গৃহশিক্ষক-১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৩/০৩/২০১৪ - ১০:৪২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গৃহশিক্ষক। (১)।

অনেক কায়দা করে রাফসানের আব্বার কাছ থেকে আগের দুই মাসের বেতন আদায় করলাম। আজব মানুষ। প্রথম যেদিন পড়াতে গেলাম সেদিন ছাত্রের থেকে ছাত্রের পিতার আগ্রহ বেশি।

- কোথায় পড়েন?
- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
- কুন সাবযেক্ট?
- এগ্রোটেকনলজী।
- সেটা আবার কোন সাবযেক্ট? কি পড়ায় তাতে?
- এগ্রোনোমি, বায়োটেকনোলজী, বায়োকেমিষ্ট্রি, ষ্ট্যাটিস্টিক্স, সয়েল সাইন্স, !!!!
এক নিঃশ্বাসে বলে গেলাম।
- বুঝলাম না কিছুই!
- আপনার বুঝার কথা না। চার বছর ধরে পড়ে অনেক বাঘা ছাত্রও বুঝেনা আর আপনিতো কেবল শুনলেন।
- তা আপনি কি ওকে ঠিক মত পড়াতে পারবেন?
- আজকেতো শুরু করলাম মাত্র! আজকেই জিজ্ঞাসা করলেন? তবে আজকেই সিলেবাস শেষ করে দিবো?
- না মানে কইলাম আর কি! আগের টীচার পারেনাই। এজন্যে আপনাকে ডাকা।
- আগের টীচারের গল্প আমাকে বলে লাভ নেই। আমি আমার মত পড়াই।

বুঝলাম কঠিন চিড়িয়া ছাত্রের বাপ। আমি তাকে একটা লিষ্ট ধরিয়ে দিলাম। সেখানে আমার চাহিদা এবং কিছু জিনিষের কথা লেখা।

- এত্তগুলা খাতা কেনো? আর একদিন পর একদিন কেনো পড়াবেন?
- আমি কারো কথা শুনে পড়াই না আংকেল। আপনার না পোষালে বলেন। চলে যাই।
- না না ঠিক আছে। আমি কিনে দেবো।
- জি ধন্যবাদ। মাসের পাঁচ তারিখে বেতন দিয়ে দেবেন। আর এখন আপনি যেতে পারেন। আমি ওকে পড়ানো শুরু করি।

ছাত্রের বাপ গজ গজ করতে করতে চলে গেলো। আমি ছাত্রের দিকে তাকালাম। ছিপেছিপে ফর্সা একটি ছেলে।

-তোমার নাম ?
- রাফসান।
- গুড। কি কি পড়তে চাও?
- ম্যাথ, হায়ার ম্যাথ, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, বায়োলজি।
- ওকে গুড। আমি রুটিন করে দেবো আর আমরা সেভাবেই এগোতে থাকব।

একদিন পড়ে আবার ছাত্রের বাসাতে। যথারীতি ছাত্রের অতিউৎসাহী পিতা বসে আছেন ছাত্রের চেয়ারে। রাফসান বিছানায় বসে ঝিমাচ্ছে।

- আসসালামুআলাইকুম চাচা। ভালো আছেন?
- ওলাইকুম। দেরী করলেন যে?
- আমি ঠিক সময়মত এসেছি। চাচী চাবি খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাই গেট দেরীতে খুলেছেন।
- আরো আগে আসবেন। একটু পাঞ্চুয়াল হোন।
- সরি আংকেল, আমিতো রুপসা ট্রেন চালাতে আসিনি। এসেছি ছাত্র পড়াতে। বেটার আপনি দশমিনিট আগে গেট ওপেন করে রাখবেন।
প্যারাটা একটু বেশিই হয়ে গেলো। উনি চোখ কুতকুতে করে আমার দিকে তাকালেন। যেন চোখের ভেতরে গরম সয়াবিন তেলে আমাকে ভেজে খাচ্ছেন। আমি আবার সুযোগ নিলাম ভোজ্য হবার।
- আপনি রোজ রোজ এভাবে ওর চেয়ারে বসে থাকবেন না। আমি পছন্দ করিনা। আপনার কথা থাকলে আমাকে কল দেবেন অথবা পড়ানো শেষ হলে আমাকে জানাবেন। আমি এগুলো পছন্দ করিনা।
- ওকে ওকে বুঝছি।

