পাকিস্তানের অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতা কি অপরাধ ছিল?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২৮/০৪/২০১৪ - ৬:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সবার জানা ঐতিহাসিক সত্যটা হচ্ছে ১৪ই অগাস্ট ১৯৪৭-এ গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ২৬শে মার্চ ১৯৭১-এর প্রথম প্রহরে ভেঙে পড়ে এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যূদয় ঘটে। ১০ই এপ্রিল ১৯৭১-এ মুজিবনগরে সরকার গঠন পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ গঠনকে বাস্তব করে তোলে এবং ও ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১-এ বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর নিকট পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের যাত্রাকে নিশ্চিত করে। ২২শে ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪-এ পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির মাধ্যমে পাকিস্তানের ভেঙে পড়ার বিষয়টি খোদ পাকিস্তান সরকারও মেনে নেয়।

বস্তুত অপারেশন সার্চলাইটের নামে ২৫শে মার্চ ১৯৭১-এর দিবাগত রাতে পাকিস্তানী বাহিনী বাংলাদেশের নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ করা মাত্রই পাকিস্তান রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক ভেঙে পড়া শুরু হয়ে যায় এবং মুক্তিযুদ্ধের সূচনাকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। পাকিস্তানী বাহিনীর এই নির্বিচার আক্রমণ, গণহত্যা, ধর্ষণ, ধ্বংসযজ্ঞসহ অব্যাহত অন্যান্য অপরাধের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ একটি যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ।

বাংলাদেশের অধিবাসীদের প্রায় সকলে মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করেছিল ও তাতে সক্রিয় সহযোগীতা করেছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহন করেন। কিন্তু অল্পসংখ্যক স্থানীয় অধিবাসী পাকিস্তানী বাহিনী ও পাকিস্তান সরকারের তৎকালীন কর্মকাণ্ডকে সহযোগিতা বা সমর্থন দিয়ে গেছে। এই সহযোগীরা পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে সাথে বা স্বউদ্যোগে বাংলাদেশের জনগণের ওপর আক্রমণ চালিয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ন্যায় জঘন্য অপরাধ করে গেছে। আবার কেউ কেউ এই ধরনের কার্যকলাপে জড়িত না থাকলেও পাকিস্তান সরকার ও পাকিস্তানী বাহিনীর প্রতি নৈতিক সমর্থন জ্ঞাপন করে গেছে।

একটা তিক্ত সত্য হচ্ছে এই যে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশের যে সমস্ত অধিবাসী পাকিস্তানী বাহিনী ও পাকিস্তান সরকারের তৎকালীন কর্মকাণ্ডকে সহযোগিতা বা সমর্থন দিয়ে গেছে তাদের কেউই অদ্যাবধি তাদের এহেন অবস্থান ও কর্মকাণ্ডকে ভুল বলে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি এবং এই ব্যাপারে তারা প্রকাশ্যে কোন প্রকার ক্ষমা প্রার্থনাও করেনি। এতে প্রতীয়মান হয় যে, তারা তাদের তৎকালীন ভূমিকাকে ভুল বা অপরাধ বলে মনে করে না। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, তাদের এই মনে করাটি কি ঠিক? প্রশ্নটিকে অন্যভাবে দাঁড় করালে বলা যায়, পাকিস্তানের অখণ্ডতার প্রতি তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা কি অপরাধ ছিল?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিলুপ্তির কারণগুলো নির্ণয়ের মাধ্যমে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানী বাহিনী ও পাকিস্তান সরকারের আচরণের নৈতিকতা নির্ণয়ের মাধ্যমে, পাকিস্তানের সহযোগী-সমর্থকদের ভূমিকা ও অবস্থানের যৌক্তিকতা নির্ণয়ের মাধ্যমে। ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়া যাক।

১. পাকিস্তানের অখণ্ডতা বিনষ্টের পটভূমি কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল এবং এর জন্য দায়ী কারা?

: পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার পটভূমি রচিত হবার সবচে’ বড় কারণ ছিল পাকিস্তানের উভয় অংশে সৃষ্ট বৈষম্য। অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, সামরিক, অবকাঠামোগত, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্র ও নাগরিক জীবনের হেন দিক নেই যে ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানকে পেছনে ফেলা হয়নি বা বঞ্চিত করা হয়নি। পাশাপাশি পূর্ব পাকিস্তানের উৎপাদন ও তা থেকে সৃষ্ট আয়ের বড় অংশ পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যয়িত হবার ফলে এক ধরনের অভ্যন্তরীণ শোষণের ঘটনাও ঘটেছিল। এই শোষণ ও বৈষম্যের ব্যাপারটি চলেছে টানা দুই যুগ ধরে। ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন দেশের দুই অংশের মধ্যকার এমন শোষণ ও বৈষম্য বঞ্চিতজনদেরকে ক্ষুদ্ধ করাটা স্বাভাবিক। তারওপর শোষিত-বঞ্চিত জনগোষ্ঠী যদি দেশের মোট জনসংখ্যার ৫৬% হয় তাহলে তাদের হতাশার পরিমাণও বিপুল হয়।

