দার্জিলিং এর চা-বাগান এবং রক গার্ডেনের সৌন্দর্য

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১১/০১/২০১৬ - ৫:৩১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দার্জিলিং যারা ঘুরে এসেছেন তাদের সবার কাছেই দার্জিলিং এর চা-বাগানের বিস্তর গল্প শুনেছি। দার্জিলিং এর চা পৃথিবী বিখ্যাত। তাদের চা বাগানগুলোও নাকি পৃথিবীর সেরা। এ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু কেউ যখন অতি উৎসাহে বলে বসেন বাংলাদেশের চা-বাগানগুলো নাকি দার্জিলিং এর চা বাগানগুলোর তুলনায় নস্যি তখনই খটকা লাগে। নিজেদের সম্পদের ব্যাপারে হীনমন্যতায় ভোগা আমাদের কাছে অনেকটা পৈতৃক সম্পত্তির মতই হয়ে গেছে। আমি নিজে সিলেটের চা-বাগানগুলোর সৌন্দর্যের ভক্ত। তাই কেউ যখন এইভাবে তুলনা করে তখন কষ্ট পাই। যেহেতু দার্জিলিং যাওয়া হয় নি তাই আর আলোচনায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হয় নি। এইবার সুযোগ পেয়েই ঠিক করলাম, লোকজনের কথা কতটুকু সত্যি আর কতটুকু অত্যুক্তি সেটা না হয় এইবেলা দেখেই আসি।

দার্জিলিঙের বিখ্যাত চা বাগানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে Orange Valley Tea Estate এবং Happy Valley Tea Estate. এর মধ্যে প্রথমটি পাড়ি দিতে হয় Rock Garden যাওয়ার পথে আর দ্বিতীয়টি Himalayan Moutaineering Institue যাওয়ার পথে। আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল Rock Garden. দার্জিলিং শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে এবং ভূপৃষ্ঠের ৬০০০ ফুট উচ্চতায় এই বাগানের অবস্থান। এর কাছেই গঙ্গামায়া পার্ক, কিন্তু সংস্কার কাজ চলছিল বলে গঙ্গামায়াতে যাওয়ার সুযোগ হয় নি। তবে রক গার্ডেন দেখে ভাল লেগেছে।

রক গার্ডেন যাওয়ার পথেই মেঘ আর পাহাড়ের মিলনস্থলে চা বাগানের রাজত্ব। এই সৌন্দর্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। উঁচু থেকে যতই নিচে নামছি মনে হচ্ছিল চা বাগান যেন ঘন হয়ে চেপে ধরছে। আঁকাবাঁকা রাস্তার দুইপাশ জুড়ে ঘন সবুজের গালিচা। রাস্তা যেমন চমৎকার, তেমনি রাস্তা থেকে দেখতে পাওয়া মেঘ আর পাহাড়ের মিতালী দৃষ্টির জন্য প্রশান্তিদায়ক। একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।

পাহাড়ের উপর থেকেই নিচের রক গার্ডেন চোখে পড়ে। বাগানের প্রবেশপথে পর্যটকদের গাড়ির ভিড়। টিকিট কেটে ভিতরে ঢোকার পর যে জিনিসটা ভাল লেগেছে তা হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা। রক গার্ডেন এমনিতেই সুন্দর, তবে এর পরিচ্ছন্নতা এবং অঙ্গসজ্জা সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। শুরুতেই এক বিশাল কৃত্রিম পদ্মফুল। সেখান থেকে মূল ঝর্ণা পর্যন্ত ধাপে ধাপে সিঁড়ি উঠে গেছে। ঝর্ণার উৎস আরও উপরে কিন্তু সেখানে যাওয়ার উপায় ছিল না।

একরত্তি ময়লা নেই কোথাও। স্থানে স্থানে সুদৃশ্য ডাস্টবিন। এই ডাস্টবিন ব্যবহারের চর্চা যে আমাদের কবে হবে কে জানে। বান্দরবনের দুর্গম আলীর গুহায় গিয়ে দেখেছিলাম চিপসের প্যাকেট এবং কনডমের (বিশ্বাস করুন আর নাই করুন) ধ্বংসাবশেষ। সিগারেটের শেষাংশ আর ড্রিঙ্কসের বোতল তো ছিলই। অথচ এই উন্মুক্ত স্থানে পচনশীল কোন দ্রব্যই চোখে পড়ে নি। পরিচ্ছন্নতার এই চর্চা কবে যে আমাদের রক্তে প্রবেশ করবে কে জানে?

