মামলার একজন সাক্ষী

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৫/০২/২০১১ - ১২:১১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


মেহার্ন সাহেব চশমা ঠিক করতে করতে তার স্বভাবসিদ্ধ শুকনো কাশিটি আরেকবার দিলেন। তারপর চোখ তুলে তাকালেন সামনে বসা লোকটির দিকে, একজন পরিকল্পিত খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি।

মেহার্ন সাহেব নিজে ছোটখাটো, পরিপাটি মানুষ, জামা কাপড়ে মার্জিত রুচির ছোঁয়া। ধুসর চোখজোড়াতে শ্যেনদৃষ্টি এই আইনজীবীর যশের সাথে পুরোপুরি মানানসই। মক্কেলদের সাথের উনি সবসময় শুকনো স্বরে কথা বলেন। অনেক চেষ্টা করে তিনি রপ্ত করেছেন মক্কেলের সঙ্গে একইসাথে সহানুভূতি এবং একটা দূরত্ব নিয়ে কথা বলার কৌশল। "আপনাকে আবারো মনে করিয়ে দিতে চাই যে আপনি একটা কঠিন অবস্থার মধ্যে আছেন এবং সবকিছু খোলামেলা ভাবে আলাপ করা ছাড়া এর থেকে বেরিয়ে আসার আর কোন পথ খোলা নেই।"

লিওনার্দো ভোল তার ফাঁকা দৃষ্টি দেওয়ালের থেকে সামনে বসা উকিলের দিকে ফেরালো। "বুঝতে পারছি", তার কণ্ঠে শুধুই হতাশা ঝরে পড়ে। "কিন্তু আমি কোনভাবেই মানতে পারছি না আমাকে এই খুনের আসামী করা হয়েছে। এতো নিষ্ঠুর, এতো কাপুরুষের মত একটা অপরাধের সাথে আমাকে জড়ানো হচ্ছে।"


মেহার্ন সাহেব আবেগ আর যুক্তি আলাদা চোখে দেখতে পারেন। উনি আবারো ছোট্ট একটা কাশি দিয়ে চশমা পরিষ্কার করতে লাগলেন। চশমাকে নিজের জায়গায় ফিরিয়ে দিতে দিতে বললেন, "হ্যাঁ, হ্যাঁ, ভোল, আর সেজন্যই আমাদের জান দিয়ে লড়ে যেতে হবে আপনার মুক্তির জন্য। আমার বিশ্বাস আমরা জয়ী হব, হবই। কিন্তু সবার আগে আমার জানতে হবে সত্যি ঘটনা। আপনার দিক থেকে আপনি পরিষ্কারভাবে সবকিছু না জানালে আমি কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারব না। আমাদের লাইন অভ ডিফেন্স ঠিক করার জন্যই আপনার থেকে সত্যটা আমার জানা জরুরী।"

লিওনার্দোর মুখের থেকে হতাশার ছায়াটা সরলো না। সত্যি বলতে কি মেহার্ন নিজেও জানেন এই মামলাটি সামনে বসা তরুণটির বিপক্ষে কতটা জোরালো এবং নিশ্চিতভাবে সেই অপরাধী।

"আপনিও আমাকে দোষী ভাবছেন, তাই না?" মৃদুস্বরে বলল লিওনার্দো। "কিন্তু বিশ্বাস করেন, খোদার কসম কেটে বলছি, এই খুন আমি করিনি। আমি কাউকে খুন করিনি। এতো নিষ্ঠুর কাজ আমি করতে পারিনা।"

এরকম অবস্থায় যেকোনো অপরাধী তার অপরাধ অস্বীকার করবে, মেহার্ন খুব ভালো করেই জানে। তারপরেও উনি একটু থমকে গেলেন। এমন তো হতে পারে লিওনার্দো ভোল আসলেই নিরপরাধী।

মেহার্ন আবার শুরু করলেন, "সব সাক্ষী-প্রমাণ আপনার বিপরীতেই যায়, কিন্তু তারপরেও আমি আপনার উপর ভরসা রাখছি। এখন আমাকে গোঁড়া থেকে সব খুলে বলুন। আপনি মিস এমিলি ফ্রেঞ্চকে কীভাবে চিনতেন?"

"কয়েক মাস আগের কথা, অক্সফোর্ড রোডে একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে অনেকগুলো প্যাকেট নিয়ে হিমশিম খেতে দেখি। ব্যস্ত রাস্তা তাড়াহুড়ো করে পার হতে যেয়ে রাস্তার মাঝখানে উনার কয়েকটা প্যাকেট পড়ে যায়। আমি দৌড় দিয়ে সেগুলো তুলে নিয়ে আসি।"

"ঐ ঘটনায় মিস ফ্রেঞ্চের জীবন বাঁচানোর কোন ব্যাপার ছিল কি?" মেহার্ন পরিষ্কার করে নিতে চাইলেন।