শুধুমাত্র শোষণ ও বৈষম্য নয়, পাকিস্তান রাষ্ট্রের এবং পশ্চিম পাকিস্তানের নাগরিকদের আচরণ পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের প্রতি যেমনটা ছিল সেটা একমাত্র ঔপনিবেশিক প্রজাদের প্রতি ঔপনিবেশিক প্রভুদের আচরণের সাথে তুলনীয়। পাকিস্তান রাষ্ট্র বা তার কোন সরকার (১৯৪৭-১৯৭১) না এই বৈষম্য দূর করার কোন চেষ্টা করেছিল, না তাদের আচরণে কোন পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছিল। সুতরাং একথা স্পষ্ট যে, পাকিস্তান রাষ্ট্রটি তার দুই অঞ্চলের নাগরিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ চালিয়ে গিয়ে নিজেই সমতা বিধানসংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় মূলনীতিগুলো লঙ্ঘন করেছিল। ফলে পাকিস্তানের অখণ্ডতা বিনষ্টের পটভূমি সৃষ্টির জন্য মূল দায়টি খোদ পাকিস্তান সরকারের ওপর বর্তায়।

১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের ওপর ভিন্ন ভাষাকে চাপিয়ে দেবার অপচেষ্টা, ১৯৬২ সালে গণবিরোধী শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দেবার অপচেষ্টা, ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের মৌলিক নাগরিক অধিকারসমূহ আদায়ের দাবী উত্থাপনের বিরোধীতা, ১৯৬৯ সালে ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগ তুলে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক নেতাদের নির্মূলের চেষ্টা – এগুলোর প্রত্যেকটি পাকিস্তান সরকারের পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের প্রতি বৈরী চরিত্রের স্বরূপ উদঘাটন করে। আরো লক্ষ্যণীয় যে, এই প্রত্যেকটি ঘটনায় পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকদের রাজপথের আন্দোলনে নামতে হয়েছে এবং পাকিস্তান সরকার তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করাসহ জেল-জুলুম চালিয়ে গেছে। অর্থাৎ, পাকিস্তান সরকার প্রতি পদে পদে পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের একথা বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে যে, পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের সমমর্যাদাসম্পন্ন নয় এবং তারা উপনিবেশমাত্র।

পাকিস্তান সরকারের এহেন আচরণের উল্লেখযোগ্য বিরোধিতা পশ্চিম পাকিস্তানভিত্তিক কোন রাজনৈতিক দল বা তাদের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ বা বুদ্ধিজীবিগণ করেনি। এটা প্রমাণ করে যে, পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের প্রতি পাকিস্তান সরকারের এই ঔপনিবেশিক আচরণের প্রতি তাদের নৈতিক সমর্থন ছিল। তাদের এই নিরব সমর্থন বা প্রতিবাদ না করাটা পাকিস্তানের অখণ্ডতা বিনষ্টের পটভূমি সৃষ্টিতে তাদের দায়ও তৈরী করে।

বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের পর থেকে অদ্যাবধি পাকিস্তান সরকার এই ব্যাপারে ভারতের ষড়যন্ত্র, হিন্দুদের চক্রান্ত, আওয়ামী লীগের গুণ্ডামী ইত্যাদি অলীক বিষয়কে দায়ী করে আসছে। ঐ দেশের পাঠ্যপুস্তকেও এইসব আষাঢ়ে গল্প পড়ানো হয়ে আসছে। এই মিথ্যাচারের একটি প্রমাণ দেয়া হচ্ছে পাকিস্তানের পঞ্চম শ্রেণীতে পাঠ্য ‘Pakistan Studies’ বই থেকেঃ

After 1965 war India conspired with the Hindus of Bengal and succeeded in spreading hate among the Bengalis about West Pakistan and finally attacked on East Pakistan in December 71, thus causing the breakup of East and West Pakistan.

এখানে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত গোটা ইতিহাসকেই বেমালুম লোপাট করে দেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের এই যুগে পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকদের কাছে পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চনার ইতিহাস; মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বিশদ তথ্য, দলিল, প্রতিবেদন পৌঁছে যাওয়া সত্ত্বেও তারা পাকিস্তান সরকারের বলা আষাঢ়ে গল্পগুলোই এখনো পর্যন্ত সমর্থন ও প্রচার করে যাচ্ছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নৃতাত্ত্বিক বা সাংস্কৃতিক পার্থক্য থাকলেও এই একটা ইস্যুতে তারা সবাই এক কণ্ঠ। অতি সামান্য কিছু ব্যতিক্রম আছে যা হিসেবে আসার মতো না। একটি রাষ্ট্রযন্ত্র ও তার সামগ্রিক জনগোষ্ঠী মিলে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে একটি মিথ্যাচারের চর্চ্চা ইতিহাসে বিরল একটি ঘটনা।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনায় পাকিস্তানের পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করার জন্য বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠিত হলেও দীর্ঘ দিন পর্যন্ত সেই কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। রিপোর্ট প্রকাশে সময় হলে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়া-উল-হক উভয়েই তাদের স্ব স্ব দফতর থেকে রিপোর্টের মূল কপি হারিয়ে গেছে বলে দাবি করে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েও তাদের এহেন মিথ্যাচার সত্যকে অস্বীকার করার ক্ষেত্রে তাদের জাতীয় চরিত্রকে নির্দেশ করে। পরবর্তীতে ঐ রিপোর্টের অংশ বিশেষ প্রকাশিত হলেও পুরো রিপোর্ট কখনোই প্রকাশিত হয়নি। বলাই বাহুল্য পাকিস্তান সরকার ঐ কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে দায়ী কারো বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। এভাবে পাকিস্তান সরকার তাদের সৃষ্ট কমিশনের বিচারে দায়ীদের রক্ষা করার মাধ্যমে পাকিস্তানের অখণ্ডতা বিনষ্টে এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সংঘটিত অপরাধসমূহের নৈতিক দায় প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিল।

২. পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার সুযোগগুলো কীভাবে হাতছাড়া হয়েছিল এবং এর জন্য দায়ী কারা?

