রাত দ্বিপ্রহরের শীতে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ১৫/০১/২০১১ - ১:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চাঁদখানি ভাসছে কুয়াশার চাদরে,
বুনোঘাস ঘামছে শিশিরের আদরে।
তারাগুলো লুকিয়ে আকাশের আড়ালে,
পাতাঝরা শিমুলটা দাঁড়িয়ে আকালে।
পাড়খানি কাঁপছে পুকুরে জড়ায়ে,
একপাশে কাশবন নীরবে ছড়ায়ে।
আসমান বিষাদে ধূসরিত উপরে,
মেঘতায় ঝুলছে শীতেফাটা গতরে।

হাওয়াতে মিশিয়ে মাঘের স্পন্দন,
মাঝরাতে ঝরছে আঁধারের ক্রন্দন।
একরাশ আলোকণা সামনে চুপচাপ,
মাটিতে ফেলছে প্রশান্তির উত্তাপ।
ছোপছোপ ঘরগুলো স্বপনে জ্বলছে,
গেঁয়োপথ আনমনে রূপকথা জপছে।
তারপরে শেষমাথা পলকের সীমানায়,
অবারিত মহাকাল দিগন্তে অসহায়।

এইপাশে ভাবনার সময়হীন চিত্ত,
রাত্রির ওপাশে আঁধারঘনে নিত্য।
জীবন্মৃত দেহখান লেপটার লেহনে,
লোহাজালের শেকলে বন্দী পেছনে।
ছিটকিনির সাথে এইদৃষ্টির সুবাদে,
গড়েচলি নিঃস্বতা রাতভর আবাদে।
কল্পনায় প্রতিরাত একাএকা জমে,
ধরাপড়ে জানলার চিরায়ত ফ্রেমে।

-অতীত


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

এতোদিনে ভাইয়ার আসল কেরদানি পাঠকেরা বুঝতে পারবো হাসি

---আশফাক আহমেদ

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই, এরকম সম্মানিত পাবলিক প্লেসে পামাইও না। সংসদের রাজনীতির ফ্লেভার চলে আসতে পারে। ইয়ে, মানে...

-অতীত

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই, নাম ধাম উপরে লেইখেন। তাইলে শুরুতেই বুঝতে পারব যে আপনার লেখা।

আর আপনার ছন্দ তৈরী করার ক্ষমতা অসাধারণ, আপনার মধ্যেই লুকিয়ে আছে এ যুগের সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। আর যদি বেয়াদপি না নেন তাইলে সামান্য আঁতলামী করছি। যেহেতু কবিতাটার সৌন্দর্য এর ছন্দময়তায়, তাই

ছোপছোপ ঘরগুলো স্বপনে জ্বলছে,
গেঁয়োপথ আনমনে রূপকথা জপছে।

এখানে 'জপছে' র বদলে 'বলছে' টাইপ কিছু দিলে ভালো হত

আর মাত্রা নিয়ে আরেকটু কাজ করলে ভাল হয়, যেমন-

ছিটকিনির সাথে এইদৃষ্টির সুবাদে,
গড়েচলি নিঃস্বতা রাতভর আবাদে।

এটাকে যদি মাত্রাগত ব্যবচ্ছেদ করি

ছিট+কি+নির+সাথে+এই+দৃশ+টির+সুবাদে
গড়ে+চলি+নিশ+শতা+রাত+ভর+আবাদে

পার্থক্যটা দেখতে পাচ্ছেন নিশ্চই। উপরের লাইনে মাত্রা একটু বেশি হয়ে গেছে। কবিতাটা যখন শব্দ করে পড়া হবে তখন এই পার্থক্যটা আরো ভালভাবে বোঝা যাবে। এখানটায় 'ছিটকিনি-সনে' টাইপ কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা গেলে এই গ্যাঞ্জামটা হয়তো দূর করা যেত।

