কাম্য ৮৪০০০ কিলোমিটার

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ২৬/০৭/২০১৫ - ৫:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১. ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেইলওয়ে:

মাতা প্রকৃতি যেখানে বিস্ময়করভাবে কঠোর, মানবজাতি সেখানে অবিশ্বাস্যভাবে উদ্ধত। নির্দয় আবহাওয়ায় পৃথিবীর বৃহত্তম স্নো-ফরেস্ট, পৃথিবীর বৃহত্তম লেক, সর্ববৃহৎ ৩ টি নদী পরাজিত করে, পর্বত উড়িয়ে, ৬২,০০০ মানুষের ২০ বছরের শ্রমের ফসল প্রায় ১০০০০ কিলোমিটারের পৃথিবীর দীর্ঘতম এই রেলওয়ে। পূর্ব-রাশিয়াকে একটি শক্তিশালী যোগাযোগ-ব্যবস্থায় আনার জার অ্যালেক্সান্ডার III এর দেখা স্বপ্ন তাঁর ছেলে নিকোলাস II এর হাত ধরে পরিণত হয় রাশিয়ার গৌরবে। শুধুমাত্র এর নির্মাণেতিহাসই একটি ইতিহাস। ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের পাশাপাশি রেলওয়েটি একটি বড় পর্যটন আকর্ষণ।

সেইন্ট পিটার্সবার্গ বা মস্কো থেকে শুরু করে, শত শত রাশিয়ান শহর আর গ্রাম পার হয়ে ৮ দিন পর পৌঁছানো যায় ভ্লাদিভস্তকে। অথবা চাইনিজ কানেক্টিং ট্রিপ নিলে চলে আসা যায় সিঙ্গাপুর পর্যন্ত। এই ভ্রমণে পৃথিবীর প্রায় এক তৃতীয়াংশ এবং ৭ টি টাইম-জোন পার হয়ে যায় ট্রেইন। অবাক করার বিষয় হচ্ছে ট্রিপের খরচ মাত্র ৭০০ ডলার! অনেক জুটি মধুচন্দ্রিমাও সেরে ফেলে এই মহাকাব্যিক ভ্রমণে। একটি ট্রিপে পৃথিবীর এতোটা দেখে ফেলার সুযোগ বিরল। সব মিলিয়ে অবশ্যই-তালিকায় প্রথম স্থানে রেখে দিলাম ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলওয়েকে।



২. ইউরো ট্রিপ:

মিশিগানের ডাটা সায়েন্টিস্ট র‍্যান্ডি ওলসেন প্রায় ২৬০০০ কিলোমিটারের একটি অপটিমাল পথ হিশেব করেছেন যেটি সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্য অতিক্রম করে ইউরোপ কভার করে. ল্যাপল্যান্ড থেকে মালটা বা লিসবন পর্যন্ত্য রোড ট্রিপে ৪৫ টি পয়েন্ট ছুয়ে পুরো ইউরোপই দেখে ফেলা সম্ভব। প্যারিস, আমস্টার্ডাম, বার্লিন বা ইস্তাম্বুল কিছুই বাদ যাবেনা। টানা ১০ দিনের ড্রাইভিং এ পুরোটা শেষ করা গেলেও অন্তত তিন মাস হাতে নিয়ে বের হব। প্রায় ১৪০০০ ইউরোর মত খরচ ভ্রমণটিকে বারবার স্বপ্ন থেকেও দুরে ঠেলে দেয়। তবু রেখে দিলাম দুইয়ে।


৩. প্যান-আমেরিকান হাইওয়ে:

পৃথিবীর দীর্ঘতম রোড-ট্রিপ না দিলে তো মানসিক অপূর্ণতা থেকে যাবে। তাই এই ট্রিপটা দেবই দেব। ৪৮০০০ কিলোমিটারের অবিশ্বাস্য দৈর্ঘের এই হাইওয়ে কানাডা থেকে শুরু করে ১৮ টি দেশ পার হয়ে আর্জেন্টিনায় গিয়ে শেষ হয়েছে। পানামা ও কলম্বিয়ার মাঝখানে ১০০ কিলোমিটারের রেইন ফরেস্ট গ্যাপ ছাড়া পুরোটাই মোটরভ্রমণ। গভীর জঙ্গল, শুষ্ক মরূভূমি, সুউচ্চ পর্বতমালা, টলমলে নদী কী নেই এই হাইওয়েতে। ১৯৮৯ সালে ইউএসএ প্রস্তাব করেছিলো আমেরিকা মহাদেশটিকে একটি রেইলরোডের আওতায় আনার। কিন্তু ১৯২৩ সালে পরিকল্পনাটি হাইওয়েতে পরিবর্র্তিত হয় এবং ১৯২৮ সালে প্রস্তাবে সবাই সম্মতি দেয়। সবাই নিজ নিজ দেশের অংশ তৈরী করে।

ট্রিপটাতে মোটামুটি ৬ মাস সময় নিলে ১৮ টি দেশের প্রতিটিকে গড়ে ১০ দিন করে দেখা যাবে। সাময়িক ও আর্থিক খরচের কথা চিন্তা করে ট্রিপটাকে 'লাইফে একবার হইলেও' ক্যাটেগরিতে দিয়ে রাখলাম।



-------------------
ফালতু প্রোগ্রামার


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলওয়েতে ভ্রমণ করবার শখ বহুদিনের। জানি না শখটা পূরণ করতে পারব কি না, তবে চেষ্টা অবশ্যই করব।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।