শয়তান আছর করছিল

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৯/০৯/২০১২ - ২:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সালেক খোকন
লোকটির নাম মাওলানা তাজুল ইসলাম। রাজধানীর উত্তর কাফরুল উচ্চবিদ্যালয়ের ধর্ম শিক্ষক। নিয়োগ পান গত ফেব্রুয়ারিতে। এই ধর্ম শিক্ষক এক দিনেই নিজেকে তুলে ধরেন গোটা জাতির কাছে। তার কর্মই তাকে সবার সামনে নিয়ে আসে। শুধু এলাকাবাসীই নয়, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদকর্মীরাও মধ্যরাতে অপেক্ষায় ছিল তার সাক্ষাতের আশায়। সাক্ষাৎ মিলতেই তাজুল ইসলামের দিকে তাক করা হয় ক্যামেরা। সার্চলাইটের আলোতে ঝলঝল করে মাওলানা তাজুলের মুখটি। সাংবাদিকেরা তার বক্তব্য ধারণ করে নেয় যত্নের সঙ্গে। ৯ সেপ্টেম্বর মাওলানা তাজুলের বক্তব্য ফলাও করে প্রচার করা হয় বিভিন্ন চ্যানেলে। গোট দুনিয়া চিনে নেয় মাওলানা তাজুল ইসলামকে। দেশের মানুষ জেনে যায় এ ধর্ম শিক্ষকের অধর্মের কাজটিকে।
তাজুল ইসলামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার বড় মির্জাপুর গ্রামে। তার পিতার নাম মোসলেম উদ্দিন। ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে তাজুল ইসলাম সবার ছোট। তাজুল কামিল পাস করে ঢাকার নয়াটোলা কামিল মাদ্রাসা থেকে। কামিলের পরেই তিনি বিয়ে করেন নিজ গ্রামে। মওলানা তাজুল ইসলাম এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। উত্তর কাফরুল স্কুলে শিক্ষকতার পূর্বে তিনি উত্তর কাফরুল ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় মক্তব্য শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন প্রায় ছয় বছর। পরবর্তীকালে মসজিদের ঈমামের সুপারিশে তাকে অস্থায়ী ভিত্তিতে ধর্ম শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় উত্তর কাফরুল উচ্চবিদ্যালয়ে।
স্কুলে শিক্ষকতা করলেও তাজুল ইসলাম থাকতেন ইসলামিয়া মাদ্রাসাতেই। মাদ্রাসার পাশেই মেহেদী হাসানের দোতলা বাড়ি। বছর খানেক আগে থেকেই মেহেদী হাসানের পুত্র পল্লবকে ( সামাজিক কারণে আসল নাম দেয়া হলো না) কোরআন শরীফ ও ধর্ম শিক্ষা বিষয়ে পড়াতেন তাজুল ইসলাম। পল্লবের বয়স আট বছর। মনিপুর স্কুলের ছাত্র সে।
দোতলা বাড়ির বারান্দাতে পার্টিশন দেওয়া রুমে চলত পল্লবের পড়াশোনা। মাওলানা সাহেব যখন পড়াতে আসতেন, তখন নীরবতার স্বার্থে পল্লবের মা সেই রুমের দরজা ভিরিয়ে রাখতেন। এমন পরিবেশেই পল্লবের কোরআন পাঠ আর ধর্ম শিক্ষা চলত সপ্তাহের পাঁচ দিন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এক মাসের মাথায় পল্লব মাওলানার কাছে পড়তে অপারগতা প্রকাশ করে। তার ভাষায়,‘এই হুজুর ভালো নয়, অন্য হুজুর রাখো।’ পল্লব ছিল খানিকটা চঞ্চল প্রকৃতির। তাই মা তার কথায় গুরুত্ব দিতেন না।
