জাহাজীর মত একা আর কেই বা আছে?
লোনা হাওয়া, পোর্টহোল, সরু বিছানা আর
ঢেউয়ের দুলুনি সঙ্গী কেবল।
জাহাজীর মত একা আর কেই বা আছে?
ছেড়ে আসা বন্দর, শুঁড়িখানার পেয়ালা,
ঘন্টা মেপে কেনা রক্ত-মাংস এবং অবসাদ,
সব, সব, সব বিগত রাতের চেয়েও বেশী মৃত এখন।
তবু জাহাজী দিগন্তে চোখ পাতে,
নতুন বন্দরের তৃষ্ণা বুকে চেপে ভাবে,
"নোঙরের মত উদ্বাস্তু আর কেই বা আছে?"
-ইকরাম ফরিদ চৌধুরী
= স্লামালাইকুম স্যার, ডেকেছিলেন?
= ওয়াইলাইকুম, ওয়াইলাইকুম আবির সাহেব, বসুন, বসুন।
= জ্বি স্যার।
= এই যে এইটা আপনার।
= কি স্যার?
= কি মানে? আপনার পথের দিশা, উন্নতির সোপান! I mean, আপনার এ্যানুয়াল টার্গেট! হেঃ হেঃ। মেইলে soft copy পাঠিয়ে দেয়েছি। গতবারের মত এবারো আপনার কাছে 100% এর বেশী achievement চাই। বুঝতে পেরেছেন?
= বুচ্ছি স্যার।
পর্ব = ৭
(পূর্ববর্তী পর্বের লিঙ্ক গল্পের শেষে)
ওরা লম্বা একটা তারের টুকরো ভেঙ্গে নিয়ে এক কোনায় লুকিয়ে রাখলো। সূখোভ কয়েকটা তক্তা পেরেক ঠুকে জুড়ে দিয়ে একটা মই বানিয়ে গপচিককে পাঠালো স্টোভের পাইপটা ঝুলিয়ে দেয়ার জন্য। ছোকড়াটা একেবারে কাঠবেড়ালির মত চটপটে, তরতর করে খাম্বা বেয়ে উঠে দু-একটা পেরেক ঠুকে তার মধ্যে তার জড়িয়ে সেটা পাইপের তলা দিয়ে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে নিল। সে নিজ থেকেই পাইপটার প্রান্তের কাছটায় আবার বেঁকিয়ে দিলো, ছেলেটার উৎসাহ দেখে সূখোভ আর কিছু বললো না। আজকের বাতাসের গতি খুব বেশী না হলেও কাল যে হবে না সেটাতো আর বলা যায় না, আর এই বাঁকানোটা ধোঁয়া বেরুনো রোধ করবে। ভুলে যাওয়া যাবে না যে স্টোভটা সারানো হচ্ছে ওদের সবার নিজেদের স্বার্থেই।
আরে, এই ইলেকট্রিকের খাম্বার পাশেইতো ছিলো মেয়েটা! লাল ফ্রক পরা! মিনিট তিনেক আগেইতো মিনুকে এখানে ট্রাঙ্কের উপর বসিয়ে রেখে ড্রেনের ধারে বহুক্ষন ধরে চেপে রাখা “ছোট-কাজ” সারতে গিয়েছিলেন নজীর আলী। কোথায় গেল বাচ্চাটা? এতবড় ঢাকা শহর। কিছুই চেনেন না। সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নেমে সরাসরি বাসে চেপে পি.জি.
