ভূত

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ০৩/০১/২০১৮ - ৭:৩২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গল্প-উপন্যাস এবং সিনেমায় ভুতের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তার অধিকাংশই ভুল। ভুত মানেই কঙ্কাল নয়। শরীরের জায়গায় জায়গায় ছোপ ছোপ রক্ত, আর ছেঁড়া ছেঁড়া পচা গলা মাংস নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ভয়ঙ্কর যে অবয়ব মানুষের সামনে তুলে ধরা হয় তার সর্বৈব মিথ্যে। ভুতেরা খোনা সুরে কথা বলেনা, তাদের চোখ ভাঁটার মতো গনগনে নয়, যখন তখন যে কোন রূপে আবির্ভুত হবার ক্ষমতাও তাদের নেই।

মাস খানেক আগে থেকেই টের পাচ্ছিলাম গোলমেলে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। তবে সেটা যে মৃত্যু হতে পারে তা আমার ঘুণাক্ষরেও মনে হয়নি। সাইত্রিশ বছর বয়সে মানুষের মৃত্যু চিন্তা থাকেনা, আমারও ছিলোনা। অসুখ নয়, ক্লান্তি নয়, ভীষণ রকম কোন দুর্ভাবনাও নয়- শুধু একটা খচখচে অনুভূতি আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। আমার কেবলই মনে হতো শরীরটা দারুণ হালকা হয়ে যাচ্ছে, একটু জোরালো বাতাস এলেই বুঝি উড়িয়ে নিয়ে যাবে। যদিও এমনটা মনে হওয়ার কোন কারণ নেই। আর দশটা মানুষের তুলনায় আমি বেশ বাড়াবাড়ি রকমের মোটা।

আমার বন্ধু তানভীর বলেছিলো এটা ভার্টিগোর লক্ষণ। ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শেষটায় জানালেন ভার্টিগো নয়, সমস্যা অন্যখানে। কী সমস্যা জানতে চাইলে একটা প্যাডে খানিকক্ষণ আঁকিবুঁকি করে আমার হাতে দিয়ে বললেন, সমস্যাটা মানসিক। ভাবলাম ডাক্তার যখন বলেছেন, তাইই হবে। ফার্মেসি থেকে একগাদা ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে গেলো।

আমাদের এপার্টমেন্ট বিল্ডিংটা যেন ছোটোখাটো একটা বাজার। ফ্ল্যাটগুলোতে যতজন থাকার কথা তারচে অন্তত চারগুণ বেশি মানুষ। লিফটের সামনে সারাক্ষণই লম্বা লাইন, পেছনে পড়ে গেলে অন্তত পনেরো মিনিটের ধাক্কা। সাপের লেজের মতো আঁকাবাঁকা লাইনটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে একটা গালি দিয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম। পারতপক্ষে সিঁড়িফিরি আমি এড়িয়েই চলি। থলথলে শরীর নিয়ে চারতলা অবধি উঠা চাট্টিখানি কথা নয়। প্রথম ধাপে পা ফেলতেই চমকে উঠলাম। মনে হোলো কে যেন দুহাত দিয়ে আমার কোমর ধরে উঠিয়ে দিচ্ছে। ভয় পেয়ে পেছন দিকে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই। আবার পা ফেললাম, আবারও সেই একই অনুভূতি, তরতর করে উঠে যাচ্ছি মাধ্যাকর্ষণকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। সত্যি বলতে কি, আমার বেশ খুশি খুশিই লাগছিলো।