এদিকে মাওলানার কাছে ইচ্ছার বিরুদ্ধে পড়ে পল্লব হতে থাকে কংকালসার। ক্রমেই সে স্বাস্থ্যহীন ও দুর্বল হয়ে পড়ে। চোখের কোণে জমে কালি। আসলে একধরনের মনোবৈকলে সে। এ কারণেই তার স্বাস্থ্যহানি ঘটে। কিন্তু সন্তানের অজানা কষ্টের কথা কিছুতেই বুঝতে পারে না পল্লবের বাবা-মা। একদিন সে কারণটিই বেরিয়ে আসে সত্য হয়ে।কী অপকর্ম করেছিল মাওলানা তাজুল ? তা জেনে আপনি হয়তো শিউরে উঠবেন কিংবা নিজের সন্তানের কথা ভেবে দুচিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়বেন। নয়তো বলবেন ছি. ছি. এও কি হতে পারে! আমরা স্বাভাবিকভাবে যা ভাবতেও পারি না, ধর্ম শিক্ষক তাজুল ইসলাম তাই ঘটিয়েছে।
৮ সেপ্টেম্বর। বিকেল ৫টা। পল্লবদের বাসায় প্রতিদিনের মতোই পড়াতে আসে মাওলানা তাজুল ইসলাম। মিনিট পনেরো পড়ানোর পরই পল্লব চিৎকার দিয়ে বেরিয়ে আসে পড়ার রুম থেকে। সন্তানের চিৎকার শুনে এগিয়ে আসে পল্লবের মা। পরিস্থিতি ঠাহর করতে পেরে সেখান থেকে পালিয়ে যায় মাওলানা তাজুল।
পল্লব তখন পায়ুপথের প্রচন্ত ব্যথায় কাতরাচ্ছে। গত এক বছর এভাবেই শিশু পল্লবকে অস্বাভাবিক যৌন নির্যাতন করেছে মাওলানা তাজুল। শুধু তা-ই নয়, এই কুকীর্তি যেন সে অন্য কাউকে বলে না দেয়, সে কারণে মাওলানা পল্লবকে বলত, ‘আমি হুজুর, আমার সাথে আল্লাহ আছে। কাউকে বললে গলা কেটে ফেলব।’ সেদিন মায়ের বুকে মাথা রেখে পল্লব কাঁদতে কাঁদতে সব কথা বলে দেয়।
দ্রুত ছড়িয়ে পরে খবরটি। ফলে স্থানীয় যুবকদের সহযোগিতায় কয়েক ঘন্টার মধ্যে ধরে পড়ে মাওলানা তাজুল ইসলাম। স্কুল কমিটির সভাপতি, সদস্য ও স্থানীয় সকলের সামনে অকপটে স্বীকার করেন নিজের অপকর্মের কথা। নিজেকে বাঁচাতে শুধু বলে, ‘আমার ওপর শয়তান আসর করেছিল।’
ধর্ম শিক্ষক মাওলানা তাজুল ইসলামকে স্থানীয়রা পিটুনি দিয়ে সোপর্দ করে কাফরুল থানায়। প্যানাল কোর্টের ৩৭৭ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয় (মামলা নং-১৪)। সংবাদ পেয়ে মধ্যরাতে থানায় ভিড় জমান গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। গণমাধ্যমের সামনে উত্তর কাফরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আযহারুল হক ফেরদৌস ঘোষণা দেন মাওলানা তাজুল ইসলামের চাকুরিচ্যুতির।
এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে, তখন মাওলানা তাজুল ইসলাম কারাগারে। কিন্তু শিশু পল্লব তখনো পাহাড়সম মানসিক চাপ সহ্য করে মেডিকেল টেস্টের জন্য ঢাকা মেডিকেলে। অতঃপর ম্যাজিস্ট্রেটের সন্মুখে নেওয়া হবে এ শিশুটির জবানবন্দি। জানতে চাওয়া হবে যৌন হয়রানি নিয়ে নানা প্রশ্ন। যা একটি শিশুর মনোজগতে ভয়াবহ বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
ধর্ম শিক্ষার তাজুল, ধর্মের মুখোশের আড়ালে বিকৃতকামী। শুধু মাওলানা তাজুল ইসলামই নয়। এ সমাজে এমন বিকৃত রুচির মানুষেরা মিশে আছে নানা লেবাসে। বহুরূপী মানুষের ভিড়ে তাদের শনাক্ত করা সত্যি কঠিন। তাই প্রয়োজন সচেতনতার। দরকার নিজ উদ্যোগে নিজের শিশুটিকে নিরাপদ রাখা। পুরুষ কিংবা নারী হোক, আপনার সন্তান কি তার গৃহশিক্ষকের কাছে নিরাপদ ?
সালেক খোকন

