প্রধানমন্ত্রীর নিকট একজন বালকের খোলা চিঠি...

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৯/০৭/২০১১ - ১:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী,
আমি একজন সাধারন পরিবারের সন্তান। আমি জানি, আমার এই খোলা চিঠি কোনদিন আপনার দরবার পর্যন্ত পৌছাবে না। কিন্তু তারপরও চিঠি লিখছি। বরং বলা উচিত, লিখতে বাধ্য হচ্ছি।

আমি খুব সাধারন একজন বালক। আমার বয়স এখনও ১৮ হয়নি। ১৮ বছর হলে নাকি দেশের নাগরিক হওয়া যায়। তার আগে নাকি দেশের নাগরিক হওয়া যায় না। নাগরিক হওয়ার পর নাকি ভোটও দেয়া যায়। এসব কথা নাকি আমাদের পাঠ্য বইতে লেখা আছে। কিন্তু যে বইতে স্বাধীনতার ইতিহাস ৫ বছর পর পর পরিবর্তন করা হয় সেসব বই আমি পড়ি না।

আমার কয়েকজন বন্ধু আমাকে বললো যে আপনি কি একটা কোম্পানির সাথে একটা চুক্তি করেছেন। তাতে দেশের সব তেল গ্যাস তুলে ফেলা হবে। আমাদের দেশের জন্য নাকি মাত্র ২০ শতাংশ তেল গ্যাস পাওয়া যাবে। ওরা কি কি সব হিসাব দেখালো। আমি কিছুই বুঝলাম না হিসাবের। ওরা অংকে সবসময় ৯৯-১০০ পায়। কিন্তু আমার জন্য পাশ করা সত্যি কঠিন। গত দ্বিতীয় সাময়িক পরিক্ষায় অংকে মাত্র ২২ পেয়েছিলাম। কিন্তু ঐকিক নিয়মটা খুব ভালো বুঝি। ২০ শতাংশ মানে ১০০ভাগের ২০ ভাগ, তার মানে ১০ ভাগের ২ ভাগ, তার মানে ৫ভাগের ১ভাগ।

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী,
আমরা অংকে কাঁচা হতে পারি হিসাব কষা হয়ত আমাদের জন্য সত্যিই কঠিন। হিসাবের এক পর্যায়ে হয়ত আমরা সব কিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলি। কিন্তু আপনি জেনে রাখুন, দেশের হিসাবে আমরা কোন গরমিল করবো না। আপনি যে একটা অসম চুক্তি করেছেন এটা বোঝার জন্য অংকে পাকা হওয়া লাগে না।

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী,
আজ বিদেশী কিছু ধর্ষক আমাদের মাকে ধর্ষন করতে ছুটে আসছে। কিন্তু এই মা-টার ১৬ কোটি সন্তান রয়েছে। কোন মায়ের সন্তান তার মাকে কখন ই ধর্ষিতা হতে দেবে না। ১৬ কোটি সন্তানের চিৎকারে আজ বাতাস কাঁপছে। এই সন্তানেরা তার মাকে কোনভাবেই ধর্ষিতা হতে দেবে না। কিন্তু আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে কি করছেন? ধর্ষকদের মদদ যুগাচ্ছেন নাকি এই মা-টাকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন?

আমাদের গ্রামে একজন পাগল আছে। তার নাম রহমত। ১৯৭১ সালে সে যুদ্ধ করেছে। বাবা-মা। ভাই-বোন সবই হারিয়েছে যুদ্ধে। সে কিন্তু তার বাবা মাকে হারিয়েছে একটি সার্টিফিকেট এর জন্য না, দেশের জন্য। ভাই-বোনের স্নেহ মমতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সার্টিফিকেটের জন্য না, দেশের জন্য। সেই পাগলটা এখন কি বলে জানেন? আপনি কিভাবে জানবেন? কিন্তু জেনে রাখুন সে এখন বলে "এই দেশটাকে কিসের জন্য স্বাধীন করলাম? আমরা কি এই দেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম"। হ্যাঁ প্রধানমন্ত্রী। আজ থেকে ৩০ বছর পর দেখবেন বাংলাদেশে গুটিকয়েক সুস্থ মানুষ পাবেন । আর বাকি সবাই হবে "পাগল"। কারণ এই ১৬ কোটি মানুষের কেউ আশা করেনা আগামি ৩০ বছরের মধ্যে আমাদের দেশে আর কোন তেল গ্যাস থাকবেনা।