রক গার্ডেন ঘুরে রওনা দিলাম Tenzing Rock দেখতে। পথেই Happy Valley Tea Estate এর অবস্থান। এইখান থেকে চা-বাগানের চমৎকার view পাওয়া যায় বলেই হয়ত এটি দার্জিলিঙের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। সারাক্ষণই সূর্য আর মেঘের মধ্যে লুকোচুরি চলছে। মেঘের অবগুণ্ঠন সরিয়ে পাহাড়ের ঢালের ঘরবাড়িগুলো অতিকষ্টে দৃশ্যমান হয়েই আবার মিলিয়ে যায়। মাঝে মাঝে নিজেরাই ঢাকা পড়ি মেঘের আড়ালে।

এইখানে বেশ মজার এক ব্যাপার চোখে পড়ল। চা বাগানে যেন কেউ পাতা না ছিঁড়েন সেই জন্য জরিমানার বন্দোবস্ত রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে জরিমানাটা তুলবে কে? এছাড়াও নেপালি পোশাক পড়ে ছবি তুলবার ব্যবস্থা আছে, তবে সেইজন্য আপনাকে কিছু পয়সা খরচ করতে হবে। স্বল্প খরচের এই ব্যক্তিগত ভ্রমণে বাড়তি খরচ করবার মুরোদ কিংবা ইচ্ছা কোনটাই ছিল না। তাই যারা এমন পোশাক পড়েছিলেন তাঁদের ছবি তোলা দেখেই শখ মিটালাম।

রাস্তার পাশে পাহাড়ের যেই ঢাল থেকে চা বাগানের শুরু হয়েছে সেই ঢালেই এক সারিতে অনেকগুলো চায়ের দোকান। এখানে আপনি ফ্রি তে চা পান করতে পারবেন। তবে কথা আছে। আপনাকে চা’পাতা কিনতে হবে ফ্রি চা পান করবার বিনিময়ে। অনেকগুলো দোকানের মধ্যে কোনটাতে যাব চিন্তা করছিলাম। আমার সহযাত্রী অনিন্দ্য সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ করে দিল। কোন এক এলোকেশী সুনয়না নাকি তাঁর নজর কেড়েছে। অনিন্দ্যের পছন্দের ব্যাপারটি সেই সুনয়না বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন কি না জানি না, তবে তাঁর মুচকি হাসির অন্তরালে কি সুর খেলা করছিল সেটা বুঝার সাধ্য কি আর এই বঙ্গসন্তানের আছে?

শুরু করেছিলাম সিলেট এবং দার্জিলিঙয়ের চা’বাগানের তুলনা বিষয়ক আলোচনা দিয়ে। শেষ করছি এই বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত দিয়ে। দুই জায়গার সৌন্দর্য একদমই আলাদা। একটার সাথে আরেকটাকে মিলানোর মত অর্থহীন কাজ আর হয় না। সুন্দরের মাঝে খুঁত খুঁজে বেড়ালে সৌন্দর্যে অবগাহন সম্ভবপর হয় না। প্রকৃতি আমাদেরকে দু’হাত ভরে দিয়েছে। গ্রহণ করব কি করব না সে দায়িত্ব আমাদের। তবে এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, গ্রহণ না করলে নিজেদেরই ঠকতে হবে।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

nice. i went there before.

দেবদ্যুতি এর ছবি

দার্জিলিং যাওয়ার খুব ইচ্ছে আছে, সবকিছু মিলিয়ে খুব বেড়ানোটা তেমন একটা সম্ভব হয় না। তবে সামনের বছর অবশ্যই যেতে চাই। চা বাগানগুলো এমনিতেই অনেক সুন্দর হয়; ক’দিন আগে শ্রীমঙ্গল গিয়ে যেটা বুঝেছিলাম।

আপনার ঘোরাঘুরি নিরাপদ ও উপভোগ্য হোক। শুভকামনা হাসি

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

অতিথি লেখক এর ছবি

শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ। আমি মনে করি সবারই অন্তত একবারের জন্য হলেও দার্জিলিং যাওয়া উচিৎ। এত কম খরচে বিদেশ ঘুরা আর কোথাও সম্ভব না।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

https://bornelegant.wordpress.com/2016/01/13/darjiling-travel-photoblog/

আচ্ছা সচলের লেখাগুলো এখানে কিভাবে এলো বলতে পারেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

এই জিনিস কোত্থেকে পাইলেন ভাই? অ্যাঁ কিছুই বুঝতে পারছি না।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লেগেছে

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- ভাল লেগেছে শুনে ভাল লাগলো। হাসি

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।