ফ্ল্যাটের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মনে পড়লো ওষুধের পোটলাটা গাড়িতে ফেলে এসেছি। নিচে যা ভিড় তাতে লিফটের জন্য অপেক্ষা করে কোন লাভ হবেনা, আবারও সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলাম। দোতলার ল্যান্ডিঙে পৌঁছুতেই একটা সোরগোল ভেসে এলো কানে। অনেক গুলো মানুষের কণ্ঠস্বর, একটা মনে হচ্ছে তানভীরের, আমার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকছে। চেঁচিয়ে জবাব দিলাম, এতো ডাকাডাকি না করে উপরে উঠে এলেই তো পারিস গাধা। হট্টগোলের মধ্যে আমার কথা শুনতে পায়নি মনে হয়। নিচে নেমে দেখি সিঁড়ির গোড়ায় একটা জটলা, তারই মাঝে তানভীর উবু হয়ে বসে কাকে যেন ঝাঁকাচ্ছে। মাতাল-টাতাল হবে হয়তো, বেদম গিলে জ্ঞান হারিয়ে এখানেই মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এপার্টমেন্টে থাকার এই একটা ঝামেলা, নানান কিসিমের মানুষ, কিছুনা কিছু ঘটবেই প্রতি দিন। আবার ডাক দিলাম, ‘কাকে ঝাঁকাচ্ছিস রে তানভীর, মামুন নাকি?’ আমি যে ডাকছি সেদিকে ওর কোন খেয়ালই নেই। এমন সময় দরজা খুলে স্ট্রেচার নিয়ে দুজন প্যারামেডিক এসে ঢুকলো, সবাইকে সরিয়ে দিয়ে পড়ে থাকা লোকটাকে উল্টে স্ট্রেচারে শোয়াতেই আমি চমকে উঠলাম। এ কাকে দেখছি!

বিশ্বাস করবেন না, ভয়ে আঁতকে উঠে ছোট্ট একটা লাফ দিতেই আমি যেন সুতো ছেড়ে দেওয়া গ্যাস বেলুনের মতো সাঁই সাঁই করে চলে গেলাম সোজা সিলিংএর দিকে। উপর থেকে দেখতে পাচ্ছি প্যারামেডিক দুজন পাগলের মতো আমার বুকে ধাক্কা দিয়ে চলেছে, একজন আবার দু’হাতে আমার মুখ চেপে ধরে নিজের মুখটা নামিয়ে আনছে নিচের দিকে! ঘেন্নায় গাটা রি রি করে উঠলো। মনে হোলো উপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ব্যাটাকে সরিয়ে দিই। কিন্তু শরীরটা এতো হালকা হয়ে গিয়েছে যে হাজার চেষ্টা করেও নামতে পারলাম না। চিৎকার করে বললাম, ‘এই হারামজাদা, খবরদার বলছি, খবরদার!’ লোকটা একটু চমকে উঠে আসে পাশে তাকিয়ে আবারও আমার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট লাগিয়ে…উফঃ সে ভারি বিচ্ছিরি দৃশ্য। ভাবলে এখনো আমার গা গুলিয়ে আসে।

কিছুক্ষণ পর ওদের একজন উঠে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলল, ‘উই লস্ট হিম। হি ইজ ডেড।’

যতখানি কষ্ট পাবার কথা তত কষ্ট আমি পাইনি। বরং একটা কথা মনে পড়ে হাসি পেয়ে গেলো। শালারা যেভাবে কিলিয়ে চলছিলো তাতে বেঁচে থাকলেও মরে যেতাম। মানুষ মৃত্যুকে ভয় পায় তিনটি কারণে। প্রথমত, স্বজনদের ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট। সেদিক থেকে আমি মুক্তই বলা চলে। এক দুজন বন্ধু ছাড়া তিন কুলে আমার কেউ নেই। নেওমি নামের একটা মেয়েকে ভালো লাগতো, তবে সে আমাকে খুব একটা পাত্তাটাত্তা কখনোই দেয় নি। দ্বিতীয়ত, মৃত্যুকালীন যন্ত্রণা। কোন যন্ত্রণা হয়নি আমার, বরং ভালোই লাগছিলো, ডান হাঁটুতে একটা পুরনো ব্যাথা ছিল সেটি আর নেই, চোখে ফিরে পেয়েছি কৈশোরের প্রথরতা, সবচে আনন্দের ব্যাপার- কানের ভেতরে নিরন্তর বেজে চলা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকটা আর শুনতে পাচ্ছি না। বেঁচে থাকতে টিনিটাস বাধিয়েছিলাম, তখন একটুখানি নৈশব্দের জন্য অষ্টপ্রহর প্রাণটা আঁকুপাঁকু করতো। মরে গিয়ে মনে হচ্ছে বেঁচেই গেলাম।

তিন নম্বর কারণটাই বোধহয় মানুষকে সবচে বেশি পীড়া দেয়। তা হোলো হারিয়ে যাওয়ার দুঃখ। পৃথিবী থেকে চিরতরে মুছে যাবার বেদনা। কই, আমিতো ফুরিয়ে যাইনি! ! ওই যে দরজার বাইরে আমাদের ফ্ল্যাটের একরত্তি বাগানে ফুটে থাকা ঝলমলে একুশটি গোলাপ, দিব্যি দেখতে পাচ্ছি তাদের, শুনতে পাচ্ছি চেরি গাছের ডালে বসে একমনে ডেকে যাওয়া লেজ নাচানো ফিঞ্চের গান। সমস্যা আপাতত একটাই, সিলিং থেকে কিছুতেই নামতে পারছি না।