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী,
আমরা টোকাই। আপনাদের ফেলে দেওয়া খাদ্য থেকে যেটুকু পারি সেটুকুই খাই। কিন্তু আমাদের দেশটাকে আমাদের পৃথীবির সামনে টোকাই হতে দেব না। ১৬ কোটি মানুষের আর্ত চিৎকারে আকাশ পাতাল কাঁপবে কিন্তু আমাদের তেল গ্যাস আমাদের দেশেই থাকবে।

"মারো, বাঁধো, কিন্তু আমাকে তো বাঁধতে পারবে না, আমার তো মৃত্যু নেই। আমি যে আবার আসব"।


মন্তব্য

mithun এর ছবি

ষোল কটি সন্তানের মধ্যে আমিও একজন......আমার মাকে কখনোই অন্যের হাতে তুলে দেবনা.........যদি কেউ চায় তবে তাকে আস্ত রাখবো না......এ আমার মায়ের কসম......

নিত্যানন্দ রায় এর ছবি

উত্তম জাঝা!

zamir এর ছবি

ফাটাইয়া দিসেন বস!!!! সাবাশ!!!!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

যতই ডাকেন প্রধানমন্ত্রী কিন্তু শুনবেন না, কারণ তাদের ঘন্টা বাজা শুরু হয়ে গেছে। কুলাঙ্গার বিরোধী দল থাকা সত্বেও নিজেরাই নিজেদের ঘন্টা বাজিয়েছে অবশ্য। ঘন্টার মাঝে আপনার ডাক তার কানে পৌঁছানো কঠিন আছে।

অ.ট.
আপনি কি আসলেই আঠারর কম বয়সী? লেখা পড়ে তা মনে হয় না কিন্তু।

হাছিব এর ছবি

সকল কে ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। হ্যাঁ আমার বয়স ১৮ এর কম।

"মাগো ভাবনা কেন,
আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে..
তবু শত্রু এলে আস্ত্র হাতে ধরতে জানি,
তোমায় ভয় ভয় নেই মা
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি"

-অবুঝ ভালোবাসা-

মৌনকুহর. এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

হাছিব এর ছবি

আমার মায়ের আঁচলে কেউ সামান্য ছোঁয়া লাগালে তার বুকে আমরা হায়েনার মতো ছোবল দিবো।

-অবুঝ ভালোবাসা-

হাছিব এর ছবি

আমার মায়ের আঁচলে কেউ সামান্য ছোঁয়া লাগালে তার বুকে আমরা হায়েনার মতো ছোবল দিবো।

-অবুঝ ভালোবাসা-

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আশা করি ভবিষ্যতে স্পিরিট সমুন্নত রেখেই আরো যুক্তিনির্ভর লেখা লিখবেন।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

হাছিব এর ছবি

ধন্যবাদ মিথুন ভাইকে, অনিন্দ্য রহমান ভাই কে, জামির ভাইকে, মৌনকুহর ভাইকে এবং প্রকৃতিপ্রেমিক ভাইকে। ভালো থাকবেন নিত্যদিন।

-অবুঝ ভালোবাসা-

শাঈখ এর ছবি

হাসিব,অসাধারণ রে ভাই।
জেগে ওঠো বাহে,আজ ঘরে ঢুকেছে সিধেল চোর,আর ঘুমিও না......

