সিনেমা আসিবার পুর্বেই

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০১/০১/২০১৬ - ৭:৪৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২০১৬’র শুরু থেকেই চলচ্চিত্র নিয়ে নিয়মিত লেখার একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলাম। ইচ্ছে ছিল ৮৮তম অস্কারের সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র পুরষ্কারের জন্য মনোনীত চলচ্চিত্রগুলো দিয়ে শুরু করবো। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের দৈনিক প্রথম আলোর ‘আনন্দ’ তে চলচ্চিত্র নির্মাতা রেদওয়ান রনির বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিষয়ক অত্যন্ত ‘নাইঈভ’ অত্যন্ত ‘শভিনিস্টিক’ লেখাটি পড়ে নিজেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সম্ভাবনা নিয়ে একটি লেখা ফেঁদে বসবার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। তাই এটি দিয়েই শুরু করছি।

লেখার পেছনের মূল ভাবনাটা শুরুতেই জানিয়ে দিই।

বাস্তবতা কঠিন, ঠিক। কঠিন বাস্তবতা শিশুদের থেকে লুকোনো যায়, তাদের চোখের সামনে একটি কাল্পনিক বাস্তবতার চিত্র ধরে রাখা যায় তাদেরকে নিরাপত্তা দেবার জন্য, কারণ বাস্তবতার কাঠিন্য সামলানোর সামর্থ্য তাদের হয়ে ওঠেনি। সামর্থ্য হবে না তা নয়, জীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়ই সে সামর্থ্য হয়ে উঠবার জন্য যে পরিমাণ সময় দরকার তত সময় তাদের জীবনে অতিবাহিত হয় নি, তারা শিশুমাত্র। কিন্তু একটা সময় পরে বাস্তবতা তাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখে তাদেরকে কাল্পনিক দুনিয়ায় থাকতে দেওয়াটা তাদেরকে পঙ্গু করে রাখবার সমার্থক হয়ে ওঠে। বরং বাস্তবতা, সে যতো কঠিনই হোক, তার স্পষ্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিং জরুরি, জীবনে এগিয়ে যাবার জন্য এবং শুধু নামমাত্রে এগিয়ে যাবার জন্যই নয়, গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি করবার জন্যেও।

খাঁদে পড়ে থাকা ব্যক্তি ঘরে তার বিছানায় ঘুমিয়ে আছে কল্পনা করে নিলে তার আর খাঁদ থেকে ওঠা হবে না। কল্পনা পুষবার বিলাসিতা তার নেই। খাঁদ থেকে ওঠা জরুরী। কারণ তার ঘরের বিছানা শূন্য পড়ে আছে।

হিয়ার গোওজ!
*

রেদওয়ান রনি বলছেন, “নানান চড়াই-উতরাই পার হয়ে বিশ্ব চলচ্চিত্রের দিকে দুর্দান্ত সব প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা, আর দেশীয় চলচ্চিত্রের বাজার চাঙা করতে একের পর এক নানান কায়দায় চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রবল উৎসাহে।” বলছেন, “২০১৫ সালে সবচেয়ে বড় অর্জন আমি মনে করি, বিশ্ব চলচ্চিত্রে আমাদের অবস্থান জানান দেওয়া যে আমরা তৈরি হচ্ছি বেশ ভালোভাবেই।” বলছেন, “২০১৬ হচ্ছে আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের অফুরন্ত সম্ভাবনার বছর। আকাঙ্ক্ষিত কয়েকজন প্রতিভাবান নির্মাতার চলচ্চিত্র আসতে যাচ্ছে নতুন বছরে। এই ছবিগুলোই আমাদের মূলধারার চলচ্চিত্রর নতুন প্যাটার্ন তৈরি করবে, উন্মোচন করবে নতুন দিনের নতুন বাজার তৈরির সব সম্ভাবনা।” বলছেন, “ইতিমধ্যে দর্শকের ভালোবাসা পাওয়া প্রতিভাবান নির্মাতাদের পরবর্তী ছবিগুলো নতুন বছরে বক্স অফিস কাঁপানোর সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনেও আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়ে দেবে—এ কথা হলফ করে বলতে পারি।” বলছেন, “আমাদের রয়েছে প্রতিভাবান নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলী, ভালো চলচ্চিত্রর দর্শক সবই, দরকার শুধু বাণিজ্যিক কাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে ছোট্ট একটু পৃষ্ঠপোষকতার।”

বাস্তবতার অলীক পাঠ। এবং অলীক স্বপ্নের বন্যা। ছাতামাতা।
*

না, বিশ্ব চলচ্চিত্রের দিকে দুর্দান্ত কোন প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে চলছি না আমরা।

২০১৫ তে বাংলাদেশের কয়েকটি চলচ্চিত্র বেশ কয়েকটি ‘আন্তর্জাতিক’ চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করে দেশে(সংবাদমাধ্যমে) হইচই ফেলে দিয়েছিল। জালালের গল্প গেল, গাড়িওয়ালা গেল, মেঘমল্লার গেল। জালালের গল্প পর্তুগালের এক শহরের এক চলচ্চিত্র ক্লাবের আয়োজন করা এক ‘আন্তর্জাতিক’ চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চলচ্চিত্রের পুরষ্কার পেল। কিন্তু পর্তুগালের কোন পরিবেশক কি পর্তুগালে জালালের গল্প পরিবেশন করবার স্বত্ব কিনে নিলো? পর্তুগালের হলগুলোতে কি জালালের গল্প মুক্তি পেল? না। মেঘমল্লার টরন্টোতে গেল, হলিউড রিপোর্টারের রিভিউতে টড ম্যাকার্থি লিখল, ‘ড্র্যামাটিক্যালি এন্ড টেকনিক্যালি এ্যমেচারিশ মেলোড্রামা’, জানাল এমনকি চলচ্চিত্রটির সাবটাইটেলও ‘অকওয়ার্ডলি ট্র্যান্সলেইটেড’ এবং ‘ফ্রিকোয়েন্টলি মিসস্পেলড্‌’। সোজাসাপ্টা অপমান। গাড়িওয়ালার কথায় না যাই, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

কিন্তু চলচ্চিত্র উৎসবে আসলে কেন অংশ নেওয়া? চলচ্চিত্র উৎসবে সফলভাবে অংশগ্রহণ করা বলতে কি বোঝায়? পাশের দেশ ভারতের একটি সাম্প্রতিক চলচ্চিত্রের উদাহরণ দিয়ে বোঝাই। চৈতন্য তামহানের ‘কোর্ট’। উল্লেখ করতে ইচ্ছে করছে, কোর্টের নির্মাণ যখন শুরু হয়, তখন তামহানের বয়স মাত্র ২৪ কি ২৫ বছর।

কোর্ট/২০১৪

কোর্ট চলচ্চিত্রটি ২০১৪ সালের ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে হরাইজনস বিভাগে প্রদর্শনের জন্য নির্বাচিত হয়। উৎসব শেষে কোর্ট সেই বিভাগের সেরা চলচ্চিত্রের পুরষ্কারটি পায়। হলিউড রিপোর্টার, ভ্যারাইটি, ন্যু ইয়র্ক টাইমস, রজারএবার্ট.কম, স্ল্যান্ট, দ্য প্লেএলিস্ট এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনাগুলো কোর্টের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে। কয়েকটি দেশের পরিবেশকেরা কোর্টের পরিবেশন স্বত্ব কিনে নেয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি, জাইটগাইস্ট ফিল্মস কোর্টের যুক্তরাষ্ট্রে পরিবেশন স্বত্ব কিনে নেয় এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের হলে কোর্ট মুক্তি পায়। এর ফলে কোর্টের ভাণ্ডারে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মানজনক প্রকাশনাগুলোর প্রশংসামূলক রিভিউয়ের সংখ্যা বাড়ে। ভারত থেকে অস্কার দৌড়ে সামিল হবার জন্য কোর্ট কে নির্বাচিত করা হয়। পরিচালক চৈতন্য তামহানে এবং প্রযোজক ভিভেক গম্বার মনোনয়নের জন্য ক্যাম্পেইনিং করতে যুক্তরাষ্ট্রে যায় এবং তাদের কেউই আমির খান নন তাই তাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব করে তারা শূন্য হাতে ফিরে আসে।