: পাকিস্তান সরকারের সামনে তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার অনেক সুযোগ ছিল। ১৯৪৭-১৯৫৬ পর্যন্ত ব্রিটিশ ডোমিনিয়ন থাকার সময়কালেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি শোষণ ও বৈষম্যের সূচনা হয়। ডোমিনিয়নকালে গৃহীত বৈষম্যমূলক পদক্ষেপগুলো প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণার পর থেকেই শুধরে নেয়া যেত, কিন্তু তা করা হয়নি। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী কর্তৃক রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল পাকিস্তানের গণতন্ত্রের পথে চলার সুযোগটিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেয়। সামরিক শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক ও ঔপনিবেশিক আচরণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে পাকিস্তানের পক্ষে অখণ্ড রাষ্ট্র হিসেবে টেকার সম্ভাবনা কঠিন হয়ে পড়ে।

পাকিস্তান সরকারের কাছে দেশের অখণ্ডতা রক্ষার শেষ সুযোগটি এসেছিল ১৯৭০-এর নির্বাচনের পর। যদি তারা তখন নির্বাচনে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের সুযোগ দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের পথচলাটা শুরু করতো তাহলে হয়তো পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি করা বৈষম্যগুলো হ্রাসের একটা সম্ভাবনা তৈরি হতে পারতো। বাস্তবে তা হয়নি। পাকিস্তান সরকার নির্বাচনে বিজয়ী দলকে সরকার গঠনের বা গণপরিষদের অধিবেশন শুরু করার সমস্ত সুযোগ বন্ধ করে দিয়ে রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার সর্বশেষ সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে যায় পূর্ব পাকিস্তানীদের ওপর সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেবার মাধ্যমে।

পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি ঔপনিবেশিক ও বৈষম্যমূলক আচরণের দায় মূলত পাকিস্তান সরকারের ওপর বর্তায়। পশ্চিম পাকিস্তানের জনমানসে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি ঔপনিবেশিক মনোভাব গড়ে তোলার দায়টিও তাদের। আর এহেন আচরণের দায়ভার পশ্চিম পাকিস্তানের নাগরিককূলের ওপর বর্তায়।

৩. পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার্থে অপারেশন সার্চলাইট কতটুকু জরুরী ছিল?

: ১৯৭০ সালের নির্বাচনোত্তর ক্রাইসিসটি নিতান্তই রাজনৈতিক। এই রাজনৈতিক সমস্যাটির সহজ রাজনৈতিক সমাধান নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্যে নিহিত ছিল। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালী জনগোষ্ঠী কর্তৃক বিহারী বা উর্দ্দুভাষী জনগোষ্ঠীর ওপর কথিত আক্রমণের অভিযোগের কোন সত্যতা যদি থাকতো, তাহলে সেটা স্থানীয় পর্যায়ে পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে সমাধান করা যেত। কিন্তু পাকিস্তান সরকার সে পথে হাঁটেনি। তারা চেয়েছিল সামরিক কায়দায় এর সুরাহা করতে। সামরিক বাহিনী দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান চালানো ও যুদ্ধ শুরু করা পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার পদক্ষেপ হতে পারে না। একটি জনগোষ্ঠীর ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে তার প্রতিরোধ এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন একটি অবশ্যম্ভাবী ঘটনা, এবং এখানে তাই হয়েছে।

অপারেশন সার্চলাইটের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল পিলখানাস্থ ইপিআর সদর দফতর, রাজারবাগস্থ পুলিশ সদর দফতর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ইপিআর ও পুলিশ রাষ্ট্রীয় দুইটি প্রতিষ্ঠান। আর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে খোদ রাষ্ট্রের সামরিক আক্রমণ চালানোর ইতিহাসে বিরল ঘটনাটি আর যাই হোক শান্তি প্রতিষ্ঠা বা রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষার সহায়ক হতে পারে না। ইপিআর ও পুলিশে যদি কোন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে থাকতো, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় পর্যায়ের ব্যবস্থা নেবার সুযোগ ছিল। বিভাগীয় আদালত গঠন করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করা যেতো। ইপিআর ও পুলিশ বাহিনী কোন প্রকার বিদ্রোহ না করা সত্ত্বেও ট্যাঙ্ক, কামান, মেশিনগান নিয়ে তাদের আক্রমণ করা মানে তাদেরকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া। একই প্রকার কথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আক্রমণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি সত্যি সত্যি অস্ত্রের ভাণ্ডার ও গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলা হয়ে থাকতো তাহলে সেখানে পুলিশি অভিযান চালানো যেতো। তার বদলে সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে নির্বিচারে গণহত্যা চালানোর উদ্দেশ্য শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে না।

