স্কুলঃঃঃ মন ছুটে যায়...

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৯/০৩/২০১২ - ৮:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটা খবর পড়ে ভালই লাগলো। সরকার সংসদে বলছে বাংলাদেশে এখন ৯৯’৪৭ শতাংশ বাচ্চা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়। কিন্তু এটা কততুকু সত্য সেটা নিয়ে একটু সন্দেহ আছে। আশেপাশের অবস্থা দেখে তেমন টি মনে হয় না। তবুও আশাবাদি হতে ভাল লাগে, ১০০ শতাংশ হলে আর ভাল লাগত। এবারের সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল টা অবশ্য আশাপ্রদ......।

১০০ শতাংশ বাচ্চা ও যদি স্কুলে যায় সেটার মধ্যে কতো ভাগ প্রকৃত শিক্ষা পাচ্ছে। শুধু স্কুল বানানই যেনও মুল লক্ষ্য না হয় , ভাল শিক্ষাদান ব্যবস্থাও যেনও থাকে।এখনকার শহরের নতুন স্কুলগুলোতে আলো বাতাসের বড্ড অভাব। একটা বিল্ডিং ছাড়া আর কিছুই নাই। কোথায় খেলার মাঠ। শুধু ভারি ভারি ব্যগ আর অজনদার পড়ালেখা।

সামনে নবগঙ্গা নদী বহমান , পিছনে অবারিত ফসলের খেত আর এসবের মাঝে আমাদের স্কুল ‘জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। আমার প্রথম স্কুল, তাই সভাবতই একটু স্মৃতিকাতর হয়ে যাই। কতশত ঘটনার জন্মস্থান।
আপা’র পিছ পিছ স্কুল যেতে যেতে একদিন আবিস্কার করলাম , স্যার একটি খাতা দেখে আমার নাম ডাকতেসেন, সেদিন থেকেই মনে হয় আমার আসল স্কুল জীবন শুরু। ভরতি করা হল বড় ওয়ান শ্রেনীতে । কেন জানি ছোট ওয়ান শ্রেনীতে ক্লাসে পড়া লাগেনি।
আমাদের স্কুলে স্যার ছিলেন চারজন। দপ্তরী বা আয়া কি জিনিস তা আমাদের জানা ছিল না। এক ক্লাস টাইম শেষ হলে কোনো একজন স্যার ঘন্টা দিতেন। আমার সেই চারজন স্যারদের তিনজনই গত হয়েছেন, আমার শুরুর জিবনের সেই গুরুজন্ দের জানাই আমার শ্রদ্ধা আর সালাম।

যখন প্রথম স্কুলে যেতাম তখন স্কুলে ছিল টিনের ঘর র কাঠের বেড়া। তাই বেড়ার ফাক গলিয়া স্কুল পালানটা খুব বেশি কসরতের কাজ ছিলনা। এর মধ্যে একবসর খুব বন্যা হল, সালটা ঠিক মনে নাই, ফলাফল, আমাদের স্কুল ঘরের মধ্যে হাটুপানি। কি আর করা আমার স্যারগন আবার পড়ালেখায় খুব ই সিরিয়াস!, তাই আমাদের ক্লাস করতে নিয়ে যাওয়া হল পাসের একটি মাদ্রাসায় , সেখানে কয়েকদিন ক্লাস ও করলাম কিন্তু বন্যা বাবাজি এত সহজে ছাড়বার পাত্র নন, যে বন্যা তে স্কুল ই ছুটি বানাইতে পারে না , সেটা বন্যার জন্য একটা ব্যর্থতা বই কি ? তাই অবশেষে বন্যা ওই মাদ্রাসায় ও হামলা চালাল। মাদ্রাসাতেও হাটু পানি ,অতএব এবার স্কুল ছুটি ।

