
ফিলিপাইনসে অনুষ্ঠিত এশিয়ান আরচারি টুর্নামেন্টে রিকার্ভ (পুরুষ, একক) শাখায় স্বর্ণপদক জিতেছেন বাংলাদেশের তিরন্দাজ রোমান সানা। তাঁর বিশ্ব র্যাংকিং এখন ১৩। রোমানকে অভিনন্দন।
পুরুষ ক্রিকেট গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এর পিছনে আমাদের মানসিক ও আর্থিক বিনিয়োগ অনেক হলেও পুরুষ ক্রিকেটাররা আমাদের হতাশ করে চলেছে। সাকিব আল হাসান বা মুশফিকুর রহিম অক্লান্ত পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের কারণে বিশ্বের প্রথম সারির ক্রিকেটারদের কাতারে উঠে এসেছেন, কিন্তু দল হিসেবে বাংলাদেশ বছরের পর বছর তলানিতেই পড়ে আছে। বাংলাদেশের পুরুষ জাতিগতভাবে দলবদ্ধ হয়ে লক্ষ্য অর্জনে কাঁচা, আমাদের প্রতিটি দলবদ্ধ খেলার ফলের দিকে তাকালে এ তিক্ত সত্যটি উন্মোচিত হয়ে পড়ে।
কিন্তু একার সাধনায় বাংলাদেশিরা পিছিয়ে নাই। অতীতে শুটিং ও ভারোত্তোলনে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা আঞ্চলিক পর্যায়ে স্বর্ণজয় করেছেন। যেসব খেলায় শুধু একজনকে অংশ নিতে হয়, সেসব খেলায় বাংলাদেশিদের উন্নতির সম্ভাবনা বেশি। আমাদের একটি প্রবণতা হচ্ছে যে কোনো দলগত কাজে খাটনির ভার দুই-তিনজনের ওপর চাপিয়ে দিয়ে বাকিরা বাতাস খেয়ে বেড়ানো এবং তাদের কষ্টে অর্জিত গুড়ে ভাগ বসানো। এ কারণে যে কোন শাখায় কৃতী ব্যক্তির নাম বলতে গেলে যাদের নাম উঠে আসে তারা হয় একশত বৎসর আগের মানুষ, কিংবা সংখ্যায় বড়জোর চার-পাঁচ জন। এ প্রবণতার কারণে যারা কোন খেলায় ভালো তারা বেশি চাপ নিয়ে সময়ের আগে জ্বলে শেষ হয়ে যায়, আর যারা খেলায় ততটা ভালো না তারা গায়ে তেল জমিয়ে অকেজো হয়ে পড়ে। একক খেলায় এই ঝামেলা নাই, তাই সেখানে ইতিবাচক ফল তুলনামুলকভাবে বেশি।
অসফল পুরুষ ক্রিকেটের বিপরীতে প্রমীলা ক্রিকেটে কিংবা হাস্যকর পর্যায়ের অদক্ষ পুরুষ ফুটবলের বিপরীতে প্রমীলা ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক কম সুবিধা নিয়ে অনেক বেশি সাফল্য পাচ্ছে। এর কারণ হতে পারে বাংলাদেশের মেয়েদের জন্মের পর থেকেই রগে রগে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, মুরগির রানটা ছেলে পাবে আর পাখনা তুই পাবি, বিরানির ডিমটা ছেলে খাবে আর আলুটা তুই খাবি, রাস্তায় বের হলে ছেলেরা নবাব হয়ে যা খুশি করবে আর ঢেকেঢুকে তুই চলবি। ফলে মেয়েরা জানে তাদের কিসমতে সামাজিক বিনিয়োগ বা সহযোগিতা নাই, স্রেফ অমানুষিক পরিশ্রম করেই প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের টিকে থাকতে বা আগাতে হবে। এই অবিচার দূর করার কোন উদ্যোগ জনগণের মানসিকতায় নাই, ফলে সরকারও উদাসীন।
নবাগত আফগানিস্তান বা মরিচা পড়া জিম্বাবুয়ের সাথেও যখন পুরুষ ক্রিকেটে বাংলাদেশকে ধুঁকতে হয়, তখন এই শ্বেতহস্তীর পিছনে আর সম্পদ (মানসিক, সামাজিক, আর্থিক) ব্যায় না করে ছায়ায় পড়ে ছাতাধরানো খেলাগুলোর দিকে মনযোগ দেওয়া হোক। তিরন্দাজি, শুটিং, একক বাইচ, যুগল বাইচ, দলীয় বাইচ, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, ভলিবল ইত্যাদি খেলা অনেক কম খরচে সারা দেশে উৎসাহিত করা হোক। মেয়েদের অগ্রাধিকার দিয়ে এসব খেলায় তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো হোক। সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগও এসব খেলায় বাড়ুক। টিভিতে বিজ্ঞাপনে এসব খেলার তারকাদের হাসিমুখ দেখতে চাই।
২০২০ টোকিও অলিম্পিকে রোমান সানার পাশাপাশি অন্য প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অন্যান্য তিরন্দাজদের সাফল্য কামনা করি।
লেখকের নাম :- ফারহানা আহমেদ
মন্তব্য
পুরুষ ক্রিকেটেও আমাদের অবস্থান কি খুব একটা খারাপ, ফুটবলের সাথে যদি তুলনা করি? ব্যাক্তিগত ইভেন্টগুলোয় নজর দেয়া দরকার, সাহাযা সহযোগীতা বাড়ানো দরকার সে বিষয়ে একশত ভাগ একমত, কিন্তু একটা মেইনস্ট্রীম দলগত খেলায় প্রাধান্য থাকলে সেটা একটা দেশকে অনেক দিক দেয়ে এগিয়ে দেয়। একটা দলগত খেলা যে ভাবে দেশের সকল মানুষকে এক সূত্রে গেঁথে ফেলতে পারে, কোন একক বা ব্যক্তিগত ইভেন্টের পক্ষে কি তা সম্ভব? বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখনও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারে নি বটে, কিন্তু সেটা হওয়া অসম্ভব তো নয়। অনেক দিক দিয়ে একই ধরনের হয়ে ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান যদি পারে, বাংলাদেশও পারতে পারে।
আব্দুল্লাহ ভাইয়ের সাথে সহমত।
নতুন মন্তব্য করুন