কেউ কেউ এই যুক্তি দেন যে, ষাটের দশকে ফ্রন্টিয়ারে বা বালুচিস্তানে সামরিক অভিযান চালানোর ফলে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে, সুতরাং সেই হিসেবে অপারেশন সার্চলাইট জরুরী ছিল। এই যুক্তিটি যারা দেন তারা যে সত্যটি চেপে যান তা হচ্ছে বাংলাদেশের ঘটনা ঐ ঘটনাগুলোর সাথে তুলনীয় নয়। ২৫শে মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হবার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে স্বাধীনতার লক্ষ্যে কোন মুক্তিবাহিনী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গেরিলাবাহিনী গড়ে ওঠেনি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা দুই দশকের আন্দোলনটি ছিল সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক। এই সময়কালের মধ্যে আন্দোলনকারীরা বহু বার নিরাপত্তাবাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হলেও কখনোই তারা নিরাপত্তাবাহিনীকে আক্রমণ করেনি। তাছাড়া পাকিস্তান সরকার বার বার এই আন্দোলনের পেছনে বৈদেশিক যোগাযোগের বা চক্রান্তের অভিযোগ তুললেও তা কখনো প্রমাণ করতে পারেনি।

পক্ষান্তরে, ষাটের দশকে আফগান অনুপ্রবেশকারীদের সহায়তায় ফ্রন্টিয়ারে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন গড়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। বালুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র পারারী গ্রুপরা সরাসরি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কনভয়, সেনা ছাউনীতে আক্রমণ করেছিল। সুতরাং রাষ্ট্রের অখণ্ডতা রক্ষায় পাশ্‌তুন বা বালুচদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের সামরিক পদক্ষেপ গ্রহনের নৈতিক ভিত্তি ছিল। ঐ অঞ্চলসমূহে সৃষ্ট সামরিক সমস্যার সমাধানের জন্য পাকিস্তানের সামরিক অভিযান চালানোও যৌক্তিক যদিও বিদ্রোহী দমনের নামে সাধারণ নাগরিকদের ওপর বিমান হামলা চালিয়ে গণহত্যা করা সমর্থনযোগ্য নয়।

অপারেশন সার্চলাইট ছিল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরকে ঠেকানো ও জনগণের ন্যায্য অধিকারের আন্দোলনকে সমূলে উৎখাতের উদ্দেশ্যে নিরস্ত্র সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে চালানো একটি সামরিক অভিযান। এই অভিযানটির কোন নৈতিক বা যৌক্তিক ভিত্তি নেই। এটি স্রেফ গণহত্যার উদ্দেশ্যে করা। গণহত্যা চালিয়ে কোন রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করা অথবা দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা সম্ভব নয়।

৪. পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে পাকিস্তানের অখণ্ডতাকে সমর্থন কি অপরাধ হতে পারে?

: পাকিস্তানের একজন নাগরিকের পক্ষে তার রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতাকে সমর্থন করা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু ১৯৭১ সালের ঘটনাবলী প্রমাণ করে যে খোদ পাকিস্তান সরকার তারই দেশের একাংশের সাধারণ নাগরিকদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। এমতাবস্থায় যে কোন বিবেকবান সাধারণ নাগরিকের দায়িত্ব হয় সরকারের ভ্রান্ত পদক্ষেপের বিরোধীতা করা। বাংলাদেশের মানুষ ঠিক সেই কাজটিই করেছিল।

সামরিক বাহিনীর চালানো গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে সমর্থন করার কোন নৈতিক ভিত্তি নেই। এসব জঘন্য অপরাধের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষা সম্ভব নয়। তাই ২৫শে মার্চ ১৯৭১-এর পর পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে সমর্থন করার কোন উপায় নেই। বরং এসবকে সমর্থন করা বা সহযোগিতা করা ঐসব রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অনুরূপ অপরাধমূলক কর্ম। পশ্চিম পাকিস্তানের নাগরিকদের ওপরও দায়িত্ব ছিল এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করা। কিন্তু তারা সেটি না করে অপরাধীদের সমর্থন ও সহযোগিতা করে গেছে।

১৯৭১ সালে পাকিস্তান কোন বহির্শত্রু দ্বারা আক্রান্ত ছিল না। অর্থাৎ বহির্শত্রুর আক্রমণে পাকিস্তানের অখণ্ডতা হুমকির সন্মূখীন হবার মতো কিছু ঘটেনি। আবার ২৬শে মার্চ পূর্ব কালে এমন কোন সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের আবির্ভাব ঘটেনি যে, দেশের অখণ্ডতা বিপন্ন এমন কথা বলা যাবে। তাই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকদের ওপর চালানো নৃশংসতাকে রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার দোহাই দিয়ে সমর্থনের কোন উপায় নেই। এবং এহেন সমর্থন অপরাধমূলক কাজ হিসেবেই বিবেচিত হবে।

৫. যে কোন উপায়ে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার চেষ্টা একজন পাকিস্তানী নাগরিকের জন্য কি অপরাধ হতে পারে?

