ইয়াতিম-মিসকীন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২১/০১/২০১২ - ১০:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

‘’আইজ আপনেরা কি লক্ষ্য করতেছেন? আমাদের বউঝিগো ঘর থেকে বাইর করনের ফন্দি ফিকির শুরু হইছে! হাজার হাজার যুবক পোলা বেকার ঘুইরা বেড়াইতেছে, তাগো কাম দেয় না; কাম দেয় খালি মহিলা মানুষগো! এইডাই নাকি তাগো প্রতিষ্ঠানের শর্ত! এইগুলা আর কিছু না; সব ইহুদি নাসারা চক্রান্ত!’’ ইমাম মওলানা জাহেদ উদ্দিন বাতেন এরপর সামান্য বিরতি নিলেন! সামনে উপবিষ্ট মুসল্লিদের চিন্তামগ্ন মুখ দেখে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। আবার শুরু করলেন, ‘’আমাগো ধন-সম্পদ তো আগেই নিছে; খালি ধর্মডাই ছিল- আর কোন ধর্ম সেইডা? দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ধর্ম, শ্রেষ্ঠ বিধান; আমরা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ জাতি! শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত আমরা! কি সৌভাগ্য আমাদের! আইজ সেই সৌভাগ্য ছিনায় নেয়ার চক্রান্ত চলতেছে! আমাগো ধর্ম নষ্ট করার জন্য ইহুদি-খ্রীষ্টানরা আমাগো দেশে কিছু সংগঠন পয়দা করছে। যেইগুলারে তারা নাম দিছে এনজিও!’’

ইমামের জ্বালাময়ী ভাষণের তীব্র জ্বলুনিতে মুসল্লি-কোরামায়েগণ তখন গলনাংকের প্রায় শেষ সীমায় পৌঁছেছেন! হঠাৎ সামান্য গোলযোগের শব্দ কানে আসে জাহেদ উদ্দিনের। মুসল্লিদের সারি সারি মাথাকে অতিক্রম করে তার চোখ গিয়ে ঠেকে প্রবেশদ্বারের উপর। সেখানে খাদেম খোদাবক্সকে ভিক্ষুক সামলাতে গলদঘর্ম দেখা যায়। খোদাবক্সের অধৈর্য চিৎকার কানে আসে, “এই সর্‌, সর্‌! মুসল্লিগো মসজিদে ঢুকার পথ আগলাইয়া রাখছেন বেগম সাহেবেরা! কত বড় সাহস! শালার ফকিরনি দিয়া দেশটা ভইরা গেছে। সব জায়গাতেই ইনারা আছেন। উপরে-নীচে, ডাইনে-বামে সব জায়গা দখল কইরা বইসা আছেন! এ জন্যই তো এই দ্যাশে অশান্তির শেষ নাই।“ ইমাম সাহেব জিহ্বায় কামড় দেন; না, খোদাবক্স আর মানুষ হইল না; এই গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজের সময় এইসব শব্দ যে মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায়, এইটা যদি গর্দভটা বুঝত। সামান্য ইয়াতিম-মিসকিনদের পর্যন্ত সে সামলাতে পারে না; অথচ এত জ্ঞানী-গুনি মুসল্লিদের জাহেদ উদ্দিন কত দক্ষতার সাথেই না সামলাচ্ছেন!

যাইহোক, হুজুর আবার ওয়াজে মন দেন, ‘’নবিজি কইছেন, শয়তানের আস্তানা গুঁড়াইয়া দেও। আপনেগো যদি ইমান -আকিদা থাকে, আপনেরা যদি নিজেগো মুসলমানি পরিচয় জিন্দা রাখতে চান, তাইলে আগামী শুক্রবার বাদ জুমা সদলবলে আগা খান মোড়ে জমায়েত হইবেন। ওইখান থেকে ‘সুনাগরিক’ এনজিও ঘেরাও করতে যামু আমরা! আমরা সারা দেশ না পারি, আমাগো মহল্লা থেকে তো অন্তত শয়তানের চ্যালাগো খেদাইয়া দিতে পারি। কি কন, আপনারা বেয়াক্কলে রাজিতো ?“ ইমাম সাহেব সমর্থনের আশায় মুসল্লিদের দিকে তাকান। সবার চোখে যেন আগুন জ্বলছে। মুসল্লিদের এই জিহাদি জোশ জাহেদ উদ্দিনের মনে খুশির বান ডেকে আনে। খোদা পাক অপার দয়াময়; নইলে কি আর জিহাদি মন্ত্র এত দ্রুত কাজ করে!

