একটি জন্ম, কিছু উপলব্ধি এবং মা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১২/০৫/২০১৩ - ১১:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঠিক মনে নাই, সম্ভবত ২০০৮/৯ এর দিকে হবে। আমার বড় বোন একটি ফুটফুটে ছেলের জন্ম দিল, জন্ম দিল আমাদের পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের। আমার বোনের বাসা আমাদের খুব কাছাকাছি হওয়াতে আমরা সুযোগ পেলাম আমার ভাগিনার যত্ন আত্তি করার। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, আমার ভাগিনা তার ছোট ছোট হাত পা নাড়ানাড়ি করে, কখনো হাসে, কখনো কাঁদে, আর অবাক দৃষ্টিতে তার আশেপাশের জগতটাকে দেখে। এর বাহিরে আর কোন কিছুই সে করে না। আমার মা আর বোন মিলে তার সব কাজ করে দেয় – তাকে খাওয়ায়, পরায়, গোসল করায়, খেলে, অর্থহীন সব কথা বলে, আদর করে ডাকে, ঘুম পাড়ায়, তার সবকিছুই করে দেয়। তারা ঘুমায় না, খায় না, নিজের প্রতি তাদের খেয়াল নেই, তাদের সারা জগত আমার ভাগিনাকে নিয়ে। আমি দেখলাম আমার বোন আর মা মিলে তাকে মানুষ করছে, বড় করছে, তাদের কোন ক্লান্তি নাই, কোন অভিযোগ নাই, আছে এক বুক ভালোবাসা, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।

তখন একদিন আমার উপলব্ধি হলো, আমিও একদিন আমার ভাগিনার মতো ছিলাম, আমার জন্য আমার মা (এবং সম্ভবত আমার নানী) একই রকম কষ্ট করেছে। জীবনে একটা সময় পর্যন্ত আমি শ্বাসকষ্ট ছিল, আমার সহজ সরল মা হয়ত বুজতে পারেনি যে শ্বাসকষ্ট সহজে সারে না। তাই সে আমাকে প্রচুর ডাক্তার, কবিরাজ, হুজুর এর কাছে নিয়ে গেছে – যদি তার ছেলের কষ্টটা একটু কমে। মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্টটা মারাত্মক বেড়ে যেত, আমার মা আমার সেবা করত আর অসহায় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকত, কারণ শ্বাসকষ্ট একবার উঠলে টা কমতে সময় নিত। আমার সাইনাসেও সমস্যা ছিল, সেটাও ছিল মায়ের উৎকণ্ঠার আরেক কারণ। একবার আমার ম্যালেরিয়া হয়েছিল, আমাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি হতে হয়েছিল। আবছা আবছা মনে আছে, আমাকে নিয়ে আমার মায়ের হাসপাতালে থাকা। কিন্তু মা কোনদিন অভিযোগ করেনি।

তার আগে যদিও জানতাম, তারপরও আমার ভাগিনাকে দেখে আরেকবার উপলব্ধি করেছিলাম মা কি জিনিস। মনে আছে, ঠিক করেছিলাম, মাকে আর কোনদিন কষ্ট দিব না। কিন্তু আমার মতো একজন সাধারণ এবং সীমাবদ্ধ মানুষের পক্ষে সম্ভব ছিলনা কথাটা রাখা। মাকে তারপরও কষ্ট দিয়েছি এবং দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আজও মা আমার কষ্টে ব্যথিত হয়, আমার কিছু হইছে শুনলে নাওয়া খাওয়া ভুলে যায়। আজও মা আমার দিকে সেই একইরকম মমতা নিয়ে তাকায়, সে দৃষ্টিতে আমি ভালোবাসা দেখি, নিঃস্বার্থ মায়ের ভালোবাসা। অনুভব করি যোগ্যতা-হীন অসম্ভব ভাগ্যবান একটি মানুষ আমি।

আল্লাহ এর কাছে করজোর মিনতি করি, আল্লাহ যেন আমাকে শেষ বয়সে মায়ের (এবং বাবার) সেবা করতে দেয়, তাদের খুশি এবং সুখী রাখতে পারি। যে ভালোবাসা পেয়েছি, তার কিয়দংশ যেন ফেরত দিতে পারি।

-- ওসমান গনি


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।