প্রিপারেটরী গার্লস স্কুলে যৌন নিগ্রহ প্রসঙ্গে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৪/০৫/২০১৫ - ৯:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রিপারেটরী গার্লস স্কুলে যৌন নিগ্রহ প্রসঙ্গে
শামীম রুনা

সারা দেশে মড়কের মতো ছড়িয়ে পড়েছে নারী নিগ্রহের মতো অসভ্য অসুখটি। নারী নিগ্রহ যেমন নারীর সঙ্গে ঘরে বাইরে ঘটছে তেমনি শিশু নারী কী তরুনী নারী বা বয়ষ্ক নারী কেউ এই নির্যাতন থেকে নিস্তার পাচ্ছে না। এই নিগ্রহ ঘটাচ্ছে পুরুষের মুখোশ পরা কিছু পশু, এরা সমাজের ওপর স্তর থেকে নিম্ন স্তর সব স্তরে পচনব্যধির জীবানুর মতো ছড়িয়ে গেছে। কোনো ভ্যাকসিন এদের রোধ করতে পারছে না।
পহেলা বৈশাখে উৎসবে রাজু ভাস্কর্যের পাশে নারী লাঞ্চিত হয়-কারো কিছু যায় আসে না তাতে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে আবারো নারী রাজপথে লাঞ্চিত হয়-কারো কিছু যায় আসে না তাতে। চলন্ত বাসে নারী ধর্ষিতা হয়-কারো কিছু যায় আসে তাতে। আমরা চোখ বন্ধ করে আছি আর জপ্ করছি, আমরা নিরাপদ আছি। আমরা নিরাপদ আছি।
আমরা নিরাপদ আছি- আমাদের ফ্ল্যাট বাড়ির বাক্সে বন্দী বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে আসি, ভাবি; ওদের একটু বুঝি আনন্দ হবে। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলবে, এক চিলতে মাঠে সবাই ধাক্কা ধাক্কি করে স্কিপিং করবে, ছোঁয়াছুই খেলবে বা দৌঁড়বে। আমাদের বাচ্চাদের আনন্দ বলতে তো ব্যস এটুকুই।
রাজধানীর চল্লিশ বছরের পুরনো স্কুল, বোর্ডের মাপকাঠির দিক থেকে ভালো অবস্থান, বয়েজ সেকশন গার্লস সেকশন এর আলাদা বিল্ডিং, ইংলিশ ভার্সন বাংলা ভার্সন আলাদা আলাদা সেকশন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এই স্কুলে সন্তান ভর্তি করাই আমরা। সেই স্কুলে মেয়েদের বিভাগে; ক্লাশ ওয়ানের ছাত্রী যখন যৌন নিপীড়নের শিকার হয় তখন সে বাচ্চা ধারনা করে নেয়, তাকে কোনো ডাকাত ধরে নিতে চেয়েছিল। যে শিশুটি এখন পর্যন্ত বুঝতে শেখেনি, সেও একজন নারী; তার সঙ্গে এমন বর্বর ব্যবহার আমাদের এটাই জানান দেয় আমরা আজও মানুষ হতে পারিনি। আর বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে প্রথমে তারা বিষয়টি অস্বীকার করে। পরে অভিভাবকদের চাপের মুখে পড়ে তদন্তের নাম করে সময় নিয়ে এখানেও প্রহসন নামের নাটক সূচনা করা হয়, কর্তৃপক্ষ একবার জানায় ঘটনা ঘটিয়েছে কন্সট্রাকসনেরর কাজে নিয়োজিত থাকা কোনো লেবার। তখন প্রশ্ন আসে স্কুল চলাকালীন সময় কী করে বাইরের শ্রমিকদেরর স্কুলের ভেতর কাজ করতে দেওয়া হয়? এরপর কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি ক্যান্টিনের চটপটিওয়ালা ঘটিয়েছে হয়ত কিন্তু সে চটপটিওয়ালা কে তা সনাক্ত করা যাচ্ছে না।(!) এরপর বলা হয়, এটি কোনো সুইপারের কাজ হতে পারে। মেয়েদের স্কুলে ছেলে সুইপার থাকার তো কথা নয়, এখানে তো আয়াদের থাকার কথা, তাই না? তারপর আরো উদ্ভট এবং আজগুবি গল্প এখানেও ফাঁদা হয়। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসার ঘটনার মতো আরো একটি শিশু নিগ্রহের ঘটনা বেরিয়ে আসে, এক সপ্তাহের মধ্যে ঘটা ওই ঘটনাও স্কুল কর্তৃপক্ষকে গোপনে জানানো হয়েছিল। তখন অন্যান্য সব কর্তৃপক্ষের মতো এই স্কুলের কর্তৃপক্ষও নীরব ভুমিকায় দাঁড়ালে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। আর যেহেতু শিশুটি এখনো নারী হয়ে ওঠেনি তাই সে নি:শঙ্ক মনে তাকে ডাকাত ধরে নিয়ে যেতে চেয়েছিল সে কথা বন্ধুদের জানিয়েছিল। ওয়ানের বাচ্চার অভিভাবক প্রথমবার লিখিত অভিযোগ করলে তা স্কুল কর্তৃপক্ষ ছিঁড়ে ফেলে। এক পর্যায়ে স্কুলের রেক্টর জিনাতুন্নেসা অভিভাবকদের বলেন, আপনারা আপনাদের মেয়েদের নিয়ে যান। আমাদের কোনো স্টুডেন্টের দরকার নাই। তারপর তিনি এও বলেন, যেখানে মধু থাকবে সেখানে তো ভ্রমর আসবে। বাহ্ ! রেক্টর ম্যাডাম, এই আপনার ভাষা! এই আপনার বিবেচনা! এই আপনার রুচি! আপনাদের মতো কিছু নিম্ন রুচির অমানুষ আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছে বলেই তো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, এখন স্কুলের ক্লাশ ওয়ানের বাচ্চাও যৌন সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে।
গতকাল অভিভাবকদের আন্দোলনের মুখে আগামী শনিবার পর্যন্ত প্রিন্সিপাল দোষী ব্যক্তিকে ধরবার জন্য সময় নিয়েছেন। এদিকে, এইচ এস সি পরীক্ষার কারণে আজ গার্লস উইংস বন্ধ ছিল। বয়েজ উইংসও হঠাৎ করে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়, কারণ খবর এসেছে; ক্লাশ ফাইভের যে মেয়েটিকে রেপ করা হয়েছিল, সে এতদিন আইসিও’তে ছিল; আজ মারা গেছে। আমি মনে প্রানে প্রত্যাশা করছি এটি যেন একটি গুজব হয়। গত কিছুদিন ধরে যে মানসিক টেনসনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি আমরা সবাই, আর এত কঠিন কঠিন বাস্তবতা বহন করার মতো মানসিক শক্তি নিজের ভেতর কতটুকু অবশিষ্ট আছে জানা নাই।