হঠাৎ একজন মুসল্লির হাত ইশারা চোখে পড়ে। চিনতে কষ্ট হয় না মোটেই; এলাকার উঠতি ধনী আনোয়ার সাহেব। সম্প্রতি চিনির ব্যবসায় ব্যাপক লাভের মুখ দেখেছেন। অবশ্য দুর্মুখেরা বলেন, চিনির সিন্ডিকেটের উপরের দিকে না থাকলেও, নীচের দিকে তার হাত না থেকেই পারে না। মুসল্লিদের অনেকেই বাজারের আগুনে পুড়েছেন, তাই আনোয়ার সাহেবের উপর তাদের সবারই অল্পবিস্তর ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু ইমাম সাহেব বাজার-টাজার নিয়ে ভাবেন না, ‘’উদর পূর্তি কইরা কি হইব, যদি ধর্মই না থাকে? বিধর্মী হইয়া অনন্তকাল দোযখে থাকনের চাইতে বরং না খাইয়া মইরা যাউনই তো উত্তম।‘’ জাহেদ উদ্দীনের মাথায় বাজারের আগুন নয়, বরং জিহাদি আগুন জ্বলছে। ইহুদি-নাসারাদের টাকা পয়সার অভাব নাই; তাদের সাথে শুধু জনসংখ্যা দিয়ে লড়াই করা যায় না, টাকা-পয়সাও লাগে। জাহেদ উদ্দিন ভাবেন আনোয়ার সাহেব আজ যে কিছু বলতে চাচ্ছে, সেইটাও নিশ্চয় আল্লাহপাকের একটা ইশারা! তাছাড়া, ‘সুনাগরিকের’ বিরুদ্ধে আনোয়ার সাহেবের ক্ষোভ থাকা অস্বাভাবিক না; কিছুদিন আগেই তো ‘সুনাগরিকের’ ব্যানারে কয়েকজন লোক ভোক্তা অধিকার নিয়ে সভা করেছে; সেই সভায় নাকি আনোয়ার সাহেবের নাম বার কয়েক উচ্চারিতও হয়েছে। সুনাগরিকের সম্ভাব্য শত্রুকে দলে ভেড়ানোর আকাঙ্ক্ষায় ইমাম সাহেবের চোখ চক চক করতে থাকে। মধুমাখা কণ্ঠে জাহেদ উদ্দিন বলেন, ‘’কি ব্যাপার, আনোয়ার সাহেব, কিছু বলতে চাইলে এখানে আইসা বলেন, সবার সামনে দাঁড়াইয়া মাইকে বলেন। আপনি এত পেছনে ক্যান? আপনের মত মানুষ পেছনে থাকলে হইব ক্যান? আপনেরা হইলেন সমাজের মাথা।’’

