বাংলাদেশ ও হিন্দু সম্প্রদায়

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১০/০৪/২০১৩ - ১:২২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে সংখ্যার দিক থেকে সংখ্যালঘু বলা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের নেতা সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর দেশব্যাপী এই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। গত এক মাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের ১৮৭টি বাড়িঘর ও ১৬২টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১০৮টি মন্দিরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং ১১৩টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এতদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও বাংলাদেশ সরকার এইসবের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংঘটন বলেছে ভাঙা মন্দির গুলো আবার ঠিক করে দেবে। এই মন্দির গুলো যে পুনরায় ভাঙা হবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? মন্দির গুলো একদিন ঠিক করা হবে। কিন্তু মনের ভিতরে যে দাগ থেকে গেল সেটা মুছবে কি ভাবে? আমরা মন্দির ঠিক করার জন্য অর্থসহযোগিতা চাই না, আমরা চাই মন্দির ভাঙার সাথে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। যাতে আর কেউ মন্দির ভাঙার দুঃসাহস দেখাতে না পারে।

বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের ধর্ম পালনের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪১ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের এই অধিকার কি শুধু সংবিধানের পাতায় সীমাবদ্ধ?

কোনো ধর্ম কী শেখায় অন্য ধর্ম বিশ্বাসের ওপর আঘাত করতে? হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র মন্দির ভাঙা হিন্দু ধর্মের ওপর কি আঘাত নয়? হিন্দুদের কি কোনো ধর্মীয় অনুভূতি নাই? নাকি হিন্দুদের কি কোনো ধর্মীয় অনুভূতি থাকতে পারে না!

অনেকে অভিযোগ তোলে হিন্দুরা বাংলাদেশ থেকে উপার্জন করে বিদেশে বিশেষ করে ভারতে পাঠিয়ে দেয়। এতে নাকি বাংলাদেশের অর্থনীতি সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের দেশ ত্যাগ করার কারন বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা। হিন্দু বলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, সরকারি ক্ষেত্রে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ দেয়া হয় না। চাকুরীক্ষেত্রে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি হয় না। বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৯(১) ও অনুচ্ছেদ ২৯(২) অনুযায়ী বাংলাদেশের সকল নাগরিকের যোগ্যতা অনু্সারে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অধিকার আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের এই অধিকারও কি শুধু সংবিধানের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকবে? হিন্দু হলে বাসা ভাড়া পাওয়া খুব কষ্টকর। সরকার পরিবর্তন হলে কিংবা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হলেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নেমে আসে সীমাহীন অত্যাচার।

স্বাধীন ভাবে ধর্ম পালনে বাধা, নিরাপত্তাহীনতা, হিন্দু বলে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার কারনে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ আজ দেশান্তরী হচ্ছে।

বিডি টাইগার


মন্তব্য

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বাংলাদেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল মনে করে এই সম্প্রদায় তাদের বিরুদ্ধ দলের ভোটব্যাংক। তাই তারা চায়, এই সম্প্রদায়টি ভারতে চলে যাক। আর এই সম্প্রদায়টি যেই দলের ভোটব্যাংক সেই দলটি মনে করে এদেরতো ভোট দেওয়ার অন্য কোন বিকল্প নেই, তাই তারা বরং মুসলিম জনগোষ্ঠির ভোট হেফাজতে বেশী আগ্রহী।
বুঝলেন কিছু !
আন্তরিকভাবে দুঃখ ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। এ ছাড়া আমি আর পারিই বা কী !

অতিথি লেখক এর ছবি

ভোটব্যাংকের এই রাজনীতি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছি। আমরাও এই ক্ষেত্রে অসহায়। আপনার মত কিছু মানুষ সহমর্মিতা নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে এই দেশে এখনো টিকে আছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।