কোর্ট ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিতে পেরেছিল, নিয়েছিল বলেই এতদূর যেতে পেরেছিল। ২০১৩ তে রিতেশ বাতরা’র ‘লাঞ্চবক্স’ কান উৎসবের পাশাপাশি চালু একটি প্রতিযোগিতামূলক বিভাগ ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস উইক’ এ অংশগ্রহণ করেছিলো বলেই, প্রদর্শনীর পরে স্ট্যান্ডিং ওভেশান পেয়েছিলো বলেই, দর্শকদের ভোটে পুরষ্কৃত হয়েছিল বলেই, সনি পিকচারস ক্লাসিকস চলচ্চিত্রটির যুক্তরাষ্ট্রে পরিবেশন স্বত্ব কিনে নিয়েছিলো বলেই, যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র সমালোচকেরা এর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলো বলেই চলচ্চিত্রটি অস্কারের সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হবার দোরগোড়ায় পৌঁছেছিল। ভারতের সেই বছরের অস্কার কমিটির নির্বুদ্ধিতায় হাতছাড়া হয়ে যায় দুর্লভ সুযোগটি। ২০১৫ তেও বিশ্বের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলোতে(কান, ভেনিস, টরন্টো, সানড্যান্স, লোকারনো) ভারতের চলচ্চিত্রের অংশগ্রহণ এবং পুরস্কারপ্রাপ্তি ছিল। একে বলা যায় বিশ্ব চলচ্চিত্রের দিকে দুর্দান্ত সব প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।

জালালের গল্প কিংবা গাড়িওয়ালার মতো অপ্রয়োজনীয় অগুরুত্বপূর্ণ একাধিক অখ্যাত উৎসবে ঘুরে আসা বা পুরস্কৃত হওয়া কোন অর্জন নয়। বিশ্ব লক্ষ্যও করে না।

গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবে যেতে হবে। কান, ভেনিস, বার্লিন, লোকার্নো, টরন্টো, সানড্যান্স। যে সব উৎসব চলচ্চিত্রের বড় বাজারও। যে সব উৎসবে বড় বড় পরিবেশকদের প্রতিনিধিরা আসে, সম্মানজনক প্রকাশনার সমালোচকেরা, সাংবাদিকেরা আসে। শুধু উৎসবে গেলেই হবে না, পাবলিসিস্ট ভাড়া করতে হবে, প্রচারণা চালাতে হবে, রিভিউ পেতে হবে, মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে। সেইলস এজেন্টদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে যারা পরিবেশকদের প্রতিনিধিদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে, তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করিয়ে দেবে, ডিল নেগোশিয়েট করবে। ইউরোপের বড় দেশগুলোয়, যুক্তরাষ্ট্রের হলে চলচ্চিত্র মুক্তি পেতে হবে। আশিটি দেশের একটি দেশ হয়ে নামমাত্রে অস্কার দৌড়ে সামিল হলেই হবে না, যুক্তরাষ্ট্রে যেতে হবে, পাবলিসিস্ট ভাড়া করতে হবে, অস্কারের জন্য ক্যাম্পেইনিং করতে হবে, একাডেমীর ভোটারদের কাছে ডিভিডি পাঠাতে হবে চলচ্চিত্রের, স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, সাক্ষাতকার দিতে হবে, লেগে থাকতে হবে, শিক্ষিত-স্মার্ট(মানসিকভাবে) হতে হবে, লেগে থাকতে হবে, শ্রম দিতে হবে, লেগে থাকতে হবে।

বিশ্ব কি ভোরবেলার বাসার টয়লেট যে চাপলেই দুর্দান্ত(!) প্রস্তুতি নিয়ে তার দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়?
*

অস্কার গুরুত্বপূর্ণ কেন? অস্কারে মনোনীত হলে কিংবা অস্কার পেলে কি হয়?

এক্সপোজার পাওয়া যায়।

সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলে কিংবা পুরস্কার পেয়ে গেলে সাধারণত বড় প্রজেক্ট পাওয়া যায়, বড় প্রযোজক পাওয়া যায়, নামী অভিনেতা-অভিনেত্রী পাওয়া যায়; মনোনয়ন কিংবা পুরস্কার প্রাপ্তি হল উপরে উঠবার সিঁড়ি। বেশী নয়, কেবল গত কয়েকটি বছরের মনোনীত চলচ্চিত্রগুলোর নির্মাতাদের অস্কার পরবর্তী চলচ্চিত্রগুলোর তথ্য দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।

তবে আমি একটি পুরনো উদাহরণ টানি। আলেহান্দ্রো গোন্সালেস ইনারিতু। আমোরেজ পেরোজ নির্মাণ করলো। ক্যানের প্যারালাল সেই ক্রিটিকস উইকে সেরা চলচ্চিত্র, বাফটা মনোনয়ন, অস্কার মনোনয়ন। পরবর্তী চলচ্চিত্র যুক্তরাষ্ট্রের একটি সদ্য প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রযোজনায় ‘২১ গ্র্যামস’, অভিনেতা-অভিনেত্রী কারা? শন পেন, নেওমি ওয়াটস, বেনিচ্চিও দেল তরো। হল? এর পরে ‘ব্যাবেল’, সাথে কে? ব্র্যাড পিট্‌, কেইট ব্ল্যানশেট। ও হ্যাঁ, অস্কারে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন প্রাপ্তি। আরও পরে ‘বার্ডম্যান’র জন্য সেরা চলচ্চিত্রের, সেরা পরিচালকের, সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের পুরস্কার জয়। এবছর ‘দ্য রেভেন্যান্ট’ এর জন্য আবারও মনোনয়ন নিশ্চিত, পুরস্কার জয় হতে পারে।

এসবই অবশ্যই চলচ্চিত্র নির্মাণের মান বজায় রেখেছে কিংবা উন্নত করেছে বলেই, এমনি এমনি নয়। অস্কারের জন্য মনোনয়ন প্রাপ্তি কিংবা অস্কার জয় কেবল সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে পারে, দরজা দিয়ে ঢুকবার, রুম পেরিয়ে পরবর্তী দরজায় যাবার দায়িত্ব নির্মাতার।

পূর্বে উল্লেখিত রিতেশ বাতরা অস্কারে মনোনীত হবার সুযোগ হারালেও বাফটার মনোনয়নের কারণেও যথেষ্ট এক্সপোজার পেয়েছিলেন যার ফলস্বরূপ এখন চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন বিবিসি ফিল্মস এর প্রযোজনায়, অভিনেত্রী হিশেবে পেয়েছেন শারলট্‌ র‍্যাম্পলিংকে, যিনি এবছর অস্কারে সেরা অভিনেত্রী পুরস্কারের জন্য মনোনীত হতে পারেন। আরও অন্যান্য যারা আছেন তারাও সুপরিচিত, কিন্তু আর কথা বাড়ালাম না। আই থিংক আই হ্যাভ মেইড মাই পয়েন্ট।
*

জালালের গল্প, গাড়িওয়ালা কিংবা মেঘমল্লার, কিংবা আরও, সুতপার ঠিকানা, বাপজানের বায়োস্কোপ, ঘাসফুল- এসব চলচ্চিত্র পারে না কেন?

