মিসেস পিটার র‌্যাবিট -২

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৭/০১/২০১৩ - ২:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পিটার যাবে ভ্রমণে

কাঁটাঝোপের জঙ্গলের ভেতরে নিজের বাসার পাশে বসে নিজের মনেই পিটার বলতে লাগল, “তাহলে আমার সমস্যাটা হচ্ছে আমার একাকীত্ব! আসলেই, তাই-ই হবে। একা থাকতে থাকতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। আর সেজন্যই আমার রুচি চলে গেছে। তবে এখন সমস্যাটা যখন আমি বুঝেই ফেলেছি, তাহলে দেখা যাক সমাধানের জন্য কী করা যায়! বুড়ো নেকড়ে মামা যে বলেছিলেন উনি এখন থেকে আমার বন্ধু – এই কথাটা আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছি না। একদম যদি নিশ্চিত হতাম তাহলে এই মুহূর্তেই আমার পুরানো সব বন্ধুদের সংগে দেখা করতে বেরিয়ে পড়া যেতো। ইসস্, কত্তো দিন হয়ে গেছে কারো সংগে দেখা হয়না! হাসি বিলের ধারে ব্যাঙ দাদু, জেরি ইঁদুর, বিলি বেজি আর পিচ্চি জো ভোঁদরকে দেখিনা কতোদিন হয়ে গেল! বুড়ো নেকড়ে মামা যখন বললেন যে তিনি আর আমাকে তাড়া করবেন না, মনে হচ্ছিলো মন থেকেই বলেছিলেন। তবে, কথা হলো, বুঝবো কী করে? কাঁটার ঝোপের ভেতরে আছি বলেই হয়তো তখন মন থেকে ওই কথা বলেছিলেন কিন্তু যদি বাইরের খোলা জায়গায় আমাকে দেখেই তার মত বদলে যায়! উফ, মামার বড় বড় দাঁতগুলো যা ধার! বাপরে!”

পিটার আরো কিছুক্ষণ বসে বসে ভাবতেই থাকলো কী করা যায়। তারপর হঠাৎ করে তার মাথার ওপরে বুদ্ধির একটা হাজার ওয়াটের বাতি জ্বলে উঠলো! লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে।
“যাই হোক, আমি যাবোই! আমি ভ্রমণে বের হবো! তাই-ই করবো আমি! ঘুরতে বেরিয়ে পড়বো আর পুরো বিশ্বভ্রমণ করবো! ইয়াহু!”

এইখানে থেকে আর বসে বসে চুপটি
হবো আমি নিশ্চই একদম শুঁটকি!
হাওয়ার বদলই আমার খুব দরকার
তবেই ঝামেলাগুলো হবে সব চুরমার!

তবে পিটার যদি ঠিকমতো চিন্তা-ভাবনা করতো তাহলে বুঝতো যে একটা সমস্যা থেকে পালাতে চেষ্টা করলে তাতে কোন সমাধান হয়না। বরং পালিয়ে গেলে আরো অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিন্তু কোন কাজ করার আগে সে নিয়ে ঠিকমতো ভেবে নেবার অভ্যাস তো আর পিটারের ছিলনা। সাধারণত কোন একটা অকাজ ঘটিয়ে তারপরই সে ভাবতে বসতো! সে ছিল অতিমাত্রায় আবেগতাড়িত এক খরগোশ। সবকিছু ঝোঁকের মাথায় করে ফেলাই যার কাজ। এবং করে ফেলার পর বেশিরভাগ সময়েই সেটা নিয়ে আফসোস করাও তার অভ্যাসের অংশ বটে!

অভ্যাসমতোই, ভ্রমনে বের হবার বুদ্ধিটা যেই-না তার মাথায় এলো, অমনি তার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়ে গেল।পিটার কখনো ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করতো না। এই মুহূর্তের দুর্ভাবনাগুলো যদি দূর করে ফেলা যায়, তাহলে আগামীতে কী হবে না হবে সে নিয়ে তার খুব বেশি ভাবতে ইচ্ছেই করতো না।
ভ্রমণে যাবার সিদ্ধান্ত নেবার সংগে সংগেই পিটারের মন ভালো হয়ে গেল। তার হারিয়ে যাওয়া রুচি ফিরে এলো। মনের আনন্দে সে পেট ভরে মিষ্টি গুল্ম খেয়ে ফেললো একগাদা।

