বায়মেট্রিক পদ্ধতিতে সিম রেজিষ্ট্রেশন: প্রতিবন্ধী মানুষ বঞ্চিত, অথচ কর্তৃপক্ষ নিরব ।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০৩/২০১৬ - ১:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সারা দেশে চলছে বায়মেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনের সিম রেজিষ্ট্রেশন। আর এই উদ্দ্যোগটিকে সফল করার লক্ষ্যে প্রচার মাধ্যম গুলোতে দেয়া হচ্ছে বিঙ্গাপনের পর বিঙ্গাপন। সারা দেশের সকল স্তরের মানুষ তাদের সিমগুলোকে বৈধ্য করার লক্ষ্যে ছুটে যাচ্ছে নির্দিষ্ট কাষ্টমার কেয়ার আর কাষ্টমার পয়েন্টগুলোতে। যদিও বা এই বায়মেট্রিক পদ্ধতিতে সিম রেজিষ্ট্রেশন সম্পর্কে পক্ষে বিপক্ষে নানা মত রয়েছে। আপনাদের মনে হতে পারে আমার বিষয়টিও এই পদ্ধতির পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কোন বিষয়। ধারনাটি সম্পূর্ণ ভিন্ন, হয়তো বিষয়টি নিয়ে আপনি এভাবে কখনও ভাবেন নি।

দুই দিন আগের কথা। আমার মোবাইল ফোনের সিম গুলোকে রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য গিয়েছিলাম নির্দিষ্ট কাষ্টমার পয়েন্টে। সব কিছু ঠিক মত শেষ করলাম। অর্থাৎ ফর্ম ফিলাপ এবং দুই হাতের বৃদ্ধা ও তর্জনি আঙ্গুলের ছাপ দিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে একটা বিষয় মাথায় খেলে গেল। বিষয়টা ভেবে খুব হতাশ হয়ে পড়লাম। এবার ভনিতা না করে মূল কথায় আসি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে পৃথিবীর ১০% মানুষ কোন না কোন ভাবে প্রতিবন্ধীতার শিকার। যেহেতু বাংলাদেশে সরকারী ভাবে প্রতিবন্ধী মানুষের সঠিক পরিসংখান নেই, তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখান মতে ষোল কোটি মানুষের মধ্যে এক কোটি ষাট লক্ষ মানুষের বিভিন্ন প্রতিবন্ধীতা রয়েছে। এই প্রতিবন্ধী মানুষগুলোর মধ্যে এমন কিছু শারিরীক প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছেন যাদের হাতে প্রতিবন্ধীতা আছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে এমন কিছু মানুষ বাস করেন যাদের দুহাত নেই। কারো আবার কব্জি থেকে নীচের অংশ নেই। অনেকের আবার হাতের পাঁচটি আঙ্গুল-ই এক সাথে জোড়া লাগানো। আবার কারো কারো এক হাতে প্রতিবন্ধীতা না থাকলেও অন্য হাতটিতে রয়েছে প্রতিবন্ধীতা। আর এই মানুষগুলোর রয়েছে নিজস্ব মোবাইল ফোন এবং বিভিন্ন কোম্পানীর সিম কার্ড। আমার প্রশ্নটা এই বিষয়টিকে নিয়েই।

যথাযথ কর্তৃপক্ষ আমাকে কি দয়া করে বলবেন, এই শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিরা কিভাবে তাদের সিমটি রেজিষ্ট্রেশন করবেন? কারণ, রেজিষ্ট্রেশনের নিয়মানুযায়ি দুই হাতের বৃদ্ধা এবং তর্জনি আঙ্গুলের ছাপ দিতে হয়। যাদের হাতের আঙ্গুল-ই নেই তারা কিভাবে ছাপ দিবে। তবে কি তাদের সিমটা অবৈধ থেকে যাবে? অনেকে আবার বলতে পারেন, কাছের কোন বন্ধু কিংবা আত্বীয়ের নামে রেজিষ্ট্রেশন করলেই তো হয়। তাদের জন্য প্রথমে বলবো নিয়মানুযায়ি যার সিম তার নামেই রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। তাই কর্তৃপক্ষকেই এই ধরণের প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য রেজিষ্ট্রেশনের অন্য কোন উপায় খুঁজে বের করতে হবে। তারপরও যদি কেউ বলেন, এত ঝামেলার দরকার কি? তবে তাদের জন্য আমার পরামর্শ হল আপনার সম্পত্তিগুলো আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্বীয়-স্বজনের নামে লিখে দিন। এসব ঝামেলা রেখে মাথায় টেনশন নিয়ে লাভ কি?

আরও অভিভূত হলাম যখন জানতে পারলাম প্রতিবন্ধী মানুষের এই বিষয়টি নিয়ে কোন প্রতিবন্ধী ব্যাক্তির সংগঠন কিংবা কোন প্রতিবন্ধী নেতা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ কিংবা প্রতিবাদ কোনটাই করেন নাই। অথচ আমাদের এই দেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সংগঠন, প্রতিবন্ধী মানুষদের নিয়ে কর্মরত সংগঠন কিংবা এই ধরণের সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক গুলোর তো অভাব নেই। এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি যদি তাদের চোখের আড়ালেই রয়ে যায় তবে তারা আর প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার নিয়ে কি কাজ করবেন?

