একদিন অকারনে..

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০৬/০৮/২০১৭ - ১:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

= স্লামালাইকুম স্যার, ডেকেছিলেন?

= ওয়াইলাইকুম, ওয়াইলাইকুম আবির সাহেব, বসুন, বসুন।

= জ্বি স্যার।

= এই যে এইটা আপনার।

= কি স্যার?

= কি মানে? আপনার পথের দিশা, উন্নতির সোপান! I mean, আপনার এ্যানুয়াল টার্গেট! হেঃ হেঃ। মেইলে soft copy পাঠিয়ে দেয়েছি। গতবারের মত এবারো আপনার কাছে 100% এর বেশী achievement চাই। বুঝতে পেরেছেন?

= বুচ্ছি স্যার।

= শুধু বুচ্ছি বললেই হবে না, ডিটেইলে বুঝতে হবে।

= কেমন স্যার?

= এইটাতো হচ্ছে গ্রস সেলস টার্গেট। এবার থেকে কিন্তু শুধু সাত-আটটা চালু আইটেম সেল করে টার্গেট এ্যাচিভ করলে হবে না, ১২টা আইটেমের প্রত্যেকটার আলাদা সাব-টার্গেট দেয়া আছে। সেগুলিও ইন্ডিভিজুয়ালি এ্যাচিভ করতে হবে এবার থেকে। বুঝলেন? আপনিতো ফাইটার, পারবেন না?

= পারবো স্যার।

= আহারে, আজকালকার মানুষজনের ঈমান বড়ই দূর্বল। ভাই, ইনশা আল্লাহ্ বলেন, ইনশা আল্লাহ্ বলেন।

= ইনশা আল্লাহ্ স্যার।

= Good, বছর শেষে ইনসেন্টিভ বোনাস, ইনক্রিমেন্ট, প্রোমোশন সবই কিন্তু এই টার্গেট এ্যাচিভমেন্টের উপর নির্ভর করছে,এই বিষয়টা আপনার টিমকে আবার ভালোভাবে মনে করিয়ে দেবেন। OK?

= OK স্যার।

= আচ্ছা, প্ল্যানিং শুরু করে দিন তাহলে। Wishing you and your team all the success.

= Thank you স্যার।

আগামী এক বছরের প্রতিটা দিন, সপ্তাহ, মাসকে সাদাকালোয় সংখ্যার হিসাবে ভেঙ্গে দেয়া কাগজটা নিয়ে স্যারের চেম্বার থেকে যখন সে বের হচ্ছে ঠিক তক্ষুনি গোঁগোঁ শব্দে বিল্ডিং এর উপর দিয়ে একটা প্লেন উড়ে যাওয়ার শব্দ কানে আসলো তার। শুধু শব্দটাই পাওয়া যায়, কংক্রিটের ছাদ ভেদ করে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে দূর, বহু দূর দেশে উড়ে যাওয়া বিমানের দেখা পায় না দু'চোখ। তার মত এয়ারপোর্টের কাছে যাদের অফিস, তাদের কাছে এটা খুব পরিচিত একটা শব্দ। কিন্তু এই শব্দে আজ কেন যেন অকারনেই স্কুলের নেয়ামত স্যারের কথা মনে পড়ে গেল। বাংলা পড়াতেন। একদিন ক্লাসে উনি রচনা লিখতে দিয়েছিলেন "তোমার জীবনের লক্ষ্য"। কেউ লিখেছিল ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউবা উকিল। কিন্তু সেই বয়সে অলস দুপুরগুলোতে বইয়ের পাতায় ভর করে মার্কো পোলো, ইবনে বতুতা কিংবা হিউ এন সাং এর সাথে বিশ্বচরাচর ঘুরে বেড়ানো আবির লিখেছিল সে পরিব্রাজক হতে চায়। কল্পনার চোখে দেখা তুষার চুড়ো আল্পস, আমাজনের জঙ্গল চিড়ে বয়ে যাওয়া নদী আর ধূধূ নির্মম, নির্জলা সাহারা ঘুরে বেড়ানোর বর্ননা দিয়েছিল রচনায়। সেই রচনা পড়ে পরদিন ক্লাসে স্যার কাছে ডেকে নিয়ে আচমকা ঠাস করে গালে একটা চড় মেরে মুখের উপর খাতাটা ছুঁড়ে মেরে হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন, "হারামজাদা, পড়াশোনার চিন্তাতো মাথায় নাই। ফ্যা ফ্যা কইরা ঘুরে বেড়ানিডা এক্কেবারে মাথায় ঢুইকা গেসে। বাপ-মায় ইস্কুলে পড়তে পাডাইসে বড় হইয়া বাদাইম্মার মত বনবাদারে ঘুইরা বেড়ানির জইন্যে, নাকি? যা, ইস্কুল ছুটির আগে জীবনের লক্ষ্য ইঞ্জিনিয়ার, নাতো ডাক্তার সুন্দর কইরা লিইখ্যা আমার কাছে জমা দিয়া যাবি। নাতো আজকে তোর ছুটি নাই।"

