এক একদিন প্রতিদিন-১১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৭/০৪/২০১৫ - ১১:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১।
সে অনেক অনেক দিন আগের কথা। একমাথা ঢেউ খেলানো এলোমেলো চুলের মেয়েটির বড্ড বকবকানীর স্বভাব। দিনভর তার অনাবশ্যক মুখরতায় সবার ক্লান্তি আসে। মা-ঠাম্মা বলেন, সে কথা বলতে শেখার পর থেকে শুধু কথা বলে যেতেই শিখেছে, চুপ থাকতে শেখেনি একটুও। ঠাম্মা বলেন, বালিকার বাস কথার রাজ্যে, তাই ওকে চুপ করে থাকা শেখানোর চেষ্টা করেও লাভ নেই কোন। বালিকা কিন্তু আসলেই চুপ থাকতে চায়, ঝামেলা বাঁধায় গল্পগুলো। শহর থেকে বাড়ি আসবার সময় মায়ের জন্য বাবার কিনে আনা লাল পেড়ে সুন্দর শাড়ীটার গল্প, বড়দি-দাদার বইয়ের 'কাজলা দিদি'র গল্প, রোজ সন্ধ্যায় 'ঠক্কে' বলে ডেকে ওঠা বাড়ীর সামনের আঙিনায় বুড়ো অশ্বত্থের কোটরে লুকানো সেই তক্ষকের গল্প; আরো কত কত...। সেসব গল্প সবাইকে না বলে তার চলতে চায় না একটুও,পেটের মধ্যে এত্ত কথা জমিয়ে রেখে তার ঘুম-খাওয়া-খেলা কিচ্ছু হতে চায় না। কিন্তু তার কথা শোনার মত নিঃসংশয় এবং আগ্রহী শ্রোতা তার মেলেই না দিনভর। সে অপেক্ষায় থাকে, সন্ধ্যের।

তখন সময় কেটে যেত সরল রেখায়। সকাল দুপুর সন্ধ্যে গুলোর ছিল তাদের নিজস্ব রঙ-রূপ-ছন্দ। জীবন ছিল মায়াবী, সুরেলা, সহজিয়া; মেঠো পথে হঠাত বেজে ওঠা রাখালী বাঁশীর সুরের মতোই। সেই সময়ে আড়িয়াল খাঁ পাড়ের ছোট্ট সেই গ্রামে ছিপচিপে আর বড্ড ছটফটে, শ্যামলা সেই মুখর বালিকার সকাল শুরু হতো তার ঠাম্মার সাথে। বাঁশ ঝাড়ের পাশ দিয়ে, দেবদারু গাছের ছায়ার সরু মাটির পথ ধরে নদীর ঘাটে যেত তারা জল আনতে প্রতিসকালে। ঠাম্মার কাঁখে কলস, হাতে ঠাকুর পুজার থালা-বাটি। সেই পথের অন্য পাশটা ঢালু হয়ে নেমে গেছে, কিছুটা সবুজ ঘাস পেরিয়ে পাট কিংবা আখের ক্ষেত। ঢালু পথের মাঝে মাঝে একটা দুটো গাছ; সেগুলোতে কিছু বন জারুল, কিছু সোনালু ফুল ফুটে থাকত। বালিকা ঠাম্মার দ্রুত পায়ের সাথে তাল মিলাতে মিলাতে প্রায় দৌড়ে যেতে যেতে বকবক করতে থাকত অনর্গল; সোনালু ফুলগুলো কেন এমন হলুদ, জারুল কেন লাল হয়না। ঠাম্মা উত্তর দিতে দিতে তাড়া দিতেন, তাড়াতাড়ি হাঁট তো বইন, পরে কথা কইস। বালিকা হেঁটে বা দৌড়ে যেতে যেতে তবু বকতেই থাকত। বিপরীত দিকে হেঁটে যাওয়া গ্রামের মানুষেরা প্রায়ই হেসে বলতো, চিত্র'র মা তোমার নাতনীর মুখের কথা দেহি ফুরায় না।

