বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ও একটি ভাবনা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২১/০৪/২০১২ - ১০:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ও একটি ভাবনা

প্রতিটি শিশু যেমন খুব ভালো পরিবারে জন্মগ্রহন করতে পারে না আবার সবাই একেবারে খারাপ পরিবারে জন্মায় না। এখানে ভালো বলতে বলতে চায়ছি যে পরিবারের সদস্যরা শিক্ষিতো খারাপ বলতে বোঝাচ্ছি যেখানে শিক্ষার আলো নেই। প্রত্যেকটি ছেলেমেয়ে যখন ছোট থাকে তখন তারা তাদের মূল শিক্ষাটা পেয়ে থাকে পরিবার থেকে। একেবারে ছোট বেলায় আমি যাবনা কারন আমার লেখার মুল বিষয়টা থাকবে গদ্য ও পদ্যের গুরুত্বটা একটু আলকপাত করা।
বেশ ছোট থাকতেই অর্থাৎ সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীতে থাকতেই অনেকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে চিনতে শুরু করে। এই চেনাটা দুই রকম এক তারা নির্দিষ্ট পাঠ্য বইয়ের সিলেবাস থেকে তাদের জানতে পারে অন্যদিকে এই লেখকদের সাথে কারো কারো পরিচয় ঘটে তাদের পরিবার থেকে। সেক্ষেত্রে আমি আগেই বলেছি যে ভালো পরিবারে বেড়ে উঠলো সে আগে থেকেই ছোটগল্পের মত বইয়ের দেখা পেল আর যে দেখা পেল না সে গতানুগতিক শিক্ষাবাবস্থার উপরই নির্ভরশীল হয়ে থাকলো। পরিবার থেকে সিলেবাসের মাধ্যমে এদের সাথে দেখা হওয়া ছাত্রের সংখ্যায় এখন বেশি।
এখানে বলে রাখা দরকার প্রতিটি মানুষের জীবনে তার মানবিক মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্তের বিকাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এটা বুঝতে পারা শুরু হয় সেকেনডারী লেবেল থেকে এবং তার পূর্ণ বিকাশ লাভ পায় হাইয়ার সেকেনডারী লেভেল এ। তাই এস এস সি ও এইচ এস সি লেভেলটা এতটা গুরুত্বপূর্ণ। রবীন্দ্রনাথের ‘ফটিক’ না পড়লে যেমন কৈশোর মনে আবেগ আন্দোলিত করবে না ঠিক তেমনি ‘মাদার ইন ম্যানভিল’ না পরলে এক অসহায় শিশুর প্রতি মমত্ববোধের যে দুর্নিবার টান তা অনুধাবন করা যাবে না। এই দুটি পাঠ্য এস এস সি ও এইচ এস সি লেভেল এ ছিল আমার সময়। আর এদের সাথে আমার পরিচয় ওই সিলেবাসের মাধ্যমেই কারণ এক্ষেত্রে আমিও ওই শিশুদের দলে যারা পরিবার থেকে অনেক কিছুরই দেখা পায়নি।
সেখানে আমার আক্ষেপ নেয় তবে কষ্ট হয় যখন দেখি কমিউনিকেটিভ এর নামে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে এইসব গল্প ও কবিতা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। আর এগুলো যদি হারিয়ে যায় তবে সুখ, দুঃখ, মায়া , আবেগ, সহানুভূতি, শ্রোদধাবোধ এগুলোর লালন ও ধারন একটা ছাত্রের ভিতরে আসবে কি করে। অথচ উপরে বিবৃত প্রতিটি বিষয় আমাদের বাঙালি জাতির বহুবছরের সম্পদ। এগুলো না থাকলে একজন মানুষের প্রকৃত বিকাশ সম্ভব কিনা আমার জানা নেই। একটি ছেলে অথবা মেয়ে যদি তার শিক্ষাব্যবস্থা থেকে এই জিনিষগুলো আয়ত্ত করতে না পারে তাহলে তার মতো দুর্ভাগ্য আর দুইটি নেয়। সেক্ষেত্রে অনেকে তার পারিবারিক পরিবেশের কারনে হয়তো এসব গুনাবলি তার পরিবারের কারনে পেয়ে থাকতে পারে কিন্তু অধিকাংশেরই সেই সৌভাগ্য হয় না কারন এসব সাহিত্যের জন্য তাদেরকে এই সিলেবাসের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। তাই কমিউনিকেটিভ এর পাশাপাশি আমাদের সমৃদধ সাহিত্ত্যের গল্প , কবিতা,উপন্যাসকে সিলেবাসের ভিতরে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তা না হলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এক আবেগ , অনুভূতিহীন জড় পদার্থ হয়ে যাবে যেখান থেকে তাদেরকে বের করে আনা হয়ে যাবে এক বড় চ্যালেঞ্জ ।