: যে কোন উপায়ে রাষ্ট্রের অখণ্ডতা রক্ষার চেষ্টা কথাটির মধ্যে বিরাট ফাঁক আছে। প্রথমতঃ দেশ বহির্শত্রু দ্বারা আক্রান্ত না হওয়ায় বা দেশের অভ্যন্তরে কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের হামলার ঘটনা না ঘটায় রাষ্ট্রের অখণ্ডতা হুমকীর মুখে পড়ার দাবীটি সবৈর্ব মিথ্যা। সুতরাং মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে চলা কর্মকাণ্ড অপরাধমূলক কাজ বলেই বিবেচিত হবে। দ্বিতীয়তঃ দেশের একাংশের সাধারণ জনগণের ওপর নির্বিচারে গণহত্যা, ধর্ষণের মতো জঘন্য কার্যক্রমকে সহযোগিতা করা বা তাতে অংশগ্রহন করা রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষার চেষ্টা নয়। বরং তা রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষার চেষ্টার নামে জঘন্য অপরাধে সহযোগিতা করা বা অংশগ্রহন করা।

৬. পাকিস্তানকে দুর্বল করে দেবার মানসে ভারতের চক্রান্তে যখন পাকিস্তান ভাঙা হচ্ছে তখন সেটা ঠেকানো কি অপরাধ হতে পারে?

: এটি একটি বহুল প্রচলিত মিথ্যাচার যা ১৯৪৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রচলিত। বাংলাদেশের অভ্যূদয়কে ভারতের চক্রান্তের ফসল হিসেবে দেখানো পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক ও বৈষম্যমূলক কার্যক্রম, বাংলাদেশের নিরীহ মানুষদের ওপর চালানো সশস্ত্র আক্রমণ, বিদ্রোহী দমনের নামে চালানো গণহত্যা, ধর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞকে অস্বীকার ও আড়াল করার অপচেষ্টামাত্র।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় পাকিস্তান চার বার (১৯৪৮, ১৯৬৫, ১৯৭১ ও ১৯৯৯) ভারত আক্রমণ করেছে, এবং প্রতিবার ভারত তা ঠেকিয়ে গেছে। পক্ষান্তরে ভারত কখনো আগ বাড়িয়ে পাকিস্তানকে আক্রমণ করেনি। বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের আগে পাকিস্তান নিজেই তার দেশের পূর্বাংশকে সব দিক দিয়ে দুর্বল করে রেখেছিল। ১৯৪৮ বা ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে কোন আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা পর্যন্ত নেয়া হয়নি। তার মানে, পাকিস্তান নিজেই নিজেকে দুর্বল করেছে। ভারত যদি সত্যি সত্যি পাকিস্তান ভাঙার চেষ্টা করতো তাহলে এতদিনে ভারতীয় চর বা ভারতীয়দের দালালদের দ্বারা পাকিস্তান বার বার আক্রান্ত হতো। অথচ বাস্তবে তার উল্টোটাই দেখা যায়। এমনকি এই ২০০৮ সালেও পাকিস্তানী সশস্ত্র জঙ্গীরা মুম্বাই শহরে তাণ্ডব চালিয়েছে।

সুতরাং যারা পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের চক্রান্তের দোহাই দেয় তারা ঐতিহাসিক সত্যগুলোকে অস্বীকারকারী মিথ্যুক বই কিছু নয়। মিথ্যুকরা তাদের অপকর্ম ঢাকার জন্য যাই বলুক না কেন তাদের কর্মকাণ্ডগুলো সব সময়েই বিচারযোগ্য অপরাধ।

প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় একটি ব্যাপার লক্ষ্যণীয় যে, আজো বাংলাদেশে নানা বিষয়ে এক শ্রেণীর মানুষ বিভিন্ন প্রকার ভারতীয় চক্রান্ত বা ব্রাহ্মণ্যবাদী ষড়যন্ত্রের গন্ধ পায়। তারা যে কথাটি বলে না সেটি হচ্ছে ভারত বাংলাদেশকে করায়ত্ব করতে চাইলে ১৯৭২ সালেই পারতো যখন এদেশে ভারতীয় সামরিক বাহিনী উপস্থিত ছিল। গত ৪৩ বছরে ভারত কখনো বাংলাদেশ আক্রমণ করেনি বা বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণে নেবার চেষ্টা করেনি। হরহামেশা ভারতীয় চক্রান্তের গন্ধ পাওয়া খাড়া নাকের এই মানুষগুলোর অতীত ইতিহাস খোঁজ করলে দেখা যাবে ১৯৭১ সালেও তারা অমন গন্ধ পেয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল, নৃশংসতা চালিয়েছিল।

৭. ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের ভাঙন ঠেকানো কি একজন মুসলিমের কর্তব্য নয়?

: পাকিস্তানের ব্যাপারে বিদ্যমান বড় বড় ফাঁকা বুলির একটা হচ্ছে – পাকিস্তান একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র। ২৩শে মার্চ ১৯৫৬ থেকে কার্যকর পাকিস্তানের সংবিধান ও আইনসমূহ আর যাই হোক একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সংবিধান বা আইন নয়। শরীয়া আইনের ব্যাপারে নূন্যতম জ্ঞানসম্পন্ন যে কেউ এই সত্যটি বুঝতে পারবেন। তাছাড়া ইরানের ন্যায় ইসলামী প্রজাতন্ত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থার সাথে পাকিস্তানের ব্যবস্থার তুলনা করলেও সেকথা স্পষ্ট হয়। ইস্কান্দার মীর্জা, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টোদের মতো মদ্যপ, লম্পট, দুরাচাররা যে দেশের প্রধান হয় সেই দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা কতটুকু ইসলামী সেটা বুঝতে শরীয়া বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। তাছাড়া এই ইসলামী প্রজাতন্ত্রটির জাতির পিতা হচ্ছে এমন একজন যার সাথে ব্যক্তিজীবনে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার দূরতম সম্পর্কও ছিল না। পাকিস্তানের সংবিধানে মদ্য উৎপাদন, বিপণন ও গ্রহনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও খোদ সরকারী ব্যবস্থাপনায় মারী ব্রিউয়ারী বা কেরু এন্ড কোম্পানীতে (১৯৭১ পর্যন্ত) মদ্য উৎপাদন চলেছে। একইভাবে পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ থাকার কথা বলা হলেও হীরামান্ডি বা টানবাজারে (১৯৭১ পর্যন্ত) সরকারী লাইসেন্সধারী পতিতাবৃত্তি চলেছে।