অশিক্ষিত প্রযোজক। অশিক্ষিত বলতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, স্কুল কলেজে পড়েনি তা বলছি না। অনার্স-মাস্টার্স-এমফিল-পিএইচডি করা ব্যক্তিও অশিক্ষিত হতেই পারে। অশিক্ষিত অনেক রকমের হয়। দেয়ার আর কি বলে মেনি থিংস ইন আর্থ এন্ড আর্থ।

প্রযোজকেরা জানে না প্রযোজনা কাকে বলে। কিভাবে সঠিক তত্বাবধানে শার্প-স্মার্ট চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হয়। আধুনিক চলচ্চিত্র বিশ্ব কিভাবে ওয়ার্ক করছে এই বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। চলচ্চিত্রকে বিশ্বের কাছে কিভাবে উপস্থাপন করতে হয় এই ব্যাপারে কোন ধারণা নেই। কে জানে, খুব সিম্পলি, হয়তো কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষাই নেই। চলচ্চিত্র একটা বানিয়েছে, কোনরকমে একটা প্রিমিয়ার করেছে, বন্ধুবান্ধব পরিচিত-জনেরা দেখেছে, ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে, কমেন্টে সবার সাধুবাদ সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র, এক সপ্তাহ থেকে টিভি হয়ে ইউটিউবে চলে গেল, ডান। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের লোকজনদের কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। সেটার তো কোন ওষুধ থাকতে পারে না! . . . অন্যদিকে যাই।

বিশ্বমানের গল্পের অভাব। যে গল্পের সাথে বিশ্বের যে কোন প্রান্তের মানুষ ‘মানুষ’ হিশেবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে, সম্পর্ক করতে পারবে। মানুষের গল্প, জীবনের গল্প।

গত বছর রব উঠলো ‘আমাদের গল্প’ বলতে হবে। শাকিব খানও দেখি বলছে আমাদের গল্প বলতে হবে, আঁই ভিশুমাইক! আমাদের গল্প কি রে ব্যাটা? ‘আমরা’ টা কারা? বাংলাদেশে কি কেবল এক রকমের ‘আমরা’ আছে নাকি? কত রকমের ‘আমরা’! ‘আমাদের গল্প’ টা কাদের গল্প? এত প্যাঁচানোর কি আছে? মানুষের গল্প বল। চরিত্রগুলোকে ভালবেসে বল, যত্ন নিয়ে বল, বাস্তবতা ঘেঁষে বল, ডিটেইলে বল, গভীরে বল। মানুষের, জীবনের গল্প বল। ব্যাস হল তো। কিন্তু সমস্যা কি? গল্প বলতে পারছে না কেন?

অশিক্ষিত চিত্রনাট্যকার। চলচ্চিত্রের ভাষা সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই। মাথায় কিছু নেই। পড়াশোনা নেই। বিশ্বের সেরা সাহিত্য, পড়া নেই। বিশ্বের সেরা চলচ্চিত্র বারবার বারবার দেখা নেই। বিশ্বের সেরা চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য গভীরভাবে পড়া নেই। কোন ভাবনা নেই, গভীর ভাবনা। আরে কি বলছি, চিত্রনাট্যকার বলেই কি কিছু আছে নাকি। বেশীরভাগ নির্মাতা নিজেই নিজের চিত্রনাট্য রচনা করেন। তাহলে কোন দিকে যাচ্ছি?

এই রোগেরও কোন ঔষধ থাকতে পারে না।
*

. . . আর দেশীয় চলচ্চিত্রের বাজার চাঙা করতে একের পর এক নানান কায়দায় চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রবল উৎসাহে।

কি প্রবল উৎসাহে কি কি কায়দায় দেশীয় চলচ্চিত্রের বাজার চাঙ্গা করতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা তা বোধগম্য হল না। বাজার মানে বাজার, ভোক্তা আমরা, আমিও একজন ভোক্তা। বাজার চাঙা করবার চেষ্টা সবার আগে আমার চোখে পড়বার কথা কারণ সে চেষ্টা আমাকে লক্ষ্য রেখেই করা হবার কথা।

আর আবার ‘আমরা’। ‘আমরা’ কারা? এদেশে এভরি চলচ্চিত্রমেকার ফর হিমসেল্ফ। সবাই যার যার চলচ্চিত্র নিয়ে ব্যস্ত কারণ তার তার চলচ্চিত্র তার তার সপ্তাহে বাংলা চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরিয়ে আনছে এক সপ্তাহের জন্য, বাকীরা সামান্য করে শুভেচ্ছা জানাবে। এখানে কোন ‘আমরা’ ফোর্স লক্ষ্য করা যায় না যারা একযোগে দলবদ্ধ হয়ে নিজ নিজ কাজ ঠিকই করছে কিন্তু পাশাপাশি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সার্বিক উন্নয়নের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে কাজও করে চলেছে।

আর প্রচারণা। হায়রে প্রচারণা। চলচ্চিত্রের কোন প্রচারণা নেই।

দেয়ালে ঢালাও পোস্টার, মোড়ে মোড়ে কিছু বিলবোর্ড ঝুলিয়ে দিলেই দল বেধে লোকে আপনার চলচ্চিত্র দেখতে চলে আসবে? প্রচারণা কাকে বলে? ডিজিটাল মার্কেটিং?

মোরশেদুল ইসলাম একজন প্রবীণ নির্মাতা, বেঙ্গলের প্রযোজনায় ‘অনিল বাগচীর একদিন’ এর নির্মাণ যখন চলছিলো বললেন, ‘এবার আমরা প্রচারণাটা একটু ভালোভাবে করবো।’ ভাবলাম বেঙ্গল যেহেতু, দেখা যাক। কোন দিক দিয়ে এলো, একটা এ্যমেচারিশ পোস্টার, কোন দিক দিয়ে মুক্তি পেল! চুপি চুপি বল কেউ জেনে যাবে টাইপ ব্যাপার?

হলের সঙ্কটের(এই বিষয়ে পরে আরও বলছি) এই সময়ে প্রচারণার গুরুত্ব আরও বেশী। যত বেশী সংখ্যক আগ্রহী আধা-আগ্রহী দর্শককে হলে এনে ঢোকানো যায় ততই মঙ্গল, সেখানে প্রযোজকদের কি অযোগ্যতা নাকি আলসেমি(তা কি করে হয়!) কে জানে!

আয়নাবাজি/২০১৬

অমিতাভ রেজা ‘আয়নাবাজি’ প্রসঙ্গে বললেন যে তিনি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সাহায্য ছাড়াই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন, বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রির লোকজন তথা তার হ্যাফ-স্টপ-ডাউন এর ক্রু দের সহায়তায়। বিজ্ঞাপনী সংস্থা গ্রে ঢাকার এমডি গাউসুল আলম শাওন আয়নাবাজির অন্যতম চিত্রনাট্যকার এবং একজন অভিনেতাও বটে আর অমিতাভ রেজাও মূলত বিজ্ঞাপন নির্মাতা। দেখা যাক তারা আয়নাবাজির জন্য কি ক্যাম্পেইন মাউন্ট করে।
*

বিদেশ নিয়ে কি সব বকছিলাম না? কান, ভেনিস, বার্লিন, লস এঞ্জেলেস? আবার রেদওয়ান রনির কথা ধরে টান দিই। “২০১৬ হচ্ছে আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের অফুরন্ত সম্ভাবনার বছর। আকাঙ্ক্ষিত কয়েকজন প্রতিভাবান নির্মাতার চলচ্চিত্র আসতে যাচ্ছে নতুন বছরে। এই ছবিগুলোই আমাদের মূলধারার চলচ্চিত্রর নতুন প্যাটার্ন তৈরি করবে, উন্মোচন করবে নতুন দিনের নতুন বাজার তৈরির সব সম্ভাবনা।

আকাঙ্ক্ষিত কয়েকজন প্রতিভাবান নির্মাতা(আমার মতে নয়, রনি’র মতে) আসছে এটা ঠিক। অমিতাভ রেজা, নুরুল আলম আতিক, গিয়াসউদ্দীন সেলিম, অনিমেষ আইচ, আশুতোষ সুজন, ইফতেখার আহমেদ ফাহমি, রেদওয়ান রনি নিজে, তৌকীর আহমেদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, কামার আহমেদ সাইমন, দীপংকর দীপন প্রমুখ। এই বছর একেবারে জ্যাম লেগে যাবে। কিন্তু “ . . . এই ছবিগুলোই আমাদের মূলধারার চলচ্চিত্রর নতুন প্যাটার্ন তৈরি করবে, উন্মোচন করবে নতুন দিনের নতুন বাজার তৈরির সব সম্ভাবনা।

বাজার তৈরি?