আস্তে আস্তে স্কুল ঘরটি পাকা হল। তিনটি ক্লাসরুম আর তার মাঝখানে একটা ছোট রুম স্যারদের জন্য। যেহেতু ছোট ওয়ান থেকে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত মোট ছয় ক্লাস কিন্তু ক্লাস রুম তিনটি, আর স্যার এর ও সঙ্কট। আমাদের ছোটদের ছোট ওয়ান থেকে ক্লাস টু দের সকালে আর আমাদের ছুটির পর বড় ক্লাস গুলর ক্লাস হত।
আমি যখন ক্লাস টু তে উঠলাম , আমার আপা তখন ক্লাস থ্রী, তাই দুজনের স্কুল টাইম বদলে গেল। আমি একা একা স্কুল যাওয়া শুরু করলাম, নিজেকে বেশ বড় বড় মনে হতে শুরু করলো।
আমাদের স্কুলেই সাথেই ছিল বড় খেলার মাঠ। সেখানেই আমাদের নিত্তদিনের খেলাধুলা। কতরকম খেলা, সবগুলো এখন আর মনে নাই। বলতে দ্বিধা নাই, আমরা ক্লাস এর মঝখানে প্রচুর সময় পেতাম কারন অনেক ক্লাসই হত না। তার সঙ্গত কারন ও ছিল, এত সল্প স্যারদের পক্ষে এতগুলো ক্লাস ঠিকমত নেয়া সহজ কথা ছিল না। সুযোগ সুবিধা ও ছিল অপ্রতুল।

এখনকার মত আমাদের স্কুল এর পাশে কোনো দোকানপাট ছিল না। আমাদের টিফিন টাইম অথবা অন্য সময় আমাদের নাস্তার আইটেম ছিল বাদাম বা চানাচুর কিম্বা আচার । আমাদের স্কুল সাথে লাগোয়া ‘প্রেসিডেন্ট বাড়ি’ থেকে আমারা এসব খাবার কিনতাম। প্রেসিডেন্ট বাড়ি??? হ্যাঁ , আমরা যে বাড়ি থেকে বাদাম বা চানাচুর কিনতাম, সে বাড়ির কর্তার নাম ছিল ‘মুজিবুর রহমান’ , আর তার ছিল দুই ছেলে , বড় ছেলের নাম হল ‘ জিয়াঊর রহমান’ এবং ছোটটার নাম ‘ এরশাদ’ । তাইলে এই বাড়িকে প্রেসিডেন্ট বাড়ি ছাড়া আর কি ই বা বলা সম্ভব !!

আরো অনেক কিছু মনে পড়ে যাচ্ছে , থাক আরেকদিন হবে সেসব কথা...

আমাদের গ্রামের স্কুলগুলোর সুযোগ সুবিধাগুলো একটু বাড়ুক , সেই আশা করি , আর কোনও শিশু যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয় । কোনও ছাত্র/ছাত্রী যেন ঝরে না পড়ে স্কুল থেকে...।

অতিথি লেখক –স্বপ্নখুঁজি

ছবি: 
08/24/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

চুপচাপ এর ছবি

লেখাটা আরেকটু ভাল হইতে পারত। অনেকটা ভাল হইয়াও হইল না ভাল টাইপ হয়ে গেছে চোখ টিপি আশা করি লিখতে লিখতে লেখা আরও সুন্দর হয়ে উঠবে।

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

মন্তব্যএর জন্য ধন্যবাদ।

হিল্লোল এর ছবি

টাইপো এবং ভুল বানান লেখার মজাটা আশংকাজনকহারে কমিয়ে দিয়েছে।

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

লেখাটা যখন লিখেছিলাম , তখন একেবারে নতুন বাংলা লিখছি। তাই অনিচ্ছাবসত কিছু ভুল হয়েছিল। সেটা অবশ্য পরে ঠিক করেছিলাম, কিন্তু পোস্ট করার সময় প্রথম ভার্সনটা ভুলবশত পোস্ট হয়ে গেছে। পোস্ট করার পরে দেখি এখানে আর এডিট করা গেলো না। সেজন্য দুঃখিত।
পড়া আর মন্তব্যএর জন্য ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।