সিলিংএ পিঠ ঠেকিয়ে হাঁচড়েপাঁচড়ে অনেক কষ্টে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। দরজাটা খোলাই ছিল, বাতাস এসে শরীরটাকে স্পর্শ করতেই হাতের মুঠো থেকে পিছলে যাওয়া সাবানের মতো সুড়ুত করে বেরিয়ে এলাম আকাশে। ওহ সেকি ওড়ান! উড়ছি তো উড়ছিই, কোনদিকে যাচ্ছি, কোথায় গিয়ে থামবো কিছুই জানা নেই আমার। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন খপ করে আমার ঘাড়টা চেপে ধরলো। ঘুরে দেখি নিত্যানন্দ কর্মকার। আমার বিল্ডিংএই থাকতো। দুবছর বছর আগে এই আমারই মতো বলা নেই কওয়া নেই, একদিন দুম করে মরে গেলো। একশ ডলার পেতাম ব্যাটার কাছে। দু’বছরে গায়ে গতরে বেশ বেড়েছে দেখছি! আমি কিছু বলার আগেই দাঁত কেলিয়ে বললো, ‘চলেই এলি তাহলে?’

ওকে দেখে মনে বেশ জোর পেয়েছি। বললাম, ‘এসেছি সে তো দেখতেই পাচ্ছো নিত্যদা। এখন করি কী সেটাই বল, এদিককার নিয়ম কানুন তো কিছুই জানি না।’ মনের দিক থেকে নিত্যদা আগের মতোই আছে, মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে হাতটা ঝাঁকিয়ে বললো, ‘নিয়ম কানুন আবার কী? কোন নিয়ম কানুন নেই। যা খুশি তাই কর না, বাধা দেবে কে শুনি?’ খুব একটা ভরসা পেলাম না ওর কথায়। মাথায় ঘুরছে একটাই চিন্তা, পালকের মতো হালকা হয়ে যাওয়া শরীরটাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনি কী করে! নিত্যদা মনে হয় আমার ভাবনাটা বুঝতে পেরেই বললো, ‘তুই এখন সূক্ষ্ম অবস্থায় আছিস। কদিন ধরেই খুব হালকা হালকা লাগছিলো তাই না? মরার আগে ওইরকমই হয়। সূক্ষ্ম শরীরটা বেরিয়ে আসতে চায় তো! তোর কাজ হবে এখন ওজন বাড়ানো।’

আমি খানিকটা বিরক্ত হয়েই বললাম, ‘এই কি তোমার রসিকতার সময় নিত্যদা? ওজনের খোঁটাটা না দিলেও পারতে।’ নিত্যদা আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ঠা ঠা করে একচোট হেসে নিয়ে বললো, ‘ওরে তা নয়, তুই এখন আর ওই রকম ভোম্বল নেই। একটা আয়না টায়না থাকলে বুঝতে পারতি। এক কাজ করি, তোকে ধরে বিল্ডিংটার সামনে নিয়ে যাই। গেটের কাঁচে ভালো করে দেখে নিস।’ আমার খটকা তবুও যায়না, আমতা আমতা করে বললাম, ‘শুনেছি ভুতেদের নাকি ছায়া পড়ে না।’ নিত্যদা বলল, ‘মানুষের কথায় বিশ্বাস করিস তুই! এই যে আমাকে বিশ্বাস করে একশ ডলার দিয়েছিলি সেবার, পেয়েছিলি ফিরে?’