চলচ্চিত্র নামক পণ্যটি বিক্রয়ের প্রধানতম মাধ্যম, যেটি বাংলাদেশে একমাত্র মাধ্যম, সেটি হল- ‘হল’। শাকিব খান-অপু বিশ্বাস বিনে আপনি যতই প্রতিভাবান হন না কেন আপনার জন্য কোন বুকিং মানি নেই। আপনার জন্য বরাদ্দ স্টার সিনেপ্লেক্স, তাও দিনে একটা দুটো শো সেটাও ধীরে ধীরে কমে এসে মিলিয়ে যাবে মার্ভেল সিনেম্যাটিক য়্যুনিভার্সের চাপে, আর যমুনা ব্লকবাস্টার, সেখানে মাস কেন বছর ধরে চলবে কিন্তু কেউ দেখতে যাবে না, আর বলাকা- এক সপ্তাহ, টাটা।

আর অন্যান্য ঘুপচি হলে মুক্তি যদি দিনও বা, আপনার হাই ডাইনামিক রেইঞ্জের এ্যারি এলেক্সা রেড ড্র্যাগনে ক্যাপচার করা ডা ভিঞ্চি রিজলভে সাধ করে কালার কারেকশান করা টু'কে রেজোলুশান এর চলচ্চিত্রটি যখন পেনড্রাইভের মাধ্যমে দ্য-গ্রেট-ধোলাইখাল-অফিস-প্রজেক্টর দিয়ে প্রজেক্ট করবে আগের রাতে পাশের কমিউনিটি সেন্টারের বিয়ের ভোজের টেবিলগুলোর সাদা কভার সেলাই দিয়ে তার উপরে, আপনি তখন অন্ধকারে হাতড়ে এক্সিট খুঁজে না পেয়ে মুখে ফেনা তুলে আইলে গড়াগড়ি দেবেন।

বাজার তৈরি করার ক্ষমতা নির্মাতাদের হাতে নেই। সেটা স্টার সিনেপ্লেক্সের এমডি মাহবুব রহমান রুহেল এর মতো ব্যবসায়ীদের হাতে। ব্যবসায়ীরা কি বলে?

স্টার সিনেপ্লেক্সে এখন ৬টি পর্দা। থ্রিডি আছে, মাহবুব রহমান রুহেল আই-ম্যাক্স শীঘ্রই আনবার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন। সীমান্ত স্কয়ারে আরেকটি মাল্টিপ্লেক্স করছেন। শুনেছিলাম গুলশানেও একটির কাজ চলছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের বিভিন্ন শহরে সর্বমোট বিশটি মাল্টিপ্লেক্স করবেন বলে ভাবছেন। ভালো। হোটেল ব্যবসা-পাইপলাইন কন্সট্রাকশান ব্যবসা-উচ্চাকাঙ্ক্ষা-স্বপ্নও ছিল বলে বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে দিয়ে আজকে ডে এন্ড ডেইট রিলিজ দিচ্ছেন হলিউডের জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলো, ডলবি এট্‌মস সাঊন্ড সিস্টেমে শোনাচ্ছেন, ক্রিস্টি ডিজিটাল প্রজেক্টরে থ্রিডি দেখাচ্ছেন, আই-ম্যাক্স আনবেন বলছেন।

কিন্তু বাকী হলগুলো তো সিনেপ্লেক্স হতে পারবে না। সেগুলোর মান পড়তেই থাকবে, সেগুলো একে একে বন্ধই হতে থাকবে। আবার রেদওয়ান রনির কথায় ফিরি, “আমাদের রয়েছে প্রতিভাবান নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলী, ভালো চলচ্চিত্রর দর্শক সবই, দরকার শুধু বাণিজ্যিক কাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে ছোট্ট একটু পৃষ্ঠপোষকতার।

আমাদের প্রতিভাবান নির্মাতা আছে কি? আর ভালো চলচ্চিত্রের দর্শক? কতো দর্শক? ১৭ কোটি মানুষের দেশে অমিতাভ রেজার(বলছি না সে প্রতিভাবান) ‘আয়নাবাজির’ দর্শক কতজন? আর, বাণিজ্যিক কাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে কি কেবল ছোট্ট একটু পৃষ্ঠপোষকতার দরকার?

ছোট্ট একটু?

লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে আধুনিক হল নির্মাণ করবে কে? কে পৌনে কোটি, কোটি টাকার ডিজিটাল চলচ্চিত্র প্রজেক্টর কিনবে একটা নয়, একাধিক আর কে জানে কয় বছর লোকসান দিয়ে চালাবে কিন্তু থিয়েটারের মান ধরে রাখতে থাকবে? কারণ সহজ স্পষ্ট বাস্তবতা এটাই যে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে দাঁড় করাতে হলে কিছু মানুষজনকে, কিছু উদ্যোক্তাকে, একটা গোষ্ঠীকে নিঃস্বার্থ ভাবে চলচ্চিত্রের খাতিরে বিশাল পরিমাণ লোকসান দিতে হবে। এন্ড দ্যাটস নট গোয়িং টু হ্যাপেন, নট ইন দিস কান্ট্রি।

নতুন দিনের নতুন বাজার তৈরির কোন সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতে নেই। এই বছর তো নয়ই। এই বছরের মেধাবী নির্মাতাদেরকে এসে প্রিমিয়ার করে ছবি তুলে ফেইসবুক আর ভবিষ্যতের জন্য স্মৃতি সংগ্রহ করে আড্ডা দিয়ে বন্ধু-পরিচিতজনদের নিয়ে নিজের চলচ্চিত্র দেখে সবার বাহ্‌বা এবং রাতের খাবার খেয়ে এক সপ্তাহ হলে হলে ঘুরে শেষে বাসায় চলে যেতে হবে বিজ্ঞাপন নির্মাণের জন্য নাটক নির্মাণের জন্য অন্য আরও কি আছে কাজ, সেজন্য।

এজন্যই বিদেশে নিয়ে বকছিলাম। আসছি সেকথায়।
*

চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন হল নেই। ঘটনা এখানেই শেষ। হল না থাকলে প্রদর্শন করবে কোথায়?

প্রদর্শন করতে পারে, আই মিন পারতো, পারবে যে তা না, কিন্তু পারতো। দেশের বাইরে, যেখানে মানসম্পন্ন হল আছে, ভিনদেশী ভাষার ভিনদেশী সংস্কৃতির চলচ্চিত্রের ব্যাপারে আগ্রহী দর্শকগোষ্ঠী আছে(এরা কমছে যদিও, দিনে দিনে), চলচ্চিত্র পরিবেশনের একাধিক মাধ্যম আছে। ইউরোপের দেশগুলোতে, যুক্তরাষ্ট্রে, বিশ্বজুড়ে। শুরুতে যেভাবে আলোচনা করেছি। পারতো। যদি উপযুক্ত মানসিক প্রস্তুতি থাকতো, শিক্ষা থাকতো উপযুক্ত, প্রকৃত উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকতো যদি। পারতো। পারবে না।
*

এ বছর ফ্রান্স থেকে অস্কারে পাঠানো হয়েছে ‘মাসট্যঙ’ নামের একটি চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশী দর্শক দেখলে খুব অবাক হবে, কারণ চলচ্চিত্রটি খুব সহজেই বাংলাদেশী চলচ্চিত্র হতে পারতো। গল্পটি একটু বলি বোঝানোর জন্য। তুরস্কের গ্রাম দিকের একটি এলাকার একটি পরিবারের পাঁচটি মেয়ের গল্প। অত্যন্ত রক্ষণশীল মুসলমানদের এলাকা। পাঁচ কিশোরী, কেউ সদ্য পা দিয়েছে, কেউ পার হয়ে যাচ্ছে। পাঁচ বোন ওরা।