"না, মোটেই না। আমি একটা সৌজন্যসূচক কাজ করেছি মাত্র। উনি আমাকে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আর এটাও বলেন যে আজকালকার জেনারেশনের মধ্যে সৌজন্য বোধ কম দেখা যায়। এরপর আমরা যে যার দিকে চলে যাই। আমি কখনো ভাবি নাই যে উনার সাথে আবার দেখা হবে। কাকতালীয় ভাবে সেইদিন সন্ধ্যায় আমার এক বন্ধুর পার্টিতে আবার দেখা হয়। ওখানেই আমরা পরিচিত হই, কৃতজ্ঞতা জানাতেই হবে, পরের শনিবার দুপুরে উনি তাঁর ক্রিংকলঊডের বাসায় আমাকে দাওয়াত পর্যন্ত করলেন। উনার সাথে কথা হওয়ার পরে আমার বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারি মহিলা খুবই ধনী এবং খুব একটা কারো সাথে মিশেন না। বাসায় একজন গৃহপরিচারিকা আর আট নয়টা বিড়াল ছাড়া আর কেউ নেই।"

"আচ্ছা, তার মানে আপনি অনেক আগেই জানতেন যে উনি একজন ধনী মহিলা", প্রায় স্বগক্তি করলেন মেহার্ন।

লিওনার্দো ভোল একটু উষ্মার সাথেই প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিল, "আপনার যদি মনে হয় আমি রীতিমত খোঁজ খবর নিয়েছি ---", কিন্তু মেহার্ন হাত উঁচিয়ে কথাটাকে ওখানেই শেষ করে দিল।

"বাদীপক্ষ মামলাটিকে কীভাবে দেখবে আমার সেটা বুঝতে হবে। মিস ফ্রেঞ্চ অত্যন্ত ধনী হলেও খুব সাধারণ জীবন যাপন করতেন। কেউ না বলে দিলে উনার আর্থিক অবস্থা আপনার বোঝা বা জানার কথা না। আপনার কথা হয়েছিল কার সাথে?"

"আমার বন্ধু, জর্জ হারভি, যার বাসায় পার্টি ছিল।‌"

"এখন ব্যাপার হচ্ছে, বাদীপক্ষ প্রথমেই তুলে ধরবে আপনার আর্থিক দৈন্যদশা। আপনার আর্থিক দশা তো আসলেই দৈন্য, ঠিক বললাম?"

দ্বিমত পোষণ করতে পারল না লিওনার্দো। "মানে, ভাগ্য একটু খারাপ যাচ্ছিল, আর কি। টানাটানির মধ্যে ছিলাম। এখনো আছি বলতে হবে।"

"হুমম, আপনার টাকা পয়সার টানাটানি এবং এমন সময় একজন মহিলার সাথে আপনার নতুন পরিচয় হোল। এখন আমরা যদি দেখাতে পারি যে আপনি কোনভাবেই জানতেন না মিস ফ্রেঞ্চ অত্যন্ত ধনী এবং আপনি উনার আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন শুধুমাত্র ভদ্রতা রক্ষার্থে।"

"যেটা কিনা সত্যি।"

"কিন্তু এটা প্রমাণ করতে আপনার বন্ধু হারভীর স্মরণশক্তির উপর নির্ভর করতে হবে। হারভীর কি এই কথোপকথন মনে থাকার কথা?"

"ওর মনে না থাকলেও অন্য কারো থাকবে। ওখানে আরও কিছু বন্ধু-বান্ধব ছিল, যারা আমাকে অভিনন্দনও জানালো ভদ্রমহিলাকে পটাতে পারার জন্য। বন্ধু মহলে যে রকম আড্ডা হয় আর কি।"

উকিল সাহেব তাঁর হতাশা খুব ভালভাবেই লুকালেন। "এই পথে তাহলে হাঁটা যাবেনা, যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। এখন আমাকে আরেকটা বিষয়ে একটু খোলাসা করে বলেন, আপনি ৩৩ বছরের একজন যুবক - সুদর্শন - ক্রীড়ামোদী - বন্ধুদের মাঝে জনপ্রিয়, বয়স্ক একজন ভদ্রমহিলাকে এত সময় দিতেন কেন? আপনাদের মাঝে কোন মিল থাকাটাই তো অস্বাভাবিক।"

"আমি জানিনা। আমার আসলেই বলার কিছু নাই।" অসহায়ত্ব চিৎকারের করে উঠলো লিওনার্দোর কণ্ঠে। "উনার বাসায় প্রথম যাওয়ার পর উনি বারংবার আমাকে জিজ্ঞেস করতে থাকেন আমি আবার কবে আসব, উনার একাকীত্ব আর অসুখী জীবনের কথা বলতে থাকেন। আমি 'না' বলতে পারিনি। আমি এমনিতেই কাউকে সহজে 'না' বলতে পারি না। আর উনি আমাকে এত আপ্যায়ন করলেন যে আমার পক্ষে এড়িয়ে চলা প্রায় অসম্ভব হয়ে গেল। আর আপনি শুনলে মনে হয় হাসবেন, কিন্তু এটা ঠিক যে কয়েকবার দেখা হওয়ার পর আমি নিজের তাগিদেই উনার বাসায় যাওয়া শুরু করি। আমার মাকে অনেক ছোটবেলায় হারিয়েছি। বড় হয়েছি এক ফুফুর কাছে, উনিও মারা যান আমার যখন পনের বছর বয়স তখন। অনেকদিন পর মিস ফ্রেঞ্চের ব্যবহারে আমি যেন মায়ের স্নেহ পাই। আপনার কাছে হাস্যকর লাগাটাই স্বাভাবিক।"

