অন্তুর একদিন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২০/০৬/২০১২ - ৮:৩৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে দেখি অন্তু ক্যালকুলেটরে কি জানি করছে। অ্যালার্ম ঘড়িটা ওরই। ঘুম থেকে ওঠার কথাও ওর। অ্যালার্ম বন্ধ করার কথাও ওর। কিন্তু,ওতো জেগেই আছে। অ্যালার্মটা বন্ধ করছে না কেন? সকালবেলার আরামের ঘুমটার বারোটা বেজে গেল। ডাক দিলাম ওকে।
কি রে? অ্যালার্মটা বন্ধ করছিস না কেন?

ক্যালকুলেটর ছেড়ে আমার দিকে তাকাল অন্তু। কেমন যেন শূন্য দৃষ্টি চোখে।

দ্যাখ না, এতক্ষণ চেষ্টা করছি। অ্যালার্মটা বন্ধই হচ্ছে না।

বন্ধ হবে কিভাবে? তুই তো টিপছিস ক্যালকুলেটরে।

অবাক হয়ে একবার হাতের ক্যালকুলেটরটার দিকে আরেকবার টেবিলের ওপর বাজতে থাকা অ্যালার্ম ঘড়িটার দিকে তাকাল অন্তু। তারপর অ্যালার্ম বন্ধ করেএকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দাঁত মাজতে গেল।

অন্তু আমার রুমমেট। বেচারাকে গত এক সপ্তাহে ঘুমাতেই দেখলাম না। বোধ হয় আমি ঘুমানোর পরে ঘুমায়,আবার আমি জাগার আগেই উঠে যায়। আজকে তো এই অবস্থা।

ও ফিরে আসলে ঘড়ি দেখলাম। সাতটা চল্লিশ বাজে। আজকে নয়টায় ক্লাস। হাতে অনেক সময়। কম্পিউটারটা অন করে পোকার খেলতে শুরু করলাম।
অন্তু রেডি হয়ে চলে গেল। ওর আজকে আটটাতেই ক্লাস। ওর ক্লাস হয় হল থেকে বেশ দূরে। আগে ও ক্যান্টিন থেকে খাবে, তারপর ক্লাসে যাবে।

অরুর মন ক্লাসে নেই। বার বার দরজার দিকে চোখ যাচ্ছে। অন্তু এখনো এসে পৌছালো না। স্যার তো অ্যাটেন্ডেন্স দিয়ে ফেলেছে। আসবে না নাকি আজকে?ও তো কখনও ক্লাস মিস দেয় না।

অন্তু ক্লাস মিস দেয় না ঠিকই। কিন্তু ক্লাসে মনোযোগও দেয় না,সেটা অরু ভালমতই জানে। সারাক্ষণই তো ওকে আড়চোখে দেখার চেষ্টা করে। আর অরুও সেটা বুঝেও না বোঝার ভান করে। অন্তু ছেলেটা ছাগল টাইপ। আরে বাবা,কিছু বলার থাকলে একদিন বলে ফেললেই তো হয়। এত লুকোচুরির কি দরকার। তা না,লুকিয়ে লুকিয়ে তাকাবে, আর অরুর চোখে চোখ পড়লেই যেন তার রাজ্যের কাজ এসে জুটে যাবে।

যাক, অন্তু এসে গেছে। অরু ক্লাস নোট তোলায় মনোযোগ দিল। অন্তু ক্লাস নোট তোলে না। ওকে দিতে হবে।

দুপুর বেলা রুমে ফিরে দেখি ভিতর থেকে বাইরে তালা দিয়ে অন্তু ঘুমাচ্ছে। যাক ছেলেটাকে অনেকদিন পরে ঘুমাতে দেখলাম। রুমে ঢুকে দেখি ও ঘুমাচ্ছে না, চোখ পিটপিট করছে।

কিরে চোখ পিট পিট করিস কেন? ঘুমা।

সেই চেষ্টাই তো করছিলাম। শালার এয়ারটেল ফোন দিয়ে গান শুনাল।

মোবাইল বন্ধ করে ঘুমা।

আর কি ঘুমাব। খাই নাই। খেয়ে ল্যাবে যাব।

তোর কি প্রত্যেক দিন দুপুর বেলা ল্যাব নাকি?