তাদেরকে আর ছেলেদের সাথে মিশতে দেওয়া হয় না। হিজাব করতে বাধ্য করা হয়। বাসায় বন্দী করে রাখা হয়। রান্নাবান্না শেখানো হয়। বিয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়। সেলাই শেখানো হয়। বিয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়। পাত্র দেখতে আসে। একজনের পর একজনকে পার করে দেওয়া হয়। একজনের বাসর রাতে স্বামী সেক্সের পরে বিছানার ধবধবে সাদা চাদরে লাল ছোপ খুঁজতে হামাগুড়ি দেয়। দরজার বাইরে স্বামীর পরিবারের সবাই অপেক্ষমাণ, অস্থির হয়ে আছে সাদা চাদরে লাল দাগ দেখবার জন্য।

তাদের জীবন শেষ পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন কলমে হয়। গল্পটা বন্দিত্বের, স্বাধীনতারও।

মাসট্যঙ/২০১৫

মাসট্যাঙ এবার অস্কারের জন্য মনোনীত হবে তা প্রায় নিশ্চিত। পরিচালক দেনিজ গ্যামজে এরগ্‌য়্যুভেন(যার এটি প্রথম চলচ্চিত্র) তরতর করে উঠে যাবে তা-ও নিশ্চিত। চলচ্চিত্রটি দুই মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি আয় করেছে এখন পর্যন্ত, এটা অবশ্য চলচ্চিত্রটির প্রযোজকের লাভের সঠিক হিশেব নয়। খুব যে অসাধারণ নিখুঁত কোন চলচ্চিত্র তা নয়, দুর্বলতা আছে অনেক। কিন্তু পথটা হেঁটেছে ঠিক মতো। পথে চলতে চলতেই দুর্বলতা কাটিয়ে নেবে।

মাসট্যাঙ খুব সহজেই কোন এক বাংলাদেশি নির্মাতার চলচ্চিত্র হতে পারতো। হল কটা আছে গোণা লাগতো না। শিক্ষিত হওয়া লাগতো শুধু।

সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
*

সিনেমা দেরীতে
০১.০১.২০১৬


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

আপনার গোটা লেখায় দেশে সবচেয়ে বেশি ঢোলে-বাড়ি-পাওয়া সিনেমানির্মাতার মুখোশধারী বিজ্ঞাপননির্মাতা ফারুকী মুড়াকামীর নাম দেখতে না পেয়ে মনে হলো, হয় আপনি ফারুকীকে সিনেমানির্মাতা হিসেবে গোণাতেই ধরেন না, অথবা আপনি ফারুকীর বড় আপন।

লেখাটা আগ্রহোদ্দীপক। আরো লিখুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

হাহাহা! আপনার প্রথম ধারণাটিই সঠিক, ফারুকীকে সিনেমানির্মাতা হিশেবে গোণাতে ধরি না।

আরো লিখবো। ধন্যবাদ।
*
সিনেমা দেরীতে

শেহাব এর ছবি

আমার অনেকদিনের ইচ্ছে মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর চিত্রনাট্যগুলো একটু দেখা।

আবুল ফজল ইবনে মোবারক  এর ছবি

মাসট্যাং এর মত সিনেমা বাংলাদেশের নির্মাতারা বানাবে? লেখক ভাই, আপনার কি মাথা খারাপ?!

সিনেমাটা আমি এখনো দেখি নাই, কিন্তু সিনেমার শুরুর দিকের কাহিনী যতটুকু বললেন, তাতে মনে হচ্ছে এ সিনেমায় মুসলিম সমাজের অতিরিক্ত রক্ষণশীল দিকটাকে তুলে ধরা হয়েছে।

এই রকম ছবি বাংলাদেশে বানাইলে চাপাতির কোপ একটাও মাটিতে পড়বে না, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ধর্মানুভূতিও পর্যন্ত আহত হবে। কার ঘাড়ে কয়টা মাথা ভাই? মাসট্যাং "খুব সহজেই বাংলাদেশী চলচ্চিত্র হতে পারতো" এইরকম কথা আজকের দিনে কি ভাবে ভাবেন, সেইটা ভাইবা আমি তাজ্জব হয়ে যাচ্ছি!

অবশ্য, রিভার্স মাসট্যাং তৈরি হইতে পারে বাংলাদেশে, যেখানে দেখানো হবে যে হিজাব করার কারণে কিভাবে উন্নত নৈতিক চরিত্র নিয়ে বড় হচ্ছে ঢাকা নিবাসী পাঁচ বোন! ট্যাগলাইন হবে হেজাব ইজ দেয়ার চয়েস, নট এনফোর্সড টাইপের গালভরা বুলি! আমাদের সবার প্রাণপ্রিয় নির্মাতা আল্লামা ফারুকি (রহ) সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই বানাবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি কি বলছেন আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু, আপনি বরং সিনেমাটি দেখুন।

মাস্ট্যাঙ ঠিক ওরকম আ্যাটাকিং এ্যপিয়ারেন্স এর চলচ্চিত্র নয়, দেখলেই বুঝবেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতি, সেন্সর বোর্ডের মানসিকতা ইত্যাদি সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। নির্মাতা স্মার্ট হলে, চাইলেই ওভার্টলি কন্ট্রোভার্শিয়াল রূপ না দিয়েও কন্ট্রোভার্শিয়াল বিষয়বস্তু নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারেন। চলচ্চিত্রের ভাষা দিয়ে কেবল সাধারণ দর্শককেই কেন ম্যানিপুলেট করা হবে? প্রয়োজনে সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকেও ম্যানিপুলেট করতে হবে।
*
সিনেমা দেরীতে

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার, গোছানো এবং খাটাখাটুনি করে লেখা! ধন্যবাদ। কিছু কিছু জায়গায় নিজের ভাবনার সাথে মিল পেয়ে বুঝলাম সিনেমা নিয়ে আমার ভাবনা সম্ভবত বেলাইনে যায়নি। সময় পেলে বিস্তারিত মন্তব্য করার চেষ্টা করবো। নিয়মিত লিখে যান।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। সময় বের করে অবশ্যই বিস্তারিত মন্তব্যের মাধ্যমে আপনার ভাবনা জানাবেন। হাসি
*
সিনেমা দেরীতে

স্পর্শ এর ছবি

তবে কি কোনো আশা নেই?


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

ইয়ে, মানে... . . . কি বলবো, আশা তো আসলে সবসময়ই থাকে, ‘কজ দ্যা হুইল ইজ অলওয়েইজ ইন স্পিন। কিন্তু পাহাড় নাড়ানো এক কথা, পর্বত নাড়ানো এক কথা . . . আবার পৃথিবীটা নাড়ানো সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। পৃথিবীর বাইরে দাঁড়ানোর জায়গা প্রয়োজন!
*
সিনেমা দেরীতে

আবু শাহেদ ইমন  এর ছবি

আমি জালালের গল্পের পরিচালক আবু শাহেদ ইমন। আপনার লেখাটা মনযোগ দিয়ে পড়লাম। নিশ্চয়ই এবং অবশ্যই আমাদের উন্নতির আরও অনেক সুযোগ আছে। কিন্তু আপনার এই লেখায় আসলে সব খারিজ করে দেবার যে মানসিকতা এইটা নিয়ে এগিয়ে যাবার ইচ্ছা মরে যায়। লেখাটা পড়ে আমার জীবনের সমস্ত কিছু বাজি রেখে বানানো ছবিটা একজন লেখক এত নির্মমভাবে খারিজ করে দিচ্ছে, দেখে মায়াই লাগল। যাই হোক, যদি সিনেমা নির্মাতা হয়ে থাকেন তাহলে দোয়া রইল আপনার জন্য। আর পরিচয় জানলে ভালো লাগত। ধৈর্য্য নিয়ে এত বড় লেখা লিখবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