আংকেল চলে গেলেন। রাফসান উঠে এসে চেয়ারে বসলো। ছাত্রের চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ।
- স্যার কিছু মনে করবেন না। উনি মানুষটাই এমন। ঘ্যান ঘ্যান করতেই থাকে।
- ইটস ওকে। দেখাও তোমার হোম ওয়ার্ক।

এক অংক পাঁচবার করে করতে হবে। এক প্রশ্ন পড়ে মুখস্ত করে পাঁচবার লেখতে হবে। পড়ার বাপও মুখস্ত হয়ে যাবে।

-স্যার, পদার্থ প্রশ্ন দুইটা লিখেছি। পাঁচবার লেখতে যেয়ে হাত ব্যাথা হয়ে গেছে। কমালে হয়না?
- উহু, বেটার সময় নাও। দেখে লেখছো নাকি দেখে লেখছো?
- যে টেকনিক আবিস্কার করছেন স্যার, আমার আব্বাও দুইটা প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করে ফেলেছে।

আমি হেসে ফেললাম। খুব কঠিন সময়ে পাওয়া টীউশনি এটা। একেবারে অন্ন সংস্থানের বিষয় জড়িত। খাজা হলের ক্যান্টিনের দেলোয়ার মামা প্রতিদিন ঠিক মশারির ভেতরে ঢোকার সময়ে ডাক দেন।

- সুফল মামা আছেন? সাড়ে সাতশো হয়ে গেলো। টাকাটা দেবেন না?

সাব্বির আমার দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকে। সেও আমার কাছে টাকা পায়। তবে অংকটা আমরা দুইজনেই ভুলে গেছি। আমি আস্তে করে পেছনের বারান্দায় চলে যাই। হলের পেছনের এই জায়গায় বড় বড় আকাশ ছোয়া গাছের সারি। একটা ঠান্ডা বাতাস গায়ে এসে লাগে। আজকে বোধহয় পুর্ণিমা। গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে জোছনার আলো। হাত বাড়িয়ে ধরতে গেলাম; ফসকে বের হয়ে গেলো। হুমায়ূন স্যারের থিওরীর মত যদি জোছনা গিলে খাওয়া যেত? রাতে খাওয়া হয়নি। খিদে পেলে যদি জোছনা খাওয়া যেত তাহলে বাকির ফোল্ডারের সংখ্যাগুলো বড় হতোনা।

চলবে!!!!

shah Waez


মন্তব্য

মহিউদ্দিন ডালিম এর ছবি

একটা সময় বেশ টিউশন দিয়েছি । আজও কিছু টাকা পাই কয়েকজন ছাত্রের বাপ থেকে।
লেখার বাকিটা তারাতারি চাই ।

অতিথি লেখক এর ছবি

পেয়ে যাবেন মহিউদ্দিন ডালিম ভাইয়া। ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য হাসি ভাল থাকবেন হাসি

Shah Waez

অতিথি লেখক এর ছবি

পুলাতো হাগল হই যাইব! হাসি পাঁচ বার লেখা! হো হো হো
চলুক

দেব প্রসাদ দেবু

অতিথি লেখক এর ছবি

দেব প্রসাদ দেবু গড়াগড়ি দিয়া হাসি ধন্যবাদ দাদা।

shah waez

দীনহিন এর ছবি

বুঝলাম কঠিন চিড়িয়া ছাত্রের বাপ।

মাস্টার সাহেবকেও চিড়িয়া মনে হইল, ক্ষেত্রবিশেষে কঠিনতর।
গল্প ও স্মৃতিচারণ দুটো ট্যাগ-ই থাকাতে, কতটুকু গল্প ও কতটুকু স্মৃতিচারণ, তা বোঝার উপায় নাই।
গল্প বা স্মৃতিচারণ যা হউক না কেন, বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি স্পষ্ট।
তবে লেখার স্টাইলটি কিন্তু উপভোগ্য।