আনোয়ার সাহেবের সারা মুখ জুড়ে ইমানি দাড়ির বাহার; ধবধবে ফরসা মুখে দাড়ির আধিক্য দেখেই পীর আউলিয়ার কথা মনে পড়ে! তার গায়ের লম্বা শেরওয়ানি আর অবিচল শান্ত মুখখানা মানুষকে পিড়াবিষ্ট করে রাখে! হঠাৎ অতল মহাশূন্য থেকে ভেসে আসে শব্দতরঙ্গ, ‘’আমি আপনাদের সামনে দাঁড়াতে পেরে খুব সম্মানিত বোধ করছি। ইমাম সাহেবের অনুমতি নিয়ে মাত্র দুটি কথা বলব। আমাদের ধর্ম আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। আল্লাহ পাকের কাছে অশেষ শোকর যে, আমরা মুসলমান বাবা-মার ঘরে জন্মগ্রহণ করেছি। আজ সেই সম্পদ যখন লুণ্ঠিত হওয়ার পথে, তখন তো আমরা আর চুপ করে বসে থাকতে পারি না। আসুন আমরা আন্দোলনে যোগ দেই; এই অশুভ শক্তিকে প্রতিরোধ করেই ছাড়ব ইনশাল্লাহ! এই পবিত্র আন্দোলনে যত খরচ হবে, তার যাবতীয় ব্যয়ভার যদি আমাকে বহন করার সুযোগ দেন, আমি যারপরনাই কৃতজ্ঞ থাকব আপনাদের কাছে!‘’ ইমাম সাহবের দুপাটি দাঁত বেরিয়ে পড়ল খুশিতে। মনে মনে এমন একটা কিছুই তো আশা করছিলেন তিনি। মাইকে ঘোষণা দিলেন:’’ আলহামদুলিল্লাহ! আনোয়ার সাহেবের এই নেক ইচ্ছা আল্লাহ পাক কবুল করুক। আর আপনেরা ভাইবেন না যে, এইটা আমার আপনার ইচ্ছাতে হইছে; এইডা সোজা আল্লাহর তরফ থাইকা হইছে। আল্লাহর ধর্ম যখনই জমিনে বিপদে পড়ছে, আল্লাহ সোবহানাতাল্লাহ তখনই উদ্ধারকারী পাঠাইছেন। বড় বড় ক্ষেত্রে পয়গম্বর, আর ছোট ছোট ক্ষেত্রে আউলিয়া।‘’ আনোয়ার সাহেবকে নিয়ে কোন মুসল্লির ভিতর আর কোন অস্বস্তি থাকল না; আল্লাহর প্রতিনিধির উপর ক্ষোভ পুষে রেখে কেউই দোযখের আগুনে পুড়তে রাজি নয়। ‘’সুতরাং, ভুইলা যাইয়েন না, আগামী শুক্রবার বাদ জুমা আগা খান মোড় থেকে ‘সুনাগরিক ঘেরাও’ যাত্রা আরম্ভ হবে। মনে রাখবেন এটা আল্লাহর কাজ; এই কাজে ফাঁকি দেয়ার কোন সুযোগ নাই। যদি দেন, দোযখের ভয়াবহ আগুন এড়াইতে পারবেন না!‘’

নামায ও দোয়া পর্ব শেষে মসজিদ আস্তে আস্তে খালি হতে শুরু করল। মুসল্লিদের বিদায়ী দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকেন ইমাম জাহেদ উদ্দিন। সবার ভিতরেই একটা জেহাদি জোশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবাই যেন সামনের মহাযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য পুরো প্রস্তুত। জাহেদ উদ্দিনের কল্পনায় জিহাদি জনতার যুদ্ধের ছবি ভেসে উঠে, যারা দুর্নিবার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে আর একে একে ধ্বংস করে দিচ্ছে সব ইহুদি-নাসারা আস্তানা। বড় ভাল লাগে জাহেদ উদ্দিনের। কিন্তু হঠাৎই বাস্তব দুনিয়ায় ফিরে আসতে হয় তাকে। আবার শোনা যাচ্ছে খাদেম খোদাবক্সের চিৎকার-চেঁচামেচি, প্রায় ফাঁকা মসজিদে যা আরো বেসুরো হয়ে কানে বাজে! তাকিয়ে দেখেন একটা মেয়ে খুব কাকুতি মিনতি করছে খোদা বক্সের নিকট। মেয়েটার বয়স খুব বেশী নয়, বড়জোর পঁচিশ-ছাব্বিশ হতে পারে। গায়ে শতচ্ছিন্ন শাড়ি। সারা শরীর জুড়েই ধূলা-বালির স্তূপ। হঠাৎই ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়ে খোদাবক্স, ‘এই মাতারি তোর কানে কথা ঢুকে না? আর একটা কথা কইবি তো, বাইড়াইয়া তোর হাড়-গোড় ভাংমু কিন্তু। ভাল চাইলে এখুনি চোখের সামনে থেকে যা’’। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে, ইমাম সাহেব নিজেই ঘটনাস্থলে অবতীর্ণ হলেন। কিন্তু এসেই চরম বিপাকে পড়ে গেলেন। মহিলাটি তার দু’পা জড়িয়ে ধরল, ''হুজুর কিছু সাহায্য করেন; আমার পুলাডা মইরা যাইব!’’ হুজুর তাকিয়ে দেখলেন একটি দুই বছরের হাড় জিরজিরে শিশু পাশেই শুয়ে আছে! ‘’এই ছাড়, ছাড়, পা ছাড়, বেপর্দা-বেশরম মাগী কোথাকার, কত বড় সাহস, নোংরা হাত দিয়া হুজুরের পবিত্র পা ধরছে!’’, খোদাবক্সের এমন কথায় কোন কান নেই মহিলাটির। একসময় অধৈর্য হয়ে সত্যি সত্যি লাঠি আনতে উদ্যত হলে, জাহেদ উদ্দিন থামান খোদাবক্সকে, ‘’আহা, কর কি, কর কি, ইয়াতিম-মিসকিনদের প্রতি দেখি তোমার দিলে কোন দয়া মায়া নাই; তুমি কি দ্বীন হারাইতে চাও নাকি? তুমি জান না আমাগো নবীজী এতিম মিসকিনদের লগে কত সদ্ব্যবহার করতেন?’’ নারীর হাতের স্পর্শ জাহেদ উদ্দিনের পদযুগলে শিহরন আনলেও ভিড় জমানো মানুষের কৌতূহলী চোখ তাকে সত্যি চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে! ‘’আচ্ছা, তুমি পা না ছাড়লে তোমার কথা শুনমু কেমনে?’’ হুজুরের এমন কথায় এবার মেয়েটি সত্যি সত্যি পা ছেড়ে দেয়। জাহেদ উদ্দিন আর কথা বাড়ান না, মহিলাটিকে তার বৈঠকখানায় নিয়ে যাওয়ার হুকুম হুকুম জারি করেন খোদাবক্সের উপর।