মন্তব্য

আনন্দ পথিক এর ছবি

সত্য উদঘাটিত হোক, দোষী ও তার রক্ষাকারী শাস্তি পাক -- এই প্রার্থনা।

----- আনন্দ পথিক ----

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কর্তৃপক্ষ সবসময় উল্টোপথে কেন হাঁটে বুঝি না।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

সব অপরাধী এবং অপরাধকে যারা সমর্থন করছে তাদের ছবি প্রকাশিত হোক। সামাজিকভাবে এদেরকে বর্জন করা দরকার এদের আত্মীয় স্বজন সন্তানরা অন্তত এদেরকে চিনে নিক।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

হাসিব এর ছবি

এরকম পোস্ট আরো আসা দরকার। লেখা বিষয়ে পরামর্শ দেই একটা। রেফারেন্সগুলো বেশিরভাগই নৈর্ব্যক্তিকভাবে এসেছে। এগুলো নাম ধরে আসা উচিৎ। যেমন

  • কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার, চটপটিওয়ালা, সুইপার এগুলো কার মুখ থেকে বের হয়েছে?
  • চিঠি ছিড়ে ফেলেছে কে?

ক্লাস ফাইভের মেয়েটার তথ্যটা নিশ্চিত হওয়া গেছে?

উল্লাস চৌধুরী এর ছবি

খবরটি অনেকেই গুজব বলছে।
কিন্তু যতদূর মনে হয় এইটা সরকারি দলকে যেন চাপ নিতে না হয় তার জন্য। ইয়ে, মানে...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।