নদীর বুক দিয়ে তখনও বেদেরা নৌকা বেয়ে যেত এদিক ওদিক। কখনও কখনও বেদেরা নৌকাগুলো তাদের ঘাটে বেঁধে সেখানে সংসার পাততো কিছুদিনের জন্য, নৌকায় সংসার তাদের। গ্রামের হাটে সাপের খেলা দেখাত বেদেরা, সাথে সাথে চুড়ি-ফিতা-পুতির মালা বিক্রি করতো গ্রামে গ্রামে ঘুরে। সকালে বেদেনীরা ঘাটে বাঁধা নৌকার তোলা চুলায় রান্না করত, তাদের ছেলে-মেয়েরা নৌকার গলুই বা ছইয়ে বসে খেলত। ঘাটে বসে বেদের দেখতে দেখতে তাদের নিয়ে প্রশ্ন করতে করতে, ঠাকুর পুজার থালা মাজাতে ব্যস্ত ঠাম্মাকে অতিষ্ঠ করে তুলতো বালিকা। ঠাম্মা কখনও উত্তর দিতেন, কখনও দিতেন না। তারপর কলসীতে জল ভরে আবার ফিরতি পথ ধরতেন। বালিকা বাড়ি ফিরে মায়ের কাছে ছুটে যেত বেদেদের গল্প বলতে, মা তখন ব্যস্ত সকালের কাজে, রান্না-বান্নার আয়োজনে। তার কথা শুনবার মতো সময় থাকতো না। কথার পাহাড় জমত বালিকা'র আবার। মা মাঝে মাঝে বলতেন, কাজের শেষে গল্প শুনবেন তিনি, কিন্তু মায়ের কাজ কি শেষ হতো কক্ষণো।

সকাল ফুরিয়ে দুপুর এলে চারপাশটাকে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা গ্রাস করে নিত, বড়দি-বড়দা সহ পাড়ার বাকী ছেলেমেয়েরা স্কুলে সেসময়, কাকু-দাদু কাজে। মা দুপুরের খাবারের পর প্রায় দিনই জমে থাকা এটা সেটা ধোয়া-মোছা-ঝাড়াঝাড়ি-গোছানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। কোন কোন দিন কিচ্ছু না থাকলে, নীহার রঞ্জন রায় এর ডিটেকটিভ উপন্যাস পড়তেন বিছানায় আধশোয়া হয়ে। ডিটেক্টিভ কিরীটী রায়-এর সেইসব টানটান উত্তেজনার কাহিনীতে পুরোপুরি ডুবে যাওয়া মায়ের সাথে কথা বলা ছিল একদম নিষিদ্ধ । ঠাম্মা প্রতি দুপুরে পেছনের টিনে ঘেরা বারান্দার শিতল পাটি পাতা চৌকিতে দীর্ঘ একটা ঘুম দিতেন। সঙ্গিহীন বালিকার দুপুর কাটত তার সাথে। বালিকা একা একা খেলতে যেতে চাইলে তিনি গল্প শোনাতেন তাকে। তেঁতুল গাছের পেত্নির গল্প। এই পেত্নিদের নাকি খোলা লম্বা কালো কোকড়ানো চুল, মুলোর মত লম্বা-মোটা দাঁত, গায়ের রং আব্লুসের মতো কালো। ঠাম্মা বলতেন, দুপুরের চড়া রোদে কেমন করে তেঁতুল গাছের পেত্নিরা ঘুরে বেড়ায় এদিক ওদিক, খোলা চুলের ছোট ছোট মেয়েদের খোঁজে। একা পেলে তাদের ধরে তেঁতুল গাছে তুলে নেয় লম্বালম্বা হাত বাড়িয়ে, সেখান থেকে নেমে আসার আর কোন উপায় থাকে না। সেই সব মেয়েদেরও তখন তেঁতুল গাছের পেত্নি হয়ে জীবন কাটাতে হয়। তাদের গায়ের রং কালো হতে শুরু করে তেঁতুল বীজের কষে, দাঁতগুলো আস্তে আস্তে লম্বা মুলোর মতো হতে...; বালিকার ভয়ে হাতপা হিম হয়ে আসে, সে বাইরে যেতে ভুলে যায়। ঘুম ঘুম চোখের ঠাম্মাকে তার পেটে জমে থাকা সকাল থেকে দুপুরের গল্প শোনাতে চাইলে তিনি ঠোঁটের উপর তর্জনী চাপা দিয়ে বলতেন, শ্শ্শ, ভর দুপুরে শব্দ করে কথা কইতে নাই বইন, দুপুরে সবাইর বিশ্রাম নিতে হয়, এমনকি মুখের কথাওর। বালিকার কথাগুলো আবার জমতে থাকে। সে আবারও অপেক্ষায় থাকে, সন্ধ্যের।