ছবি: 
08/24/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

তীরন্দাজ এর ছবি

তথাকথিত খ্রীষ্টান মোল্লারাও ও ধরণের অপকর্ম করতে দ্বিধা বোধ করেনা। বেশিরভাগ সময়ে ধর্মের শিক্ষকস্থানীয় লোকোরাই এধরণের বিকৃতিতে ভোগে। হয়তো কোনো হাতাশা ও অপ্রাপ্তি ফলাফল।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতিথি লেখক এর ছবি

মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

বাংলাদেশে শিক্ষক দ্বারা ছাত্র-ছাত্রীদের ''ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের'' ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশে আইনের প্রয়োগ দুর্বল বলে, এসব অপরাধের পরিমাণ খুব বেশি।
মোল্লা বলেন আর সাধারণ শিক্ষক বলেন, আমি এদের আলাদা কোন ক্যাটাগরীতে ফেলব না। মানুষের ''অপরাধ-মানসই'' মানুষকে অপরাধী করে তোলে, কোন মতাদর্শ মানুষকে অপরাধী বানায় না।

পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

রাব্বানী এর ছবি

মানুষের ''অপরাধ-মানসই'' মানুষকে অপরাধী করে তোলে, কোন মতাদর্শ মানুষকে অপরাধী বানায় না।

মোল্লা পাদ্রীদের মধ্যে একাজ বেশি দেখা যায় কেন?

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

সব মোল্লা-পাদ্রী বিকৃত রুচির নন। ধর্মে বিশ্বাসী হলেই মানুষ নরপশু হয়ে যায় না। বকধার্মিকরা ধর্মের সহিংস বাণীকে ব্যবহার করে অপকর্ম করে।
বিকৃত যৌনরুচি ধর্মে বিশ্বাসী-অধার্মিক দুশ্রেণীর মধ্যে আছে কিন্তু মোল্লা-পাদ্রীদের কথা আমরা বেশি করে জানতে পারি বা, তোলপাড় করি, কারন, ধর্মে বিশ্বাসীরা/ ধর্মগুরুরা নিজেদের পন্কিলতামুক্ত মনে করে, সবার সামনে সাধু হবার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যাক্তিসত্ত্বায় তারা ঠিকই পশু।

ধর্মে বিশ্বাসী-অধার্মিক যেই বিশ্বাসী হোন না কেন, মনের পশুত্ব না গেলে মানুষ হওয়া যায় না।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার অভিজ্ঞতা বলে এসব মাওলানার খোঁজ নিলে দেখবেন এরা পরিবার স্ত্রী থেকে অনেক দূরে থাকে। যৌন কামনা মেটানোর আর কোন মাধ্যম নেই। বড় হওয়া মাদ্রাসার মত পরিবেশে নারী সঙ্গ বিহীন। ফলাফল বিকৃতি।

স্বাভাবিকের অবদমনের অস্বাভাবিক পরিণতি। নারীকে এরা খাদ্যবস্তুর সাথে তুলনা করে। বলে -

খাবার ঢেকে রাখতে হয়। তাই হিজাব।

আমিনুল করিম মাসুম

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

তারেক অণু এর ছবি

ধর্ম শিক্ষার তাজুল, ধর্মের মুখোশের আড়ালে বিকৃতকামী। শুধু মাওলানা তাজুল ইসলামই নয়। এ সমাজে এমন বিকৃত রুচির মানুষেরা মিশে আছে নানা লেবাসে। বহুরূপী মানুষের ভিড়ে তাদের শনাক্ত করা সত্যি কঠিন। তাই প্রয়োজন সচেতনতার। দরকার নিজ উদ্যোগে নিজের শিশুটিকে নিরাপদ রাখা। উত্তম জাঝা!

অতিথি লেখক এর ছবি

শয়তান আছর করছিল

তার মানে দাঁড়ালো এ অপকর্মের দায়িত্ব শয়তানের। ঐ মাওলানা নির্দোষ। সমীকরণ তো তাই বলছে। এমন মাওলানাদেরকেই দেখবেন অন্য সাধারণ লোকের সাধারণ কর্মকান্ডের ব্যাপারে তারা ধর্মীয় ফতোয়া দিয়ে কল্লা নামিয়ে দেবার আদেশ দিচ্ছে। নিজের বেলাতেই শুধু শয়তানের দোষ। অদৃশ্য কোন শয়তানে বিশ্বাস করিনা। আসলে শয়তান এরাই।

