আপনি ওখানেই ভালো থাকবেন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৬/১১/২০১১ - ৯:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শাহিদা বেগমের বয়স ষাটের কাছাকাছি ।তিনি থাকেন তার বড় ছেলে শিহাবের সঙ্গে ঢাকা শহরের এক বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে ।যদিও তার মন পড়ে থাকে ছোট্ট গাঁয়ে,যেখানে তিনি সংসার শুরু করেছিলেন অনেক বছর আগে।কিন্তু সংসারটা ঠিকমতো গোছাতেও পারেননি।হঠাৎ এক সড়ক দুর্ঘটনা স্বামীকে তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়।তখন ছেলেটির বয়স ছয় আর মেয়েটি দুই বছরের ।সেই থেকে তার একলা চলার সংগ্রাম শুরু ।রাতদিন খাটা খাটনি করেছেন ছেলেমেয়ের জন্য ।

আর আজ তার অখন্ড অবসর ।থাকেন ছেলের বাসায় ।ছেলে,ছেলের বউ চলে যায় অফিসে ।নাতি দুটির তো পড়াশোনার অনেক চাপ।স্কুল,বাসা,হাউস টিউটর,টিভিতে কার্টুন আর কম্পিউটারে গেম - এই হলো তাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ ।ছেলে আর ছেলের বউয়ের সাথে প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা কথা হয় না তার ।রুমটাই যেন তার ঠিকানা।যখন খুব খারাপ লাগে তখন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকেন।গল্পের বই পড়তেও এখন আর ভালো লাগে না।তবু কিছুই করার নেই।ছেলের সাথে দেখা হয় সকালে আর রাতে।হয়তো সকালে নাস্তার টেবিলে দু একটা কথা হয় কোনো দিন আবার তাড়াহুড়োর জন্য কোনোদিন হয়ও না। অথচ এই ছেলেটি ছোটবেলায় তার সঙ্গে কত কথাই না বলত।কথার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে যখন ধমক দিতেন তখন ছেলের ছলছল দুটি চোখের দিকে তাকিয়ে আবার বলতেন,ঠিক আছে বল। আর প্রতিবেলায় তাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে হতো।একদিন রাগ করে বলেছিলেন,‘এতো বড় হয়েছিস,একা একা খেতে পারিস না।’ এরপর হাতের কাজে শেষ করে এসে দেখেন ছেলে তার না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে ।আর এ ছেলেকে ঘুম থেকে উঠিয়ে খাওয়ানো কখনোই সম্ভব না।সেদিন তিনি একমুঠো ভাতও খেতে পারেননি।

দিন সত্যিই বদলে গেছে এখন । সেদিন ছেলের বউ হঠাৎ বলে,দেখুন মা,যুগ পাল্টেছে।আপনার যুগের ধ্যান-ধারণা দিয়ে তো আর এখন চলবে না।টাকা পয়সা রোজগার করতে হবে।ছেলেদের একটু আরাম আয়েশে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।আর আপনাদের যুগেতো ছেলে মেয়েদের একটু স্কুলে পাঠাতে পারলেই কর্তব্য শেষ হয়ে যেত ।এখন কী আর সেই দিন আছে!
শাহিদা বেগম কিছুই বলেন না মনে মনে ভাবেন ,এতো সব তাহলে শুধু ছোটছোট ছেলেমেয়েদের জন্য আর বুড়ো ছেলে মেয়েরা তারা কোথায় যাবে ?

তবুও তিনি ছেলের সাথেই থাকেন।অথচ মেয়ে বারবার তার কাছে চলে যেতে বলে কিন্তু তিনি যান না।কারণ তিনি ভাবেন,কিছুদিন মেয়ের ওখানে থাকলে তারাও যদি একই রকম আচরণ শুরু করে।আর তাছাড়া মেয়ের সাথে মায়ের থাকাটাও আমাদের সমাজ একটু কেমন কেমন চোখে জানি দেখে।আমাদের ঐতিহ্য হলো ছেলের সাথে বাস করে মা যতই মর্মপীড়া ভোগ করুক না কেন তাকে ওখানেই থাকতে হবে । মেয়ের বাসায় যাবে তবে তা বরাবরের মতো না বেড়াতে।অথচ তার ছেলে মেয়ে দুটিতে তিনি কখনো আদর ভালোবাসা আর শিক্ষাদীক্ষার কোনো তফাৎ করেননি।