কি লিখে জমা দিয়েছিলো আজ আর মনে নেই, কিন্তু ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার, কিছুই সে হতে পারে নি। এখন সে বড়জোর একজন কর্পোরেট ফেরিওয়ালা। টার্গেটের পেছনে ছুটতে ছুটতে স্ত্রী-সন্তানকেই সময় দেয়া হয় না। বহুদিন ধরে ওরা বলছে ক'দিনের জন্য কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি কিংবা শ্রীমঙ্গল বেড়াতে নিয়ে যেতে। যাচ্ছি, যাবো, নিচ্ছি-নিব করে করে আর সময় করে উঠতে পারে নি এ পর্যন্ত। পরিব্রাজক হয়ে পৃথিবী চষে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখা আবিরের আর এ শহর ছেড়ে বেরুনোর ফুরসতটাও হয়ে ওঠে না।

বহুদিনের পুরোন ছোট্ট স্মৃতিটা ঠোঁটের কোনায় এক টুকরো বিষন্ন হাসি ছুঁইয়ে দেয় কেবল। সে আবার তার ডেস্কের দিকে হাঁটতে শুরু করে। প্লেনের শব্দটাও ক্রমে দূর আকাশে মিলিয়ে যায় বরাবরের মত।

- ইকরাম ফরিদ চৌধুরী


মন্তব্য

নজমুল আলবাব এর ছবি

অনেক বেশি ইংরেজি শব্দ, সংলাপের আগে = চিহ্ন, দুটোই দৃষ্টিকটু।

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ জনাব নাজমুল আলবাব। সমালোচনা আমি খুব পজিটিভলি নেই। কিন্তু আপনার মন্তব্যে আমি খুব অবাক (হালকা বিনোদন সহযোগে) হয়েছি। যেসব ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে সবগুলোই অফিস আদালতে প্রতিদিন ব্যবহার করা হয়। চেয়ার টেবিল, স্ট্যাপলারের মতই থ্যাঙ্ক ইউ, আই মিন, ওকে এগুলো এখন খুবই আটপৌরে শব্দ। আমি যদি "স্যার" এর পরিবর্তে "ইয়োর হাইনেস" বলতাম, কিংবা "ওকে স্যার" এর পরিবর্তে "এফার্মেটিভ স্যার" জাতীয় অপ্রচলিত শব্দ ব্যবহার করতাম তাহলে একটা কথা ছিল। আবার (=) চিহ্নের পরিবর্তে (হাসি ব্যবহার করলে আমার লেখার মান যে খুব উন্নত হয়ে যেত তা কিন্তু একেবারেই না। এটা খুবই তুচ্ছ একটা বিষয়। আপনি মনে হয় অনেক বেশী স্পর্শকাতর স্বভাবের মানুষ। সচলায়তনের সদস্যদের কাছ থেকে পরিনত সমালোচনাই আশা করি, যেটা এক্ষেত্রে অনুপস্থিত। যাই হোক, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

-ইকরাম ফরিদ চৌধুরী

এক লহমা এর ছবি

সংলাপ বোঝাতে '=' চিহ্ন দিয়ে বাক্য শুরু করা অপরিচিত লাগল। ভাল লাগে নি।
সচলায়তনে আকৃষ্ট হওয়ার কারণগুলির একটি অবশ্যই ছিল এখানে লেখায় যথাসাধ্য বাংলা কথা, বাংলা শব্দের ব্যবহার। সংলাপের মধ্যেও 'I mean'-এর বদলে 'আই মিন' দেখতেই চোখ অভ্যস্ত, কি করি বলেন! নজমুল-এর মতনই চোখে লাগে।
গল্প - লেখালেখির অভ্যাস চালিয়ে যাওয়ার জন্য ঠিক আছে। (আমার দ্বারা সেটুকুও হয়ে ওঠে না, তাই এর বেশী বলা শোভন হবে না হাসি )