আবু শাহেদ ইমন, আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না(অভিয়াসলি!), কিন্তু বিভিন্ন প্রকাশনায়, ফেইসবুকে আপনার বক্তব্য পড়ে আমার মনে হয়েছে আপনি একজন সিম্পল মানুষ যার আসলেই সৎ চেষ্টা আছে উন্নত চলচ্চিত্র নির্মাণের। একারণেই আমার মনে হয় আপনি এক্সপ্লেনেশান ডিজার্ভ করেন। সো-
*
প্রথমত, আমি ‘জালালের গল্প’ নিয়ে, এর মান নিয়ে কিন্তু কিছু বলি নি। আমি প্রযোজকদের অদক্ষতা সম্পর্কে বলেছি, চিত্রনাট্যকারদের অদক্ষতা সম্পর্কে বলেছি ইত্যাদি। কিন্তু এসব হাবিজাবি যুক্তি উপস্থাপনের দিকে না যাই।

আমি নিয়মিত(প্রতিদিন) চলচ্চিত্র বিশ্বের খোঁজখবর রাখি দীর্ঘদিন ধরে। বিগার পিকচারে আমরা ওভারহোয়েলমিং রকম পিছিয়ে আছি, এতো পিছিয়ে আছি যে তা নিয়ে ভাবা শুরু করলে, ডিটেইলে ভাবা শুরু করলে, শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে। আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের দিকে তাকালে আমি যা দেখি আমি তা-ই বলেছি, অনেক কিছু বলিওনি। আই কুড হ্যাভ বিন মোর রুদলেস।

কিন্তু সেটা তো আপনার জন্য প্রাসঙ্গিক না। আপনি আপনার কর্ম করে যান, সৎভাবে, নিষ্ঠার সাথে। বাকি বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। আপনি যেহেতু আরও চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন অবশ্যই, আপনাকে একটু পরামর্শ দিই- জালালের গল্প নির্মাণ প্রক্রিয়ায় আপনি যে আনন্দ পেয়েছেন, আপনার স্বপ্নের জন্য জীবন বাজি রাখাতে আপনি যে সন্তুষ্টি পেয়েছেন, কেবল সেটাই আপনার জন্য প্রাসঙ্গিক, সেটা আপনার থেকে কেউ নিতে পারবে না।

হ্যাভিং সেইড দ্যাট, জালালের গল্পের চিত্রনাট্য আপনার লেখা, আপনি মনোবিজ্ঞানের ছাত্র, ফিল্ম সোসাইটি করার সুবাদে আপনার শুধু ফিল্ম দেখা না, পড়াও আছে, ধারণা করে নিচ্ছি। জালালের গল্পের চিত্রনাট্যতে কি তার প্রতিফলন ছিলো আদৌ? চরিত্রগুলোর মনোজগতের ন্যুয়ানস্‌ড কোন এক্সপ্লোরেশান, চিত্রায়ণ ছিলো কি? এখানে আর বিশদে গেলাম না।

আপনাকে আরও একটু পরামর্শ দিই- বাংলাদেশের দর্শক আসলে কারা এর ধারণাটা খুবই ভাসা ভাসা। বাংলাদেশের এই বিমুর্ত দর্শকশ্রেণীর জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ বাদ দিন। বাংলাদেশে একই সাথে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নত ড্রামাটিক চলচ্চিত্র আবার বিশালভাবে দর্শকপ্রিয়ও- বানানো সম্ভব নয়। সৎ নির্মাতাও তাই দুকূল সামলাতে গিয়ে মাঝামাঝি ঝুলে থাকে।

ওসব বাদ দিন। অল-আউট যান। আনকম্প্রমাইজিংলি যা বলতে চান-দেখাতে চান বলুন-দেখান, ক্ষুরধার বুদ্ধিদীপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাণ করুন। সেন্সর পার করাতে হবে না, দেশের দর্শক কে দেখাতে হবে না, ওভাররাইড করে যান, চলচ্চিত্র ইউরোপে চালান, এমেরিকায় চালান, ওখান থেকে কেবল পুরস্কার কেন বিনিয়োগকৃত অর্থও তুলে আনুন। আমরা, পরে যখন টরেন্টে আসবে, নামিয়ে ঠিকই দেখে নেবো, ভালো লাগবে।

ধন্যবাদ।
*
সিনেমা দেরীতে

আবু শাহেদ ইমন  এর ছবি

অনেক কিছু বলবার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু কার সাথে কথা বলছি জানি না। তাই আপাততঃ ফুলস্টপ। আপনার সাজেশন গুলোর জন্য ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার কি বলবার ইচ্ছে ছিল তা জানবার জেনুইন আগ্রহ হচ্ছে।

আমার পরিচয় বলতে কেবল আমার নামটা জানাতে পারি, এছাড়া আমার বিশেষ কোন পরিচয় নেই। আমি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বা বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদি কোন কিছুর সাথেই যুক্ত নই। না আমি কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আর না-ই কোন পেশায় নিযুক্ত। আই থিংক ইয়্যু গেট দ্যা পিক্‌চার। লো-প্রোফাইল বজায় রাখা আমার দীর্ঘদিনের অভ্যাস, তাই নামটা জানাতে চাই নি, চাচ্ছি না।

আপনি যদি আপনার ভাবনা শেয়ার করেন, মনোযোগ দিয়ে শুনবো এবং আসলেই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ।
*
সিনেমা দেরীতে

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় আবু শাহেদ ইমন, আমি এই পোস্টটির লেখক নই। সবিনয়ে আপনাকে বলতে চাই, ব্লগে কোন বিষয়ে বা কোন পোস্ট নিয়ে আলোচনা করার জন্য ব্লগের লেখকের আসল নাম জানার কোন দরকার নেই। খোদ সচলায়তনে এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে যেখানে দেখতে পাবেন লেখক-পাঠক কোন পক্ষ কারো প্রকৃত পরিচয় না জেনেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করছেন, এবং সেখান থেকে আলোচকরা তো বটেই অন্য পাঠকরাও উপকৃত হচ্ছেন। সুতরাং এই পোস্টের লেখক 'সিনেমা দেরীতে'র প্রকৃত নাম না জেনেও আপনি আলোচনাটা চালাতে পারেন। আমরা বাকী পাঠকেরা আগ্রহের সাথে সেটা ফলো করবো।

দেবদ্যুতি এর ছবি

মানুষ শেষ পর্যন্তই আশা নিয়ে বাঁচে। তবে বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে আশা করবার মতো এখনও কিছু দেখি না। ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, ইরানিয়ান কিংবা অন্য মহাদেশের সিনেমাগুলোর কথা যদি বা বাদও দিই, সম্প্রতি কলকাতায় যেসব সিনেমা হচ্ছে, বাংলাদেশে তাও হচ্ছে কি? হয় না। আপনার লেখাটা দারুণ গোছানো, চমৎকার বিশ্লেষণধর্মী। শুভেচ্ছা জানুন...

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

যেহেতু 'দাঁড়ি' কখনই পড়ে না, আমরা আশা রাখি উন্নতির, কিন্তু উন্নতি আসে না এবং আমরা আশা হারাই, কিন্তু যেহেতু 'দাঁড়ি' কখনই ঠিক পড়ে না . . . । বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে 'ক্যাচ-২২' রাখা যেতে পারে।
*
সিনেমা দেরীতে

নীড় সন্ধানী এর ছবি

সামগ্রিক বিবেচনায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প নিয়ে আপনার হতাশার সাথে দ্বিমত করার কোন কারণ নেই। বাংলাদেশে হতাশ হবার মতো যেসব উপাদান আছে তার মধ্যে চলচ্চিত্র শিল্প অন্যতম। কিন্তু তবু যে কয়েকজন পরিচালকের নাম বলেছেন, যে কয়টা বাংলাদেশী ছবির নাম লিখেছেন আমার মনে হয় বাংলাদেশের সিনেমা জগতের মধ্যে(ঢাকার সিনেপ্লেক্সের বাইরে সারাদেশের হলগুলোতে মুক্তিপ্রাপ্ত আজগুবি কাহিনীর কুৎসিত সিনেমাগুলোই আমাদের সিনেমাজগত) এরা কয়েকজনই সুস্থ ধারার সিনেমা বানাচ্ছেন। তাই আপনি যেখানে হতাশ হয়েছেন, আমি সেখানে আশা রাখছি। আরো অনেক ভালো সিনেমা আমরা কখনো পাবো কিনা জানি না, আপাতত এদের সিনেমা দেখতে পারলেও চলে যেতো। কিন্তু এই সিনেমাগুলো দেখার সুযোগও তো হয় না। কোন সিনেমা হলে এসব ছবি মুক্তি পায় না। আমার শহর চট্টগ্রামে দেখিনি আমি।

