‘কেয়া পাতার নৌকো’ – ভারতীয় জি-বাংলা চ্যানেলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃত করবার অপপ্রয়াস

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০১/০৪/২০১২ - ৪:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কোলকাতা ভিত্তিক ভারতীয় জি-বাংলা আমাদের বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। আমাদের দেশের বিভিন্ন চ্যানেল যখন মান সম্পন্ন অনুষ্ঠান বানাতে ব্যর্থ হয়ে দর্শক ধরতে পারছে না, তখন সেই দর্শকদের একটা বিশাল অংশ টেনে নিয়েছে ওপার বাংলার বিভিন্ন বাংলা চ্যানেল। ওরা যে খুব বেশি মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান বানাচ্ছেন তা না, তবে তারা দর্শক ধরে রাখবার ব্যাপারে খুবই কৌশলী। আর সেই কৌশলের সহজ শিকার হয়ে আমাদের দেশের মা-বোন-মাসি-পিসি-কাকি-মামি-বোন-বউ-মেয়েরা ভারতীয় বাংলা চ্যানেলে বুদ হয়ে আছেন!

ওপার বাংলার বাংলা চ্যানেলগুলোর মাঝে জি-বাংলা বাংলাদেশে অত্যধিক জনপ্রিয়। আমাদের দেশের মেয়েরা যারা সন্ধ্যা নাগাদ ফ্রি হয়ে যান এবং ঘরে বসেই অবসরটা কাটান তাদের বিশাল একটা অংশ জি-বাংলার সিরিয়ালের দর্শক কাতারে সামিল হন। সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্তই ওতেই আটকে থাকেন চুম্বকে আটকানো লোহার মতন! বিভিন্ন সিরিয়ালের মাঝে অগ্নিসাক্ষী, কেয়া পাতার নৌকো, কনকাঞ্জলি, সাত পাকে বাঁধা বেশ জনপ্রিয়। এই দর্শকদের বিশাল একটা অংশই এইসব সিরিয়ালগুলোকে মেনে নিয়েছেন নিজ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে। কিন্তু তার বিনিময়ে কী পাচ্ছেন?? সস্তা বিনোদন!! আর কী?? এর সাথে আরও পাচ্ছেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভুল ধারনা। আর এই কাজটা করে যাচ্ছে কেয়া পাতার নৌকো নামের সিরিয়ালটা!

কেয়া পাতার নৌকো সিরিয়ালটার উৎস হল প্রফুল্ল রায়ের দারুন একটা উপন্যাস কেয়া পাতার নৌকো; যদিও সিরিয়ালের রাইটার প্রফুল্ল রায় নন। এ উপন্যাসটিতে ঔপন্যাসিক দারুন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান) ত্যাগ করে পশ্চিম বঙ্গে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের নিদারুন কষ্ট। বাংলার বাঙালেরা ওপার বাংলার ঘটিদের কাছে কীভাবে তাচ্ছিল্যের শিকার হয়েছেন তা ফুটে উঠেছে উপন্যাসটিতে, আরো ফুটে উঠেছে গত শতাব্দির চল্লিশ থেকে ষাট দশকের পূর্ব বাংলার অপূর্ব চিত্রায়ন। কিন্তু জি বাংলার সিরিয়াল কেয়া পাতার নৌকো এ শুধুমাত্র নামটা ঠিক রাখা হলেও চিত্রকল্পে ঘটেছে ব্যাপক পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তনের নামে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ইতিহাস ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে করা হয়েছে পরিহাস!

উপক্রমণিকায় অনেক কথাই হল। এবার চলে যাই মূল কথায়। সিরিয়ালটিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে অপপ্রয়াস করবার প্রচেষ্টাগুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করছিঃ

১) পূর্ব পাকিস্তানের সেরা ছাত্র শৌর্য চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে ছদ্মবেশে যুদ্ধ করেন। গালে আলগা দাড়ি লাগিয়ে হয়ে ওঠেন মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল। আর অন্যদিকে হিন্দু শৌর্য চৌধুরীর মুসলমান প্রেমিকা নার্গীস ওরফে কিরণমালা মুক্তিযুদ্ধ করতে নাম নেন সুলেখা দেবি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধ করতে যে হিন্দুদের মুসলিম আর মুসলিমদের হিন্দু পরিচয় নিতে হত এরকমটা জানা ছিল না!!

২) মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল তার গালে আলগা দাড়ি লাগিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করতেন। আলগা দাড়ি!! অথচ আমাদের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধকালীন সময়ে কবার দাড়ি কামানোর সুযোগ পেয়েছেন সেটা ভেবে দেখা প্রয়োজন।

৩) কেয়া পাতার নৌকো তে মুক্তিযোদ্ধাদের পোষাকের ব্যাপারটা চোখে লাগার মতন। ওখানে দেখায় মুক্তিযোদ্ধারা পায়জামা আর পাঞ্জাবি পড়ে যুদ্ধ করেন!! পুরো সিরিয়াল জুড়েই এমন একটা ভাব যেন পায়জামা-পাঞ্জাবি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পোষাক, আর নিত্যপরিধান কর্তব্যের মাঝে পড়ে!! অথচ আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধারা শুধুমাত্র লুঙ্গি পড়া অবস্থায় দেশের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।

৪) আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান পুরুষদের চেয়ে কোন অংশেই কম না। তারা বিভিন্ন জায়গাতে সক্রিয়ভাবে অংশ করেছেন। তাদের প্রতি পূর্ণ সম্মান জানিয়েই বলছি আমাদের নারীরা মুক্তিযুদ্ধের অনেক অবদান রাখলেও ফ্রন্ট লাইন যুদ্ধে একটু কম সক্রিয় ছিলেন যা তৎকালীন সমাজে এটা খুবই স্বাভাবিক ছিল; কিন্তু কেয়া পাতার নৌকো তে দেখানো হয় মুক্তিযুদ্ধে নারী ইউনিটগুলোই পুরুষ ইউনিটের চাইতে বেশি সক্রিয় ছিল!! নারী ইউনিটের ট্রেনং দেন পুরুষেরা, দলে থেকে নারীদের সাহস যোগান পুরুষেরা কিন্তু সেই পুরুষেরা যুদ্ধের সময়ে যান না!!

৫) এখানে দেখানো হয় কীভাবে অসীম সাহসিকতায়(!!) কিরণমালা খানসেনাদের কাছ থেকে যুদ্ধের কৌশল আর মানচিত্র জয় করে। এদের যে আমাদের দেশের গেরিলা যুদ্ধ সম্পর্কে কোনই ধারণা না তা আর বুঝতে বাকি নেই।

৬) পুরো যুদ্ধজুড়ে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ও তার সহযোদ্ধারা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে রিভলভার নিয়ে!!

৭) কেয়া পাতার নৌকো তে খান সেনাদের দেখানো হয় দাড়িওলা ও আলখাল্লাসম পাঞ্জাবি পরিহিতাবস্থায়। খানসেনাদের এইরূপ এই প্রথম দেখা!!

৮) কেয়া পাতার নৌকো তে আরো দেখানো হয় আর সারাদেশব্যাপী বাঙালিদের উপর আক্রমণ করে মুলত পুলিশেরা, পাক-বাহিনী না। এবং পুলিশেরা মূলত এদেশি। অথচ ২৫ মার্চ রাতেই আমাদের পুলিশ ভাইদের নির্মমভাবে হত্যা করে পাকসেনারা। খুব কম পুলিশই ব্যারাক থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছেন।

৯) সিরিয়ালটিতে খানসেনারা সবাইই বাংলায় পারদর্শী এবং বাংলাতেই বাক-চিৎ করেন!!

১০) সিরিয়ালটির এক পর্যায়ে কিরণমালাকে তার প্রাক্ত স্বামী দাড়িওলা রাজাকার কাবুল শেখ ও পাঞ্জাবি পরিহিত খানসেনারা আটক করে এবং গুলি করে। কাবুল শেখ নিজে কিরণমালার বুকে ও পেটে গুলি করে। কিন্তু এত গুলি খেয়েও কিরণমালা মরে নি!