আর আঁতলামির জন্য আবারো মাপ সাপ চাইতেছি মন খারাপ

ধৈবত

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্যের জন্যে ধৈবতকে অসংখ্য ধন্যবাদ। হাসি

এবার তোমার প্রশ্নের দিকে আসি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে আমি লিখার সময় মাত্রার দিকে নজর দেইনাই বললেই চলে। শুধু অন্ত্যমিলের দিকে একটু খেয়াল ছিল। আমি মাত্রা ও অন্ত্যমিলের মূল ব্যাকরণগত কাঠামো ঠিকমত জানি না। শুধুমাত্র ভাব প্রকাশের দিকেই নজর ছিল এজন্যে। তোমার প্রথম উদ্ধৃতিতে 'জপছে' এর জায়গায় 'বলছে' আমারও খেয়াল ছিল। কিন্তু তা ব্যবহার করিনি কারণ তাতে গেঁয়োপথের ঐ পরাবাস্তব ভাবটাকে 'আনমনে' এর সাথে ফুটিয়ে তোলার জন্যে 'জপছে' তুলনামূলক বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে।

জোড়াশব্দ ব্যবহার কিংবা শব্দের বহুমাত্রিক রূপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কবিতায় একটু শিথিলতা দেখেছি। আর তাই অনেক জায়গাতে এখানে জোড়াশব্দ ব্যবহার করেছি। যেমন 'শীতেফাটা', গড়েচলি', 'একাএকা' 'এইদৃষ্টির'। এগুলোতে দুটো শব্দ একত্রে লেখা হয়েছে। এটা করেছি অনেকটাই বেখেয়ালে তাল ঠিক রাখতে। 'ছিটকিনির' এতে মনে হয় তিন ভাগ না দুইভাগ হবে। অর্থাৎ ছিট+কিনির। বেখাপ্পা হয়েছে আগের লাইনের 'সাথে' এর সাথে পরের লাইনের 'নিঃস্বতা' মনে হয় আসলে। আর 'সনে' ও 'সাথে' এর মধ্যে ভাবগত সুক্ষ্ম পার্থক্য আছে। আবার পড়লে হয়ত বুঝতে পারবে। যাইহোক এরপর থেকে নজর দেব যথাসম্ভব। আসলে লেখার সময় অনেক ঝামেলা। প্রথমে ভাব পাই না। ভাব আসলে ভাষা পাই না। ভাষা আসলে শব্দ পাই না। শব্দ আসলে ব্যাকরণে মানে না। এতকিছু মিলাইতে গেলে দেখা যায় শব্দ হয়েছে, বাক্যও হয়েছে। কিন্তু ভাবটা গায়েব হয়ে গেছে। তারপরও দুঃসাহস করে লিখার চেষ্টা করি মাঝে মাঝে, একটু আশায় যাতে সচলে ছাপায় আর তোমার মত গুণীদের সমালোচনায় যদি কিছু শিখি এই আশায়। তাছাড়া সচলের দুর্দান্ত সব লেখকের মন্তব্য পেলে তো খুশিতে ঘুমই হয় না আর সে রাত্রে। দেঁতো হাসি

আর একটা কথা। ভুলেও আমার নাম শুরুতে দেব না। তাহলে ভুলক্রমে মডুদের চোখ এড়িয়ে লেখা পালাতে পারলেও পাঠকদের চোখ এড়াতে পারবে না। হয়ত দেখা যাবে আজন্ম সেটা থেকে যাবে "শূণ্যবার পঠিত"। অনিচ্ছায় হলেও ভুল করে ঢোকা এই আবজাব লেখা পড়ুক সবাই-এটাই চাই। চোখ টিপি

-অতীত

অতিথি লেখক এর ছবি

ধরাপড়ে জানলার চিরায়ত ফ্রেমে

ভাল লেগেছে। আরও লিখুন এরকম।

বিপ্লবী স্বপ্ন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।