গেটের কাঁচে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে দারুণ লাগলো, এক ফোঁটা মেদ নেই গায়ে, বরঞ্চ গাঁটে গাঁটে পাকানো আমার শরীর। কিন্তু কথা হচ্ছে ওজনটা গেলো কোথায়! নিত্যদাকে জিগ্যেস করলাম, ‘ওজন বাড়ানোর কথা কী যেন বলছিলে?’ নিত্যদা এবার খুব গম্ভীর হয়ে গেলো। হাত দিয়ে গাল চুলকাতে চুলকাতে বললো, ‘ওজন বাড়াতে হলে খেতে হয়। অবশ্য এ কথা তোরচে ভালো আর কে জানে? প্রশ্ন হচ্ছে সে খাওয়া তোর মুখে রুচবে কিনা।’ আমার এখন টিকে থাকা দিয়ে কথা, যেভাবে বাতাস বইছে, নিত্যদা ঘাড় ঠেসে না ধরলে কোথায় ভেসে চলে যাই কে জানে? বললাম, ‘তুমি তো জানোই খাবার ব্যাপারে আমার কোন অরুচি নেই। এক শুয়োর আর সাপ ছাড়া যেকোনো কিছুই খেতে রাজি আমি।’ আমার কথায় সে খুব একটা ভরসা পেয়েছে বলে মনে হয় না। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবলো কিছুক্ষণ, তারপর বললো, ‘রক্ত খেতে পারবি? মানে মানুষের রক্ত আর কি। এই একটাই নিয়ম এখানে। টিকে থাকতে হলে রক্ত খাওয়া ছাড়া গতি নেই। আর খেতেও মাইরি, দারুণ!’

নিত্যদার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম ও যা বলছে সত্যি বলছে। ইতস্তত করে প্রশ্ন করলাম, ‘যদি না খাই?’

‘তাহলে আর কী? তিনদিনের মাথায় পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যাবি। ওরে পঞ্চভূত কথাটা কি আর এমনি এমনি এসেছে! পুরাকালে পাঁচ জন ঋষি ছিলেন, ভারি তেজস্বী। তাঁরা শাকসবজি, ফলমূল, ছালবাকল এসব খেতেন, নিরামিষাশী কিনা। মারা যাবার পর তাই কিছুতেই রাজি হলেন না রক্ত খেতে।’ নিত্যদা একটু থামলেন। আমি জিগ্যেস করলাম, ‘কী হয়েছিলো তাঁদের?’

“কী আর হবে! গাছের ডালপালা ধরে কোনমতে টিকে ছিলেন দুই দিন, তিনদিনের দিন ফোটন হয়ে গেলেন।’
‘ফোটন হয়ে গেলেন মানে!’ নিত্যদার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।

‘মানে ভাঙতে ভাঙতে একেবারে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেলেন। ফিজিক্স তো পড়িস নি, পড়লে জানতি সব কিছুর আদিতে রয়েছে গুড়ো গুড়ো ফোটন। ওই যে বলেনা ফুটে যাওয়া? অর্থাৎ ফোটন হয়ে যাওয়া। এখন তুই বল, ফোটন হবি?’

ফোটন হবার প্রশ্নই ওঠে না। আমি ঋষি নই, সপ্তায় একদিন গগন রেস্টুরেন্টে সব্জি খেতে গেলেও নিরামিষাশী ছিলাম এই অপবাদ আমাকে কেউ দিতে পারবে না।

সেই একশ ডলার বৃথা যায়নি। নিত্যদা একেবারে হাতে ধরে রক্ত খাওয়া শেখালো। এপারের ব্যাপার স্যাপার আলাদা, ওজন বাড়লেও মেদ বাড়ে না। এই যে দেখুন না, কেমন পেটানো শরীর আমার। চাইলে একহাতেই আপনার ওই পাটখড়ির মতো ঘাড়টা পটাং করে মটকে ফেলতে পারি আমি। ঘাড় মটকানোটা কিন্তু একটা আর্ট, আমার বেশ সময় লেগেছিলো শিখতে। ঘাড়ের কাছে রগ কি আর একটা দুটো, এমন ভাবে মটকাতে হয় যাতে একটার বেশি ছিঁড়ে না যায়। মানুষ তো আর যেখানে সেখানে মেলে না, রক্ত নষ্ট করে লাভ কী বলুন?