১১) এবং সর্বশেষ গতকাল দেখানো হয়েছে এক রাজাকার এক হিন্দু বনেদি পরিবারকে ভারত চলে যেতে বলে। কিন্তু তার বাড়ি সে দখল করতে চায় না বরং দু'লাখ টাকা দিয়ে কিনতে চায়!! সত্যিই রাজাকারদের এই মহানুভবতায় আমি বিস্মিত না হয়ে পারলাম না!!!

এরকম আরোও অনেক অসামঞ্জস্যতার মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করা হয়েছে এবং ওই মহান যুদ্ধের ইতিহাসকে করা হয়েছে বিকৃত।

কেয়া পাতার নৌকো সিরিয়ালটিতে যদিও ডিসক্লেইমার দেয়া হয় যে ঐ সিরিয়ালটির সকল ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক, কোন ঘটনা কিংবা ব্যক্তির সাথে মিল পাওয়া গেলে তা নিহায়েতই কাকতালীয়!! কিন্তু ঘটনা হয় যখন একটা দেশ ও জাতি এবং সেই দেশ ও জাতির মুক্তির ইতিহাস তখন আর একে কাকতালীয় বলে চালানোর অবকাশ থাকে না। আমি তীব্রঘৃণাসহকারে ধিক্বার জানাই ভারতীয় জি-বাংলা কর্তৃপক্ষকে এবং বাংলাদেশের দর্শকদের এই সিরিয়াল ও জি-বাংলা চ্যানেলটিকে বর্জণের আহ্ববান জানাই।

------------------------------------------------------------------
০১.০৪.২০১২
দেবাশিস্‌ মুখার্জি
------------------------------------------------------------------
[db.mukherjee.blog@gmail.com]
অল্পসল্প...কবিতা-গল্প...
------------------------------------------------------------------


মন্তব্য

নিলয় নন্দী এর ছবি

লেখাটা পড়ে বুঝলাম সিরিয়ালটির প্রায় প্রতিটি পর্ব আপনি মনোযোগ দিয়ে দেখেছেন। আমি একটু এদিক-সেদিক করে দুটা বা আড়াইটা পর্ব দেখতে পেরেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ২% ধারণাও যার আছে তার পক্ষে এই সিরিয়াল তৈরি করা সম্ভব নয়। দাদারা কিছু না জেনেই কাজে হাত দিয়েছেন।
অযথাই আপনি আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করেছেন।

দেবাশিস্‌ এর ছবি

যারা কেয়া পাতার নৌকো বানিয়েছেন তাদের আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সামান্য ধারণাও নাই।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

লেখকের সাথে সহমত।

দেবাশিস্‌ এর ছবি

ধন্যবাদ!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

রুবাইয়াত মেহেরজানের ভাটাকতি হুয়ি আত্মা এপার-ওপার সব বাংলাতেই আছে।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি
দেবাশিস্‌ এর ছবি

উত্তম জাঝা!

কম্ফোর্টেবলি নাম্ব এর ছবি

অযথাই আপনি আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করেছেন।

আমারও তাই মনে হয়।

দেবাশিস্‌ এর ছবি

তবে এক কাজ করিঃ সবাই মূল্যবান সময় বাঁচিয়ে বসে থাকি!! দেশের জন্য মিছে ভাবি কেন??!!

অরফিয়াস এর ছবি

যেদেশের অধিকাংশ মানুষ জানেইনা যে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে পাকিস্থান থেকে তাও ৪০ বছর হলো, তাদের কাছ থেকে আপনি ইতিহাস জ্ঞান আশা করছেন !!! ভারতের অধিকাংশ মানুষ নিজ প্রদেশের বাইরে যে একটা পৃথিবী আছে তাই মনে করেনা, সেখানে অন্য দেশ সেটা বিশাল ব্যাপার ভাই !

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দেবাশিস্‌ এর ছবি

ভারতের অধিকাংশ মানুষ নিজ প্রদেশের বাইরে যে একটা পৃথিবী আছে তাই মনে করেনা, সেখানে অন্য দেশ সেটা বিশাল ব্যাপার ভাই !