এহেন ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবীকে রোখার জন্য যখন নির্বিচারে গণহত্যা, ধর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তখন তাকে ইসলাম রক্ষার বা ইসলামী প্রজাতন্ত্র রক্ষার পদক্ষেপ বলা যায় না। এই রকম পরিস্থিতিতে একজন মুসলিমের কী কর্তব্য সেটা জানার জন্য সুরা আন-নিসার ৭৫-নং আয়াত দেখা যাকঃ

And what is [the matter] with you that you fight not in the cause of Allah and [for] the oppressed among men, women, and children who say, "Our Lord, take us out of this city of oppressive people and appoint for us from Yourself a protector and appoint for us from Yourself a helper?"

পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের কৃত গণহত্যা ও গণধর্ষণকে ধর্মীয় বৈধতা দেবার উদ্দেশ্যে কেউ কেউ এই যুদ্ধটিকে ‘জ্বিহাদ-বিল-সাঈফ’ বলে দাবী করার চেষ্টা করে। এই দাবীটিও সবৈর্ব মিথ্যা। ১৯৭১ সালে বা তার পূর্বে পাকিস্তানের কোথাও কোন মুসলিমের ইসলাম পালনের ক্ষেত্রে কোন বাধা ছিল না। ঐ সময়কালে কোন ভাবেই ইসলাম ও মুসলিমরা পাকিস্তানের কোথাও কোন প্রকার হুমকীর মুখে পড়েনি বা তাদের অস্তিত্ত্বসংকট সৃষ্টি হয়নি। পূর্ব পাকিস্তানের সিংহভাগ মানুষ ইসলামের অনুসারী ছিল। সুতরাং এখানে ‘দার-উল-ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার জন্য ‘দার-উল-হার্‌ব’ বা যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টির যুক্তি ধোপে টেকে না। যে দাবীর ভিত্তি মিথ্যা তথ্য, বানোয়াট তত্ত্ব এবং জাল যুক্তি সেটি ইসলামসম্মত নয়। এ’ধরনের দাবীর ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধ করা বা যুদ্ধে সহযোগীতা করা একজন মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব তো নয়ই, বরং তা ঠেকানোই তার ঈমানী দায়িত্ব।

ইসলামপন্থার এই ভূয়া দাবীদাররা পাকিস্তানী বাহিনীর ইসলামবিরোধী ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোন সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা দূরে থাক, প্রতিবাদটি পর্যন্ত করেনি। পক্ষান্তরে শান্তি কমিটি গঠনের নামে তারা পাকিস্তানী বাহিনীকে নৈতিক ও বস্তুগত সহযোগীতা করেছিল। রাজাকার, আল বদর, আল শামস্‌, মুজাহীদ বাহিনী গঠনের নামে তারা পাকিস্তানী বাহিনীর সক্রিয় সহযোগী হিসেবে দেশের নিরীহ সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো জঘন্য সব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল।

এই প্রসঙ্গে একটি বিষয় স্মর্তব্য। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা ধৃত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য পুরুষদের পরনের কাপড় খুলে খৎনা করা আছে কিনা এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পাঁচ কালিমা মুখস্থ আছে কিনা সেটা যাচাই করতো। ইসলাম সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ জানেন খৎনা ইসলামের আবশ্যিক বিধান নয়। তাছাড়া কালিমা (যা কোরানের কোথাও উদ্ধৃত নয়) জানাটা মুসলিম হবার প্রাথমিক শর্ত নয়। সুতরাং যা মুসলিম হবার প্রাথমিক শর্ত নয় তা দিয়ে কেউ মুসলিম কিনা সেটা যাচাই করা ইসলামসম্মত নয়। কেউ মুসলিম কিনা তা যাচাই করার কোন নৈতিক বা আইনগত অধিকার পাকিস্তানী বাহিনী এবং তাদের সহযোগীদের না থাকলেও হত্যাকাণ্ডের অজুহাত দাঁড় করানোর জন্য তারা এই অনধিকার চর্চ্চা করে গেছে। মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ না করে থাকলে কোন অমুসলিমকে হত্যা করা ইসলাম সমর্থন করে না। সেখানে পাকিস্তানী বাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা ইসলামের দোহাই দিয়ে বিনা অপরাধে হিন্দু নিধণের নামে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবাইকে হত্যা করেছে।

৮. পাকিস্তানী বাহিনী তো হিন্দুদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল। আর হিন্দুরা যে ভারতের চর হিসেবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাজ করছিল এটা তো সবার জানা।

: এটা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রচারিত সবচে’ নোংরা মিথ্যা কথাগুলোর একটা। প্রথমতঃ পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসররা এদেশে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান নির্বিশেষে গণহত্যা চালিয়েছিল, বেছে বেছে কেবল হিন্দুদের মারেনি। দ্বিতীয়তঃ পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসকারী একজন হিন্দু নাগরিকের বিরুদ্ধেও ভারতের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনয়ণ ও প্রমাণ করতে পারেনি। তবুও পাইকারী হারে সকল বয়সী হিন্দুকে হত্যা করার উদ্যোগ নিয়েছিল। তৃতীয়তঃ ভারত যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে থাকতো তাহলে পাকিস্তান প্রথম থেকে সকল ফ্রন্টে ভারতকে আক্রমণ করেনি কেন? কেন পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারতের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক অখণ্ডতা বিনষ্টের অভিযোগ তোলেনি? চতুর্থতঃ হিন্দু জনগোষ্ঠী যদি সন্দেহভাজন হয়েই থাকে তাহলে তার দায় পুরোটাই পূর্ব পাকিস্তানে পড়ে কী করে?