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

দীনহিন...আসলে এটা আমার জীবনের একটি ঘটে যাওয়া অংশ। আর সাথে কিছুটা গল্প মেশানো হয়েছে। এই অর্থে স্মৃতিচারণ এবং গল্প। অনেক ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্যে। হাসি

শাহ্‌ ওয়ায়েজ(shah waez)

আয়নামতি এর ছবি

টিচার দেখি এক্কেবারেই আদবকায়দার ধার ধারে না! যেকারণে টিচারের সামনে বাবা সম্পর্কে ছাত্র অবলীলায়

উনি মানুষটাই এমন। ঘ্যান ঘ্যান করতেই থাকে।

এমন শ্রদ্ধাহীন বাক্য ঝাড়ে!
একবার আংকেল একবার চাচা না ডেকে একটা ডাকেই স্হির হওয়া ভালো। বেশ কিছু টাইপো আছে, এক জায়গাতে 'না' না বসায় পুরো বাক্যের অর্থ ভিন্ন হয়ে গেছে। এখন অবশ্য বলে লাভ নেই এডিট করার স্বাধীনতা পাবেন যখন তখন ঠিক করে নিবেন। এখন লেখা দেবার আগে বার দুয়েক পড়ে নিবেন প্লিজ! দুটো ধারাবাহিক একসাথে শুরু করলেন দেখা যাক ঘটনা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। লিখতে থাকুন। শুভকামনা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আয়নামতি...অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। হ্যাঁ, শ্রদ্ধার অভাব এখানে স্পষ্ট। আসলে একদম হুবহু এক্সপ্রেশন শুধু ভিডিও ক্যামেরা দিয়েই আনা সম্ভব ঠিক কীভাবে উনি আচরণ করতেন। আর এটা আমারই সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার স্মৃতিচারণ কিনা তাই হয়ত লেখাতেও ক্ষোভ ফুটে উঠেছে। ভুল আছে অনেক। আস্তে আস্তে ঠিক করে ফেলবো। লেখাটি পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি যে মনে রেখেছেন আমি আরেকটি গল্প শুরু করেছি সেটা দেখে খুব ভাল লাগলো। ভাল থাকবেন হাসি

শাহ্‌ ওয়ায়েজ।( shah waez)

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আপনার লেখার হাত ভালো। চলুক।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

অনার্য সঙ্গীত, ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটি পড়ে দেখার জন্যে। হাসি

Shah Waez (শাহ্‌ ওয়ায়েজ।)
Facebook

..............................................................................................
কোথাও নেই ঝুমঝুম অন্ধকার
তক্ষক ডাকা নিশুতিতে
রূপকথা শুনে শিউরে উঠে না গা
স্বপ্নে আমার শরীরে কেউ ছড়ায় না শিউলি ফুল
আলোর আকাশ নুয়ে এসে ছোঁয় না কপাল

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই, ভাল হয়েছে..

অতিথি লেখক এর ছবি

নামটা উল্ল্যেখ নাই। তবুও ধনবাদ ভাই। ভাল থাকবেন।

Shah Waez (শাহ্‌ ওয়ায়েজ।)
Facebook

..............................................................................................
কোথাও নেই ঝুমঝুম অন্ধকার
তক্ষক ডাকা নিশুতিতে
রূপকথা শুনে শিউরে উঠে না গা
স্বপ্নে আমার শরীরে কেউ ছড়ায় না শিউলি ফুল
আলোর আকাশ নুয়ে এসে ছোঁয় না কপাল

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই, ভালই লেখেন। চালিয়ে যান। best of luck...

Adnan Abed

অতিথি লেখক এর ছবি

Adnan Abed, ধন্যবাদ ভাইয়া।

Shah Waez (শাহ্‌ ওয়ায়েজ।)
Facebook

..............................................................................................
কোথাও নেই ঝুমঝুম অন্ধকার
তক্ষক ডাকা নিশুতিতে
রূপকথা শুনে শিউরে উঠে না গা
স্বপ্নে আমার শরীরে কেউ ছড়ায় না শিউলি ফুল
আলোর আকাশ নুয়ে এসে ছোঁয় না কপাল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।