সেই সব সন্ধ্যে গুলো বড্ড বেশী অন্যরকম ছিলো। নদী পাড়ের আকাশের আলো নিভিয়ে সূর্যিটা যেই রাত-চাদরে মুখ-মাথা ঢেকে ঘুমুতে যাবার প্রস্তুতি নিতে শুরু করতো, অমনি শীতলা খোলার পিছন থেকে আবছায়া আঁধারের সন্ধ্যেটা ঝুপ করে নেমে এসে অশত্থ গাছ, সামনের আঙিনার কলতলা, মাঝের উঠোন, উঠোনের তিনপাশের ঘরগুলোকে একদমে ঘিরে ফেলতো। বাড়ীর উঠোনে উঠোনে মা-কাকিমারা সবাই হাতে পিতলের ধুপদানীতে নারকেলের ছোবড়ায় ধুপ জ্বালিয়ে তুলশী তলায় প্রদীপ জ্বালাতে ব্যস্ত তখন। কারো কারো ঘরে কেরোসিনের কুপি, কারো বা ঘরে হ্যারিকেন জ্বলেছে আরেকটু আগেই। ছেলেমেয়ারাও সবাই বিকেলের খেলা শেষ করে কলতলায় হাতমুখ ধুয়ে ঘরে ফিরে গেছে। অনেকেই ইতোমধ্যে বই বের করে চৌকির উপরে পড়তে বসেছে, বসেছে বড়দা এবং বড়দিও। ওদের অনেক পড়া । পড়ায় মন নেই শুধু সেই বালিকার। তার অবশ্য তেমন পড়বারও কিছু নেই, সে তখনও স্কুলে যেতে শুরু করেনি। সে কিছুক্ষণ আদর্শলিপি'র পাতা উল্টে-পাল্টে গল্প-কথায় মন দেয়।দিদি-দাদা বা ভাই কেউই তার আবোলতাবোল গল্প শুনতে ভালোবাসে না।

সন্ধ্যে নেমে এলে অবশ্য বালিকা আর তেমন করে অন্যদের সঙ্গের দরকার হয়না, হ্যারিকেনের মৃদু আলোয় যাদুময় কিছু একটা ঘটে যায়, তার গল্প-কথা শোনায় অক্লান্ত, অপলক উৎসাহী একজন এসে তার হাত ধরে প্রতিদিন। এই নির্বাক সমবয়েসী শ্রোতাটি'র একান্ত সান্বিধ্যের জন্যই সারাদিনের প্রতীক্ষা বালিকার। তার অঢেল বকবকানিতে এই একজনের কোন আপত্তি নেই, বাঁধা দেয়া নেই, নেই সত্য মিথ্যা বিচারের আগ্রহ, কথার মধ্যে অহেতুক থামিয়ে দিয়ে সঙ্গতি বা অসঙ্গতি ধরিয়ে দেবার বালাই নেই। সে কেবল নীরব এবং নিঃসংশয় শ্রোতা; যেমনটি বালিকা ভালোবাসে। বালিকা তার চুল দুলিয়ে, হাত নাড়িয়ে, এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে মেঝে বা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে অনর্গল বকে যায়। সকালে দেখা বেদের নৌকা, দুপুরে ঠাম্মার গল্পের সেই তেঁতুল তলার পেত্নির কথা বলা হয় বর্ণনা সহ এক নিঃশ্বাসে, তারপর কল্প-কাহিনী, কখনও বা রাতে দেখা স্বপ্ন; আরো কত কত...। তার প্রতি সন্ধ্যের সাথীটি চুল দুলিয়ে, হাত নাড়িয়ে মেঝেতে, দেয়ালে ঘুরে ঘুরে নিঃশব্দে শুনে যায় বালিকার নিষ্পাপ প্রগল্ভতার অন্তহীন আলাপন।

আস্তে আস্তে সন্ধ্যে গাঢ় হয়। মা তখনো রাতের খাবারের আয়োজনে ব্যস্ত, সারাবিকেল গ্রামের মাঠ জুড়ে লুকোচুরির হুড়োহুড়ি পর শ্রান্ত বালিকার দুই চোখে ঘুম নেমে আসে মায়ের ডাকের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে। সে মেঝেতে বিছানো পাটীতে কাত হয়ে ঘুমে প্রায় মুদে আসা দুইচোখে, তারই মত ক্লান্তিতে লুটিয়ে পড়া সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে জানতে চায়, ছায়া তুই-ও ঘুমাবি? তোরও ঘুম পাইছে বুঝি? জানস তো। ভাত না খাইয়া ঘুমাইলে মা কিন্তু বকবে। এখনি ঘুমাইস নারে ভাই। আদর্শলিপি পাশে খোলা পড়ে থাকে এক পাশে হ্যারিকেন জ্বলে, বালিকা ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়। ছায়াটি ঘুমায় তারই পাশে ঘেঁষে, একবারেই তার মতো গুটিসুটি হয়ে।

