, মানানসই হয় দূর থেকে হেটে আসা কারো জন্য। শ্যুটিং এর কাছে বসে একজন চা বিক্রেতার তো এরকম ভুল হওয়ার কথা না। আমার একান্ত মত, আমি ভুল বুঝতে পারি বা বেশি বুঝে বসে থাকতে পারি। কিন্তু বর্ণনা ভালো লেগেছে। লেখা চালিয়ে যান।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।