‘’তোমার এই অবস্থা ক্যান? তোমার সংসার নাই? পোলার বাবা কই?’’ জাহেদে উদ্দিনের একনাগাড়ে করা এতগুলো প্রশ্ন শুনে প্রথমে ঘাবড়ে গেল মেয়েটি। তারপর ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে বলল, ‘’পুলার বাপ পুলা পেটে থাকনের সময়েই আরেকখান বিয়া কইরা আমারে খেদাইয়া দিছে। বাসাবাড়িতে কামের লাইগা অনেক ঘুরছি; কিন্তু কোলের বাচ্চা দেইখা কেউ কামে রাখে নাই। তারপর থাইকা ভিক্ষা কইরা খাই; কয়দিন ধইরা পুলার খুব অসুখ! ওর চিকিৎসার লাইগা কিছু টাকা দেন হুজুর।‘’ সবটা শুনে হ্রদয় বিগলিত হয় জাহেদ উদ্দিনের। ‘’আহা, কি দুঃখের জীবন এদের! আল্লাহ এদের রক্ষা করো!’’এমন প্রার্থনা করতে পেরে নিজের উপর খুব সন্তুষ্ট হন জাহেদ উদ্দিন, ভাবেন আমাদের নবীজীও তো এভাবেই প্রার্থনা করত এতিম-মিসকিনদের জন্য। মহিলাটাকে সাহায্য করতেই হবে; শুধু সাহায্য করলেই হবে না, একটা স্থায়ী ব্যবস্থাও করে দিতে হবে, নইলে আল্লাহ পাকের কাছে কি জবাব দেবেন তিনি?
‘‘তোমার নাম কি?’’ জাহেদ উদ্দিন জিজ্ঞাসা করেন।
‘‘আয়েশা’’ মহিলার চটজলদি উত্তর!
‘’শোন, আয়েশা, তোমার ভাগ্য ভাল যে তুমি আমার কাছে আসছ; আল্লাহর রহমত আছে তোমার উপর; তোমার মত সমস্যায় পইড়া অনেকে মেয়ে মানুষ বেশরিয়তি কাজ-কামে জড়াইয়া পরে দোযখের রাস্তা পাকা কইরা নিছে। যাই হোক, আমি তোমারে শুধু শুধু টাকা দিমু না; তোমার কাজ করতে হইব। ভয় পাইয়ো না, কোন কঠিন কাজ না! আল্লাহর কাজ! তুমি শোকর কর, আল্লাহ আমার উছিলায় তোমাকে তার কাজের লাইগা নির্বাচন করছেন!’’
‘কন, হুজুর কি কাজ করতে হইব’’ উদগ্রীব আয়েশা জানতে চায়।
“তোমার প্রথম কাজ থাকব আগামী শুক্রবার! আগা খানের মোড় থেকে সামান্য দক্ষিন-পশ্চিমে একখান একতালা বিল্ডিং আছে না? ঐখানে তুমি একটা বস্তু রাইখা আসবা, ঠিক আছে?’’ জাহেদ উদ্দিন আয়েশার দিকে তাকান।
‘’ঠিক আছে, হুজুর, আল্লার কাম তো করনই লাগব! আল্লাহর কাম ফাঁকি দিয়া দোযখে যামু নি? তয় আপনে খালি এহন কিছু টাকা দেন বাচ্চাডার চিকিৎসার লাইগা’’ আয়েশার উত্তরে জাহেদ উদ্দিন হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন। তিনি ইচ্ছা করেই বোমার কথাটা বলেননি, কারণ প্রথম প্রথম অনেকেই শুনে পালাতে চায়। কিন্তু আয়েশার যে খোদা-ভক্তি দেখলেন, তাতে মনে হয়, তাকে বোমার কথাটা বলে দিলেও কোন ক্ষতি ছিল না! আসলে সবই আল্লাহ পাকের ইশারা!

