ইউকে'র বাংলা মিডিয়া কর্মীদের প্রতি খোলা চিঠি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১১/০২/২০১৩ - ১০:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কত কত দুর্ভাগা সময় পার করেছি আমরা। আমাদের চোখের সামনে মতিউর রহমান নিজামী নামের শুকরশাবক গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। শহীদ জননীর নামে একটা ছাত্রী হলের নামকরণ করতে পারিনি আমরা। বাংলাদেশের জন্মের বিরোধীতাকারী জামায়াত নামের বর্বর দলটা মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা নামের প্রহসন করার সাহস দেখিয়েছে। সেখানে প্রতিবাদ করায় লাঞ্ছিত হয়েছেন আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা।

তারপর … চল্লিশ নয়, যেন চল্লিশ হাজার বছর পর সময় হলো আমাদের কলংক মোচনের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় দিল বাচ্চু রাজাকার নামের একটা নরপশু যে বিচারের মুখোমুখি হবার সাহস পর্যন্ত পায়নি, ফাঁসিতে ঝুলবে। অনেক দিন পর জ্যোৎস্না রানি, মুক্তিযুদ্ধের সময় অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় বাচ্চু রাজাকারের হাতে মারা যাওয়া তার স্বামীর বিচার পাবার আশায় যিনি প্রথম বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন, আমরা তার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারলাম।

কিন্তু সেই চোখে গরম সীসা ঢেলে দেয়া হলো আবার নতুন করে। কাদের মোল্লা, কসাই কাদের যে কবি মেহেরুন্নেসাকে এক কোপে মাথা কেটে তার চুল দিয়ে মাথাটা বেঁধে রেখেছিল সবাই দেখুক বলে, ১১ বছরের মেয়েকে যে ধর্ষন করে মেরে ফেলেছিল কিংবা ৩৫০ জন মানুষের গণহত্যার জন্য দায়ী সেই ঘৃণ্য প্রাণীকে ফাঁসি দেয়া হলোনা। আমাদের সর্বস্ব নিয়ে সে আমাদের কারাগারে জীবন কাটিয়ে দেয়ার অনুমতি পেল।

কিন্তু এবার আমরা বিচার পাবার আশায় ৪০ হজার বছর বসে থাকবোনা। আমরা শাহবাগ নামে অপূর্ব এক জায়গা সৃষ্টি করেছি। যেখানে বানের পানির লাহান সারাদিন আসে মানুষ। নারী নয় পুরুষ নয় বুড়ো শিশু কেউ নয়। আসে শুধু মানুষ। এই মানুষেরা আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি নিশ্চিত না করে আমরা ঘরে ফিরবোনা। আমরা আবিষ্কার করেছি বাংলা বর্ণমালার সুন্দরতম শিখন পদ্ধতি। ক তে কাদের মোল্লা - তুই রাজাকার তুই রাজাকার। স তে সাঈদী - তুই রাজাকার তুই রাজাকার।

শাহবাগ ছড়িয়ে গেছে সীমান্ত থেকে সীমান্ত। প্বথিবীর প্রতিটা কোনায় যেখানে একটা বাঙালি আছেন তারা সংহতি প্রকাশ করছেন শাহবাগ আন্দোলনের সাথে। শ্লোগানে পোস্টারে গণসঙ্গীতে মুখরিত হয়ে শাহবাগ ছড়িয়ে গেছে খরস্রোতা নদীর মতো।

জামায়াত শিবির বাংলাদেশে মুখ লুকিয়েছে তাদের পুতিগন্ধময় গর্তে। শাহবাগের তোড়ে ভেসে গেছে তাদের এতদিনের আস্ফালন। বাংলাদেশকে অচল করে দেয়ার হুমকি। ইউকের বরাহগুলো এখনো স্বপ্ন দেখছে তাদের নেতারা মুক্ত হয়ে আসবেন। এনে দেবেন তাদের কোটি কোটি টাকার ইসলামি ব্যাঙ্কের মুনাফা।

তাদের সাহস দেখে আমাদের মাথায় আগুন ধরে যায়। আমাদের শহীদ মিনার, আমাদের শহীদের রক্তে আমাদের বীরাঙনাদের সম্ভ্রমবিনিময়ে গড়া শহীদ মিনারে তারা জুতা মাড়িয়ে ওঠে। বাংলাদেশের নামে তাদের জারজ পাকি সন্তান নেতাদের মুক্তির জন্য স্লোগান দেয়। শাহবাগের সাথে একত্মতা ঘোষনা করে যেই ছেলেটি গিয়েছিল আলতাব আলী পার্কে তাকে কুত্তার বাচ্চা বলে গালি দেয়, যেই মেয়েটি তাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অবিচল ছিল দাবী আদায়ের পক্ষে তাকে চিৎকার করে বলে পতিতা। আর ওদিকে জামায়াত নেতারা ইউকের বাংলা টিভিগুলোয় গুছিয়ে সাক্ষাৎকার দেন। মিডিয়া অনেক ক্ষণ ধরে তাদের কথা শোনে, পুরো জাতিকে শোনায়। স্বাধীনতার পক্ষের যেই মেয়েটি তাদের বলছিল তাদের অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে, মিডিয়া জামায়াত কর্মীদের সেই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার সাহস পর্যন্ত পায় না।

