এই বেশ ভালো আছি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৯/১২/২০১১ - ১০:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই বছর পুরো ছুটির খরা গেলো। সব সরকারী ছুটিগুলো শনি-রবিবার। ইংল্যান্ডে নাকি ওদের সাপ্তাহিক ছুটির দিন সরকারী ছুটি হলে পরবর্তি সোমবার ছুটি দিয়ে দেয়। আমাদেরগুলো পুরো ফালতু রেগে টং

ক্রিসমাসে পর চারদিন অফিস খোলা। এ বছর দু'বার দেশে যাওয়ায় ছুটির অবস্হা খুবই করুন। কি আর করার। সবাই মাস্তি করে আর আমি কামলা দেই। সকালে অফিস এসে অন্য রুমের দু একটি লাইট জ্বালানো দেখি। লাঞ্চের সময় সবগুলো বিদায়। কি যে মজায় আছে লোকজন মন খারাপ

পুরনো বছরের শেষ দিন আর নতুন বছরের প্রথম দিন অফিস ছুটি থাকে। এইবার কপাল এমনই খারাপ যে এই দু'টো ছুটিও সাপ্তাহিক ছুটির সাথে গুলিয়ে ফেলেছে।

কাজ শুরু করে দেখি পিঠ ব্যথা করতেছে। অফিসে এসে ব্যথা বলে চলে যাবো কি যাবো না ভাবতে ভাবতেই ৫/৬ ঘন্টা কাজ। পরের দিন নিশ্চিত অসুস্হতার নোটিশ দেবো ভেবেই লম্বা ঘুম। কম্বলের তলা থেকে ফোন করে একদিনের ছুটি মঞ্জুর।

কিছু কাজ বাকী। কিন্তু কোন কিছুই ঠিকমতো কাজ করতেছে না। নতুন Distance Protection- এর এ্যালগোরিদমগুলো বেশ ফাজিল। ডিবাগ করে দেখা গেলো কাজ করতেছে, কিন্তু ডিভাইসে সফটওয়্যার কাজ করে না। খুজে পাওয়া গেলো পাওয়ার সাপ্লাইয় বোর্ডের ইনপুট রিলের মধ্যে কয়েকটি কাপুত (নষ্ট)। নতুন পাওয়ার সাপ্লাই স্লটে ঢুকিয়ে বেশ শান্তিমতো কিছুক্ষন কাজ করা গেলো। কিন্তু কপালের লিখন, ফেইস ওয়ান দিয়ে সব ঠিক আছে। ফেইস টু-এর কারেন্ট আউটপুট বেশী দেখাচ্ছে। ট্রান্সফরমারগুলো মেইনবোর্ডের সাথে ক্যালিব্রেটেড না। আবারো, ট্রান্সফরমার বোর্ড বদলাতে হলো। এবার মোটামুটি ভালোই কাজ করতেছে। Phase current, Negative-sequence সবই ভালোই হলো। Residual currents -এ গিয়ে আবারো ঘাপলা। ডকু ঘেটে কাজ করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। Distance Protection এর বসকে সকালে দেখেছিলাম। এখন ব্যাটা ভাগছে।

ঐদিকে ম্যানেজার বলে গেছেন এই ডিভাইস আগামী বছরেই নিউক্লিয়ার প্লাটের প্রটেকশনে পাঠানো হবে। টেষ্ট করার জন্য অনেকগুলো ডিভাইস কিনা হয়েছে। কিছু আমার অধীনে। দাম জিজ্ঞেস করার শুধু Omicron এর দামই বল্লো ৪০,০০০ ইউরো। ইংল্যান্ডের কলিগকে বল্লাম: চল ২টা চুরাই পথে বিক্রি করে বি.এম.ডব্লিউ কিনে নেই। শুনে সবাই হেসে দিলো। পুরো প্লানটাই ভেস্তে।

ট্রেনে অফিস আসতে লাগে এক ঘন্টা। গাড়ি দিয়ে কয়েকদিন চেষ্টা করে গাড়িকে আলবিদা। শহরের ভিতর দিয়ে অফিস থেকে বাসার দুরত্ব ১৭ কি.মি। কিন্তু সকাল-বিকাল সিগনালের লাল-নীল-হলুদ খেলা চলে। হৃদপিন্ডের উপর চাপ পড়ে বেশী। হাইওয়ে দিয়ে অফিস ৩০ কি.মি। মানে আসতে যেতে ৬০ কি.মি। পেট্রোলের দাম ১.৫৮ সেন্ট/লিটার। গাড়ির ইন্সুরেন্স,টেক্স,পার্ক টিকেট। সব মিলিয়ে লকাল ট্রান্সপোর্টই ভালো।

ক্রিসমাস এবং হলিডে ছুটিতে কোম্পানি থেকে কিছু বোনাস থাকে। মাসের শেষে ব্যাংকে জমার পরিমান দেখে বউ খুব খুশী। বল্লাম, হিসেবটা করে ফেলো। বাসাভাড়া বেতনের তিনভাগের একভাগ, গ্যাস, ইলেকট্রিসিটি, হিটার, ২টা মোবাইল, একটা ল্যান্ড ফোন, দেশে কল করার ইউরোটা মাইনাস করো। তারপর দেখো কতো থাকে। হিসাব করেই উনি চুপ।
উনার উত্তর: ধুর, তুমি এতো ইনকাম করো, কিন্তু কিছুই যে থাকে না। আমি উত্তর না দিয়ে চুপ থাকি। এইটাই জীবন। এখানে শুধু খেয়ে পরে ভালো থাকা যায়। জমানোর চিন্তা বাদ।