আবির বিন্দু এর ছবি

মা, চিন্তা কোরো না। আমরা বেচে আছি।

MS.DHONI এর ছবি

শাবাশ বেটা আরউ ভালো করতে হবে

মিলু এর ছবি

চলুক

প্রীতম এর ছবি

সম্ভবত,এটা হবে না।দেশের অতি অল্প সংখ্যক জনগণের চাপে সামান্য বিমানবন্দর তাই হলো না,আর এটা তো এত বড় ইস্যু।

বোকা মেঘ এর ছবি

চলুক
অপেক্ষায় আছি, কবে এই ১৬ কোটি সন্তান 'টোকাই' হবে... 'পাগল' হবে...

guest_writer এর ছবি

পুরোপুরি আবেগনির্ভর লেখা। খুব একটা ভাল লাগেনি।

আমাদের দেশের দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদ-আমলারা আকাশ থেকে পড়েনি, আমাদের দেশেরই মানুষ তারা, আমাদেরই জল-হাওয়ায় বেড়ে উঠেছে, আমরাই তাদের ভোট দেই, সুতরাং তাদের অপকর্মের দায়ভার আমাদের উপরও বর্তায়। আমরা নিজেরাও তাদের মতই ভন্ড, ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে বিতাড়িত করলে আমরা প্রতিবাদমুখর হই, কিন্তু আমাদের দেশের আদিবাসিরা-সংখ্যালঘুরা যখন তাদের ভূমি থেকে বিতাড়িত হয় তখন আমরা নিশ্চুপ থাকি। খুব ভাল করে জানি, আমরা অনেকেই আসলে সুযোগের অভাবে সৎ, তারেক-জয় এর জায়গায় থাকলে আমরাও কম যাব না। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ভাগ্যিস মুক্তিযুদ্ধ টা ১৯৭১ সালে হয়েছিল, এখন হলে মুক্তিযোদ্ধার চাইতে রাজাকারের সংখ্যা অনেক বেশি হত।

তেল-গ্যাস আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন করতে পারবে না; মাটির নিচে থাকলেও না, তুলে বিক্রি করলেও না, আর বিদেশিরা নিয়ে গেলে তো কথাই নাই। যতদিন আমাদের নিজেদের চরিত্রের ও মানসিকতার কোন পরিবর্তন না হচ্ছে ততদিন আমরা যেখানে ছিলাম সেখানেই থাকব বা আরও নিচে নামবো; শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, মুহম্মদ ইউনুস বা আনু মোহাম্মদ রা শুধুই আমাদের ব্যবহার করে যাবে, যার যার নিজের পদ্ধতিতে।

নীল সমুদ্র

হাছিব এর ছবি

ধন্যবাদ নীল সমুদ্র আপনার সুন্দর মন্তব্যটি জন্য।

কিন্তু আপনার মন্তব্যের একটা দিক আমার মনে আঘাত করেছে। আপনি কেন যেন বলতে চাইছেন বাঙ্গালিরা খুব খারাপ। কিন্তু আমার তা মনে হয় না। আমাদের মধ্যকার যে দেশপ্রেমটা থাকে সেটা প্রাই সময়ই সুপ্ত থাকে। কিন্তু তার মানে এই নয় আমরা দেশকে কেউ ভালোবাসি না।

আর একটা ব্যাপার। তেল গ্যাস আমাদের দেশের মাটির নিচ থেকে কেন আমরা নিজেরাই তুলতে পারছিনা? কেননা আমাদের হাতে এখনও সেই প্রযুক্তি নেই। কিন্তু আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না একদিন আমাদের তরুণ মেধাবীরা সেই প্রযুক্তি উদ্ভাবন কিংবা আরও উন্নতি কিংবা সম্প্রসারন করতে পারবে।

আমরা কেন আমাদের ভাগ্য কিংবা লাভের চিন্তা করব? আমরা চিন্তা করব দেশের জন্য। এখনই যদি সম্পুর্ন তেল গ্যাস তুলে ফেলা হয় ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে আমরা মুখ দেখাবো কি করে? তারা তো আমাদের দিকে আঙুল উঁচিয়ে ছিঃ ছিঃ করবে।