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

কষ্ট করে পড়ার জন্য এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

-ইকরাম ফরিদ চৌধুরী

রাজিব মাহমুদ এর ছবি

কল্পনায় একটা জম্পেশ গল্পের বুদ্বুদ উঠতে শুরু করেছিল মাত্র। ফটাশ করে ফেটে গেল যখন নিচে নামতে গিয়ে মাথা বাড়ি খেল 'অতিথি লেখকের ব্লগ'-এ ওঁয়া ওঁয়া

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই রাজিব মাহমুদ, আপনাকে বেমাক্কা দূর্ঘটনায় ফেলার উদ্দেশ্য এই অতিথি লেখকের ছিল না। সেকারনে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সেই সাথে পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য দ্বিগুন ধন্যবাদ। কিন্তু গল্পের সূত্রপাত তো আসলে মুহুর্তের অতীত স্মৃতি রোমন্থনকে ঘিরে। এই সামান্য একটা মুহুর্তকে টেনে বেশী লম্বা করতে গেলে আরো বেশী বড় দূর্ঘটনা ঘটলেও ঘটতে পারতো, তাই না?

ভালো থাকবেন।

-ইকরাম ফরিদ চৌধুরী।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

কর্পোরেট দুনিয়া রেগে টং

গল্পের শেষটা ভালো লেগেছে। আরও লিখুন এরকম টুকটাক গল্প।

শুভেচ্ছা হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

দোষটা একা কর্পোরেট দুনিয়ার না ভাই। ভুল স্বপ্নের পথে শৈশব থেকেই ঠেলে দেয়া হয় সবাইকে, দেশ জাত, কাল নির্বিশেষে। শৈশবে পটুয়া হওয়ার ইচ্ছে বুকে পুষে রাখা শিশুটি বড় হয়ে পুলিশের বড় কর্তা। স্বপ্নকে তাড়া করার মত ডানা গজানোর চেয়ে সংসারের হাল ধরার মত শক্ত হাত তৈরী হওয়াটা সবার কাছে অনেক বেশী জরুরী। কি আর করা। হয়তো একদিন সময় বদলাবে।

গল্প পড়ার জন্য এবং উৎসাহিত করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

-ইকরাম ফরিদ চৌধুরী।

সোহেল ইমাম এর ছবি

চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-ইকরাম ফরিদ চৌধুরী

মাহতাব মুনী এর ছবি

জীবন যেনো রঙধনু।
আপনার কাছ থেকে আরো লেখা আশা করছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা নেবেন।

-ইকরাম ফরিদ চৌধুরী

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার অন্যান্য লেখার তুলনায় এই লেখাটা খানিকটা দুর্বল, আমার মতে। আর কিছু কিছু 'কি'কে 'কী' বলেই জেনে এসেছি জীবনভর। অবশ্য হরলাল রায়ের বইতে কী শিখেছিলাম মনেও নেই আর।

---মোখলেস হোসেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

মোখলেস ভাই, পড়ার জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ। আমার কোন লেখাই খুব বেশী সবল না। বই পড়ার পুরোন অভ্যাসের কারনে ভালো লেখা পড়তে পড়তে, "আমিও একটু লিখে দেখি" ভাব থেকেই এসব লেখালেখি। আবার মনে করবেন না যে আপনার কথা পছন্দ হয় নি বলে একথা বলছি। এটাই সত্যি। আর এটা যে আরো একটু দূর্বল লেখা সেটা আমি জানি। চাইলে আরো রসকষ মাখানো যেত। কিন্তু ইচ্ছে হয় নি। এমনকি কি এডিট করার চিন্তাও করিনি। যেকারনে : এর পরিবর্তে = ব্যবহারের করে এর মধ্যেই অনেকের বিরাগভাজন হয়েছি। আরেকটা কথা, "কি" এবং "কী" পার্থক্য আমি আজো জানি না। তবে জানার চেষ্টা করবো। বিষয়টা ধরিয়ে দেয়ার জন্য "ডাবল ধন্যবাদ"।

-ইকরাম ফরিদ চৌধুরী।

দেবদ্যুতি এর ছবি

লিখতে থাকুন। পড়ে ভালোই লেগেছে।

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

-ইকরাম ফরিদ চৌধুরী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।