কুলাঙ্গার: ইটালো কালভিনোর গল্প

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ২২/০৯/২০১৩ - ৫:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটা দেশ ছিল যেখানে সবাই ছিল চোর। প্রতি রাতে সবাই চাবির গোছা আর লন্ঠন নিয়ে বের হত চুরি করতে এবং প্রতিবেশীর বাড়িতে এমনভাবে চুরি করত যেন একটা আলপিনও বাদ না থাকে। চুরি করতে কোন অসুবিধাই হতনা। কারণ সবাই যে চুরি করতে বাড়ির বাইরে!চুরি টুরি করে সবাই যখন বস্তা ভর্তি চুরির মাল নিয়ে সকাল বেলা বাড়ি ফিরত দেখা যেত তাদের নিজেদের বাড়িও পুরো খালি হয়ে গেছে!

সবাই তাই খুব সুখেই ছিল। কারোর কোন জিনিস খোয়া যেতনা, কারণ সবাই সবার থেকে চুরি করত। ব্যাবসা বাণিজ্যও চলছিল খুব ভালো, কারণ ক্রেতা আর বিক্রেতা একে অপরকে ঠকাত। ওই দেশের সরকারও ছিল একটা অপরাধী সংগঠন। সরকার জনগণের টাকা চুরি করত আর জনগণ সরকারি সম্পদ চুরি করত। সরকারের ছিলনা কোন জবাবদিহিতা। জনগণও সরকারি আইন কানুনের থোড়াই কেয়ার করত।
সবার জীবন চলছিল খুব সুন্দরমত, দেশে কোন গরিব ছিলনা কোন ধনীও ছিলনা।

কিন্তু একদিন এই দেশে আসলো একজন খুব সৎ মানুষ। কেমন করে আসলো কে জানে!! সেই লোকটি রাতে চুরি করতে বের হলনা। তার বদলে সে একটা আরাম কেদারায় বসে ধূমপান করতে বসে গেল একটা উপন্যাস হাতে।

চোরেরা রাতের বেলা ওই সৎ লোকের বাড়িতে এলো কিন্তু বাড়িতে আলো জ্বলতে দেখে ফিরে গেলো।

পরদিন কিছু লোক এসে লোকটাকে বোঝাল যে সে যদি রাতের বেলা বাড়ি থেকে বের না হয় তবে একটা পরিবার না খেয়ে থাকবে। তারা বলল যে, লোকটা কিছু না করে বসে থাকতে পারে কিন্তু অন্যদেরকে বসে থাকতে বাধ্য করতে পারে না।
লোকটা ব্যাপারটা বুঝল। তাই সে পরদিন রাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। কিন্তু সে কোন বাড়িতে চুরি করলনা। তার পরিবর্তে সে নদীর ধারে গেল এবং সাঁকোর উপর থেকে পানির চলাচল দেখে সকালে বাড়ি ফিরল। আর বাড়ি ফিরে দেখল তার বাড়ি থেকে সবকিছু চুরি হয়ে গেছে।

এক সপ্তাহের মধ্যে লোকটা পুরো ফকির হয়ে গেলো। এমনকি তার কাছে খাওয়ার জন্যও কিছু থাকলো না। লোকটা কাউকে দোষ দিতে পারলনা, কারণ তার এই অবস্থার জন্য সে নিজেই দায়ী।

কিন্তু আসল সমস্যা শুরু হল অন্য যায়গায়। লোকটা চুরি না করায় একটা বাড়িতে চুরি হলনা। ওই বাড়ির লোকজন চুরি টুরি শেষে ফিরে এসে দেখল তাদের বাড়িতে কিছুই চুরি যায়নি। তারা অনেক ধনী হয়ে গেল। তারা আর চুরি করতে চাইলনা।

