আইন কানুন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৮/০৬/২০১৪ - ১১:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শিব ঠাকুরের আপন দেশে
আইন কানুন সর্বনেশে
কেউ যদি যায় পিছলে পড়ে
প্যায়দা এসে পাকড়ে ধরে
কাজির কাছে হয় বিচার
..... একুশ টাকা দন্ড তার

এই দেশটা শিব ঠাকুরের না হলেও এখানকার আইন কানুনও সর্বনেশে। সুকুমার রায় বহু আগে এই কবিতা লিখেছিলেন কিন্তু এতদিন পর ইংল্যান্ডে এসে আমি এই কবিতার সার্থকতা খুঁজে পেলাম। তেমনই কিছু মজার সর্বনাশা ঘটনা বর্ণনা করব এই লেখায়।

একবার সবজি কিনব বলে দোকানে গেছি। বৃষ্টি হচ্ছিল তাই রাস্তা পিচ্ছিল। হঠাৎ এক লোক পিছলে গেলেন। দোকানের সামনে অনেক মানুষই ছিল কিন্তু কেউ ধরার আগেই উনি এক মেয়ের উপর পরে গেলেন। সবাই ধরাধরি করে তাদের উঠাল। লোকটি মেয়েটির উপর পড়ায় লোকটির কিছু না হলেও মেয়েটির জামা একদম ভিজে গেল। মেয়েটি উঠে লোকটিকে বলল তুমি ইচ্ছা করে আমার উপর পড়েছ। লোকটি না করায় মেয়েটি বলল আমি তোমাদের মত বুড়োদের খুব ভাল করে চিনি। তরুণী মেয়ে দেখলেই তোমরা গলে পড়ে যাও। হয় তুমি আমাকে আমার জামার দাম দেবে নয়ত আমি পুলিশ ডাকব। লোকটির অনেক বোঝানোর পরও মেয়েটি বুঝল না এবং যথারীতি পুলিশ আসল। পুলিশ আসায় ভিড় কমে গেল। আমিও দোকানের ভিতরে চলে গেলাম। যাওয়ার সময় দেখলাম পুলিশ লোকটিকে ভ্যানে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।

আর একবার কেনাকাটা করার জন্য স্থানীয় মার্কেটে গেছি। মার্কেটের সামনে বসার বেঞ্চ আছে। অনেকের সাথে আমরাও বসেছি। হঠাৎ দেখি দুটো ছেলের মধ্যে বাক বিতণ্ডা শুরু হয়ে গেল এবং এক পর্যায়ে গালি গালাজও হতে থাকল। ওই সময় সামনে দিয়ে এক মহিলা তার কুকুর নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। উনি ঘুরে দাড়িয়ে একটা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন যে তুমি ওকে কি বলে গালি দিয়েছ? ছেলেটি বলল যাই বলি না কেন তাতে তোমার কি। মহিলা আবার বললেন না আমি জানতে চাই তুমি ওকে কুকুর বলে গালি দিয়েছ কিনা? ছেলেটি বলল হ্যাঁ দিয়েছি, তো? মহিলা বলল তুমি তো ওকে কুকুর বলে গালি দিতে পার না কারণ আমার কুকুর শুধু কুকুর না ও আমার বাচ্চা। তাছাড়া আমার বাচ্চা তোমাদের মত এত অভদ্র না। ও রাস্তায় দাড়িয়ে ঝগড়া করে না, কাউকে গালি দেয় না। তাহলে তুমি কেন ওর চেয়ে খারাপ কাউকে কুকুর বলে গালি দেবে? ও তো কুকুর হওয়ার যোগ্য না বরং ওকে কুকুর বলে তুমি আমার বাচ্চাকে অপমান করেছ। শেষ পর্যন্ত সেখানে পুলিশ আসল। তারপরের ঘটনা দেখার জন্য ওখানে আর অপেক্ষা করার মত সময় ছিল না।

বাংলাদেশে একবার ছোট একটা দুর্ঘটনা দেখার সুযোগ হয়েছিল। একটি রিক্সা আর একটি মোটর সাইকেলের সংঘর্ষে রিক্সাটি কাত হয়ে পড়ে যায়। রিক্সায় একটা মেয়ে ছিল। রিক্সা পড়ে যাওয়ায় সেও পড়ে গেল। একটা ছেলে দৌড়ে এসে প্রায় ফিল্মি কায়দায় মেয়েটির কোমর ধরে তাকে তোলার চেষ্টা করতেই মেয়েটি চেঁচিয়ে উঠল এই বলে যে আমি আপনাকে বলেছি আমার সাহায্য লাগবে? ছেলেটি মেয়েটিকে মোটামুটি অর্ধেকটা তুলে ফেলেছিল সেই অবস্থা থেকে ছেলেটি মেয়েটিকে ছেড়ে দিল। ফলাফল স্বরূপ মেয়েটি আবার পড়ে গেল এবং অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। ওদিকে মোটর সাইকেলে বসা লোকটি হাসছে আর বলছে এদেশের আইন কানুন সবই আলাদা। একটা মেয়ে পড়ে গেলে ১০ জন ছুটে আসে। আর একটা ছেলে পড়ে গেলে ৪ জন আসে তাও আবার সবার শেষে গোরস্তানে নেয়ার জন্য।

ফাহিমা দিলশাদ


মন্তব্য

এক লহমা এর ছবি

সত্যিই কি এই ঘটনাগুলিকে এই দেশটির 'শিবঠাকুরের আপন দেশে'-র সর্বনাশা আইনকানুনের নিদর্শন হিসেবে দেখা ঠিক হবে?
লেখালেখি চলুক। হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

একজন বয়স্ক মানুষের পিছলে পড়ে যাওয়া বা দুটো বাচ্চা ছেলের গালি দেওয়াকে আমার পুলিশ ডাকার মত গুরুতর ঘটনা বলে মনে হয়নি তাই 'শিবঠাকুরের আপন দেশে'-র উদাহরণ দিয়েছি।

ধন্যবাদ আপনাকে।

ফাহিমা দিলশাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগল। লেখালিখি চলুক।
এ এস এম আশিকুর রহমান অমিত

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

ফাহিমা দিলশাদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।