আজ রাতে শিহাব আর তার বউ এসছে মায়ের রুমে ।এই বিরল ঘটনায় মা তো বেশ অবাক।কিন্তু তাদের কথা শুনে কী বলবেন বুঝতে পারছেন না ।তাদের মতে,মা তো এখানে একাই থাকেন।তাকে দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই।তাহলে এমন একটা জায়গায় থাকা তার জন্যে ভালো হবে যেখানে তার বয়েসী অনেকেই থাকেন।ওখানে তার সময়টাও ভালো কাটবে।তাছাড়া মাঝেমধ্যেই তো ছেলে বউ আর নাতিরা দেখতে যাবে।
ছেলের বউ বলল,মা আপনি ওখানেই অনেক ভালো থাকবেন ।
মা কিছুই বলছেন না,এতো বছর পর স্বামীর সেই পুরনো ভিটেটার জন্যে আজ তার মন কাঁদছে।কিন্তু সেটা এখন অন্যেও বাড়ি ।ছেলে সেটা বিক্রি করে ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছে।

মা মনে মনে ভাবেন,ছেলে আজ অনেক বড় হয়েছে।এখন সে একা একা ঘুমুতে পারে,খেতে পারে,বাথরুমে যেতে পারে।তার জীবনে এখন আর মায়ের আদর ভালোবাসা,ঘুম পাড়ানি গান এসবের দরকার নেই।ছেলে তার বাকিটা জীবন একা একা চলতে পারবে অনায়াসেই।তিনি চলে যাবেন বৃদ্ধাশ্রমে(ওদের মতে বয়স্কদের হোস্টেল)।তবু তার ছেলে ভালো থাকুক,সুখে থাকুক।কিন্তু ছেলের জন্য তার হঠাৎ খুব কষ্ট হলো,যখন তিনি ভাবলেন তার ছেলেও তো একদিন তার মতো বুড়ো হবে।

শামীমা রিমা


মন্তব্য

কেউ একজন এর ছবি

এই ব্যাপারটা এমনভাবে সব গল্পে, নাটকে সবাই বলে যেন কতটানা সত্যি। ১% - ২% এমন হয় কিনা সহেন্দ। যদি বেশী হত তাহলে ১৭ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে বৃদ্ধাশ্রমে ভরে যেত। তা কিন্তু হয়নি। যেসব বৃদ্ধ / বৃদ্ধারা বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন তাদের অনেকেরই ছেলে মেয়ে সবাই দেশের বাইরে থাকেন। এমনি এমনও আছেন যারা দেশের বাইরে ছেলেমেয়ের সাথে কিছুদিন থেকে ভাল না লাগার জন্য দেশে চলে আসেন। আবার কেউ কেউ আছেন সমবয়সীদের সাথে ভাল সময় কাটে দেখে বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন।

স্বামী, স্ত্রী উভয়ই কাজ করার জন্য আজকাল বরং সবাই চায় তাদের দাদী বা নানী কেউ থাকুক। এমনকি কার বাসায় থাকবে তা নিয়ে ভাই, বোনদের ভিতর ঝগড়া পর্যন্ত হয়। কেউই বোঝা ভাবে না বরং আশীবার্দ ভাবে।

আর একটা ব্যাপার হল, বউ বনাম শাশুড়ী। মিডিয়া থেকে শুরু করে গল্প, নাটক, সিনেমা কোন জায়গায়ই আমার বউ-শাশুড়ীর ভাল সম্পর্ক খুব একটা পেলাম না। মারা তাদের মেয়ের বাসায় গেলেই রান্নাঘরে ঢুকেই কাজ করা শুরু করে। ভাবে নিজের পেটের মেয়ের কাজ। আর ছেলের বউ হলে ভাবে অন্যের মেয়ের কাজ। বউ চিন্তা করে আমার মাকে নিয়ে আসি, আমার ছেলে মেয়ে পালতে কাজে দিবে। শাশুড়ী তো সাহায্য করে না। আর যদি দেখে এই মহিলাই তার মেয়ের বাসায় গিয়ে অনেক কাজ করে তাহলে তো পুরা রণক্ষেত্র। ঢাকা শহরের আমাদের ২য় প্রজন্মের এই হল অবস্থা।