আবার আরেক বাড়ির লোকজন ওই সৎ লোকের বাড়ীতে চুরি করতে গিয়ে দেখল ওই বাড়িতে কিছুই নেই। এই লোকগুলো গরিব হয়ে গেলো।
ধনী লোকগুলো এরপর চুরি করতে চাইলনা। বরং ওই সৎ লোকটার মত নদীর ধারে বেড়াতে গেলো। ফলে কিছু লোক আরও বেশী ধনী হয়ে গেলো। ক্রমাগত আরও কিছু লোক গরিব হয়ে গেলো।

তারপর ধনী লোকেরা দেখল তারা যদি সন্ধ্যা বেলা চুরি করতে বের হয় তবে তারা আবার গরিব হয়ে যাবে। তারা ভাবল-“ কিছু গরিবকে চুরি করার কাজে নিয়োগ দিলে কেমন হয়!!”। সুতারাং তারা গরিবদের সাথে চুক্তি করলো, বেতনভুক্ত চোর নিয়োগ দিল এবং কাউকে দিল চুরির ভাগ।

এর ফলে ধনী আরও ধনী হল গরিব হল আরও গরিব।
কিছু ধনী এতটাই ধনী হল যে তাদের আর চুরি করার দরকার ছিলনা বা চুরি করানোর জন্য কোন গরিবকে নিয়োগ দেয়ার দরকার ছিলনা। কিন্তু তারা যদি চুরি করা বন্ধ করে তবে তারা আবার গরীব হয়ে যাবে। কারণ গরিবরা তাদের কাছ থেকে চুরি করে।
সুতারাং তারা সবচাইতে দরিদ্রদেরকে তাদের ধনসম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব দিল। গরিবদের নিয়ে তারা গড়ে তুলল পুলিশ বাহিনী। তারা তৈরি করলো কারাগার।
এভাবেই সেই সৎ লোকের আবির্ভাবের কয়েক বছরের মধ্যে কেউ আর চুরি করা নিয়ে কথা বলল না, তারা কথা বলত ধনী আর গরিব নিয়ে। যদিও তারা সবাই তখনও চোরই ছিল।

সেই সৎ লোকটার কথা কারোর আর মনে থাকলো না। লোকটা কিছু না খেতে পেয়ে মরে গিয়েছিল।
......................................................................................................................................................................................

তাহসিন রেজা


মন্তব্য

মন মাঝি এর ছবি

ভ্রাতা, সচলেই এই পোস্টটা একটু দেখুন।

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় মন মাঝি আপনার খুব চমৎকার অনুবাদটি আমার চোখ এড়িয়ে গেছে গুরু গুরু । আপনার চমৎকার লেখাটি পড়ে এখন আমার কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে। আমি কিন্তু আপনার লেখার একজন গুনমুগ্ধ পাঠক।

মন মাঝি এর ছবি

আরে না, এটা কোন ব্যাপার না! লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই। আমারও অন্তত দু'বার হয়েছে - একদম প্রথম গল্পানুবাদটাই ইন ফ্যাক্ট। এমন তো না যে আপনি আমার লেখা প্ল্যাজিয়ারাইজ করেছেন। আমরা দুজনেই অন্য এবং একই লেখকের লেখা অনুবাদ করেছি - এটুকুই, এবং চাইলে সেটা আরও দশজনও করতে পারেন। কোনই অসুবিধা নেই। আসল বিষয়টা নিজের দিক থেকে। যেমন, আমি চাইবো না একই ফোরামে একই পাঠকগোষ্ঠীর কাছে কিছুদিন আগেই একবার পড়ে ওঠা একটা বাসি গল্প আবারও পরিবেশন করতে, যদি না ভীষণ ভিন্ন রকম কিছু করতে পারি। আমি চাইবো নতুন কিছু দিতে। অনুবাদের ক্ষেত্রে এজন্যে আমি সাধারণত অবিখ্যাত লেখকদের ইন্টারেস্টিং লেখা অনুবাদ করতে ভালবাসি, আর বিখ্যাত লেখক হলে গুগলের উন্নত অনুসন্ধানে গিয়ে সচলায়তনের ডোমেনে মূল লেখকের নাম দিয়ে একটা সার্চ দিয়ে দেখে নেই। তবে সেটাও যে সবসময় করতে মনে থাকে তাও না!