হুম, ভারতীয়দের ব্যাপার। আমার কোন মাথাব্যথা নাই। কিন্তু ওরা যখনই আমার দেশের ইতিহাসকে বিক্ক্রিত করবে তখন আর চুপ থাকা যায় না।

দেবোত্তম এর ছবি

আপনি টালিগঞ্জের বাংলা সিরিয়ালের কাছে যথাযথ ঐতিহাসিক তথ্যসম্পূর্ণ সম্প্রচার আশা করেছেন। এরা যে কোনমতে কিছু একটা নামাতে পেরেছে এই অনেক। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় ঠিকমতন পরিবেশিত না হলে রাগ হওয়া স্বাভাবিক স্বীকার করি। কিন্তু ভারতের টেলিভিশন মাধ্যম (এবং অধিকাংশ ভারতীয়ও) একান্তই অপরিণত। এটাকে চক্রান্ত হিসেবে দেখবেন না।

দেবাশিস্‌ এর ছবি

খুব সম্ভবত ওরা প্ল্যান করে বিকৃতিতে নামে নি। ওরা যাইকরুক আমার দেশের ইতিহাস তো বিকৃত করা হয়েছে। একজন বাংলাদেশি হিসেবে এর প্রতিবাদ করা আমার দায়িত্ব।

এবিএম এর ছবি

জি বাংলার মত সস্তা একটা চ্যানেলের কাছে এর চাইতে ভালো কিছু আশা না করাটাই উত্তম !

দেবাশিস্‌ এর ছবি

হুম, ওদের কাছ থেকে কোন কিছুই আশা করি না। তবে আমার দেশের ইতিহাস তো বিকৃত করা হয়েছে। একজন বাংলাদেশি হিসেবে এর প্রতিবাদ করা আমার দায়িত্ব।

রানা মেহের এর ছবি

এক আট আর এগারো সিরিয়াস অপরাধ। বাকিগুলো জি বাংলা ন্যাচারাল। এগুলো সম্ভবত তাদের অন্য অনেক কাজের মতো দায়সারা কোন কাজ। আপনার প্রতিবাদ ভালো লাগলো

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

দেবাশিস্‌ এর ছবি

হুম, অপরাধ গুরুতর।

বান্ধবী এর ছবি

আমার পরিচিত পরিবারগুলোর মধ্যে প্রত্যেকটি পরিবারের এক বা একাধিক মহিলা সদস্য এসব সিরিয়াল নিয়মিত দেখেন। সবচেয়ে উদ্বেগজনক ব্যাপার হল, তাঁদের সাথে বসে পরিবারের ক্ষুদে সদস্যটিও এই সিরিয়ালগুলো দেখে। আমরা এমনিতেই জাতি হিসেবে ভুলোমনা, ভুল কিছু জিনিস দেখে ছিটেফোঁটা যাও মনে আছে সেগুলো যদি ভুলে যাই তখন কি হবে তা ভাবতেও ইচ্ছা করে না।

তবে সব শিক্ষার শুরু ঘরের ভিতর। আমরা নিজেরা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে কতোটা সচেতন সেটাও ভাববার বিষয়। ইতিহাস যদি আমরা ঠিকমতো জেনে নিই তাহলে গরু-ছাগলের চিৎকার আমাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। আর আমরাও যদি ইতিহাস বিকৃতির এই মেলায় দোকান খুলে বসি তাহলে স্বয়ং আইনস্টাইন এসে কানের কাছে ঘটর ঘটর করলেও কোন লাভ হবে না।

লেখায় চলুক

দেবাশিস্‌ এর ছবি

একদম ঠিক বলেছেন!

আপনাকে ধন্যবাদ।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বহুবছর আগে বিটিভিতে 'হীরামন' নামের একটা নাটকের প্রোগ্রাম ছিল যেখানে জরির পাজামা পাঞ্জাবী পরে রাজারানীর অভিনয় করতো।
কেয়াপাতার নৌকা সিরিজে যে দুয়েকবার চোখ গেছে, দেখেই মনে হয়েছে এটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সেই "হীরামন" সংস্করণ।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এতটা অরুচিকর নাটক আমার চোখে পরেনি আর।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

দেবাশিস্‌ এর ছবি

ওরা যাখুশি তা নিয়ে তার হীরামন সংস্করণ বানাক তাতে আমার কোনই সমস্যা নেই। কিন্তু আমার দেশের মুক্তির ইতিহাস নিয়ে করলে তা কোনভাবেই মেনে নিবো না, মেনে নেওয়া যায় না।