হুম।

তো ওঠ। আড়াইটায় না ল্যাব হয়। দুইটা তো বাজে।

তড়াক করে বিছানা থেকে নেমে একটা টি-শার্ট গায়ে দিয়ে নিল অন্তু। তারপর,ব্যাগে একটা খাতা ঢুকিয়ে দিয়ে দৌড় মারল।

অন্তু ল্যাবেও লেট করছে। এত কি কাজ ওর?সারাক্ষণই লেট করছে। অরু মোবাইলটা বের করে টাইম দেখছে বার বার। কল দেবে নাকি একটা। ল্যাবে একই গ্রুপের হয়ে কাজ করে ওরা। অন্তু না আসলে একা একা কিভাবে ল্যাবের এত কাজ করবে অরু।

অন্তু ঘেমে টেমে একাকার হয়ে আসলো।

দৌড়ে এসেছি। একটা হাসি দিল অন্তু।

সব সময় দেরী কর কেন?

আর কখন দেরী করলাম।

সকালেও তো ক্লাসে আসতে দেরী করেছিলে।

আরে কত কাজ আমার। এক-আধটু দেরী তো হতেই পারে।

কি কাজ এত?

আছে কিছু কাজ।

ঘুমটা হঠাৎই ভেঙ্গে গেল। চোখ মেলে দেখি অন্তু অন্ধকারে মোবাইল জ্বালিয়ে কি জানি করছে।

কিরে, কি করিস?

আর বলিস না। ছারপোকা জ্বালিয়ে মারল।

এভাবে একটা একটা করে মারলে ছারপোকা দূর হবে?অন্য কিছু কর।

কি করব?

ওষুধ-টোষুধ দে।

ধুর,ওষুধে কাজ হয় না।

তাহলে বিছানায় অয়েল ক্লথ দে।

ওইটা দিলে তোরাই তো বলবি,বিছানায় হিসু করি বলে অয়েল ক্লথ দিয়েছি।

আরে আমরা কি বলি তাতে কি যায় আসে। আগে ছারপোকার হাত থেকে বাঁচ।

ছারপোকার কামড়ে জেগে যাওয়ার পর থেকে ঘুম আসছে না আর অন্তুর। আরও কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে লকার থেকে ল্যাপটপটা বের করল।

নাওয়া-খাওয়া-ঘুম বাদ দিয়ে মনের সব কথা কয়েকদিন ধরে লিখে রাখার চেষ্টা করছে ও। শেষ হলে অরুকে ফেসবুকে মেসেজ করে পাঠাবে। শেষ হলেও পাঠানোর সাহস হবে কিনা কে জানে। মনে মনে অরুকে প্রচণ্ড ভয় পায় অন্তু।

রক্তিম


মন্তব্য

মৌনকুহর এর ছবি

বেশ লাগলো! এটার যেখানে শেষ, সেখান থেকেই আরেকটা শুরু করতে পারেন তো হাসি

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ইচ্ছা যে নেই তা না। দেখি, জল কতটুকু ঘোলা করতে পারি।

রক্তিম

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশ ঝরঝরে বর্ণনা। ভালো লাগলো।

পথিক পরাণ

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, পথিক পরাণ মহাশয়।

রক্তিম

বন্দনা এর ছবি

অন্তুর দ্বিতীয় দিন আসার কি কোন সম্ভাবনা আছে নাকি চাল্লু

অতিথি লেখক এর ছবি

সম্ভাবনা তো আছেই।

রক্তিম

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

লিখতে থাকুন

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ, ত্রিমাত্রিক কবিদা।

রক্তিম

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

ভাল লাগলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, স্বপ্নখুঁজি ভায়া।

রক্তিম

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

আপনার লেখার ধরণটা খুব ভালো লাগল। হাততালি

ছোট ছোট কাট।
অনেকটা সিনেমার মত।

দ্বিতীয় পর্ব লিখে ফেলুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ, প্রদীপ্তদা।

রক্তিম

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

বেশ ভালো

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

রক্তিম

এবিএম এর ছবি

ভালো লাগল, আরো লিখুন। চলুক

রক্তিম এর ছবি

ধন্যবাদ।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

দেঁতো হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সজল এর ছবি

গুড!

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।