হাইকিং, রসগোল্লা ও বিরিয়ানি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ৩০/০৫/২০১৬ - ১:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাঙালি মানে যে ভোজনরসিক সেটা তো বলাই বাহুল্য, আড্ডার মধ্যে বসে জামিল ভাবছিল। আর প্রবাসী বাঙালি যেন আরো এক কাঠি সরেষ। উইকেন্ডটা বরাদ্দ বন্ধুর বাসায় দাওয়াতের জন্য। কয়েক কোর্সের ভোজনবিলাস। এপেটায়িজার, মেন কোর্স এবং ডেসার্ট। শাব্বির এর বাসায় দাওয়াত সেদিন বেশ জমে উঠেছিল। সময়টা ছিল এপেটায়িজার এর পরে কিন্তু মেন কোর্স এর আগে। এরই মধ্যে মহসিন ভাই হঠাত ঘোষণা দিলেন। উনি একটা হাইকিং ট্রিপ এর ব্যবস্থা করবেন ! কারা কারা উত্সাহী জানতে চান। বাঙালির মাথায় যেন পাঁচ হাজার ভোল্ট এর বাজ পড়লো ! একটু পরে মেন কোর্সে খাসির রেজালা অথবা বীফ কারি, নাকি দুটোই থাকবে, সেটা নিয়ে মনে মনে বেশ কিছুটা সূখানুভব করছিল অনেকে। এরই মধ্যে মহসিন ভাই আড্ডার মাঝে আচমকা একটা ককটেল ফাটিয়ে দিলেন।
বিস্ফোরণের পর সবাই যখন একটু ধাতস্থ হচ্ছে তখনি শুকনা সেলিম বেফস্কা বলে বসলো, "হাইকিং এ গিয়ে আমার কি লাভ?" শুকনা সেলিম সর্বদাই কোসঠ্যকাঠিন্যে ভোগে কিন্তু বেজায় খাদ্যরসিক।পরস্পরবিরোধী ব্যাপার আর কি ! ওর স্ত্রী তো একবার মাজেদ ডাক্তারকে বলেই বসলো, "আচ্ছা, মাজেদ ভাই, সেলিম মোটা হয় না কেন ?" ডাক্তার মাজেদ সরাসরি নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করে আরো এপেটায়িজার নিতে হবে ধরনের কিছু বিড়বিড় করতে করতে দ্রুত সরে গিয়েছিলেন।
"লাভ মানে?", মহসিন ভাইর গলা কেপে গেল একটু, "অনেক লাভ আছে"।"বাসায় বসে টিভির রিমোটটাকে না কচলিয়ে ঘরের বাইরে চলে যাও, বনে জঙ্গলে হাটাহাটি করো, প্রকৃতির সাথে মিশে যাও। আমরা তো আসলে প্রকৃতির সন্তান"। শেষ বাক্যে মারফতি ভাবটা দিতে পেরে প্রসন্ন বোধ করলেন তিনি। এইসব নানান বাক-বিতন্ডার মধ্যে দিয়ে হাইকিং এ উৎসাহী মোট পাচজনকে পাওয়া গেল। একজন মহিলা আর চারজন পুরুষ। মিলা আর শাহেদ দম্পতি, মাজেদ, জামিল আর মহসিন ভাই।
এই পাচজনের মধ্যে চারজনই নব্য হাইকার। তবে মহসিন ভাই আছেন, এটাই ভরসা। তিনি একাধারে অভিজ্ঞ হাইকার এবং ঈগল স্কাউট। প্রায় ছ'ফুট লম্বা একহারা গড়ন। প্রথমদিন হ্যান্ডশেক করার পর জামিলের হাতে ব্যথা ছিল বেশ কিছুক্ষণ। তবে খুব মাই ডিয়ার লোক। উনি সিধধান্ত দিলেন আমাদের গন্তব্য হবে উত্তর জর্জিয়ার স্প্রিন্গার মাউন্টেন, যেখানে আপালাশিয়ান ট্রেইল শুরু হয়। আমেরিকার বিখ্যাত আপালাশিয়ান ট্রেইল প্রায় দু হাজার মাইল দীর্ঘ পাহাড়ি পথ। জর্জিয়া থেকে মেইন অঙ্গরাজ্যের মাউন্ট কাথাদিন পর্যন্ত।
হাইকিং এর দিন আবহাওয়া চমতকার। বাতাসে শীতের হাল্কা আমেজ কিন্তু রৌদ্রজ্বল দিন।নব্য হাইকার দের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা। পাহাড়ি পথ কত জটিল হবে, ইত্যাদি ভাবনা। এইসব ভাবতে ভাবতে বাঙালি হাইকিং টিম এগিয়ে গিয়েছে বেশ কিছুদুর।
“এই এলাকা কতটুকু নিরাপদ, মহসিন ভাই?” মিলার একটু উদ্বেগ। মিলা আধুনিক বাঙালি মেয়ে। নিয়মিত ব্যায়াম করে, হাটে। সাবলীল ভাবে এক পাথর থেকে অন্য পাথরে লাফ দিয়ে যাচ্ছে। এই বনে-জঙ্গলে নিরাপত্তার বিষয় তবু ওকে একটু ভাবান্নিত করে।
“দু একটা ভাল্লুক থাকতে পারে তবে ওরা মানুষদের এড়িয়ে চলে সাধারণত”, মহসিন ভাই একটা উঁচু জায়গা থেকে নামতে নামতে বললেন।
“আমি আসলে মানুষের কথা বলছিলাম”
“হা হা, অবশ্যই অবশ্যই। না সেটার ভয় নেই। ডাউনটাউন এর হাইজ্যাকার, মাগার, এত কষ্ট করে এই জঙ্গলে আসেনা। সেদিক দিয়ে এখানে খুব নিরাপদ”
জামিল একটা সরু পথ দিয়ে সাবধানে পার হচ্ছিল সবার পেছনে। একটু খোলা জায়গায় এসে চারিদিকে তাকিয়ে দেখল। আনন্দের ছটার মত সূর্যরশ্মি দীর্ঘকায় গাছগুলোর ভেতর দিয়ে এসে জগত আলোকিত করে দিচ্ছে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো। “Every man dies but not every man lives” কথাটা কে বলেছিল মনে করবার চেষ্টা করলো।
“এই মিলা, আর সেলফি তুলিস না!” সুখি দম্পতি শাহেদ আর মিলা; মাঝে মাঝে তুইতোকারি করে।
“প্রথম সেলফি কে তুলেছিল জানো ?” মাজেদ এর প্রশ্ন।
“মার্ক যুকারবারক?” মুচকি হেসে বললেন, মহসিন ভাই।
“না, গ্রীক দেবতা নারসিসাস। সরোবরের পানিতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে একদম মুগ্ধ !”
“নিজেকে নিয়ে একটু ব্যস্ত থাকা ভাল, মাজেদ ভাই”, মিলা একটুও বিব্রত হল না।
হঠাত করে একটা খোলা জায়গাএ এসে পড়ল ওরা। স্প্রিঙ্গার মাউনটেন এর একদম ওপরে এখন। যতদূর চোখ যায় বিস্তীর্ণ পর্বতশ্রেণী। বুকের ভেতরটা কেমন হালকা হয়ে আসে।
“অপূর্ব !” মিলার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ। সবাই চমৎকৃত। মনে হচ্ছে পাহাড়ে ওঠার কষ্ট সম্পূর্ণ সার্থক।
“চা, গরম গরম চা”, বাংলাদেশের স্টেডিয়াম অথবা সিনেমা হল এ চা বিক্রেতার ঢং এ উচ্চস্বরে বললেন, মহসিন ভাই।
সবাই হেসে উঠল আর যার যার নিজের লাঞ্চ বক্স বের করলো ব্যাকপ্যাক থেকে। পোর্টেবল ষ্টোভে চা বানালেন মহসিন ভাই। শাহেদ ঘোষণা দিলো আটলান্টা গিয়েই ও বিরয়ানীর অর্ডার দেবে। তারপর টুকরো টুকরো আলাপ, হাসি, ছবি তোলা, ইত্যাদি। যেন বিশেষ কামারাদোরি !
হাইকিং থেকে ফেরার বেশ কিছুদিন পর স্প্রিঙ্গার মাউনটেন এর কথা মনে পড়ছিল জামিল এর। কিছুটা নস্তালজিক সৃতিচারণ। ঘরকুনো বাঙ্গালির নিজস্ব বৃত্ত থেকে বেরিয়ে বহির্জগতের প্রকৃতির সাথে নিজেকে মিলিয়ে দেয়ার আনন্দ একটা বিশেষ অর্জন মনে হয়।
“ক্রিং ক্রিং” ফোন টা বেজে উঠল। শাব্বির এর ফোন। “জামিল, সামনের শনিবার চলে আয়। আড্ডা দেয়া যাবে। আর শোন, তোর ভাবী বাসায় রসগোল্লা বানাবে”!