মেহার্ন সাহেব হাসলেন না। গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবতে ভাবতে উনি অভ্যাসবশত চশমার কাঁচ পরিষ্কার করতে লাগলেন। "আপনার কথাটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে।" অনেকক্ষণ সময় নিয়ে তিনি কিছু একটা ভাবলেন। "জুরীদের কাছে এটাকেই সুন্দর করে উপস্থাপন করতে হবে। আচ্ছা, মহিলা আপনাকে তাঁর সম্পদের-ব্যাঙ্কের হিসাব রাখার দায়িত্ব দিলেন কখন?"

"তিন চারবার উনার বাসায় যাওয়ার পর। মিস ফ্রেঞ্চের বৈষয়িক জ্ঞান বেশ অপ্রতুল ছিল, তাই আমার সাহায্য চান।"

চোখ বন্ধ করে মেহার্ন শুনছিলেন, শেষের কথায় তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকান লিওনার্দোর দিকে। "ঠিক বলছেন তো আপনি, ভোল। গৃহপরিচারিকা মিস জ্যানেট ম্যাকেঞ্জি কিন্তু বলেছেন তাঁর মনিব সব হিসাব নিজেই রাখতেন এবং উনি খুবই পারদর্শী ছিলেন এই ব্যাপারে। ব্যাঙ্কের কর্মচারীদেরও একই মত।"

"আমার বলার কিছু নাই। মিস ফ্রেঞ্চ আমাকে নিজে বলেছিলেন যে উনি হিসাবপত্র বোঝেন না।"

মেহার্ন কিছুক্ষণ চুপ করে লিওনার্দোকে পর্যবেক্ষণ করলেন। উনার স্বীকার করার কোন প্রয়োজন নেই, কিন্তু এই মুহূর্তে ভোলের নিরপরাধ হওয়া নিয়ে সংশয় অনেকখানি দূর হয়ে গেল তাঁর মন থেকে। একজন একাকী বয়স্ক মহিলার মনস্তত্ত্ব উনি আন্দাজ করতে পারেন। মিস ফ্রেঞ্চ সুদর্শন তরুণটির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল এবং কোন এক উসিলা খুঁজছিল নিয়মিত দেখা করার। এরকম অবস্থায় সবথেকে সহজ উপায় হয় হিসাবে-নিকাশে অজ্ঞ সাজা। পুরুষমানুষকে ভজাতে খুব বেশি কিছু করতে হয় না। নিজে অজ্ঞ সেজে, ভোলকে উপরে উঠিয়ে মিস ফ্রেঞ্চ ঠিক সেই কাজটাই করেছেন।

"এখন আমি আপনাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা করতে যাচ্ছি। পুরোপুরি সততার সাথে উত্তরটি দিবেন। আপনি অর্থাভাবে ছিলেন, একজন বয়স্ক মহিলার, যার নিজ ভাষ্যমতে হিসাব খুব একটা বোঝেন না, বিশাল বৈষয়িক হিসাব দেখাশোনা করেছেন। আপনার কি এমন কোন গরমিল করার কথা মনে হয়নি যেটাতে আপনার কিছু লাভ হবে এবার কেউ কোনদিন ধরতেও পারবে না?" লিওনার্দো কিছু বলার আগে, উকিল সাহেব প্রশ্নটার গভীরতাটা আরেকটু বুঝিয়ে দিলেন। "আমাদের সামনে দুটি রাস্তা খোলা আছে। আপনার সততা এবং নিষ্ঠার উদাহরণ দেখিয়ে আমরা প্রমাণ করার চেষ্টা করতে পারি যে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করার কত মানুষ আপনি নন। কিংবা বাদীপক্ষ যদি আপনার হিসাবে কোন গরমিল খুঁজে পান, তাহলে আমাদের বলতে হবে খুন করার প্রয়োজন ছিল না, মিস এমিলি ফ্রেঞ্চের টাকা পকেটস্থ করার ব্যবস্থা আপনার এমনিতেই ছিল। আপনি কি বুঝতে পারছেন আমার কথা? এখন ভেবেচিন্তে আমাকে উত্তর দিন।"

ভাবার জন্য কোন সময় নিলো না লিওনার্দো। "আমি সাধ্য অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছি। কখন কোন টাকা সরানোর প্রশ্নই আসেনা।"

"ধন্যবাদ।"

"তাছাড়া, আমার দিক থেকে নিশ্চয়ই সবথেকে শক্তিশালী যুক্তি হচ্ছে যে আমার খুন করার পিছনে কোন স্বার্থ ছিল না। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে আমি উনার টাকা সরাচ্ছিলাম, উনার মৃত্যুর পর তো আমার ইনকাম বন্ধ হয়ে যাবার কথা।"