হিন্দুদের বিরুদ্ধে এই মিথ্যাচারটি এখনো পাকিস্তানের পাঠ্যপুস্তকে আছে। পাকিস্তানের নবম-দশম শ্রেণীতে পাঠ্য ‘Pakistan Studies’ বই থেকেঃ

A large number of Hindu teachers were teaching in the educational institutions in East Pakistan. They produced such literature which created negative thinking in the minds of Bengalis against the people of West Pakistan.

About 10 million Hindus were living in East Pakistan. India stood at the back of these Hindus to protect their interests. India wanted to separate East Pakistan to strengthen the economic position of the Hindus. Many Hindus acted as spies for India. Russia was against Pakistan because Pakistan had allowed America to establish military bases in Pakistan. On the other hand, America also wanted separation of East Pakistan. Under the circumstances Russia openly supported India’s aggression against Pakistan.

অর্থাৎ, খোদ পাকিস্তান সরকার এই মিথ্যাচারের উদ্‌গাতা, ধারক ও প্রচারক। পাকিস্তান সরকার কখনোই কোন হিন্দুকে ভারতের চর হিসেবে গ্রেফতার ও বিচার করে দেখাতে পারেনি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে করা ভারতের কোন ষড়যন্ত্রও উদঘাটন করতে পারেনি। এমন কোন তথ্য-প্রমাণ কোন কালেই তারা হাজির করতে পারেনি।

৯. যারা বাংলাদেশের বাস্তবতা মেনে নিয়েছে তাদেরকে কি তাদের পূর্ববর্তী আচরণের জন্য এখনো অপরাধী বলে চিহ্নিত করতে হবে?

: বাংলাদেশের বাস্তবতা মেনে নেবার স্টেটমেন্টটি শঠতা ও মিথ্যাচারে পূর্ণ একটি স্টেটমেন্ট। যারা সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশ গঠন ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল তাদের কেউই তাদের কৃতকর্মকে ভুল বলে স্বীকার করে না। তারা যে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল সেটিও তারা স্বীকার করে না। অর্থাৎ তারা তাদের অবস্থান ও কর্মকাণ্ডকে এখনো সঠিক ও বৈধ বলে মনে করে। অপরাধ করেও যারা স্বীকার করে না, বরং তা পাশ কাটানোর জন্য নানা প্রকার কুযুক্তির আশ্রয় নেয় তারা এক একজন ঘৃন্য অপরাধী ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এহেন অপরাধীদের যত দ্রুত সম্ভব বিচার হওয়া এবং যথাযোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা করাই উচিত।

১০. নিখিল পাকিস্তানী রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ, পিডিপি ও কেএসপি’র পাকিস্তানকে সমর্থন কী করে অপরাধ হতে পারে?

: এই প্রশ্নটিও শঠতাপূর্ণ ও সত্যকে আড়াল করার অপচেষ্টা মাত্র। নিখিল পাকিস্তানী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পিপিপি, জমিয়তে ই উলেমা ইসলাম, মারকাযী জমিয়ত উলেমা পাকিস্তান, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ওয়ালী খান)-র মতো দলগুলো ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন না করলেও দলগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর সহায়ক শক্তি হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে আবির্ভূত হয়নি। ফলে দল হিসেবে তাদেরকে যুদ্ধাপরাধীদের দল বলার উপায় নেই। পক্ষান্তরে, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ, পিডিপি ও কেএসপি সরাসরি দলগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর সহায়ক শক্তি হিসেবে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। তাই উভয় গ্রুপের দলসমূহ পাকিস্তানের সমর্থক হলেও শেষোক্ত গ্রুপ যুদ্ধাপরাধের দায়ে দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যুদ্ধাপরাধের, পাকিস্তানকে সমর্থন করার জন্য নয়।

সুতরাং এ’কথা স্পষ্ট যে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যারা পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে তারা ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দায়ী। যারা যুদ্ধাপরাধে অংশগ্রহন করেনি কিন্তু পাকিস্তান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোতে সমর্থন দিয়ে গেছে তারা মানবতাবিরোধী ও নৈতিকতাবিরোধী কর্মকাণ্ডকে সমর্থনের দায়ে দায়ী। যারা ইসলামের দোহাই দিয়ে পাকিস্তান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোতে সমর্থন দিয়ে গেছে তারা ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডকে সমর্থনের দায়ে দায়ী। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবার পরও যারা তাদের কৃত অপরাধ অস্বীকার করে তারা চরম মিথ্যাবাদী ও ঘৃন্য অপরাধী। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই সকল ঐতিহাসিক ঘৃন্য অপরাধীদেরকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোটাই কর্তব্য।