প্রতিবন্ধী নেতাদের অনুরোধ করব মঞ্চে বড় বড় বক্তিতা না দিয়ে, প্রতিবন্ধী মানুষকে মিথ্যে অধিকার আদায়ের স্বপ্ন না দেখিয়ে যদি পারেন মন থেকে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কাজ করেন। আর যদি ফান্ডের দোহাই দেন, তবে স্পষ্ট ভাবে বলতে চাই এই ধরণের কাজ করতে ফান্ডের দরকার হয় না । এর জন্য মনের সদ ইচ্ছাটাই যথেষ্ট।

পাশাপাশি সরকারকে সুস্পষ্ট ভাবে বলতে চাই আপনারা যেহেতু দাবি করেন যে, আপনারা প্রতিবন্ধী বান্ধব সরকার তাই আপনাদের প্রতিটি উদ্দ্যোগ কিংবা প্রতিটি কা র্যক্রমে প্রতিবন্ধী মানুষের অংশগ্রহণের বিষয় মাথায় রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিৎ ।
আর প্রতিবন্ধী মানুষের পক্ষে উক্ত সমস্যাটি দ্রুত সমাধান করে শরীরিক প্রতিবন্ধী মানুষের সিম গুলোকে স্ব স্ব নামে রেজিষ্ট্রেশনের ব্যবস্থা করার জোরালো দাবি জানাচ্ছি ।

আশিকুর রহমান অমিত
ফেস বুক: https://facebook.com/ashiqur.rahmanamit.7


মন্তব্য

সজীব ওসমান এর ছবি

প্রতিবন্ধীদের হাতের সমস্যাটার জন্য তো অন্যান্য যেকোন যায়গাতেও নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও ঝামেলা হবে। অনেকে সাক্ষর দিতে পারবেন না, অনেকে টিপ সই দিতে পারবেন না। আমার মতে, প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য সকল ক্ষেত্রেই আলাদা ক্যাটাগরির বা বিকল্প ব্যবস্থা রাখা উচিত। শুধু সিম নিবন্ধনে নয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত ভাই। কিন্তু আমাদের এই বিষয় গুলো নিয়ে কেউ ভাবে না।

অতিথি লেখক এর ছবি

বায়োমেট্রিক সনাক্তকরণ পদ্ধতি প্রধানত দুটি উপায়ে করা হয়ে থাকে - ভৌত বৈশিষ্টাবলী বিশ্লেষণ এবং আচরণগত বা ব্যবহারিক বৈশিষ্টাবলী বিশ্লেষণ। ভৌত বৈশিষ্টাবলী বিশ্লেষণের মধ্যে যে সব পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় সেগুলো হচ্ছেঃ (ক) মুখমণ্ডলের বৈশিষ্টাবলী বিশ্লেষণ (খ) আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণ (গ) হাতের পাঞ্জার বাহ্যিক জ্যামিতিক বিশ্লেষণ (ঘ) রেটিনার কৈশিক জালিকার বিন্যাস বিশ্লেষণ (ঙ) আইরিসের রঙ ও আকৃতি বিশ্লেষণ (চ) হাতের পাঞ্জার ধমনীর বিন্যাস বিশ্লেষণ। আচরণগত বা ব্যবহারিক বৈশিষ্টাবলী বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে যে সব পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় সেগুলো হচ্ছেঃ (ক) স্বাক্ষর বিশ্লেষণ (খ) কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণ। ভারতের জাতীয় পরিচয়পত্র বা 'আধার কার্ড' ইস্যু করার ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ ও আইরিসের রঙ ও আকৃতি বিশ্লেষণ দুটোই অনুসরণ করা হয়। বাংলাদেশ সরকার ছয়টি ভৌত বৈশিষ্টাবলী বিশ্লেষণ পদ্ধতির মধ্যে অনায়াসে দুই বা ততোধিক পদ্ধতি এবং তার সাথে স্বাক্ষর করার বিধান রাখতে পারে। এতে কারো শারিরীক অসম্পূর্ণতা থাকলেও তা আর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে না।

তবে আপনি যেমনটা বললেন, এর জন্য সদিচ্ছাটাই যথেষ্ট। সেই সদিচ্ছাটা তারা করবেন কিনা জানি না। আরেকটা আশ্চর্যের বিষয়, এত বড় একটা প্রকল্পের পরিকল্পনা করার সময় এই বিষয়টা ভাবার মানসিকতাসম্পন্ন কেউ কি টিমে ছিলেন না!

একটা জরুরী বিষয় তুলে ধরার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি গত ৬ই মার্চ আমার সিম গুলোকে রেজিষ্ট্রেশনের জন্য কাছের কাষ্টমার পয়েন্টে গিয়েছিলাম। ফর্মটি পূরণ করার পর যখন হাতের ছাপ দেয়ার সময় এলো, তখন আমাকে জানানো হল আমার দুহাতের বৃদ্ধা এবং তর্জনির ছাপ লাগবে। আমি আমার প্রতিবন্ধীতার কথা জানালাম এবং ডান হাতের ছাপ দিতে চাইলাম। কাষ্টমার পয়েন্টের লোকটা আমাকে বল্ল, দুহাতের ছাপ না দিলে হবে না। আমাকে তিনি অন্যের নামে রেজিষ্ট্রেশন করতে বলেছিল। আমি কেন আমার সিম আরেক জনের নামে রেজিষ্ট্রেশন করব? এটা আমার জন্য অপমান জনক ব্যাপার। আমি রেজিষ্ট্রেশন না করেই চলে এসেছি। এটা আমার প্রতিবাদ। আর আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হবার জন্য এবং বিভিন্ন মাধ্যমে সমস্যাটি তুলে ধরার জন্য।
তাসলিমা আক্তার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।