জাহেদ উদ্দিন নিজ ঘরে চোখ মুদে বসে আছেন। ব্যাপক প্রশান্তি ভর করেছে তাকে। ‘সুনাগরিক’কে এবার বিদায় নিতেই হবে। বোকাগুলো এটা জানেই না যে, আল্লাহবিরোধি কাজ করে আল্লাহর জমিনে টিকে থাকা যায় না! হঠাৎ খোদাবক্স একটা চিঠি নিয়ে হাজির হলেন। চিঠিতে জানানো হয়েছে, সৌদি আরবের একটা দাতব্য প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের এতিম-মিসকীনদের জন্য একটা ফান্ড বরাদ্দ করেছে। এতিম-মিসকীনদের জন্য অতীতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় তার একটা অংশ জাহেদ উদ্দিনের মসজিদও পাবে। নির্ধারিত ব্যাংক থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা সংগ্রহের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিটিতে। খুশিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে জাহেদ উদ্দিনের চোখ-মুখ। সৌদিদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় ছেয়ে যায় মন। ‘’মুসলিম বিশ্বের এতিম ভাইদের জন্য কি মায়া! হইবই বা না কেন; নবীজীর পাক-পবিত্র জায়গার সন্তান যে।“ খোদাবাক্স হঠাৎ কৌতূহল সামলাতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘কি হুজুর, কি লেখা আছে চিঠিতে?’’ হুজুর জবাব দেন, ‘’বড় ফান্ড আইসে রে আমাগো মসজিদের নামে’’। এর আগেও এমন ফান্ড পাওয়ায় শব্দটির সাথে ভালই পরিচিত খোদাবক্স খুশিতে লাফ দিয়ে উঠে, ‘’ কি কইলেন, ফান্দ আইছে? ইয়াতিম-মিসকিনগো লাইগা ফান্দ আইছে?’’ ওদিকে ইমাম জাহেদ উদ্দিন বাতেনের চোখদুটি তখন পাকা শিকারির মতই জ্বলজ্বল করতে থাকে!

--------
কাজি মামুন
২১.০১.২০১২

বিঃ দ্রঃ উপরের লেখাটি সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু লেখাটার নীচে লেখকের নাম না থাকায় এবং সামান্য সম্পাদনার প্রয়োজন ছিল বিধায়, 'contact@sachalayatan.com' এর পরামর্শে আবার পোস্ট করা হল।


মন্তব্য

অন্যকেউ এর ছবি

ভালো লিখেছেন। ধর্মান্ধ মৌলবাদিদের আসল উদ্দেশ্য এভাবেই ফাঁস করে দেওয়া উচিত। এরা নিজেদের স্বার্থরক্ষা আর ক্ষমতার লোভের কারণে মানুষের ধর্মসংক্রান্ত আবেগকে ব্যবহার করে।

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

কাজি মামুন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য! লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ইমাম জাহেদ উদ্দিনের আন্দোলন সিন্ডিকেট করে দুহাতে কামানো আনোয়ার সাহেবের বিরুদ্ধে নয়, সুনাগরিকের বিরুদ্ধে! জাহেদ সাহেব বরং ইমামের আন্দোলনের সহায়ক শক্তি! যুগে যুগে এভাবেই ধর্ম ব্যবসায়ী ও পণ্য ব্যবসায়ীর স্বার্থ একাকার হয়ে যায়!

দ্যা রিডার এর ছবি

চলুক

কাজি মামুন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ!

ন এর ছবি

চলুক

কাজি মামুন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ!

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।