ও হ্যাঁ, আপনার অনুবাদটাও কিন্তু ভাল হয়েছে। চলুক
নীচে এক লহমার কথা ধার করে আমিও বলি - "ঝাঁপিয়ে লিখতে থাকুন। সচলের প্রকাশিত লেখাগুলোও পড়ুন। আপনার কাছ থেকে অজানা/অপঠিত লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।"

চিয়ার্স! হাসি

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

চিয়ার্স! প্রিয় মন মাঝি। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লেগেচে।

শাকিল আরিত

এক লহমা এর ছবি

জানি, সকলের সব লেখা মনে রাখা সম্ভব নয়। আবার এক-ই মূল লেখা, বিভিন্ন অনুবাদক বিভিন্ন স্বাদের রূপান্তর ঘটান। অনেক সময় ভিন্ন প্রয়োজনেও একই অনুবাদ ভিন্ন ভিন্ন লোকে করে থাকেন। সম্প্রতি গ্রীক/রোমান মিথলজীর একটি গল্প নিয়ে এরকম ঘটেছে। কিন্তু নিছক-ই অনুবাদের প্রেরণায় বর্তমান লেখাটির আসার মত ব্যাপার না ঘটলেই ভাল লাগত। মডু-দাদা-দিদিরা কি এই বিষয়ে কোন 'পলিসি' অনুসরণ করেন?
যাই হোক, নুতন লেখকের অনবধানতাতেই অর্থাৎ মনমাঝি-ভাইয়ার কিছুদিন আগের চমৎকার অনুবাদটি বর্তমান অনুবাদকের না পড়া থাকার ফলেই এ ঘটনাটি এক্ষেত্রে ঘটেছে বলে মনে হয়।
লেখা ঝরঝরে তবে মনমাঝির লেখাটি আরো মনোগ্রাহী লেখেছিল। সে কিছু ব্যাপার না। ঝাঁপিয়ে লিখতে থাকুন। সচলের প্রকাশিত লেখাগুলোও পড়ুন। আপনার কাছ থেকে অজানা/অপঠিত লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ এক লহমা

তাহসিন রেজা

অতিথি লেখক এর ছবি

দুটো অনুবাদ পড়লাম।মন মাঝি ভাইয়ের অনুবাদ টা তুলনামূলক সহজ বোধগম্য হয়েছে,তবে সেটা মানে খুব একটা ভিন্নতা নেই।রেজা ভাইয়ের কাছে নতুন নতুন গল্পের অনুবাদ আশা করছি,আপনার অনুবাদও ভালো।ভালোথাকবেন।

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

তাহসিন রেজা

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

লিখতে থাকুন। অনুবাদে আপনার আগ্রহ এবং দক্ষতা আছে মনে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে "কমন" পড়ে যেতেই পারে, তাই বলে উৎসাহ হারাবেন না যেন - নতুন নতুন অনুবাদ করতে থাকুন। আর পড়তে থাকুন।
সচলা‌‌য়তনে স্বাগতম।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

না লিখলেও সচলের খুব নিয়মিত পাঠক আমি। গোগ্রাসেই পড়ি আপনাদের লেখা। হাসি

তাহসিন রেজা

স্পর্শ এর ছবি

খুব ঝরঝরে অনুবাদ।
ইন ফ্যাক্ট পড়ার সময় অনুবাদ বলে মনেই হয় না! আমার পড়া এ গল্পের অন্য সব অনুবাদের মধ্যে সেরা। উত্তম জাঝা!

আপনার থেকে এমন আরো অনেক পোস্ট পাবার আশা রইলো। চলুক


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মন্তব্যে অনুপ্রানিত হলাম। লইজ্জা লাগে অনেক অনেক ধন্যবাদ স্পর্শ হাসি

তাহসিন রেজা

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আরে চলুক, চলুক।

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

তাহসিন

এস এম নিয়াজ মাওলা  এর ছবি

চলুক, চলুক- থেমে থাকা যাবে না--

-নিয়াজ

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তাহসিন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।