দুর্দান্ত এর ছবি

"বাংলার বাঙালেরা ওপার বাংলার ঘটিদের"

এই কথাগুলো আপত্তিকর। এগুলো সরিয়ে নেয়া হোক।

***

"আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধ করতে যে হিন্দুদের মুসলিম আর মুসলিমদের হিন্দু পরিচয় নিতে হত এরকমটা জানা ছিল না!! "

যেকোনো যুদ্ধেই তো ছদ্মবেশ প্রচলিত। খুব হালকা উদাহরন হিসাবে অস্থায়ি সরকারের সদস্য়দের বোরখা পরিধানের কথা বলা যায়। তদুপরি কাকে মুক্তিযোদ্ধার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, আর কাকে দেশে মুক্তিযুদ্ধ করতে পাঠানো হবে, সেখানে আওয়ামী (মুসলিম) লীগ আর ভারতীয় সরকারে দু পক্ষই বেশ কড়আ নজরদারি করেছে। অ-আরবী নামের মানুষজনকে প্রচুর জিগ্গাসাবাদ করে তবেই প্রশিক্ষন শিবিরে পাঠানো হত। এই পরিস্থিতিতে কেউ যদি নকল আরবী নাম ব্য়াবহারে করে থাকে, তাহলে মন্দ কি?

***

বাংলাদেশীদে ভারতীয় মিডিয়া দিয়ে প্রভাবিত করে ভারতীয় গোপন উদ্য়েশ্য় হাসিল করা যায়, এই ধরনের চিন্তাধারাটি কিন্তু পাকিস্তানি হুন্তার লোকজনের কাছে বেশ জনপ্রিয় তত্ব ছিল। ৭১ এ স্বআধীনবানংলা বেতার ভারতীয়্ সরকারের মদদেই প্রতিষ্ঠিত ছিল - প্রচারিত খবরের কিছু ফোরট উইলিয়াম থেকে সরাসরি আসতো - অনুষ্ঠানগুলো বানংলাদেশী শিল্পী-বালিগন্জের অফিসে শক্তিশালি মিডিয়াম ওয়েভ ট্রান্স্মিটার থাকা সত্বএও সেখানে থেকে অনুষ্টান প্রচার না করে সেগুলো রকরড করে ফোরট উইলিয়ামে হস্তান্তর করতে হত, যেগুলো পরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্ত্ববধানে সীমান্ত অন্চল থেকে প্রচার করা হত। বালিগন্জে ভারতীয় গোয়েন্দা সনংস্থার প্ররষ্ঠপোশকতার মাত্রা কখনো কখনো করত্রিত্বএর পরযায়ে চলে যেত বলেও শোনা গেছে বেতারের কলাকুশলির মুখে। কিন্তু বাংলাদেশীদের কাছে ভারতীয় প্রপাগান্ডা কি এতটাই প্রভাবশালি, যা তাকে বরজনের মত উচ্চতার সম্মান দেখানো যায়?

দেবাশিস্‌ এর ছবি

আগে ঠিকমত বাংলাটা লিখুন, তারপর পুরোটা পড়ে উত্তর দিবো।

"বাংলার বাঙালেরা ওপার বাংলার ঘটিদের"

এই কথাগুলো আপত্তিকর। এগুলো সরিয়ে নেয়া হোক।

তবে এইটুকু বললামঃ আলোচিত অংশে সমস্যা কোথায়??

সমস্যা অল্প থাকলে বাঙাল আর ঘটি শব্দের উৎসটা জেনে নিন। আর জানা থাকলে প্রশ্নটা বুঝিয়ে বলুন।

দুর্দান্ত এর ছবি

প্রথমেই আমার মন্তব্য়ের বানান বিভ্রাটের জন্য় দুঃখিত। কষ্ট করে পড়ার চেষ্টা করেছেন, তাই আমি বাধিত। আরো সহজ করে বলিঃ বাংলাদেশীদের বাঙাল আর পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের ঘটি বলায় আমার আপত্তি আছে।

দেবাশিস্‌ এর ছবি

নাহ্‌, সে দুঃসাহস কি আমার আছে???