এখন উনার অনেকগুলো অভিযোগ শুনতে হয়। বিয়ের আগে আমি বলেছি, কাজ শেষ করে আমি ডানে-বায়ে না থাকিয়ে সোজা বাসায় আসি। অথচ, এখন নাকি উনাকে পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছি না। বল্লাম, হিসেব করো। আমাকে অফিস করতে হয় মিনিমাম ৯ ঘন্টা (৪৫ মিনিট লাঞ্চ টাইম)।মাঝে মাঝে ১০/১১ ঘন্টাও করতে হয়। কিছু অতিরিক্ত ঘন্টা জমা না থাকলে সমস্যা। আসতে যেতে ২ ঘন্টা। ২৪-১২ = ১২ ঘন্টা। ঘুম+ আনুসাঙ্গিক = ৭/৮ ঘন্টা। ১২-৮ = ৪ ঘন্টা। কিন্তু সকালে আমি অফিসে যাওয়ার সময় তুমি ঘুমে থাকো তাই মাত্র ২/৩ ঘন্টা তুমার সাথে কথাবার্তা। আমার দোষ কোথায়? সবশেষে উনার দেশই ভালো। এখানে সবকিছু রেডি করে একটা তরকারী রান্না করতেই ৩/৪ ঘন্টা শেষ। অথচ দেশে উনি পাবলিক ইউনির প্রফেসর,সাথে বিভিন্ন কবিতা, আবৃত্তি,শিল্পকলা, সেমিনার করেও সময় হতো। বল্লাম, ছুটি শেষ হলেও যাবেই নাকি একই টিকেট কাটা হবে?

মনে মনে বলি, শান্তির মা অনেক আগেই মারা গেছেন।

অফিস পাড়ায় গত কয়েক মাস থেকে দেখতেছি প্রচুর ইউরোপিয়ান লোকজনের আনাগোনা। সাধারনত বাসে, ট্রামে, ট্রেনে শুধু জার্মান কথাই কানে আসতো। এখন প্রচুর ইংরেজি, স্পানিশ, ইটালিয়ান কথোপকতন শোনা যায়। গত সপ্তাহে খবরে দেখলাম ইউরোপের অন্যদেশে অব্স্হা খারাপ তাই স্কিলড লোকজন দল বেধে জার্মানীতে আসতেছে। জার্মানীর ও প্রচুর স্কিলড মানুষের দরকার। স্কিলড মানুষের জন্য আইনও কিছুটা সংশোধন করা হয়েছে। তারপরও নাকি এটা পর্যাপ্ত না। ২০২৫ সাল পর্যন্ত ওদের কয়েক মিলিয়ন স্কিলড মানুষের দরকার।
বর্তমানে বেতনের স্কেল যা শুনলাম, স্কিলড মানুষের বেতনের সাথে থাকা খাওয়ার খরচ মিলিয়ে সেই পেঠে-ভাতে অবস্হা।

ফ্রুলিক্স


মন্তব্য

nefi এর ছবি

কিচ্ছু জমেনারে ভাই,যা আসে তা দিয়ে পেটে ভাতে হ্য়,জার্মান বিলাসিতাও সম্ভব হয়না।কোন শহরে থাকেন?বাসাটা অফিসের কাছে নিলে ২ ঘন্টা বেচে যায়,সেটা ভাবুন একটু,জীবনে কাজই সব নয়।

Fruhling এর ছবি

থাকি ফ্রাঙ্কফুর্ট। অফিসের কাছে বাসা পাওয়া খুবই কষ্টের। আর wohnungsamt ইনকাম দেখে বাসা দিতে চায় না। প্রাইভেটে গলা কাটা দাম মন খারাপ

আয়নামতি এর ছবি

আপনার ছুটির অবস্হা তো বেশ করুণ! ফুঁঁঁঁঁঁঁঁ দিয়ে দিলাম, নতুন বছরে সরকারী ছুটিগুলো শনি-রবিবার গড়িয়ে পড়বে
দেখবেন দেঁতো হাসি ২০১২ আনন্দময় হোক আপনাদের।

Fruhling এর ছবি

দেখা যাক আপনার ফুঁ'তে কতোটুকু কাজ হয় :)।
বছর শেষ হবার আগেই আগামী বছরের ছুটির ক্যালেন্ডার নিয়ে সবাই বসে পড়ি। ২০১২ তে ছুটি মনেহয় ভালোই যাবে হাসি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আদর্শ ব্লগর ব্লগর বলতে যা বোঝায় আপনার লেখাটি তাই!
মন্তব্য কম দেখে ঘাবড়ে যাবেন না! পড়ছি আমরা সবাই। পড়তে ভালো লাগছে। লিখে চলুন।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

Fruhling এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

তারেক অণু এর ছবি

চলুক এর মাঝেই চলবে জীবন, চলবে আমাদের কথকতা।

Fruhling এর ছবি

হ। তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে।

আপনার মতো ঘুরতে ভালুবাসি। কিন্তু ক্যামেরা নিতে আমার ভালো লাগে না। সব সৌন্দর্য্য চোখে দেখে আসি। যা দেখি না আপাতত আপনার ক্যামেরায় হাসি

নিবিড় এর ছবি

চলুক এইসব ব্লগর ব্লগর চলুক

Fruhling এর ছবি

চলবে হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।