কিছুক্ষণ পর মা রাতের খাবারের জন্য সবাইকে ডাকতে এসে দেখতে পান, সারাদিন মুখে কথার ফুলঝুরী ছোটানো ছোট্ট মেয়েটি হঠাত কখন ঘুমিয়ে পড়েছে সবার অজান্তে, একেবারে নিঃশব্দে।

২।
সেই বালিকাটির বালিকাবেলা কেটে গেছে সেই কবেই। স্কুল শুরু করে গ্রামের বাড়ী ছাড়বার আগেই সে জেনে গিয়েছিল, শুধু রাতে হ্যারিকেনের আলোতেই নয়, তার ছায়াসংগী দিনে সূর্যের আলোতেও তার সাথে সাথেই ঘুরে বেড়ায়। দুপুর রোদে ছায়াটি খুব ছোট্ট হয়ে গেলেও হারায়না কখনও। বিকেলের পড়ন্ত রোদে তাকে আবার দীঘল আদলে খুঁজে পাওয়া যায়। দিনের বেলা ছায়ার সাথে তার কথকতা খুব জমে না, কেউ দেখে ফেললে ভারি বিপত্তি, এমন করে হাসে সবাই। তাই সেই সন্ধের অপেক্ষাতেই থাকে বালিকা গল্প জমাতে, ছায়া ভালো আছস? আজ কি হইছে জানস। তার আর ছায়ার এই অবারিত আলাপের দৃশ্য মা ঠাম্মার বা অন্যদের দৃষ্টিগোচর হয় মাঝে মধ্যে। ঠাম্মা বলেন, ছায়ার লগে কথা কইতে নাইরে বইন, অসুখ হয়। মা মুখ টিপে হাসেন, মেয়ের তার এত্ত এত্ত কথা; ছায়া ছাড়া কেউ-ই বা শুনবে! বড়দি-দাদা দেখে ফেললে মহা বিপদ, ওরা হেসেই কুটিকুটি।

স্কুল শুরু করার পর বালিকার কথা বলার বন্ধু জুটে যায় অনেক, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঠিক তারই মতোই মুখরা। দিনটি তাদের সাথে অকারণ বকবকানিতে কেটে যায় কখন, সে টের-ও পায় না। শহরের ইলেক্ট্রিক বাতির সন্ধেতে তার ছায়াটি আর আগের মতো অপরূপ ঘন হয়ে দেখা দেয় না। আর সেসময় বালিকার স্কুলের পড়া, বাড়ীর কাজ থাকে বেশ। সন্ধ্যে কেটে যায় অঙ্ক-বাংলা-ভূগোলে। হালকা বর্ণের ছায়াটি নিঃশব্দে পাশে বসে বালিকার পড়া করা দেখে। সকালে স্কুলের পথে, দুপুরে বাড়ি ফেরার পথে, বিকেলে খেলতে যেতে যেতে রোদের আলোয় ছায়ার সাথে তার নিত্য দেখ হয় তবু। যদিও তেমন করে গল্প হয়না, তবু বালিকা মাঝেই মাঝেই ছায়ার দিকে তাকিয়ে সবার অলক্ষে চুপিসারে জানতে চায়, ছায়া ভালো আছিস?

সেইসব দিনও কেটে গেছে আজ অনেক কাল। বালিকা এখন প্রথম বিশ্বের ব্যস্ত-সমস্ত ডাক্তার। সাথে সাথে আছে- স্বামী-সন্তান-ঘরকন্যা-বন্ধু-বান্ধব। তার কন্যাদের একজন আজ কিশোরী, অন্যজন বালিকা। মায়ের মতো দুজনের-ই অনেক কথা বলার স্বভাব, যদিও কিশোরী আজকাল বন্ধুদের সাথে গল্প-আড্ডাতেই বেশী আগ্রহী। বালিকা কন্যাটি অনর্গল কথা বলে যায়, ঠিক মায়ের মতোই। তবে এ কিন্তু ছায়ার সাথে কথা বলা শিখেনি। প্রথম বিশ্বের মেয়েদের স্কুল, ডে-কেয়ার, আফটার স্কুল এক্টিভিটিতে ব্যস্ত জীবন, ছায়ার সাথে নিরিবিলি বন্ধুত্বের অবসর তাদের ঠিক হয়ে ওঠে না। সে বরং টেলিফোনে বন্ধুর সাথে কথা বলে, অথবা টিভি শো এবং ভিডিও গেমে ডুবে থেকে না বলা কথাগুলো বলতে ভুলে যায় ।