তারা আবার আমাদের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনার কলংকিত করার পরিকল্পনা করেছ আজ। “ফ্রি মওলানা সাঈদী ফেডারেশন ইউকে” নামের সংগঠনের ব্যানারে রাজাকারের দল আজ বিকেল চারটায় শহীদ মিনারে জমায়েত হবে সাঈদী নামের কুৎসিত তেলাপোকাটার মুক্তি চেয়ে।

ইউকের বাংলা মিডিয়ার সদস্যরা, আপনারা তো বাংলাদেশেরই সন্তান। আপনারা সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে আজকের প্রোগ্রামের বিজ্ঞাপন দেখান। কেন? আপনাদের কি ন্যূনতম চক্ষুলজ্জা নাই? আপনাদেরই সহকর্মী শাহবাগ আন্দোলনের খবর করার জন্য বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছে দেশে, আর আপনি প্রেসের স্বাধীনতার নাম করে জামায়াতের টক শো উপস্থাপনা করেন। তাদের মিথ্যাচার করার সুযোগ প্রশস্ত করেন। এ কি সৎ সাংবাদিকতা? এই কি আপনাদের শিক্ষা?

আপনাদের প্রতি অনুরোধ করি, দেশের মানুষের প্রাণের ডাক শুনুন। দয়া করে সাঈদীর মতো খুনীর মুক্তি দাবী করে আয়োজিত প্রোগ্রাম বয়কট করুন। আমাদের শহীদ মিনার কে অপমানিত করার সাহস রাখে যেই হায়েনাগুলো, সেই হায়েনাদের প্রোগ্রামের রিপোর্ট করার থেকে বিরত থাকুন।

আজ হোক ইউকেতে আমাদের বাংলা মিডিয়ার আবার জন্ম নেয়ার দিন। এই দিনে পত্রিকার সাংবাদিকেরা আজকের সম্মেলনের ছবি, খবর ছাপাবেন না। টিভি মিডিয়ার কেউ যাবেন না শহীদ মিনারে এই রিপোর্ট কাভার করতে। জামায়াত যদি জোর খাটায় এই রিপোর্ট প্রচারের জন্য সেই জোর খাটানোর ভিডিও প্রকাশ করে দিন টিভিতে অনলাইনে ইউটিউবে।

এইটুকু অনুরোধ রাখুন আমাদের।

যদি না রাখেন ভাইয়েরা আমার, যদি তারপরও নিজের আত্মা বিক্রি করে দিয়ে যান এই অনুষ্ঠানের রিপোর্টিঙে, অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জানিয়ে দিতে চাই, আমরা এই বেহায়াপনা সহ্য করে নেবোনা। আমরা চিনে নিবো, জেনে নিবো কে এই সাংবাদিক, কোন সেই টিভি চ্যানেল। তারপর আমরা শাহবাগে পৌছে দিব সেই নাম।

শাহবাগের একটা ছোট্ট মাইক্রোফোন আপনার নাম আপনার পেশা ঠিকানা সব পৌছে দেবে লক্ষ কোটি মানুষের কাছে। পত্রিকায় আপনার পুরো ঠিকুজি আসবে। আসবে অনলাইনে। পুরো বাংলাদেশ জানবে কী করে টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছেন আপনি। পরেরবার দেশে গেলে ঘৃণাভরা বিস্ময়ভরা অনেকগুলো চোখ আপনাকে বারবার বলবে আপনি একজন বিশ্বাসঘাতক। গুগল আপনাদের নাম বিশ্বাসঘাতক হিসেবে মনে রেখে উগরে দেবে প্রতিটি সার্চ রেজাল্টে।

না। আপনাদের হেয় করা বা ভয় দেখানোর জন্য এই লেখা না। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, আপনি লোভের কাছে বিক্রি হতে চান না। আপনি এই অনুষ্ঠানকে বর্জন করবেন। আপনি আমাদেরই লোক। আপনি সেই মারা যাওয়া ত্রিশ লাখেরই সন্তান।

এখন সময় জামায়াত কে ‘না’ বলার। আসুন সাংবাদিক ভাইয়েরা। আমরা জামায়াত কে ‘না’ বলি।


আমারব্লগ তথ্যকেন্দ্র
www.amarblog.com


মন্তব্য

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

চলুক

PaMaALe এর ছবি

অনকে ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। আমরা যারা যুক্তরাজ্যে বাস করি তাদেরও উচিত এর তীব্র প্রতিবাদ করা

আলতাইর এর ছবি

সংবাদ বিক্রি হয় জানতাম। সাংবাদিকতাও দেখি এখন বিক্রি হয় রেগে টং

পুতুল এর ছবি

ইউকের বঙ্গ সম্বাদিকগো এই সব কইয়া লাভ নাই। তারা মোটামুটি সবাই ছুগু।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

আপডেটঃ

স্যালুট বিলেতের কিছু সংবাদ মাধ্যম যারা বর্জন করেছেন লন্ডনে রাজাকার সাইদী মুক্তি পরিষদ নামের একটি সংগঠনের আহুত গণ সমাবেশ। আমরা বাঙালি সংকটে সংগ্রামে মোরা হতে পারি সব এক। সে তো ইতিহাস সাক্ষী, ৭১ সাক্ষী, ৯০ সাক্ষী আর সাক্ষী জেগে থাকা প্রজ্জলিত শাহবাগ। জয় বাংলা।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলা টিভি ২ মিনিট ক্লিপ দেখিয়েছে। অন্য টিভিতে এখনো কোন কাভারেজ দেখা যায় নাই।

-

আমারব্লগ ডট কম তথ্য কেন্দ্র

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।