আপনি যে লক্ষ্যের কথা বলেছেন, সেটা হলে ভালো হতো, কিন্তু এই মুহুর্তে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের কোন ভিতই যেখানে নেই সেখানে অস্কার, কান, বার্লিনের দিকে যাবার চিন্তা এই সময়ে সুদূর কল্পনাতে আসা উচিত না। মোটামুটি দেশের হলের মধ্যে দেখার মতো সিনেমা বানালেও আমি সন্তুষ্ট হই। আমাদের টার্গেট অন্তত পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা লেভেলের সিনেমা হলেও চলে। আমি নিশ্চিত, সিনেমার নির্মান যদি সেরকম হয় তাহলে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলগুলো আবারো চালু হবে। দর্শক সিনেমা দেখতে যাবে। আমি নিজে যাবো।

'জালালের গল্পের' পরিচালকের সাথে আপনার আলোচনাটা উপভোগ্য ছিল। এই পোস্টের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এটা।

আপনার লেখার ধরণটা পছন্দ হয়েছে। আশা করছি আগামীতেও আপনার কাছ থেকে উপভোগ্য লেখালেখি আসবে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

কিন্তু এই মুহুর্তে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের কোন ভিতই যেখানে নেই সেখানে অস্কার, কান, বার্লিনের দিকে যাবার চিন্তা এই সময়ে সুদূর কল্পনাতে আসা উচিত না।

সুদূর কল্পনা নয়, কারণ, দেশের বাইরে ফেস্টিভ্যাল সার্কিটে সাফল্য এবং পরবর্তীতে সিনেমা মুক্তির মাধ্যমে আয়ের সাথে দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের অবস্থার কোন সম্পর্ক নেই। আমি মূলত সেটাই বলতে চেয়েছি। যেমন, ‘জালালের গল্প’ কারিগরি নির্মাণের দিক থেকে কিন্তু যথেষ্ট উন্নত চলচ্চিত্র। গল্পটি যদি উন্নত হতো, এবং প্রযোজকেরা যদি কম্পিটেন্ট এবং এ্যম্বিশাস হতো, তাহলে অনেক কিছু হতেও পারতো। আমি আসলে সে দিকটির কথাই বলতে চেয়েছি।

সিনেমা প্রদর্শনের পরিস্থিতির উন্নতি নির্মাতা-প্রযোজকদের হাতে না থাকতে পারে, কিন্তু তাদের মস্তিষ্ক তো তাদের নিয়ন্ত্রণে, তাদের তো মানসিকভাবে আরও কম্পিটেন্ট হয়ে উঠবার পথে কোন প্র্যাকটিক্যাল বাঁধা নেই।

ধন্যবাদ। হাসি
*
সিনেমা দেরীতে

এক লহমা এর ছবি

খুব ভাল লাগল।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

খুবই চমৎকার একটি অণুকাব্য(?)! খুব ভাল লাগল।
*

সিনেমা দেরীতে

শেহাব এর ছবি

আমার মনে হয় আমাদের চিত্রনাট্য লেখার ব্যাপারটিতে এখনও অনেক ঝামেলা রয়ে গেছে। এটি থেকে শুরু করা যেতে পারে।

অতিথি লেখক এর ছবি

কথা সত্য! চলুক
*

সিনেমা দেরীতে

রানা মেহের এর ছবি

আপনার লেখাটা আগেই পড়েছিলাম, ভালো লেগেছে।
একটা ব্যাপার, আপনার সব কিছু উড়িয়ে দেয়ার তুচ্ছ করার প্রবণতাটা চোখে লাগলো।
এইরকম ভাবে বলা কথাগুলো স্পষ্টবাদীতায় পাশ করতে পারে কিন্তু নির্মাতাদের খুব বেশীন প্রণোদনা দেয়না।

ভালো থাকুন। আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার সব কিছু উড়িয়ে দেয়ার তুচ্ছ করার প্রবণতাটা . . .

আমি নিজে কখনও কোন কিছু তুচ্ছ করে উড়িয়ে দিতে চাই না, চাওয়ার কোন কারণ নেই। তবে আমি যতটুকু সম্ভব স্পষ্টভাবে পরিস্থিতি বুঝতে চাই এবং যতটুকু সম্ভব স্পষ্টভাবে ভাবনা প্রকাশ করতে চাই এবং এই বিষয়ে কোন কম্প্রোমাইজ করতে চাই না। কারণ উন্নতি করবার জন্য পরিস্থিতি, তা যত কঠিনই হোক, স্পষ্টভাবে বোঝা জরুরি- যেমনটা আমার লেখার শুরুতেই বলেছি।

এছাড়াও-

নির্মাতাদের প্রণোদিত হওয়া যদি আমার মতো এনোনিমাস একজন লেখকের লেখার -উপরে নির্ভর করে/দ্বারা প্রভাবিত হয়- বিষয়টা খুবই দুঃখজনক হবে বলে আমি মনে করি।

ধন্যবাদ। আরও লেখার আশা রাখি।
*

সিনেমা দেরীতে

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

আর অন্যান্য ঘুপচি হলে মুক্তি যদি দিনও বা, আপনার হাই ডাইনামিক রেইঞ্জের এ্যারি এলেক্সা রেড ড্র্যাগনে ক্যাপচার করা ডা ভিঞ্চি রিজলভে সাধ করে কালার কারেকশান করা টু'কে রেজোলুশান এর চলচ্চিত্রটি যখন পেনড্রাইভের মাধ্যমে দ্য-গ্রেট-ধোলাইখাল-অফিস-প্রজেক্টর দিয়ে প্রজেক্ট করবে আগের রাতে পাশের কমিউনিটি সেন্টারের বিয়ের ভোজের টেবিলগুলোর সাদা কভার সেলাই দিয়ে তার উপরে, আপনি তখন অন্ধকারে হাতড়ে এক্সিট খুঁজে না পেয়ে মুখে ফেনা তুলে আইলে গড়াগড়ি দেবেন।।।।।।।।।।।।।

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

আহমাদ মাযহার এর ছবি

খুবই ভালো লাগল লেখাটি। বাঙলাদেশের সিনেমা সম্পর্কে প্রকৃতই যে লেখক গভীরভাবে অবগত তা বোঝা গেল।আমার নিজের কোনো কোনো বিবেচনাকে মিলিয়ে দেখতে পারলাম।
সত্যি বলতে কি আমাদের দেশে প্রকৃত সিনেমা নির্মাণের সংস্কৃতি নেই। অদূর ভবিষ্যতে গড়ে-ওঠারও সম্ভবনা দেখছি না! আমাদের নির্মাতারা যেনতেন ভাবে একেকটি সিনেমা বানিয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে পড়েন। প্রকৃত সমালোচনা হজম করবার সামর্থ্য তাঁদের একেবারেই নেই! অন্য যে কোনো শিল্পের জন্য যেমন শিল্পসৃষ্টিপ্রয়াসীকে কেবল তাঁর প্রয়াসটিকে আন্তরিক ভাবে চালিয়ে যেতে হয় সিনেমার শিল্পীরও এর অন্যথা করবার উপায় নেই। যদি আন্তরিকভাবে তাঁরা তা করতেন তাহলে উন্নত সিনেমা কিছু না কিছু হতো।আমাদের সিনেমা বানিয়েরা বন্ধুদের দিয়ে ‘ম্যানুপুলেটেড’ সমালোচনা লেখান। সমালোচকেরাও ‘বাংলাদেশের সিনেমার স্বার্থে’ মিথ্যা মিথ্যা প্রশংসা লেখেন। ভুয়া ফেস্টিভালে সিনেমা পাঠিয়ে ভুয়া পুতলা এনে ‘বাংলাদেশের সিনেমার স্বার্থে ভুয়া হাঁকডাক ছাড়েন!’ ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, ‘কী করব বল সবাইকে নিয়েই তো বাঁচতে হয় আমাদের!’ অর্থাৎ তাঁরা সর্বদা ‘আন্ডার প্রিভিলেজড চিলড্রেন’দের মতো সুবিধা নিয়েই বাঁচতে চান।
আমাদের সমাজে মিথ্যাচারের সংস্কৃতির প্রবল প্রতাপের কারণে যে লেখক ‘সিনেমা দেরিতে’ নামের আড়ালে নিজের প্রকৃত নাম গোপন করেছেন তা বুঝতে পারি। কিন্তু আমার মনে হয় আডালে থেকে বলা সত্যের শক্তি থাকে না। লেখক যেমন পরামর্শ দিয়েছেন সৎ নির্মাতা হতে তেমনি সৎ পরিচয়ে ভাষ্য প্রদান না করলেও ভাষ্য দায়িত্বশীল হয় না! তবু প্রকৃত অনুভবের কথা প্রকাশ করায় তাঁকে ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