তবে আপনি কি নিজে বুঝছেন যে আপনি কি বলতে চাইছেন কিংবা লিখেছেন??

দুর্দান্ত এর ছবি

বোঝাই যাচ্ছে আমি আপনাকে আমার কথা বোঝাতে পারিনি। আমার সীমাবদ্ধতা ক্ষমা করবেন। আবার চেষ্টা করি, পাকিস্তানিরা তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ভারতীয় প্রপাগান্ডার ফলাফল হিসাবে দেখতো। ভারত যে প্রপাগান্ডা করেনি, সেটা নয় - কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরনা তো ভারতের কাছ থেকে ধার নিয়ে আসেনি। তাই নাই? পাকিস্তানিরা এটা ভাবতে পারতো, কারন তাদের চোখে বানংলাদেশীদের বুদ্ধিমত্তা ও স্বআধীনচিন্তা অথবা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি কোন সম্মান ছিলনা। তাদের চোখে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এতটাই নড়বরে ছিল যে সেটাকে তারা ভারতীয় মিডিয়ার অধীন ভাবতে পারতো।

কিন্তু এরকম আপনি কেন ভাবলেন? ভারতীয় একটি চ্য়ানেলের একটি নাটকের বদলে সবগুলো চ্য়ানেল, সবগুলো নাটকে দিন রাত ২৪ ঘন্টাও যদি মুক্তিযুদ্ধের ভুল ইতিহাস প্রচার করা হয় - তারপরেও সেটা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের এতটুকু হেয় করতে পারার মত শক্তিশালি হবে কি?

আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে কি আপনার চোখে এতটাই হালকা কিছু মনে হয়?

দেবাশিস্‌ এর ছবি

কিন্তু এরকম আপনি কেন ভাবলেন? ভারতীয় একটি চ্য়ানেলের একটি নাটকের বদলে সবগুলো চ্য়ানেল, সবগুলো নাটকে দিন রাত ২৪ ঘন্টাও যদি মুক্তিযুদ্ধের ভুল ইতিহাস প্রচার করা হয় - তারপরেও সেটা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের এতটুকু হেয় করতে পারার মত শক্তিশালি হবে কি?

আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে কি আপনার চোখে এতটাই হালকা কিছু মনে হয়?

দাদা, এবার মনে হচ্ছে আপনাকে আমি আমার বক্তব্য বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। মন খারাপ

ওরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে অবশ্যই সাহায্য করেছে সেটা কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই কোন হালকা জিনিস না যে কেউ বললেই এর মর্যাদা বদলে যাবে। কিন্তু কোনভাবেই এর অবমাননা মেনে নিতে পারবো না। এই সামান্য প্রশ্রয় থেকেই সূচনা ঘটে বিশাল বৃক্ষের।

কালো কাক এর ছবি

নাহ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হালকা না। দলে সবাই মেহেরজান বানাক, শর্মীলা বসুর মত বই লিখুক, মুক্তিযুদ্ধ অনেক ভারী তাই এইসব ছাগ্লামার্কা নাটক সিনেমা বই কিছুই করতে পারবে না। সুতরাং মেহেরজানে মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করা হয়েছে তাই বলি কেন ? তাই না ???

(দুঃখিত কথার মাঝে ঢোকার জন্য, তবে যেহেতু কথা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাই ঢোকাটা জায়েজ মনে করলাম। )

দেবাশিস্‌ এর ছবি

হুম, ব্যাপারটা যখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ তখন অবশ্যই কথা বলবেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করা হলে আমরা চুপ করে থাকতে পারি না।

তাপস শর্মা এর ছবি

আগে ঠিকমত বাংলাটা লিখুন, তারপর পুরোটা পড়ে উত্তর দিবো।

দুর্দান্ত'দার পিসিতে অভ্র ইন্সটল না থাকলে উনার লেখাটা এমন আসতেই পারে। উনি কি বলতে চেয়েছেন আমি তো বুঝলাম।

দেবাশিস্‌ এর ছবি

@তাপস শর্মা, ভালো!! এবার একটা অনুরোধ রইলোঃ উনার বক্তব্যটা একটু রিটাইপ করে দিন তো। তারপর এটা নিয়ে কথা বলি!! হাসি

তাপস শর্মা এর ছবি

এবার আমার কাছে হুমকি লাগল ভাইয়া। আপনি মহান!!