এতো বড় পেটটাকে টইটুম্বুর ভরে পিটার আবার তার পরিকল্পনা ঠিক করতে বসলো, “হুম, ভাবছি চারণভূমির ওইদিকটাতে গিয়ে বেড়িয়ে আসবো। অনেকটা দূরের পথ আর আগে কখনো যাওয়াও হয়নি ওদিকে। তবে নীলকন্ঠ স্যামি তো বলেছিলো জায়গাটা নাকি অনেক সুন্দর। আর সবুজ ঘাসপুর বা বনানীর থেকে খুব বেশি বিপদজনক নিশ্চই হবে না। বুড়ো নেকড়ে মামা, লালটু শেয়াল আর দাদী শেয়াল যেখানে থাকে সেই জায়গার চেয়ে বেশি ভয়াবহ জায়গা আর হতেই পারেনা! নেকড়ে মামা যখন ধারেকাছে থাকবে না তখন আমি বেরিয়ে যাবো, আর কোথায় যে যাচ্ছি সেকথা কোন কাকপক্ষীকেও বলবো না।”
লম্বা ভ্রমণে বের হবার আগে একটু বিশ্রাম নিতে আর লম্বা দিনটাকে পার করে দিতে ঘুমিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো পিটার। কিন্তু ঘুম কি আর আসে? উত্তেজনায় তার মাথায় তখন গিজগিজ করছে রাজ্যের ভাবনা! একটু আধটু যা চোখ লেগে আসছিলো তখনও চোখের পাতায় ভর করে আসতে থাকলো তার অনাগত বিশ্বভ্রমণটা নিয়ে বিভিন্ন রকম সব সুন্দর আর রোমহর্ষক স্বপ্ন।

শেষ পর্যন্ত ঘুম আর স্বপ্নের সংগে লুকোচুরিটা খেলতে খেলতে লম্বা দিনটার শেষ দেখা গেল। সূর্য মামা তার গোল, লাল আর হাসি-হাসি বিশাল বপুটা নিয়ে বেগুনী পাহাড়ের পেছনে পেতে রাখা বিছানাটায় ঘুম দিতে গেলেন। বুড়ি পশ্চিমা বাতাস দিনের কাজ সেরে ঝটিতি এসে তার বাচ্চাদের, হালকা পলকা ফুরফুরে বাতাসদের, ঝেঁটিয়ে নিজের আঁচলের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললেন। তারপর তিনিও চলে গেলেন বেগুনী পাহাড়ের পেছনে তার বাসাটার দিকে। ছোট্ট একটা তারা ফুটলো আকাশে আর পিটারকে দেখেই সে দুষ্টুমি ভরা চোখ টিপে দিল। সেই সময়েই অনেক দূরে সবুজ বনানীর ধার ঘেঁষে কোথাও বুড়ো নেকড়ে মামার হাসির আওয়াজ পাওয়া গেল। আর সাথে সাথে হাসি দেখা গেল পিটারের ঠোঁটেও। এই সময়টার জন্যই সে এতোক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে। বুড়ো নেকড়ে মামা এখন অনেক অনেক দূরে সন্ধ্যার টহল দিচ্ছে। পিটারের আর ভয় পাবার কিছু নেই।

কাঁটাঝোপের নিরাপত্তায় ঘেরা প্রিয় বাসাটা ছেড়ে লাফ দিয়ে বের হলো পিটার। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নিলো কয়েকবার। তারপর পৈত্রিক প্রাণটা প্রায় হাতের মুঠোয় ধরে যতো দ্রুত সম্ভব সে চারণভূমির দিকে যাত্রা শুরু করে দিলো লাফিয়ে লাফিয়ে – থপ থপ থপাস্!

চলবে,,

পর্ব ১

- নৃ
[

]


মন্তব্য

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

হাততালি
চলুক। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

নৃ এর ছবি

পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ,, হাসি

শাব্দিক এর ছবি

এম্মা, পিটার দেখি তারেক অনু হয়ে যাচ্ছে। চিন্তিত
কোথায় ভাবলাম লাইফে স্ট্যাটেল হবে খাইছে

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

ধুসর জলছবি এর ছবি

তারেক অণু তো এখন একটা ক্রেজ , সবাই হতে চায়/চাই, পিটারের আর দোষ কি চাল্লু খাইছে

শাব্দিক এর ছবি

দেঁতো হাসি

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

তোমরা সবাই স্যাটেল স্যাটেল কহ যে,
স্যাটেল হওয়া যায়না এত সহজে। দেঁতো হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

শাব্দিক এর ছবি

খাইছে

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

নৃ এর ছবি

ভ্রমণে বের না হলে সুন্দরী খরগোশনী কই পাবে বলেন,,, খাইছে
পড়ার জন্য ধন্যবাদ অনেক হাসি

ধুসর জলছবি এর ছবি

হাততালি অনুবাদ চলুক নৃ চলুক

নৃ এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ হাসি

রাহী এর ছবি

হাততালি অসাধারন প্রানবন্ত লেখা, কিন্তু বড্ড তাড়াতাড়িই ফুরিয়ে গেল। আরেকটু দীর্ঘ কি করা যেত না ?

নৃ এর ছবি

দ্বিতীয় অধ্যায়টা এতোটুকুই যে!
একটা একটা করে অধ্যায় দিচ্ছি,,, এবং পুরো গল্পটা ৩৩ অধ্যায়ের,,, ইয়ে, মানে...
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।