মেহার্ন আবারো অনেক সময় নিয়ে কিছু একটা ভাবলেন, তারপর ধীরে সুস্থে বললেন, "আপনি কি বলতে চাইছেন যে আপনি জানেন না যে মিস এমিলি ফ্রেঞ্চ তাঁর সব সহায় সম্পত্তি আপনার নামে লিখে গেছেন।"

"কীইই!!" হতবাক লিওনার্দো চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তার মুখে অবিশ্বাস আর চরম হতাশার এক মিশ্রিত অভিব্যক্তি।

"এখন যদি বলি জ্যানেট ম্যাকেঞ্জি বলেছেন যে আপনি এই দলিলের কথা জানতেন এবং মিস ফ্রেঞ্চ তাকে বলেছিল যে আপনার সাথে আলোচনা করেই এই পদক্ষেপ উনি নিয়েছেন।"

"জ্যানেট মিথ্যা বলছেন।" কথাটা যেন লিওনার্দোর নিজের কাছেই পছন্দ হোল না। মেহার্ন তাকে আরেকটু সময় দিল নিজের চিন্তাটা মাথার মধ্যে গুছিয়ে নেয়ার জন্য। লিওনার্দো ধীর গতিতে বলা শুরু করল, যতটুকু বলছে তার থেকে মাথায় হিসাব করছে অনেক বেশি। "জ্যানেট নিজে একজন বয়স্ক মহিলা আর সত্যি বলতে মিস ফ্রেঞ্চ ছিল তার সবচেয়ে আপন একজন। জ্যানেট প্রথম থেকেই আমাকে অপছন্দ করত, মিস ফ্রেঞ্চের আমার প্রতি মনোযোগ সে কখনই ভাল চোখে দেখত না। এমন হতে পারে যে মিস ফ্রেঞ্চ জ্যানেটের সাথে দলিল সংক্রান্ত কোন আলাপ করেছিল, আর জ্যানেট কোনভাবে ভুল বুঝেছে।"

"আপনার কি মনে হয়, জ্যানেট আপনাকে এতটাই ঘৃণা করে যে আপনার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলবে?"

"না, তা কেন? জ্যানেট নিশ্চয়ই বিশ্বাস করে আমি কোনভাবে মিস ফ্রেঞ্চকে প্রভাবিত করে এই কাজ করিয়েছি।" লিওনার্দো এতক্ষণে মামলায় তার অবস্থানটা অনুধাবন করতে পারল। উদ্বিগ্ন আর হতাশায় ভেঙ্গে পড়া গলায় বলল, "এখন বুঝতে পারছি, আমার আসলে আর বেরুবার পথ নাই। ঘটনাটা এমন দাঁড়াচ্ছে যে আমি মিস ফ্রেঞ্চের সাথে খাতির করেছি, সব সম্পত্তি আমার নামে লেখার ব্যবস্থা করেছি, আর সবশেষে ওইদিন রাতে যখন বাসায় কেউ ছিল না -- পরের দিন উনাকে -- উফ!!"

"বাসায় কেউ ছিল না, এটা ভুল। আপনি তো জানেন জ্যানেটের সেদিন সন্ধ্যায় বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। সে বাইরে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সাড়ে নয়টার দিকে বাসায় ফিরে আসে একটা জামার নকশা নিতে। জ্যানেট পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। নকশাটা নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় বাইরের ঘর থেকে দুইজনের কথোপকথন শুনতে পায়। কি নিয়ে কথা হচ্ছিল, জ্যানেট বুঝতে পারেনি, কিন্তু সে হলফ করে বলছে যে মিস ফ্রেঞ্চ একজন লোকের সাথে কথা বলছিল।"

"সাড়ে নয়টায়," লিওনার্দো আপনমনে বলল। "সাড়ে নয়টা...।" এবার খুশীতে সে লাফিয়ে উঠলো। "তাহলে আমি বেঁচে গেছি - আমি নির্দোষ -"

"'বেঁচে গেছি' মানে কি?" হতবাক হয়ে গেলেন মেহার্ন।

"বেঁচে গেছি মানে সাড়ে নয়টার মধ্যে আমি বাসায়। আমার স্ত্রী প্রমাণ করতে পারবেন। আমি মিস ফ্রেঞ্চের বাসা থেকে বের হই নয়টা বাজার পাঁচ মিনিট আগে, বাসায় পৌছাতে পৌছাতে নয়টা বিশ মত বাজে। রোমেইন, আমার স্ত্রী, বাসায় আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। সাড়ে নয়টায় আমি বাসাতে ছিলাম। উফফ..., সব কৃতিত্ব জ্যানেটের জামার নকশার।" শান্তির হাসি হেসে উঠলো ভোল।

উদ্দীপনায় ভোল খেয়াল করলো না যে উকিল সাহেবের গম্ভীর মুখে কোনরকম ভাবাবেগের পরিবর্তন হয়নি। বরং উনার পরের কথাটা লিওনার্দোকে আবার তার ভয়াবহ পরিস্থিতি স্মরণ করিয়ে দিল।

"তাহলে আপনার মতে মিস এমিলি ফ্রেঞ্চকে খুন করলো কে?"