লেখকঃ ami_bonna


মন্তব্য

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মূলসুরের সাথে একমত। শিশুদের সাহিত্য পড়াকে অগুরত্বপূর্ণ ভাবে যারা তাদের চেয়ে বলদ পৃথিবীতে নাই। এবং কমুনিকেটিভ পড়াশুনার নামে যা হইতেছে সেইটা ফালতু বাজারি ছাগলামি।

তবে আমাদের অলরেডি যেই সাহিত্য পড়ানো হয়, সেইটাকেও আরো অনেক উন্নত করা উচিৎ। লোকসাহিত্য এবং বিশ্বসাহিত্যের আরো অনেক কিছু আমাদের শিশুদের পড়ানো প্রয়োজন।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ami_bonna এর ছবি

আমিও আপনার সাথে একমত আমাদের লোকসাহিত্য এবং বিশ্বসাহিত্যের আরো অনেক কিছু আমদের পাঠে অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ

সৌরভ কবীর  এর ছবি

মূলসুরের সাথে একমত।

কল্যাণ এর ছবি

ঠিক কথা চলুক

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

লেখকের সাথে একমত। আমি ডিভিশন সিস্টেমের শেষ ব্যাচের ছিলাম। "জেরী" নামটা কোথাও শুনলেই আমার কল্পনায় অনিন্দ্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এক ছোট্ট ছেলের কথা মনে হয়। আর এখন অনেকের সাথে কথা বলেছি যাদের কাছে জেরি একটি কার্টুন চরিত্র। ক্লাস সেভেন-এইটের গল্প কবিতাগুলো বা এইচ এস সি তে যে গল্প কবিতাগুলি পড়েছি সেগুলো আমাকে এখনও আন্দোলিত করে।

ami_bonna এর ছবি

ব্যাঙের ছাতা,
শুধু তাই না তখনকার সময়ে গিফট 'অফ দা ম্যজাই' , আমাকে মনে করিয়ে দেয় একটি সুখী দম্পতির একে অন্যের প্রতি কমিটমেনট , 'রিডিং ফর প্লেজার' থেকে শিখেছিলাম অনেক জ্ঞ্যাণগর্ভ বানী যা আজও আমার চলার পথের পাথেও হিসেবে কাজ করছে।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

আর কবিতা গুলো কী অসাধারন! আন্ডার দ্য গ্রীন উড ট্রি, টাইম; ইউ ওল্ড জিপসি ম্যান, ট্রি এট মাই উইন্ডো, প্যাশনেট শেফার্ড টু হিজ লাভ,। ইংরেজী সাহিত্য পড়ার প্রতি আমার আগ্রহ তৈরী করেছিল।

আর এন্সিয়েন্ট মেরিনার এর সেই বিখ্যাত লাইন "এলোন, এলোন, এলোন অল, অল এলোন অন এ ওয়াইড ওয়াইড সী " "ওয়াটার ওয়াটার ওয়াটার এভরিয়্যার বাট নট এ সিঙ্গেল ড্রপ টু ড্রিঙ্ক "

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

''...কমিউনিকেটিভ এর নামে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে এইসব গল্প ও কবিতা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে''
এটা হতাশাব্যঞ্জক। পাঠ্যপুস্তকের আনন্দপাঠ হারিয়ে যাচ্ছে।

ami_bonna এর ছবি

বাংলা সাহিত্য আমাদের প্রাণ। এখান থেকে একটা স্বকীয়তা তৈরি হয় পাশাপাশি মূল্যবোধ যা ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

সুখ, দুঃখ, মায়া , আবেগ, সহানুভূতি, শ্রদ্ধাবোধ, আরো কিছু সামাজিক মূল্যবোধ শেখানোর যে ব্যাপারগুলো, সেগুলোর পরিমাণ এখনকার বইগুলোতে আসলেই ভয়াবহ রকম কম। নামকাওয়াস্তে আধুনিক পদ্ধতির আবির্ভাবই হচ্ছে শুধু, কিন্তু শিক্ষার মান বাড়ছে বলে মনে হয় না। বরং হচ্ছে উল্টোটা। কিছু বলতে গেলে সিস্টেমের ধুয়া তোলা হয়। মন খারাপ

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।