পর্ব = ৬
(পূর্ববর্তী পর্বের লিঙ্ক গল্পের শেষে)
এই বিস্তির্ন তুষার ঢাকা প্রান্তরে জানালার কপাটগুলো তুলে লাগানোর মত কিছু খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু কিল্গাস বললো, “ভান্যিয়া (আইভান নামের সংক্ষিপ্ত রুপ), আমি একটা জায়গার খবর জানি যেখানে দারুন ফেল্টের (Felt : পশম বা লোমকে চেপে তৈরী এক ধরনের মোটা কাপর) রোল আছে যেগুলো ফ্রেমের সাথে জুড়ে ছাদের কাঠামোর অংশগুলো তৈরী হচ্ছে। ওগুলো আমি নিজের হাতে সরিয়ে রেখেছিলাম। চল, ওগুলো চুরি করে নিয়ে আসি।”
কিল্গাস জাতে লাটভিয় কিন্তু রাশান ভাষায় কথাবার্তা বলতে পারে একেবারে স্থানীয়দের মত। ওদের গ্রামের কাছে একটা প্রাচীন মতাদর্শীদের (Old Believers, এরা ১৬৬৬ ইং সনে এই মতাদর্শীরা আদর্শগত বিরোধের কারনে রাশান অর্থোডক্স চার্চ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন করে ফেলেছিল) একটা উপনিবেশ ছিল এবং একারনে শৈশব থেকেই তার রাশান ভাষা শেখা হয়ে গিয়েছিল। তার ক্যাম্পের জীবন মাত্র দুই বছরের, কিন্তু এরমধ্যেই সে সব কায়দা-কানুন বুঝে নিয়েছে। এখানে দাঁত দিয়ে কামড়ে আদায় করে নিতে না জানলে কিছুই পাওয়া যায় না। ওর আসল নাম জোহান এবং সূখোভও ওকে ভান্যিয়া বলেই ডাকে।
পর্ব = ৫
(পূর্ববর্তী পর্বের লিঙ্ক গল্পের শেষে)
১০৪ নম্বর দলটা মেরামত কারখানার একটা বড় ঘরে গেল যেটার জানালাগুলো গত শরৎকালেই ঘসেমেজে চকচকে করা হয়েছে আর সেটাতে ৩৮ নম্বর দলটা কংক্রিটের স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজ করছে। কিছু স্ল্যাব কাঠের ছাঁচের ভেতরে রাখা আর অন্যগুলো তারের জাল দিয়ে পোক্ত করে বানিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা। ছাদটা অনেক উঁচু আর মেঝেটা শুধুই মাটির। জায়গাটা একেবারে হিমশীতল হয়ে থাকতো, যদি না কয়লা জ্বালিয়ে উষ্ণ করে না রাখা হতো, অবশ্য সেটা কর্মীদের জন্য নয়, স্ল্যাবগুলো যাতে তারাতারি জমাট বাধঁতে পারে সেজন্য। সেখানে একটা থার্মোমিটারও আছে। এমনকি রোববারগুলোতেও, কেও যদি কোন কারনে নাও আসে, একজন সিভিলিয়ানকে সেখানে রাখা হয় শুধু উনুনটা জ্বালিয়ে রাখার জন্য। ৩৮ নম্বর দলের লোকেরা স্বাভাবিকভাবেই বাইরের কাউকে উনুনের আশেপাশে বসতে দিতে আগ্রহী না। তাদের দলের লোকেরাই সেটার চারপাশে বসে পায়ে প্যাঁচানোর ন্যাকরাগুলো শুকোচ্ছে। কি আর করা, ওই কোনায় বসা যায়, ওই জায়গাটাও খারাপ না।
পর্ব = ৪
(পূর্ববর্তী পর্বের লিঙ্ক গল্পের শেষে)
ভিড়টা হালকা হয়ে আসছে। গার্ড-হাউজের পেছনে প্রহরীদের জ্বালানো আগুনটা জ্বলছে। এরা সবসময়ই বন্দীদের বাইরে কাজে পাঠানোর সময় আগুন জ্বালায়। একদিকে গাটাও গরম রাখা যায়, অন্যদিকে আগুনের আলোর কারনে গুনাগুনির কাজের সময় দেখতেও সুবিধা হয়।
গেটের প্রহরীদের একজন দ্রুত গুনতে লাগলো, “প্রথম,দ্বিতীয়, তৃতীয়...”
পর্ব - ৩ :
ঠিক যখন পিঠে নম্বর লেখা দলের লোকেদের সবাই বারান্দার দরজার দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে, সূখোভ কোনরকমে সব কাজ সেরে সেটার লেজের অংশটার সাথে জুড়ে গেলো। যার যা জামা-কাপড় আছে সব পরে থাকাতে তাদের মনে হচ্ছে বেশ মোটাসোটা, আর সবাই হেলেদুলে আড়াআড়ি ভাবে একলাইন ধরে জমায়েত হওয়ার ময়দানটার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কেউ কাউকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা নেই। বাতাসে শুধু পায়ের তলায় বরফ ভাঙার শব্দ।