অর্থাৎ তাঁরা সর্বদা ‘আন্ডার প্রিভিলেজড চিলড্রেন’দের মতো সুবিধা নিয়েই বাঁচতে চান।

দ্যাট এবাউট সাম্‌স ইট আপ। জনাব আহমাদ মাযহার, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
*

আমার প্রকৃত পরিচয় প্রসঙ্গে বলব,

প্রকৃত নামে-পরিচয়ে লিখতে আমার কোন সমস্যা নেই। চলচ্চিত্রশিল্পের কারও সাথে বন্ধুত্ব-সম্পর্ক ইত্যাদির দরুণ ভাবনা প্রকাশে কম্প্রমাইজ করতে হবে, এমন পরিস্থিতিও নেই। অর্থাৎ - “কী করব বল সবাইকে নিয়েই তো বাঁচতে হয় আমাদের!" – এমন কোন সমস্যা আমার নেই। আমার নির্মাতা হবার পরিকল্পনা আছে ঠিকই, কিন্তু কারও উপরে নির্ভরশীল না হয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবার রাস্তা আমার জানা আছে, সো, ওদিক থেকেও আমি বেশ নিরাপদে(!) আছি, যা-ই বলি না কেন, আমার জন্য কোন সমস্যা সৃষ্টি হবে না।

আমি প্রকৃত নামে-পরিচয়ে লিখিনি দুটি ভাবনা থেকে। প্রথমত, আমাকে যাতে ব্যাক্তিগতভাবে আক্রমণ করা না যায়, আমার লেখার চেয়ে ‘আমি’ মানুষটা যাতে বেশী আলোচনার বিষয়বস্তু না হয়ে উঠি। আক্রমণ সামলানোর সামর্থ্য আমার আছে, বিন্তু তাতে অহেতুক হাবিজাবি মন্তব্য চালাচালি হত, কাজের কথার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যেত। দ্বিতীয়ত, আমি আসলে তেমন কেউ নইও! আমার প্রকৃত পরিচয় কোন গুরুত্ব বহন করে না। আমার প্রকৃত নাম আর ছদ্মনাম(যদি একেবারে অভিয়াস না করে দিতাম) দুটোই সাধারণ পাঠকদের কাছে সমার্থকই ঠেকতো, ইফ য়্যু নোও হোয়াট আই মিইন!

ধন্যবাদ।
*

সিনেমা দেরীতে

দিদারুল এর ছবি

ছদ্মনামে এসব লেখার সুবিধা হচ্ছে, আপনি নির্মাতা হিসাবে হাজির হওয়ার পর আপনার নিজের কাজ এই লেখায় দাড় করান কষ্টিপাথরের পরীক্ষায় পাশ করে কিনা, সেই বিচারের সুযোগ থেকে আপনার পাঠক-দর্শককে বঞ্চিত রাখা যাবে। আপনি যাদের নাম এই লেখায় উল্লেখ করেছেন, ছদ্মনামের সুযোগ দিলে তারাও অনেক লম্বা চওড়া কথা লিখতে পারবেন বৈকি।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি প্রকৃত নামে-পরিচয়ে লিখিনি দুটি ভাবনা থেকে। প্রথমত, আমাকে যাতে ব্যাক্তিগতভাবে আক্রমণ করা না যায়, আমার লেখার চেয়ে ‘আমি’ মানুষটা যাতে বেশী আলোচনার বিষয়বস্তু না হয়ে উঠি।

বলতে না বলতেই আপনার মন্তব্য চলে আসলো!
*

ছদ্মনামে এসব লেখার সুবিধা হচ্ছে, আপনি নির্মাতা হিসাবে হাজির হওয়ার পর আপনার নিজের কাজ এই লেখায় দাড় করান কষ্টিপাথরের পরীক্ষায় পাশ করে কিনা, সেই বিচারের সুযোগ থেকে আপনার পাঠক-দর্শককে বঞ্চিত রাখা যাবে।

আপনার যুক্তিটা ঠিক তেমন শক্ত নয়। একটু ভেবে দেখুন। আমি যদি কখনও চলচ্চিত্র নির্মাণ করি এবং খুব নিম্নমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ করি এবং উপরে দেখানো আমার নিজের পথেই না হাঁটি- তাহলে কি দর্শক তাদের বিচারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই আমাকে নিম্নমানের নির্মাতা বলে কনডেম্ করবে না? আমি যে এই লেখার লেখক, তাতে কি আমার ব্যার্থতাটি খুব বিশেষত্বপূর্ণ হয়ে যাবে? আমি একজন ব্যার্থ নির্মাতাই তো হব, তাই না? বড়জোর আমি একজন ব্যার্থ নির্মাতা হব যে নিজে যা বলে তা নিজেই মানে না, সেটাও কি খুব আনকমন কিছু হবে? নাকি এই লেখার লেখক ‘আমি’ই যে ‘অমুক’ চলচ্চিত্রের নির্মাতা তা গোপন থাকলে ‘অমুক’ চলচ্চিত্রটি নিম্নমানের হলেও কোন যাদুবলে দর্শক সেটিকে উন্নতমানের চলচ্চিত্র বলে মেনে নেবে?

আপনার যুক্তি বুঝতে ব্যার্থ হলাম।

আমার বক্তব্য নিয়ে মন্তব্য করুন, আমাকে নিয়ে নয়। ধন্যবাদ।
*

সিনেমা দেরীতে

দিদারুল এর ছবি

"বড়জোর আমি একজন ব্যার্থ নির্মাতা হব যে নিজে যা বলে তা নিজেই মানে না, সেটাও কি খুব আনকমন কিছু হবে?"

তা হবে না। তবে নির্মাতারা, যারা নিম্নমানের চলচ্চিত্র বানায়, তারা একে অপরের কাজের মান নিয়ে বেশী শব্দ করে না। নিম্নমানের চলচ্চিত্র বানিয়ে কেউ যদি আরেকজনের মান নিয়ে অনেক শব্দ করে, তখন পরিস্থিতিটা একটু ভিন্ন হয়।

"আমার বক্তব্য নিয়ে মন্তব্য করুন, আমাকে নিয়ে নয়।"

আপনার বক্তব্য যখন আপনার নিজেকে নিয়ে, তখন এই কথাটা বলার কোন মানে হয় না। তবে আপনাকে "আক্রমন" করার জন্য মন্তব্য করি নাই। আমি আপনার ছদ্মনামে লেখার একটা সুবিধা, যা আপনি উল্লেখ করেন নাই, সেটা লিখলাম শুধু। আমার মন্তব্য যদি ব্যাক্তি আপনার প্রতি "আক্রমন" হয়ে থাকে, আপনার লেখা আর কিছু কিছু মন্তব্যও ব্যাক্তি নির্মাতাদের প্রতি আক্রমন ছাড়া আর কিছু না। টেক ইট ইজি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।