প্রথম বিশ্বের লোডশেডিং বিহীন ঝকেঝকে আলোর সন্ধ্যায়, ছায়াটি আজকাল অনেক ম্লান। তবু মেয়েটি জানে, ছায়া আজো আছে তার হাতে ধরে, পাশে পাশেই। নিত্য তাদের কথা হয়না আর। যদিও তার কথা বা গল্প কোনটি কমেনি এতটুকুও। আজকাল তার গল্প-কথারা ঠাই পায় ওয়ার্ড প্রসেসরে। সে জানে, নিজের সাথে আপনে মনে বলে যাওয়া সেইসব কথাগুলো ছায়া ঠিক শুনে নেয় আগের মতোই নিঃশব্দে। এখনও কোন কোনদিন ব্যস্ত সকালে মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে দেবার ফাঁকে, দুপুরে হাসপাতাল আর অফিসের মধ্যে দ্রুতগতিতে ড্রাইভ করতে করতে, ক্লান্ত বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে এক্সিলেটরে চাপ দিতে দিতে ছায়াটি ধরা পড়ে তার কোন কোন অপলক মুহূর্তের দৃষ্টিতে। যেমন ধরা পড়েছিল সেদিন; সপ্তাহ শেষের নিমন্ত্রণে যাবার জন্য সাজ-গোজ শেষ করে বাতি নিভিয়ে হঠাত আয়নায় তাকালে। তার ছায়াসঙ্গীও বেড়ে উঠেছে সময়ের সাথে সাথে তারই মতো। আয়নার ছায়াটিও তার বালিকাবেলা হারিয়েছে প্রতিফলিত নারীর আদলে। মেয়েটি ছায়ার দিকে তাকিয়ে আলতো হাসে, কেমন থাকিস আজকাল ছায়া? তোরও কি বড্ড ব্যস্ত সময়, অনেক জটীল জীবন...?

রীতু


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

কী করে লেখেন এমন! কেমন জানি লাগে পড়তে পড়তে, পড়ার শেষে... বালিকার বালিকাবেলার ছায়ার জন্য অনেক ভালোবাসা, ভালোবাসা প্রথম বিশ্বের ব্যস্ত-সমস্ত ডাক্তারের ছায়াটির জন্যও। ভালোবাসা আপনার জন্য।

দেবদ্যুতি

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক শুভকামনা। পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ছায়াদের কাছে শুভেচ্ছা পৌঁছে দেবো। হাসি

রীতু

'সেই যেখানে সারাজীবন বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে...
সেই যেখানে কেউ যায়না, কেউ যায় নি কোনদিনই...'

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে মানুষের জীবনও হয়েছে দ্রুততর। সে এখন ঊর্ধ্বশ্বাসে ছোটে। তাই ছায়া আর আগের মতো তাকে কাছে পায়না, তার সাথে আর আগের মতো কথা কয়না! তাই ছায়া এখন বড্ড দুঃখী!

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ অনেক অনেক।

রীতু

'সেই যেখানে সারাজীবন বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে...
সেই যেখানে কেউ যায়না, কেউ যায় নি কোনদিনই...'

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

সেই সব দিন আসলেই চলে গেছে, এখন নিজের জন্য এক রত্তি সময় নেই। কতদিন পর যে এই অল্প সময়টুকু বের করে পড়তে বসলাম। আপনার লেখা পড়ে সকালের মন খারাপ ভাবটুকু গাঢ় হলো আরও।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মন খারাপ করে দেবার জন্য দুঃখিত, আর আপনি পড়ে আমার মন ভাল করে দিলেন সেজন্য ধন্যবাদ।

রীতু

'সেই যেখানে সারাজীবন বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে...
সেই যেখানে কেউ যায়না, কেউ যায় নি কোনদিনই...'

তিথীডোর এর ছবি

খুব ভাল লাগলো। চলুক

আয়নার মধ্যে একা :
ছেঁদো আনিসুলপনা হয়ে গেলো, কিন্তু মূল সুরে মিল আছে মনে হয়।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।