- নাসিম জাফর

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

আশালতা এর ছবি

নামটা অনেক প্রমিসিং ছিল। আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম। কিন্তু নামের সাথে লেখার যোগাযোগ কম পেয়েছি। রম্য ট্যাগিং এরও কারন পাচ্ছিনা।
দ্বিতীয়ত, বানান এবং প্যারাগ্রাফ এর ব্যাপারে আরেকটু যত্ন আশা করা যায়।

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

নাসিম জাফর এর ছবি

আশালতা, মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ। লেখাতে কিছু হালকা রসিকতা আছে বলে রম্য ট্যাগিং করেছিলাম। বানান এবং প্যারাগ্রাফ এর ব্যাপারে আরও যত্ন নেবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
আপনার ব্লগ এর কিছু লেখা পড়ে বেশ ভালো লেগেছে।

তিথীডোর এর ছবি

লেখায় 'সরেষ' কিছু পাইনি, বরং 'কোসঠ্যকাঠিন্যে' সারানো দরকার মনে হয়েছে।

এখানেই শেষ নাকি ধারাবাহিক? বোঝার উপায় নেই।

শেষের ছবিটা কীসের? 'সুত্র : ইন্টারনেট?' এরকম?

এক তারা।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

Nasim Zafar এর ছবি

ধন্যবাদ, তিথিডোর।
আব্দুল্লাহ আবু সাইদ বলতেন সাহিত্যে "রস" নিয়ে বিস্তর লেখাজোখা হয়েছে। মানে "রস" কাকে বলে ইত্যাদি। যাইহোক, আমার লেখাটা শুধু হালকা রম্য রচনা নয়; কিছুটা সিরিয়াস ভাবও আছে।
লেখাটা ধারাবাহিক না কিন্তু আপনার মন্তব্যের পর বিষয়টা আমাকে একটু ভাবান্নিত করেছে।
ছবিটা ইন্টারনেটের। আমার উচিত ছিল উধ্রিতি দেয়া।
আপনার ব্লগ এর লেখা গুলো পড়বার ইচ্ছা আছে; প্রথম দৃষ্টিতে ভালো লেগেছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।