"ডাকাত। প্রথমে যেরকম ভাবে হয়েছিল। ভাঙ্গা জানালা, শাবল দিয়ে মিস ফ্রেঞ্চকে আঘাত করা, এই প্রমাণগুলো তো আর তামাদি হয়ে যায়নি। শাবলটাও তো পাওয়া গেছে মৃতদেহের পাশে। কিছু জিনিষও খোয়া গেছে শুনেছি। জ্যানেট আমার সম্পর্কে ভুলভাল মন্তব্য করে পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না।"

"উঁহু, এই যুক্তি চলবে না। যেই জিনিষগুলো পাওয়া যাচ্ছে না, সেগুলো খুবই নগণ্য দামের। ধারণা করা হচ্ছে যে চোখে ধাঁধাঁ দেওয়ার জন্য কাজটা করা হয়েছে। আর জানালার ভাঙ্গা অংশ থেকে পরিষ্কার কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আরেকটা কথা ধরুন, আপনি সাড়ে নয়টায় নিজের বাসায় থাকলে, জ্যানেট কার গলার আওয়াজ শুনেছিল। মিস ফ্রেঞ্চ নিশ্চয়ই একজন ডাকাতের সাথে প্রীতি আলাপ করবেন না।"

"না, নিশ্চয়ই না।" কিছুক্ষণের জন্য আগের হতাশা লিওনার্দের মুখে ফিরে আসলো। "কিন্তু," আশার আলোতে আবার জ্বলে উঠলো ভোল, "আমার ভাল অ্যালিবাই আছে। আপনি প্লিজ এখুনি রোমেইনের সাথে দেখা করুন।"

"তাই করবো। আপনার স্ত্রীর সাথে আগেই দেখা হত, উনি বাইরে না থাকলে। উনার তো আজই স্কটল্যান্ড থেকে ফেরার কথা। এখান থেকে বের হয়ে আমি উনার সাথে দেখা করতে যাব।"

মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন লিওনার্দো। "হ্যাঁ, সেটাই ভাল হবে। রোমেইন আপনাকে সব খুলে বলতে পারবে।"

"কিছু মনে করবেন না, একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি। আপনি কি আপনার স্ত্রীর প্রতি খুব অনুরক্ত?"

অপ্রত্যাশিত প্রসঙ্গে ভোল একটু থতমত খেলেও পুরো আত্মবিশ্বাস নিয়েই উত্তর দিল, "অবশ্যই। আর রোমেইনও খুব অনুগত স্ত্রী। ও আমার জন্য পৃথিবীর যেকোনো কিছু করতে পারে।"

জবাবের শেষ অংশটুকু মেহার্নকে কিছুটা বিমর্ষ করে দিল। একজন অনুগত স্ত্রীর সাক্ষ্য কি আদালতে আস্থাভাজন হবে?

"আপনাকে আর কেউ নয়টা বিশে বাসায় ফেরত আসতে দেখেছে? কাজের মেয়ে বা অন্য কেউ?"

"না, আমাদের কোন গৃহপরিচারিকা নেই। আর ফেরার পথে চেনা কারো সাথে দেখা হয়নি। যেই বাসে ফিরেছি, সেটার কন্ডাকটরের আমাকে মনে থাকতে পারে।"

মাথা নেড়ে মেহার্ন বুঝিয়ে দিল যে সুবিধা হবে না। "তার মানে আর কেউ নেই যে মিসেস ভোলের সাক্ষী আরও দৃঢ় করতে পারে।"

"খুব একটা প্রয়োজন আছে কি?" লিওনার্দো দমবার পাত্র নয়।

"হয়তো নাই।" প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষ প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন মেহার্ন, "মিস ফ্রেঞ্চ কি জানতেন যে আপনি বিবাহিত?"

"জ্বী, জানতেন।"

"আপনি তো সস্ত্রীক কখন ঐ বাসায় যাননি, তাইনা।"

এই প্রথম লিওনার্দোকে একটু অস্বস্তিতে ভুগতে দেখা গেল। "মানে... ঠিক যাওয়া হয়নি আরকি..."

"আপনি কি জানেন জ্যানেট ম্যাকেঞ্জির মতে তার মনিব বিশ্বাস করতেন যে আপনি অবিবাহিত এবং ভবিষ্যতে আপনাদের বিয়ের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছিলেন।"

লিওনার্দো জোরে হেসে উঠলো।

"অসম্ভব! আমাদের মধ্যে অন্তত চল্লিশ বছর বয়সের পার্থক্য।"

উকিল সাহেব শুকনো ভাবে বললেন, "কিন্তু রুঢ় সত্য হচ্ছে, মিস ফ্রেঞ্চ আপনার স্ত্রীকে কখন দেখেননি। এই ব্যাপারে আমি আপনার যুক্তি ঠিক মত বুঝলাম না। আপনি আমাকে বুঝতে সাহায্য করবেন কি?"