পাঠক এর ছবি

ইয়েস আমারো তাই মনে হইছে। এই জিনিষ এখ্নো আমাদের দেশে বড় বেশী একটা ঘটে না। বরং ফানি ব্যাপার হইলো উল্টাটাই ঘটছে আমার বাসায় - আমার আম্মা নাতি নাতনি পালতে পালতে বিরক্ত হ্য়া আমার বড় ভাই বোনরে কইছে - তোরা বিদেশ চইলা যা - আমারে মুক্তি দে। আমি আর পালতে পারুম না। নিজেরা বাচ্চাকালে হারামিপনা কইরা এখন নতুন জেনারেশন আমার সাথে ফিটিং কইরা দিলি পালনপোষনের জন্য - এইটা হইবো না। আমার ভাই এখনো পড়াশুনা করতাছে ডাক্তারি - তার যাওনের জায়্গা নাই। আম্মার সাথে ফাইটিং কইরা টিকতে হইতাছে।

শামীমা রিমা এর ছবি

সংখ্যাগড়িষ্ঠদের নিয়েই কি শুধু গল্প হবে ? সংখ্যালঘুরা কি এসবের বাইরে?
আমার মনে হয় সবকিছু নিয়েই হওয়া উচিত এবং সম্ভব ।

উচ্ছলা এর ছবি
শামীমা রিমা এর ছবি

ধন্যবাদ

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

বহুবার বলা গল্পের ক্ষেত্রে গল্পের চেয়ে গল্প বলার ধরণের উপর জোর দিলে পাঠক হয়ত নতুন কিছু পায়।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শামীমা রিমা এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ভাল লাগেনি, খুব খুব খুব কমন প্লট, কমন প্লটও মাঝে মাঝে ভাষার বুননে আনকমন হয়ে ওঠে, যেটা এক্ষত্রে একেবারেই হয়নি।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

শামীমা রিমা এর ছবি

স্পষ্টবাদী ইচ্ছে করলেই হওয়া যায় না । আপনি পেরেছেন তাই অনেক ধন্যবাদ।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

আপনি আরো লিখুন কিন্তু দুঃখিত এই লেখাটা ভাল লাগেনি। নচিকেতার গান।
ব্যবন্থাপনা পড়ার সময় শিখেছিলাম "স্যান্ডউইচ" মেথডে বলতে, আগে ভাল দিক গুলো, তারপর খারাপ দিক গুলো শেষে আবার ভাল কিছু বলে উৎসাহ দেয়া। কিন্তু আমি আবার দুঃখ প্রকাশ করছি সেভাবে লিখতে না পারার জন্য। তবে আপনাকে উৎসাহ দিচ্ছি সোজাসুজি, আরো লেখার জন্য। হাসি

শামীমা রিমা এর ছবি

ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটা পদ্ধতি জানতাম ‘স্যান্ডউইচ থেরাপী ’ মানে প্রথমে কেমোথেরাপী তারপর সার্জারী সবশেষে আবার কেমোথেরাপী।এখন লেখার ক্ষেত্রেও স্যান্ডউইচ মেথড । বাহ বেশ মজার তো ।
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তাপস শর্মা এর ছবি

হুম। কালকেই পড়েছিলাম। ভালো লাগেনি এর সবচেয়ে বড় কারণ আপনি একেবারে সাদামাটা ঘটনা বলে ফেলেছেন। এর চেয়ে যদি নিজের কোন ঘটনা শেয়ার করতেন ভালো হতো। তবে আপনাকে নিরুৎসাহিত করতে চাইনা, আরও লিখুন, ভাষা গুলির প্রকাশ পাক। শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য।