ভুতেদের সম্পর্কে একটা ব্যাপার কিন্তু ঠিক জানেন আপনারা। দিনের আলোয় আমরা বেরোই না। আলো মানেই ফোটন কিনা, ফুটে গিয়ে তো এখন পর্যন্ত কেউ আর ফিরে আসেনি, কে জানে কী হয় তারপর! ভিড়ভাট্টাও আমরা এড়িয়ে চলি। ভিড়ের মধ্যে ঘাড় ভেঙে রক্ত খাবার সুযোগ কোথায় বলুন? লোকে ডাক্তার পুলিশ ডেকে পাড়া একেবারে মাথায় তুলে ফেলে। আমাদের পছন্দ অন্ধকার। তবে মুশকিল একটাই, দেখতে না পেলেও কেমন করে যেন মানুষ টের পেয়ে যায় আমরা আসে পাশেই আছি। বেইজমেন্ট থেকে উপরে ওঠার সময় আপনার ঘাড়ের কাছে যে মাঝে মাঝে শির শির করে ওঠে সে কি আর এমনি এমনি? কতবার যে আপনাকে দেখেছি ঘাড়ে হাত দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেতে! একদিন হয়তো হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন, কিংবা উপরে উঠে দেখলেন দরজাটা বন্ধ। আর ধরুন ঠিক তখনই ঘরের বাতিটা গেলো নষ্ট হয়ে! দেখবেন কেমন যেন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা একটা……………

********************************

সবুজ হকের স্টাডিটা দারুণ গোছানো। ঘর জোড়া বইয়ের আলমারি, সেখানে সারি সারি বই, কালো মেহগিনি কাঠের টেবিলে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা খাতা-কলম আর কালির দোয়াত। তিনি সৌখিন মানুষ, এই কম্পিউটারের যুগেও রীতিমতো আয়োজন করে ঝর্ণা কলম আর তুলোট কাগজ নিয়ে লিখতে বসেন। লেখার সময় তাঁকে বিরক্ত করা একেবারেই মানা। ছেলেপুলেরা এটা বুঝলেও পোষা বেড়ালটা কি আর বোঝে? বেইজমেন্টে আসার সময় দরজাটা তাই বন্ধ করেই নামেন। আজ লিখছিলেন ভুতের গল্প। লিখতে লিখতেই শুনতে পেলেন দরজায় একটা খসখস শব্দ, নিশ্চয়ই বেড়ালটা। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন যাতে কেউ একজন ওটাকে অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু খসখসানি যেন বেড়েই চলছে। বাড়িতে কেউ নেই নাকি? দারুণ বিরক্ত হয়ে লেখা থামিয়ে উঠে পড়লেন সবুজ হক। সিঁড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই মনে হোলো ঘাড়ের কাছে কেউ একজন শ্বাস ফেলে গেলো, শিরশিরে একটা অনুভূতি। নিজের অজান্তেই একবার পেছন ফিরে তাকালেন, নাহ কেউ নেই, শুধুই লেখকের কল্পনা, অকুপেশনাল হ্যাজার্ড। ওদিকে দরজার পেছনে বেড়ালটা যেন পাগল হয়ে গিয়েছে। শুধু যে আচড়াচ্ছে তাই নয়, কেমন যেন গোঙানির মতো একটা আওয়াজ বেরিয়ে আসছে ওটার কণ্ঠ চিরে। সবুজ হকের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে ওঠে। তড়িঘড়ি করে উঠতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলেন তিনি। কোন মতে উঠে দাঁড়িয়ে হুড়মুড় করে দিলেন ছুট, তিন লাফে উপরে উঠে দরজার হাতল ধরতেই ঘরের বাতিটা নিভে গেলো।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

সুযোগ পেয়ে কিছু ভুল সংশোধন করলাম। আগেরটা মুছে দেবেন দয়া করে।

---মোখলেস হোসেন।

এক লহমা এর ছবি

হেঃ হেঃ ভালই হইচ্চে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ এক লহমা।

---মোখলেস হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

সবুজ হক ছেড়ে দিতেন লেখক মানুষ। তাও আবার ভুত লেখক !
এ্যানি মাসুদ

অতিথি লেখক এর ছবি

মানুষের সব কোথা বিশ্বাস করতে নেই

---মোখলেস হোসেন

সাদিয়া আফরিন এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটা। হাততালি

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ সাদিয়া আফরিন।

--মোখলেস হোসেন

সোহেল ইমাম এর ছবি

এই ভুত গল্পের আরো কয়েক খানা পর্ব হলে বেশ হয়। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

মাথায় ভুতেরা খেলা করছে। পড়ার জন্য ধন্যবাদ সোহেল ইমাম।

---মোখলেস হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

পুরনো প্লট হলে উপস্থাপন ভালো লেগেছে

অতিথি লেখক এর ছবি

প্লটটা আসলেই পুরনো। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

---মোখলেস হোসেন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।