লিওনার্দো ভোলের অস্বস্তি এবং দ্বিধা প্রকটভাবে ফুটে উঠলো। কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে অবশেষে শুরু করল - "আমি সব খুলে বলছি। আমার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আমি আশা করছিলাম মিস ফ্রেঞ্চের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করার যায় কিনা। উনি আমাকে পছন্দ করতেন মানলাম, কিন্তু একটা গরিব দম্পতির টানাপড়েনে উনি কতটা এগিয়ে আসবেন, সেটা নিয়ে সন্দেহ ছিল। আমাদের আলাপের প্রথম দিকেই বুঝেছিলাম উনি ধরেই নিয়েছেন যে আমাদের দাম্পত্য জীবন খুব একটা সুখের না, আর আমরা আলাদা থাকি। উকিল সাহেব, টাকাটা আমার খুবই প্রয়োজন ছিল - রোমেইনের জন্যই। মিস ফ্রেঞ্চকে আমি কখনো ভেঙ্গে বলিনি, উনি যেটা ধরে বসে ছিলেন, আমি তার দ্বিরুক্তি করিনি। উনি আমাকে পালিত ছেলের মত দেখতেন বলেই জানি। আমাদের মধ্যে বিয়ে ঘটিত কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। ওটা জ্যানেটের ভুল ধারনা।"

"আর কিছু বলবেন?"

"না!"

ভোলের কণ্ঠে একটা দোটানার আভাস ছিল কিনা মেহার্ন ঠিক বুঝল না। উকিল সাহেব চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।

"আজকে তাহলে আসি, ভোল।" একই শুকনো স্বরে মেহার্ন বলল, "আমি বিশ্বাস করি যে আপনি নির্দোষ যদিও বেশিরভাগ প্রমাণ আপনার বিপক্ষে। আপনাকে এই পরিস্থিতি থেকে বের করে নিয়ে আসব।"

লিওনার্দো ভোলের মুখের হাসিতে আরেকটু প্রশান্তি যেন ছড়িয়ে পড়ল।

"দেখবেন আমার অ্যালিবাই একদম ঠিক আছে।" ভোল আরেকবার দেখতে ব্যর্থ হল যে উকিল সাহেবের মধ্যে কোনরকম প্রতিক্রিয়া নেই।

"পুরো ব্যাপারটা জ্যানেট ম্যাকেঞ্জির উপর অনেকাংশে নির্ভর করছে। সে যে আপনাকে বেশ ঘৃণা করে তা বোঝা যাচ্ছে।"

মেহার্ন ছোট ঘরটি থেকে বের হয়ে আসলো। তার পরবর্তী গন্তব্য হোল লিওনার্দো ভোলের বাসস্থান। ভোল পরিবার প্যাডিংটন গ্রীন এলাকার ছোট একটা বাসায় থাকে। দরজার কড়া নাড়তে না নাড়তেই খুলে দিল হোমরাচোমরা দেখতে এক মহিলা, খুব সম্ভবত কয়লা সাপ্লাই দিতে এসেছে। "মিসেস ভোল? উনি কি আছেন?"

"একঘণ্টা আগে ফিরসেন।"

মেহার্ন তার ভিজিটিং কার্ড এগিয়ে দিল। "এটা দিয়ে বলবেন খুব জরুরী দরকার।"

মহিলাটি হাত এপ্রনে মুছে কার্ডটি নিলো। উকিল সাহেবের মুখের উপরেই দরজা বন্ধ করে তাঁকে বেশ কিছুক্ষণ বাইরে অপেক্ষা করতে বাধ্য করলো। অবশ্য এরপর যখন ফিরল, তখন মহিলাটির হাবভাবে সামান্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল।

"আসেন, ভেতরে এসে বসেন।"

বসার ঘরে দেয়ালের একটা পেইন্টিং মেহার্নের মনোযোগ কেড়ে নিল। ঘরে নিঃশব্দে অনুপ্রবেশকারিণী তাঁকে খানিকটা চমকে দিল যদিও বাইরে থেকে কিছু বঝা গেল না। দীর্ঘাঙ্গি আর ক্লান্ত চেহারার এক মহিলা।

"মিস্টার মেহার্ন? আপনি আমার স্বামীর পক্ষের উকিল, তাই না? আপনি কি ওর কাছ থেকে এসেছেন? প্লিজ আপনি বসুন।"

কথা বলার আগ পর্যন্ত মেহার্ন বুঝতে পারেননি যে মিসেস ভোল ইংরেজ বংশোদ্ভূত নয়। বসতে বসতে খেয়াল করলো রোমেইনের উঁচু গালের হাড়, ঘন নীলচে কাল চুল, আর হাতের নাড়ানোর ভঙ্গি যাতে সামান্য বিদেশী একটা ভাব আছে। বেশ অন্যরকম একজন মহিলা, খুব শান্ত। এতো বেশি শান্ত যে সামনে বসা মানুষকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়। প্রথম দর্শনেই মেহার্ন বুঝে গেছিলেন যে উনি এমন একজনের সাথে কথা বলতে যাচ্ছেন যাকে তিনি পুরোপুরি বুঝবেন না।

"মিসেস ভোল," উনি শুরু করলেন, "আপনি ভেঙ্গে পড়বেন না --"

এতটুকু বলেই মেহার্ন থেমে গেলেন। রোমেইনের মধ্যে ভেঙ্গে পড়ার কোন লক্ষণ নেই, সে সম্পূর্ণ ধীর স্থির।