শামীমা রিমা এর ছবি

কষ্টকরে পড়ে মন্তব্য করেছেন সে জন্য ধন্যবাদ।

ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

চলুক

শামীমা রিমা এর ছবি

হাসি

নিটোল এর ছবি

ভালোই। তবে খুব বেশি শাদামাঠা।

_________________
[খোমাখাতা]

শামীমা রিমা এর ছবি

পরবর্তী লেখায় অলংকরণের ব্যাপারটা মাথায় রাখার চেষ্টা করব। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

সংগীত  এর ছবি

প্লট-টা পুরোনো| আর এইরকম ঘটনার উল্টা পিঠ ও আছে| আমি এরকম ও দেখেছি যে, ছেলে মা-এর চেয়ে নতুন বৌকে বেশি সময় দেওয়ায় আর শশুর বাড়িতে গিয়ে মাঝে মাঝে থাকায় মা খেপে গিয়ে ছেলের বৌকে কুত্সিত অপমান করেছেন, এমনকি বাড়ি থেকে বের ও করে দিয়েছেন| যার ফলে ছেলে বাধ্য হয়েছে বৌকে নিয়ে আলাদা সংসার করতে| আমাদের দেশে আমরা পিতা-মাতার অতিরিক্ত শাসনে বেড়ে উঠি, বিয়ে কাকে করবে, যৌতুক নেবে কি নেবে না, সব কিছু পিতা-মাতাই ঠিক করেন| তাদের অনেকেই বৌয়ের চাকরি করা খারাপ ভাবে নেন, সারা দিন পর ক্লান্ত হয়ে আসা ছেলের সেবা যত্ন করতে লেগে যান, কিন্তু বউ একটু বিশ্রাম নিতে গেলেই বলেন যে সারাদিন পর এসে দরজা বন্ধ করে রাখে, বেআদব| চাকরি করে, সংসার, ছেলে-মেয়ে দেখে কয়জন মানুষ সময় পায় প্রতিদিন বাবা-মার সাথে গল্প করতে? টুক-টাক কুশল বিনিময় খাওয়ার টেবিলেই হয়ে থাকে, এটাও তো একটা ভালো ব্যাপার যে পুরো পরিবার একসাথে বসে খায়, কথা কম-ই না হয় হলো| বিয়ের পরে সব ব্যস্ততা মিলিয়ে মেয়েরা নিজের বাবা-মা, বন্ধুদের থেকেও দূরে সরে যায়| এমন কি চাকরিজীবি কাপলের ছেলে-মেয়ে সামলে দুজন দুজনকে দেবার মত সময় ও থাকে না অনেক ক্ষেত্রে| যেখানে প্রতিদিন অফিসে ৯ ঘন্টা আর রাস্তায় কাটে ২ ঘন্টা| তারপর ও যতটা সম্ভব বাবা-মাকে সময় দেওয়া উচিত| আর তাদেরকেও কিছুটা বুঝতে হবে যে তাদের যুগের চেয়ে এখন জীবন-জীবিকা নির্বাহ অনেক কঠিন হয়ে গেছে| ছেলের বৌটা কিন্তু নিজের বাবা-মাকে ও সময় দিতে পারছে না, ছেলে-মেয়ে আর স্বামীর জন্যে পরিশ্রম করে যাচ্ছে| অনেক মা-ই আছেন এভাবে বলেন, "আমার মেয়ের জামাইটা এত ভালো, আমাদের দিকে খুব টান, আমার মেয়ের কথায় উঠে আর বসে| আর আমার ছেলেটা হইসে একটা নিমকহারাম, বৌয়ের কথায় উঠে আর বসে"| দৃষ্টি ভঙ্গিটা এখানে একটা বড় ব্যাপার| মানুষকে ছাড় দেওয়ার প্রবণতা আমাদের সমাজে খুব কম|

শামীমা রিমা এর ছবি

মুদ্রার উল্টাপিঠ অবশ্যই আছে ।আমি পোস্টটা লিখেছি কারণ এরকম একটা ঘটনা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি এবং খুব মর্মাহত হয়েছি ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।