যাই হোক, এতটা নির্মম না হোক, আমারও এমন কাছাকাছি অভিজ্ঞতা আছে। আমাকে যে মাওলানার কাছে পড়ানো হত তিনি পড়ানো শেষ হলে আমার হাতে ওনাকে মাস্টারবেট করাতেন। উনি নিজে উত্তেজিত হয়ে গেলে টয়লেটে গিয়ে বাকি কাজ সেরে আসতেন। আর আদরের নামে ছোটবেলা থেকে কিসিং ঘসাঘসির শিকার তো হয়েছিই অনেকের কাছে। এগুলোর মানে কিছুই তখন বুঝতাম না। ওনার কাছে অন্যরা পড়তে গেলেও নিশ্চয়ই এমন করতেন।

আমিনুল করিম মাসুম

অরফিয়াস এর ছবি

নুরানী চেহারা।

গৃহশিক্ষক রাখার আগে খোঁজ নেয়া খুব প্রয়োজন। আর রাখলেও নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি। এধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। অনেকের কাছেই ছোটবেলার অভিজ্ঞতা শুনেছি এধরনের।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কল্যাণ এর ছবি

শয়তান চাক্ষুষ করলাম মন খারাপ

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

মেঘা এর ছবি

এই ফতোয়াবাজদের শাস্তিস্বরূপ ফতোয়া দেয়া উচিৎ। হাজার বেত মারা হবে। নাকে খত দেবে। পাথর মারা হবে। আর যা যা ফতোয়া এরা দেয় তার সব এই ধরণের পিশাচগুলোর উপর প্রয়োগ করে দেখানো দরকার কেমন লাগে। তারপর প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে। তাহলে বুঝবে পিশাচের মত কাজ করে নিষ্পাপ একটা বাচ্চাকে আমার সাথে আল্লাহ আছে বলার শাস্তি কেমন। হুজুর গুলো এমনই হয়। কারো কাছে ভাল শুনলাম না।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

এর পশ্চাতে শক্ত দেখে দেড়হাতি একটা মাঁদার গাছের ডাল প্রবিষ্ট করালেই ভবিষ্যতে তারে শয়তানের যাবতীয় আছর থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হবে। তার এই উপকারটা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ জানাই।

বন্দনা এর ছবি

চলুক

কল্যাণ এর ছবি

হ, তবে ডালের পাতা-পুতা ফেলা যাবে না, আর বেশ তাগড়া দেখে নিতে হবে। প্রবিষ্ট করার আগে গরম করে নেওয়াটাও জরুরী।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

পাঠক এর ছবি

বেশিরভাগ হুজুরকেই আমার স্যাডিস্ট মনে হয়। মানুষকে কষ্ট দিয়ে এরা কেমন জানি তৃপ্তি পায়। ছোটবেলায় যৌন নির্যাতনের শিকার হইনি। কিন্তু হুজুরের নির্মম পিটুনির শিকার হয়েছিলাম। এখন হুজুর প্রজাতির মানুষ দেখলেই গা শিউরে উঠে

বন্দনা এর ছবি

ইবাদত করতে করতে কপালে সুপারী বানায়ে ফেলছে, আবার এদিকে অপকর্মের দিক দিয়ে ও পিছিয়ে নাই।মাঁদার গাছই এই লোকের জন্য উপযুক্ত শাস্তি।

অতিথি লেখক এর ছবি

শুধু মাদার গাছের ডাল না, একটা লোহার শিক গরম করে ঠান্ডা দিকটা প্রবিষ্ট করাতে হবে যেন টেনে ধরে বের করে ফেলতে না পারে।