"আপনি কি আমাকে সব খুলে বলবেন?" রোমেইন জানতে চাইল। "আমার সবটুকু জানা প্রয়োজন। আমাকে দুঃসংবাদ থেকে বাঁচাতে যাওয়ার কোন দরকার নেই। আমি জানতে চাই সবচাইতে খারাপ কতটুকু হতে পারে।" একটু থেমে সে শেষ অংশটা আবারো বলল "সবচাইতে খারাপ কি হতে পারে।"

লিওনার্দো ভোলের সাথে তাঁর কথোপকথন বর্ণনা করলেন। রোমেইন খুব মনোযোগ দিয়ে পুরোটা শুনলেন, মাঝেমধ্যে মাথা নেড়ে সায় দিলেন।

"আচ্ছা," সে বলল, "লিওনার্দো চাইছে আমি যেন বলি সে নয়টা বিশ মিনিটে ঘরে ফিরেছে। তাই তো?"

"উনি আসলেই তো ঐ সময়ে ফিরেছিলেন?" মেহার্ন সাহেব জানতে চাইলেন।

"সেটা আসল ব্যাপার না," রোমেইন খুব ঠাণ্ডা গলায় বলল। "আমি এই কথা বললে ও মুক্তি পাবে কি? আদালত কি আমার কথা মেনে নিবে?"

মেহার্ন সাহেব স্তব্ধ হয়ে গেলেন। মিসেস ভোল এতো জলদি ঘটনার গভীরতাটা আত্মস্থ করবেন উনি ভাবতে পারেননি।

রোমেইন বলে চলল, "আমি জানতে চাচ্ছি এটা যথেষ্ট হবে কিনা? আর কেউ কি আছে যে কিনা আমার সাক্ষ্যকে ঠিক বলে প্রমাণ করবে?"

মিসেস ভোলের কণ্ঠে একটা চাঁপা আগ্রহ মেহার্নকে একটু অস্বস্তিতে ফেলে দিল। "আপাতত আর কেউ নেই।" হাল্কা ভাবে বললেন উকিল সাহেব।

"ও আচ্ছা।" বলল রোমেইন ভোল।

সে কয়েক মুহূর্তের জন্য নিঃসাড় হয়ে বসে রইল। ঠোঁটের কোনে ছোট্ট একটা হাসি খেলে গেল শুধু।

উকিল সাহেবের অস্বস্তির ভাবটা কাটতে চাইছে না কিছুতেই।

"মিসেস ভোল - " উনি আবার শুরু করলেন। "আমি বুঝতে পারছি এমন সময় আপনার ভিতরে কী অনুভূতি - "

"আপনি বুঝতে পারছেন!"

"এরকম অবস্থায় - "

"এরকম অবস্থায় - আমাকে একা চলতে হবে।"

"কিন্তু মিসেস ভোল - আপনি এখন খুবই উত্তেজিত। যেকোনো অনুগত স্ত্রী - "

"মাফ করবেন?"

মিসেস ভোলের স্বরের হাল্কা রুক্ষতা উকিল সাহেবের কানে ধরা পড়ল। একটু দ্বিধার সাথে উনি আবারো বললেনঃ
"যেকোনো অনুগত স্ত্রী - "

রোমেইন আস্তে মাথাটা সামনে ঝুকালো, ঠোঁটে আবারো সেই অদ্ভুত হাসিটি।

"এটা কি ও আপনাকে বলেছে যে আমি খুব অনুগত স্ত্রী?" সে নরম গলায় জানতে চাইল। "আহ! বুঝতে পারছি। পুরুষমানুষ যে কী বেকুব হয়! বোকা - বোকা - বোকা - "

সে উত্তেজনায় হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো। যেই অজানা বোধটা এতক্ষণ মেহার্ন সাহেবকে একটা অস্বস্তিতে রেখেছিল পুরোটা যেন জমাট বাধল রোমেইন ভোলের কণ্ঠে।

"আমি ওকে ঘৃণা করি। ঘৃণা করি! ঘৃণা করি! ঘৃণা করি! আমি লিওনার্দোকে ফাঁসীর দড়িতে ঝুলতে দেখতে চাই।"

মিসেস ভোলের চোখে জ্বলে ওঠা হিংসা উকিল সাহেব কে হতবিহ্বল করে দিল। রোমেইন উনার দিকে এক পা এগিয়ে গেল, তার কণ্ঠে ঘৃণা যেন ঝরে পড়ছে:

"আর মনে হচ্ছে আমি সেটা দেখতেও পাব। ধরুন আমি যদি এখন বলি লিওনার্দো নয়টা বিশ না, দশটা বিশে বাসায় পৌঁছিয়েছে, তাহলে? আপনি হয়ত বলবেন যে সে বলেছে দলিলের ব্যাপারে কিছুই জানত না। আর আমি যদি বলি সে জানত, ওটার জন্য অপেক্ষা করেছিল, এবং তর সইতে না পেরে খুনটা করে বসে, তাহলে? আমি তো আরো বলতে পারি যে লিওনার্দো সেই রাতেই আমার কাছে সব স্বীকার করে, পারি না? ওর কোটে রক্তের দাগ ছিল। এই কথাগুলো যদি আদালতে দাঁড়িয়ে হলফ করে আমি বলি, তাহলে লিওনার্দোর কী হবে?"