ইফতেখার আলী


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ লিখেছেন ইফতেফখার ভাই। এরকম লেখার প্রে আসলে কোন মন্তব্য করাটা বাহুল্যমাত্র। লেখাটা অন্যান্য ব্লগেও পোস্ট করার অনুরোধ রইলো।

----ইমরান ওয়াহিদ

অতিথি লেখক এর ছবি

নিখিল পাকিস্তানী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পিপিপি, জমিয়তে ই উলেমা ইসলাম, মারকাযী জমিয়ত উলেমা পাকিস্তান, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ওয়ালী খান)-র মতো দলগুলো ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন না করলেও দলগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর সহায়ক শক্তি হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে আবির্ভূত হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিপিপি-র প্রধান ছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। তিনি তো সেই সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর কর্মকাণ্ডকে ডিফেনড করেছিলেন বলেই জানতাম।

Emran

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখক বোধহয় নিখিল পাকিস্তান রাজনৈতিক দলগুলোর বাংলাদেশ অংশের কথা বলতে চাচ্ছেন।

----ইমরান ওয়াহিদ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্ট কিভাবে যেন হাহাকারের নাম হয়ে গেছে। এই রিপোর্ট এবং দোষীদের বিচার হওয়ার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই।
২০০০ সালের ৩০ ডিসেম্বর কিছু স্পর্শকাতর অংশ বাদ দিয়ে এই রিপোর্টের প্রায় পুরোটুকুই প্রকাশ করা হয়। সেখানে বাংলাদেশে গণহত্যা চালানোর জন্য কাউকে দায়ী করা হয়নি। উল্টো কিছু সামরিক অফিসারকে দায়ী করা হয়েছে যুদ্ধকালে দায়িত্বে অবহেলার জন্য, আত্মসমর্পনের জন্য... অর্থাৎ যুদ্ধটা আরো বেশিদিন কেন চালানো হলো না, আরো বেশি বাঙালি কেন মারা হলো না, আরো বেশি ধর্ষণ কেন করা হলো না... এইসব দায়িত্বে (!) অফিসাররা কেন গাফলতি করলো, সেজন্য তাদের শাস্তির সুপারিশ করা হইছে।
আর বলা হয়েছে "পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি বাহিনী যে জুলুম ও অত্যাচার (গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ না) চালিয়েছে তাঁর তদন্ত করার জন্য একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আদালত বা তদন্ত কমিশন গঠন করা দরকার এবং যেসব ব্যক্তি পাশব অত্যাচার ও নির্যাতন এবং নৈতিক অপরাধে অপরাধী প্রমাণিত হবেন তাঁদের যথাবিধি শাস্তি দেওয়া যায়।"
সবচেয়ে হাস্যকর বাক্যটা এরপরে "যদি তাঁর (অর্থাৎ যথাবিধি শাস্তির) ব্যবস্থা করা না হয়, তাহলে অন্তত কমিশন গঠনের কথা সর্বসাধারণের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করা যায়, যাতে আমাদের জাতির বিবেক ও বিশ্বজনমত শান্ত হয়।"

অর্থাৎ এই গণহত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদির জন্য কাউরে শাস্তি না দিলেও চলবে... এই যে একটা কমিটি গঠন করা হইছে, এতেই পাকিগো জাতির বিবেক ও বিশ্বজনমত শান্ত হবে!
হামুদুর রহমানের রিপোর্ট নিয়ে তবু কেন আমাদের এতো উচ্ছ্বাস তা আমি কোনোদিনই ভেবে পাইলাম না।

আর আপনার এতোবড় লেখাটা পড়ে কারো পক্ষেই জানা সম্ভব হবে না ঠাণ্ডা মাথায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের কথা। এই ঘাটতিটুকু না থাকলে ভালো হতো।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

বাংলাদেশের অধিবাসীদের প্রায় সকলে মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করেছিল ও তাতে সক্রিয় সহযোগীতা করেছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহন করেন। কিন্তু অল্পসংখ্যক স্থানীয় অধিবাসী পাকিস্তানী বাহিনী ও পাকিস্তান সরকারের তৎকালীন কর্মকাণ্ডকে সহযোগিতা বা সমর্থন দিয়ে গেছে।

বাংলাদেশের অধিবাসীদের প্রায় সকলে মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করেছিল, এ তথ্যটা বোধ হয় সঠিক নয়। সত্তরের নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বাধিক ৬% ভোটার জামাতে ইসলামীকে ভোট দিয়েছিল, এর সাথে ৩টি মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী, পিডিপি, এ সকল পাকিস্তানপন্থী দল মিলে প্রায় ১৫% ভোট পেয়েছিল। এই মনোভাবাপন্ন আরও ভোটার ছিল, যারা আওয়ামী লীগের অনুকূলে জনজোয়ার দেখে ভোট দিতে যায় নি। সুতরাং প্রায় ২০% এমন মানুষ ছিল, যারা মনেপ্রাণে পাকিস্তানপন্থী ছিল, এরা আর যাই হোক, মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করে নি। আওয়ামী লীগের ভোটারদেরও সবাই যে মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করেছিল, তাও বলা যায় না, তাদেরও অনেকে পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ায় কিছুটা হলেও হতাশ হয়েছিল। তবে হ্যাঁ, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এবং গুরুত্বপূর্ণ মানুষেরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে অবস্থান গ্রহন করেছিল, ফলে বিরোধী মনোভাব একেবারেই গৌন হয়ে পরেছিল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।