ভালা থাইক্কেন।

দেবাশিস্‌ এর ছবি

মন এত দুব্বল!!!
যাই বলি হুমকি মনে হয়!!!!

খ্যাকজ!!!!

দেবাশিস্‌ এর ছবি

আরো সহজ করে বলিঃ বাংলাদেশীদের বাঙাল আর পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের ঘটি বলায় আমার আপত্তি আছে।

দাদা, এটা আমারও ঠিক ভালো লাগে না। তবে এর একটা ইতিহাস আছে। তাই না চাইলেও একে মেনে নিতে হয়। আর কেয়া পাতার নৌকো উপন্যাসটা কি পড়া হয়েছে?? পড়া না হলে পড়বার অনুরোধ রইলো।

নজমুল আলবাব এর ছবি

ঘটি কিংবা বাংগালতো হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কোন শব্দবন্ধ না। এইটা কেউ ইচ্ছা করলেই বাদ দিতে পারবে না। আপনি হয়তো আপত্তি জানাতে পারেন। কিন্তু বাদ দেয়ার কথা বল্লে আরো অনেক পেছন থেকে বাদ দেয়ার প্রকৃয়া শুরু করতে হবে।

দেবাশিস্‌ এর ছবি

পূর্ণ সহমত!!

নজমুল আলবাব এর ছবি

প্রতিবাদ হওয়াটা দরকার। আপনি করলেন বলে ধন্যবাদ।
এই জিনিস আমি এক/ আধবার দেখার সুজোগ পেয়েছি, কিন্তু মিনিট পাচেকের বেশি বসতে পারিনি। আপনি যে দেখেছেন এজন্য আপনার ধৈর্য্যের প্রশংসা না করে পারছি না।
যতটুকুই দেখেছি, আমার মনে হয়েছে একটা বড়সড় উলুম্বা পাঠা এই স্ক্রিপ্টটা লিখেছে আর তারচে বড় একটা উলুম্বা পাঠা সেটা পরিচালনা করেছে।
বাংলাদেশের ঠিক কোন অঞ্চলে কাজের লোকরে 'বান্দা' বলা হয়, শুধুমাত্র এই অঞ্চলটা যদি সিরিজের লেখক বা পরিচালক দেখিয়ে দিতো, আমি একেবারে বর্তে যেতাম।
যুদ্ধে ঠিক কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার হয়েছিলো সেই সম্পর্কেই এদের ধারণা নাই, আর যোদ্ধার বিষয়ে থাকবে কেমন করে? যুদ্ধকালিন আর্মি অফিসারদেরও দাড়িময় ছবি দেখতে পাই। আর এখানে গেরিলাও ক্লিন শেভ করা।

বলে শেষ করা যাবে না। আবারও আপনাকে ধন্যবাদ, লিখলেন বলে।

দেবাশিস্‌ এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ ধৈর্য ধরে পড়ে সুন্দর একটা মন্তব্য করবার জন্য।

আমার মনে হয়েছে একটা বড়সড় উলুম্বা পাঠা এই স্ক্রিপ্টটা লিখেছে আর তারচে বড় একটা উলুম্বা পাঠা সেটা পরিচালনা করেছে।

একদম ঠিক কথা!!

বাংলাদেশের ঠিক কোন অঞ্চলে কাজের লোকরে 'বান্দা' বলা হয়, শুধুমাত্র এই অঞ্চলটা যদি সিরিজের লেখক বা পরিচালক দেখিয়ে দিতো, আমি একেবারে বর্তে যেতাম।

ওখানে তো জায়গার নাম বলে রূপগঞ্জ আর মৌখালি। এই রূপগঞ্জ বর্তমানে নারায়ঙঞ্জ জেলায় পড়েছে। আমার জানামনে ওখানকার লোকেরা কাজের লোকদের 'বান্দা' কিংবা 'বান্দী' বলে না।