মহিলার চোখ যেন মেহার্নকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল। নিজের বিহ্বলতা কাটিয়ে আবার কথা শুরু করতে মেহার্নকে বেশ বেগ পেতে হল।

"আপনি আপনার স্বামীর বিরুদ্ধে - "

"ও আমার স্বামী না!"

কথাটা এত দ্রুত আসলো যে উকিল সাহেব ধরেই নিলেন যে উনি ভুল বুঝেছেন।

"দুঃখিত, আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না।"

"ওই লোক আমার স্বামী না।"

দুজন কিছুক্ষণ একদম চুপ করে থাকলেন। একেই বুঝি বলে পিনপতন নীরবতা!

"আমি ভিয়েনাতে অভিনয় করতাম। আমার স্বামী এখনও বেঁচে আছে, কিন্তু পাগলাগারদে। তাই আমরা আইননুসারে বিয়ে করতে পারিনি। এখন আসলেই ভাল লাগছে যে বিয়েটা হয়নি।"

"একটা জিনিস বলুন," মেহার্ন আবার তাঁর শুকনো স্বর ফিরে পেয়েছেন। "আপনার লিওনার্দো ভোলের প্রতি এই তীব্র ঘৃণা কেন?"

সামান্য একটু হেসে মাথা নাড়ল সে, "আপনি এটা জানতে চাইবেন আমি জানি। কিন্তু বলব না। আমি নাহয় কিছু রহস্য করলাম..."

মেহার্ন সাহেব গলা খাঁকড়িয়ে উঠে দাঁড়ালেন। "তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে লাভ নেই। আমার মক্কেলের সাথে কথা বলে আমি আবার আপনার সাথে যোগাযোগ করবো।"

রোমেইন উকিল সাহেবের কাছে এসে দাঁড়ালো, উকিল সাহেবের চোখে চোখ রেখে নরম স্বরে জিগ্যেস করল - "আজকে আপনি যখন এখানে আসলেন - তখন আসলেই বিশ্বাস করেছিলেন যে সে নির্দোষ, তাই না?"

"হ্যাঁ, করেছিলাম," মেহার্ন জবাব দিল।

"আহারে! আপনার জন্য খারাপই লাগছে।" হেসে উঠলো রোমেইন।

"এবং আমি এখনও তা বিশ্বাস করি।" কথা শেষ করলেন উকিল সাহেব। "শুভ সন্ধ্যা, ম্যাডাম।"

উকিল সাহেব ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন, তাঁর স্মৃতিতে রোমেইন ভোলের চকিত মুখটা জ্বলজ্বল করছে।

(চলবে?)

-রু

মূল বইঃ The Witness for the Prosecution


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

--------------------------------------
সবুজ পাহাড়ের রাজা

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। -রু

শামীম এর ছবি

চমৎকার ঝরঝরে লেখা (অনুবাদ)। অবশ্যই চলবে। হাততালি

তবে আগ্রহী পাঠককে এভাবে মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে কামডা ভালা করলেন না ..... ওঁয়া ওঁয়া গুল্লি

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। বেশি বড় হয়ে যাচ্ছিল, তাই দুইভাগ করে দিচ্ছি। -রু

স্বপ্নহারা এর ছবি

বাকিটুকু তাড়াতাড়ি ছাড়েন...অপেক্ষায় নাজির...

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

অতিথি লেখক এর ছবি

অনর্থক দেরি করবো না। পড়ার জন্য ধন্যবাদ। -রু

বইখাতা এর ছবি

গল্পটা পড়েছি আগে, তারপরও প্রথমবার পড়ার মতো 'এরপর কী হবে' ভাব নিয়ে পড়া গেল। হাসি আসলে অগাথা ক্রিস্টি আমার খুব প্রিয়। অনুবাদও ভাল হয়েছে। চলুক।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনুবাদ করার যে এত কঠিন আগে বুঝিনি। এক দুই লাইন লিখে রিভিউ করি, মনে হয় যেন ৮০-র দশকের রোবট কথা বলছে। জান বের হওয়ার অবস্থা।

শেষ কিস্তি ছাড়ব। তারপর, কানে ধরেছি, আর কোনদিন এ পথ মাড়াবো না।
-রু

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
---------------------
Sad Poems

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। -রু

তুলিরেখা এর ছবি

টেনশনে মরে যাচ্ছি, পরের পর্ব দিন তাড়াতাড়ি।
অনুবাদ করা সত্যি কঠিন, বিশেষ করে ভিন্ন সংস্কৃতির কাহিনি, ওখানে কথনভঙ্গী উপমা রেফারেন্স সবই অন্যরকম, মনে হয় চরিত্রগুলোর চিন্তাভাবনাগুলোও। তাই সার্থক অনুবাদ কঠিন ব্যাপার। আপনার প্রথম পর্বটা কিন্তু বেশ সাবলীল। অভিনন্দন।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। -রু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।