-অয়ন

মাহফুজ খান এর ছবি

আমি তখন বেশ ছোট, সম্ভবত ক্লাস থ্রী বা ফোর এ পড়ি। আমাদের পাশের গ্রামে এক বিরাট ধর্মীয় জলসা ছিল, আয়োজক আমার এক বন্ধুর বাবা। প্রধাণ বক্তা ছিলেন মাওলানা এক্সক্স (নামটা ঠিক মনে নেই, তবে উনি সেই সময় বেশ নামকরা বক্তা ছিলেন)। আমি আমাদের গ্রামের কিছু মুরুব্বীদের সাথে উনার ওয়াজ, নছিহত শুনার জন্য গিয়েছিলাম। শীতের রাত দেখে আমরা সন্ধ্যা বেলাতেই গিয়ে হাজির হলাম। গিয়েই যথারীতি বন্ধুর সাথে দেখা করার জন্য সরাসরি ওদের ঘরে ঢুকে গেলাম। মাওলানা সাহেব তখন খাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে উনি আমার বন্ধুর বাবাকে জিজ্ঞাসা করলেন- ছেলেটি কে? উনি আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। এবার মাওলানা সাহেব আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন- আমার নাম কি? কার সাথে এসেছি, ইত্যাদি। অতঃপর উনি আমার বন্ধুর বাবার কাছে বলতে লাগলেন যে উনার আমার বয়সি একটি ছেলে আছে এবং তার নামও মাহফুজ। আমাকে দেখেই উনার ছেলের কথা মনে পড়েছে এবং আমি যদি তার সাথে রাতে ঘুমাই তাহলে উনার মনোঃকষ্ট কিছুটা লাঘব হত। আমার তখন কিছুই বুঝার বয়স হয়নি। সরল মনেই একবার ভেবেছিলাম উনার মত একজন বিরাট বক্তা আমাকে তার ছেলের মত মনে করেছেন, এটা অনেক সৌভাগ্যের ব্যপার। আমার উচিৎ উনার প্রস্তাবে রাজী হয়ে যাওয়া। পরক্ষনেই আবার দাদীর কথা মনে পড়ল। আমি আমার দাদীকে ছাড়া ঘুমাতাম না। কিছুক্ষন দুটানার মধ্যে থেকে আমি উনাকে না করে দিলাম। উনি আমাকে বেশ করে বুঝালেন, আমার বন্ধুর বাবাও সরল মনেই আমাকে অনেকবার বললেন থেকে যাওয়ার কথা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি ছলে এসেছিলাম। জানিনা সেই মৌলানা আমার মধ্যে আসলেই তার পুত্রকে দেখেছিলেন, নাকি তার অন্য কোনও ধান্দা ছিল। আজকাল এইসব ঘটনা দেখলে সেইদিনের কথা ভেবে বেশ শিওরে উঠি।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কন্যাকে সম্ভাব্য যৌনহয়রানী থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমরা যতটা সচেতন, পুত্রকে সম্ভাব্য যৌনহয়রানী থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমরা ঠিক ততটাই অসচেতন। অথচ আমাদের দেশে খুব কম শিশু (নারী-পুরুষ নির্বিশেষে) আছে যে জীবনে কখনো আত্মীয়-প্রতিবেশী-শিক্ষক-পারিবারিক বন্ধুদের দ্বারা যৌনহয়রানীর শিকার হয়নি। অন্য কোন দেশে বাস করিনি তাই সেখানকার কথা বললাম না। অজ্ঞতাবশত বেশিরভাগ শিশু ব্যাপারটা কাউকে বলতে বা বোঝাতে পারে না, আর সব শিশুই ভয়ে মুখ খুলতে চায় না। কিন্তু এইসব ঘটনার ছাপ তাদের মনে-মাথায় স্থায়ী হয়ে যায়। এই নিরবতা ভাঙার সময় এসেছে। কালেভদ্রে এগুলো নিয়ে এক-আধটা সেমিনার হয় বলে খবরের কাগজে দেখি। প্রয়োজন গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা, ব্যাপক জনসচেতনতা।

সবাইকে বলি, দয়া করে এসব ব্যাপারে কাউকে অন্ধবিশ্বাস করবেন না। কিছুটা অবিশ্বাস বরং জিইয়ে রাখুন। শিশুকে আত্মীয়-অনাত্মীয় কারো সাথেই এক বিছানায় শুতে দেবেন না। একা কারো সাথে কোথাও পাঠাবেন না। যেসব লোকজন শিশুদের জাবড়াজাবড়ি করে, বারে বারে চুমো খায় বা কোলে বসিয়ে আদর করে তাদের কাছ থেকে শিশুদের দূরে রাখুন। কারো কাছে আমার কথা বাড়াবাড়ি বলে মনে হতে পারে। আমি বলবো, মনে কোন প্রকার প্রাকধারণা না রেখে আপনি একটু ভালোভাবে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করুন। দেখতে পাবেন অবস্থা আসলেই কতোটা খারাপ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মৃত্যুময় ঈষৎ(অফ্লাইন) এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।