যুদ্ধে ঠিক কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার হয়েছিলো সেই সম্পর্কেই এদের ধারণা নাই, আর যোদ্ধার বিষয়ে থাকবে কেমন করে? যুদ্ধকালিন আর্মি অফিসারদেরও দাড়িময় ছবি দেখতে পাই। আর এখানে গেরিলাও ক্লিন শেভ করা।

হাসতে গিয়েও হাসতে পারি না। মেজাজ চরম খারাপ হয়ে যায়। এ আমার ইতিহাসের প্রতি অবমান্না। কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

চিলতে রোদ  এর ছবি

ভাই, ঘরের উনুন নিয়ে বউ-শাশুরী-ননদের নোংরা গৃহ রাজনীতি থেকে বের হয়ে একটি দেশের মুক্তির যুদ্ধের পটভূমিতে যখন একলাফে চলে যায় তখন সেইসব মোটা মাথার নির্মাতা থেকে এর চেয়ে ভালো কি আশা করা যায় বলুন?
কিন্তু নিজেদের ইতিহাস নিয়ে যাচ্ছেতাই করুক সমস্যা নেই, কিন্তু আমাদের আত্মত্যাগের ইতিহাস বিকৃত করে যখন বানিজ্যে নামে তখন অবশ্যই সেটির জোর প্রতিবাদ জানানো উচিত।

আচ্ছা আমরা বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ হতে কি পারিনা এর প্রতিবাদলিপি তাদের পরিচালক বরাবরে পাঠাতে???

দেবাশিস্‌ এর ছবি

আচ্ছা আমরা বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ হতে কি পারিনা এর প্রতিবাদলিপি তাদের পরিচালক বরাবরে পাঠাতে???

হুম, অবশ্যই সম্ভব।

সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার আমাদের কেউ এই নিয়ে আদালতে যাচ্ছে না। তবে ধর্মানুভূতিতে আঘাতের নামে হাইকোর্টে ঠিকই ছুটে যাচ্ছেন, ফেইজ বুকের ফ্যান পেইজ ব্লকড হচ্ছে। অথচ আমার দেশের ইতিহাস আজ আক্রান্ত এই নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নাই।

কালো কাক এর ছবি

বাংলাদেশিদের মুখে যে আজব ভাষা এই নাটকে বা জি বাংলার অন্যান্য নাটকে বসায় সেটা কোন এলাকার আমার জানার ইচ্ছা। এমন অদ্ভুত উচ্চারণে , অদ্ভুত শব্দের বাংলা আমাদের দেশে কোন এলাকায় আমি অন্তত খুঁজে পাইনি, এরা ঐপার থেকে পেয়ে গেছে জাদুবলে।

'কেয়া পাতার নৌকো' মাথায় ডাবের পানি সমৃদ্ধ লেখক পরিচালকের সৃষ্টি মনে হয়েছে দেখে। প্রতিবাদ করার মতও যোগ্য না। তবে প্রতিবাদ অবশ্যই দরকার। ধন্যবাদ আপনাকে, ধৈর্য্য করে দেখে প্রতিবাদ করেছেন বলে।

দেবাশিস্‌ এর ছবি

ওরা যে এলাকাটা দেখায় তার নাম খুব সম্ভবত রূপগঞ্জ। এটা নারায়ণগঞ্জের ভেতরে পড়েছে। ওখানকার লোকদের ভাষা অবশ্যই এরকম না।

Kamran Ahmed এর ছবি

ভাইরে! ওদের আর দোষ কি! আমাদের দুরবলতাই ওদের কে এই সব বাসি পচা জিনিস বানিয়ে তা আমাদেরকে গলাধ:করন করাতে দু:সাহস পায়! বয়কট করা হোক এইসব ল্যাংড়া চ্যানেল, আর আমাদের মা চাচী খালা বোন ভাবি, সবিনয় নিবেদন, আর কতদিন এইসব ফালতু 'সিরিয়াল' দেখে আপনাদের মুল্যবান সময় অপচয় করবেন???

দেবাশিস্‌ এর ছবি

নিজেরে নিজে দুব্বল ভাবলে অন্যে তো ঘাড় মটকাবেই!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।