-অবুঝ ভালোবাসা

MIU পাঠক এর ছবি

উপরে কবি গুরু guest_writer (যাচাই করা হয়নি) নীল সমুদ্র লিখেছেন, "পুরোপুরি আবেগনির্ভর লেখা। খুব একটা ভাল লাগেনি।" এই ধরনের মন্তব্য পড়লে একটা কথাই মাথায় আসে, "আরে মিয়া ভাই, কি লিখলে আপনার ভালো লাগত সেটা বলতে পারতেন অথবা সেই রকম কিছু একটা লিখে আমাদের পড়ার সুযোগ করে দিতেন!"
যাহোক, এবার খোলা চিঠির কথা বলি! চিঠির লেখকের আবেগের কথা বোঝা যায়! মূল সমস্যা হলো ১৬ কোটির (তার চেয়ে বেশি কম হতে পারে) দেশের একমাত্র প্রধানমন্ত্রী কে যদি সব কিছুই করতে হয় তাহলে চুল পাকনা প্রফেসনালরা আছে কেন? তার চেয়েও বড় সমস্যা হলো অধিক চুল পাকনা জনসাধারণ তাদের কৌস্ঠকাঠিন্নেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে সমাধান চায়! এই ধরনের চলের কারণে আমাদের চুল পাকনা প্রফেসনালরা নিজ নিজ দায়িত্ব কি তা ভুলে যেতে বাধ্য! শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, মুহম্মদ ইউনুস বা আনু মোহাম্মদ এদের কে ঠিক করতে হলে আগে নিজেদের ঠিক করতে হবে!

হাছিব এর ছবি

যত বড় ইস্যুই হোক না কে। এই চুক্তি বাতিল করতেই হবে। নতুবা এই ১৬ কোটি মানুষের মৃতদেহ বাতাসকে ভারী করে তুলবে।

-অবুঝ ভালোবাসা

guest_writer এর ছবি

অসাধারন.........
লেখাটা পড়ার পর শুধু এই শব্দটুকুই মুখ দিয়ে বের হলো। ধন্যবাদ লেখককে।

দীপাবলি।

হাছিব এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ

-অবুঝ ভালোবাসা

আয়নামতি1 এর ছবি

চলুক

নিত্যানন্দ রায় এর ছবি

আমার এক বন্ধু শেভরন এ জব করে, তাকে বলতে শুনলাম শেভরন নাকি তার অংশ ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৭৫-৮০% করার পায়তারা করছে।

আমাদের জ্বালানী খাত ক্রমশ উপরওয়ালাদের হাতে জিম্মি হতে যাচ্ছে (বা অলরেডি গেছে)।

guest_writer এর ছবি

লেখাটা পড়লাম, জোলো (জোরালো নয় কিন্তু) আবেগের তারুণ্যের স্বভাবসুলভ জোরালো বহিঃপ্রকাশ মনে হলো, চলতে থাকুক, সুকান্তওতো কিশোর কবি ছিলেন...

হাছিব এর ছবি

এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

-অবুঝ ভালোবাসা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আবেগের দরকার আছে...
সাধু লেখা...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ভালো মানুষ এর ছবি

একটু অন্য রকম লাগলো ।আর সেই অন্য রকমটা একটু বেশি ভাল লাগলো।।প্্ধান মন্তী শুনুন বা নাই শুনুন আমরা দেশ কে বিক্রি হতএ দেব না............

ভালো মানুষ

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ভালো লেখা! আরও লিখুন! হাসি

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

হাছিব এর ছবি

ধন্যবাদ নজরুল ইসলাম ভাই, ভালো মানুষ ভাই এবং দুষ্টু বালিকা আপুকে। ভালো থাকুন সবসময়। আশা করি আরো লিখব ভবিষ্যত এ।

--অবুঝ ভালোবাসা

ফাহিম হাসান এর ছবি

বয়সের তুলনায় বেশ পরিণত লেখা। সামনে আশা করি আরো ভালো লিখবেন। আমার ভালো লেগেছে আপনার সৌজন্যবোধ, সবার মন্তব্যের সুন্দর করে জবাব দিচ্ছেন।

শুভেচ্ছা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।